ভারতের পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল বৃটিশরা, যার প্রধান ব্যাক্তিত্ব ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ (১৭৮৬-৯৩), তিনি ভারতে পুলিশি ব্যবস্থার পুনর্গঠন করেন। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল ভারতিয় উপনিবেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ইংরাজদের ক্ষমতা ভারতে ধরে রাখা। সেই আমল থেকেই পুলিশের থার্ড ডিগ্ৰী বা থানার লকআপে অভিযুক্তের ওপর নির্মম অত্যাচারের প্রথা চালু হই, কিন্তু দুঃখের কথা হল যে, স্বাধিনতার পরেও সেই প্রচলিত ধারা ক্রমাগত প্রবাহিত একি পথে। অবশ্য এই ব্যবস্থা যে একেবারে ফেলনা,সেটিও নই, আমাদের পুলিশ যথেষ্ট দায়িত্বশীল আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একবারে নিতি-জ্ঞানহীন বটে।
ভারতিয় পুলিশ লক-ডাউনে |
কিন্তু মজার বিষয় হল,বৃটিশদের নিজের দেশে কিন্তু পুলিশের ভূমিকা সম্পূর্ণ উল্টো। সেখানে পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বপূৰ্ণ। বৃটিশরা ভালবেসে দেশিও পুলিশদের ববি বলে ডাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি সম্পূৰ্ণ উল্টো, পরিচিত শব্দ 'মামা'। তাহলে স্বাধীনতার পরেও আমাদের পুলিশ এমন কেনো?
ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে, কিছু স্বার্থান্বেষী নেতার যুগ শুরু, শেষমেষ পুলিশের ভূমিকা হয়ে দাড়ালো নতুন প্রভুদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং সেই সুবাদেই একইরকমভাবে সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যাওয়া। জনসাধারণের বিশাল অংশ আজ পুলিশ অত্যাচারের বিপক্ষে, কেও কেও বলে থাকেন- 'পুলিশদের সম্মান করতে মোটেও ইচ্ছা করেনা, বাধ্য হয়েই তা করতে হয়।' আবার কারো মতে - 'পুলিশ আর গুন্ডাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।'
পুলিশের বিরুদ্ধে জনসাধারণের হঠাৎ এমন বিরোধিতা উঠে এল কি করে,সেটাই চিন্তার বিষয়! তবে এর কারন রয়েছে ,আর সেই কারন গুলো করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আরো পরিষ্কার হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ নতুন নিয়ম মাফিক যান-বাহনের ফাইন বাড়িয়ে দিলে, চড়ম উত্তেজনার পরিবেশ তৈরির মাঝে দেখা গেলো জনসাধারণের পুলিশ বিরোধি সোশ্যাল পুলিশগিরি, জনসাধারণের সহজ সরল লজিক 'আইন কি শুধু জনসাধারণের জন্যে, পুলিশের জন্য না?'। জনসাধারণের এই সোশ্যাল পুলিশগিরিতে ফেসবুক, হোয়াটসএপ, টুইটারে ভরে গেলো পুলিশের ট্রাফিক নিয়ম অমান্যতার বিভিন্ন ভিডিও। বিহারের এক যুবক হেলমেন্ট বিহিন পুলিশ আধিকারিককে তার হেলমেটের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ তার বাহাদুরি দেখিয়ে মিথ্যা অপবাদে ফাসিয়ে থানায় নিয়ে যাই ,কিন্তু বাঁধ সাদলো মোবাইলের একটি ভিডিও ক্লিপ যেখানে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে পুলিশটি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ততক্ষনে সেটি মিডিয়া মারফতে ছড়িয়েও পরে বেশ, শেষে সেই আধিকারিক কর্মচূত করা হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাশালিরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে, এটা নাকি মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। পুলিশরা বা কেনো সেই দিক দিয়ে কম হবে, হিন্দি ফিল্মের 'দাবাং' পুলিশ হবার চাহিদাই কার্যত জনবিরোধি হয়ে উঠেছে কিছু পুলিশ। উদাহরণ ঢের রয়েছে এবং প্রত্যেক রাজ্যে থেকেই রয়েছে, আর 'দাবাং' হিরোর হিরোর মত এন্ট্রি না হলে হয়। মধ্যপ্রদেশের এক পুলিশ আধিকারিক মনোজ ইয়াধাব দাবাং নই বরং সিংঘাম স্টাইলে দুটো চলন্ত গাড়ির মাঝে বেলেন্স করে এন্ট্রি দেখাতে চাইলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হতেও সময় নেই নি, শেষমেশ তাকে তার এই বোকামির জন্য জরিমানাও হতে হয়েছে।
Indian police |
পুলিশ বাহাদুর কখনো দাবাং আবার কখনো আবার কাপুরুষ, এই ক্ষেত্রে পালঘরের ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, হিন্দু দুই সাধুর এইভাবে মৃত্য মেনে নিতে পারছিল না গোটা ভারত, আর যার ক্ষতচিহ্ন এখনো দগদগে হয়ে রয়েছে, দুই সাধুই পুলিশের উপস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিতই মনে করেছিল হইতো, কিন্তু ভিরু পুলিশ সেই ভিরের কাছে একদম কাপুরুষ। এই ক্ষেত্রে মাথাই চিন্তা আসতে পারে, পুলিশের ক্ষমতা আর বাহাদুরি কি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপরেই নির্ভরশিল। নাকি নিতি-জ্ঞানহীনতার দিকে ধাবিত কিছু পুলিশ।
নিতিহীনতার প্রমান পাওয়া গেলো বহুল হারে এই লক-ডাউনের মাঝে। বেধেঁ দেওয়া হল নির্দিষ্ট সময়, কিন্তু নির্দিষ্ট হোক বা অনির্দিষ্ট পুলিশের কেলানি কোনে নিয়মের মধ্যেও নেই, বাজারে সব্জি বিক্রেতাদের থেকে শুরু করে, সাধারণ ক্রেতা তাদেরকেও দেওয়া হল উত্তম মধ্যম, এমন কি বাজার করা সব্জির বেগ প্রযন্ত কেড়ে নিয়ে ছুড়েঁ ফেলা হল। যেগুলো বাস্তবেই পুলিশের নিতি হীনের পরিচয় দিয়ে থাকে।
কিন্তু এই কয়েকটি ঘটনাই পুলিশের উপর নিম্নমুখি চিন্তাধারা না আনাই শ্রেয়, কেননা সমাজ পরিবর্তনের মূল দায়িত্ব তাদের, যাদের জন্যই রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর সাহস টুকু জুটে। এই করোনা আবহে পুলিশের কিছু খারাপ প্রতিচ্ছবি উঠে এলেও, তাদের দিন রাত্রি দায়িত্ব পারবে ভারতকে নিরোগ করে তুলতে। আজ না হয় জনসাধারণ পুলিশকে ঘৃনার চোখে দেখছে, একদিন ঠিকি তাদেরকেউ ব্রিটিশ পুলিশদের মত বিশেষ ভালোবাসার চোখেই দেখবে। আগামিতে পুলিশ তার দায়িত্ব সহযোগি হিসাবে নই, সহভাগি হিসাবে করবে এটাই কাম্য। WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন