Unique knowledge bangla

History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শিলিগুড়ির ইতিহাস: কীভাবে একটি গ্রাম থেকে একটি মহানগর হয়ে উঠল।। History of Siliguri: How a Village Became a Metropolis।।

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

  শিলচাগুড়ি শিলিগুড়ি

শিলিগুড়ি শহরের ইতিহাস বেশ ঐতিহ্যবাহী ও রোমাঞ্চকর। তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, জলঢাকা নদী দ্বারা ঘিরে রাখা একটি সুন্দর শহর। পাহাড়ী নদী, সমতলীয় নদী শিলিগুড়িকে যেমন সৌন্দর্য প্রদান করেছে , তেমনি জীবনের রুপরেখা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করেছে। বলাবাহুল্য পাহারের পদতলে থাকা শিলিগুড়ি একসময় নুড়িপাথরে ভরা জঙ্গলময় সমতল ভূমি ছিল। তাই এই অঞ্চলটি পূর্বে শিলচাগুড়ি নামে পরিচিত ছিল। যার অর্থ নুড়িপাথরের ঢিবি। এই শিলচাগুড়ি নামটি আজ শিলিগুড়ি নামে পরিচয় লাভ করেছে। নামটি কোন জাতিরা দিয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। একটি মতামত হল যে, এই নামটি ভুটানিরা দিয়েছে। ভুটানিরা এই স্থানকে শিলচাগুড়ি বলতেন, যার অর্থ হল শিলা বা পাথরের গুড়ি। একটি অন্য মতামত হল যে, এই নামটি ব্রিটিশরা দিয়েছে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

এই শহরটি প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রাজ্য, সংস্কৃতি ও বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এত মনোরম আবহাওয়া যুক্ত, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, উর্বর ভূমি সর্বপরি তিন দিক দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান দেশের সাথে খুব সহজেই সংযোগ স্থাপন, উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথ এছাড়াও আরো কয়েকটি দিক রয়েছে যার দরুন শিলিগুড়ি ভারত তথা বিশ্বের কিছু দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচয় পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই শিলিগুড়িকে দখলের চেষ্টা আগেও দেখা গিয়েছে এবং এখনো দেখা যাচ্ছে।

শিলিগুড়ির ইতিহাস: কীভাবে একটি গ্রাম থেকে একটি মহানগর হয়ে উঠল।। History of Siliguri: How a Village Became a Metropolis।।
সেবকের ঐতিহ্য বাহী করোনেশন ব্রিজ

পূর্বে সিকিম যখন ভারতের অংশ ছিল না তখন সিকিমের চোগিয়াল রাজা শিলিগুড়ি কে দখলে ছিল। এই সময় ১৭৭৫ সাল থেকে ১৮১৫ সালের মধ্যে  নেপাল থেকে বহু নেপালি সিকিমে প্রবেশ করতে শুরু করে যার তীব্র বিরোধিতা করে সিকিম সরকার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশরা সিকিমের কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং যার ফলে গোর্খা নেপালিরা হয়ে উঠে ব্রিটিশ এবং সিকিমের কমন শত্রু। নেপালিরা ইতিমধ্যে শিলিগুড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ নেপাল যুদ্ধ হলে , নেপাল পরাজিত হয় এবং সৌগলির চুক্তি করে এবং দখলকৃত জায়গা শিলিগুড়িকে ফিরিয়ে দেই। ব্রিটিশদের ক্ষমতা এবং প্রভাব সিকিমের উপর দিন দিন বাড়ছিল। ব্রিটিশরা সুযোগ বুঝে একসময় তারা দার্জিলিং এ আধিপত্য বিস্তার করে। এতে শিলিগুড়ির দায়ভার চলে আসে ব্রিটিশ সরকারের হাতে। এই শিলিগুড়ি থেকে ব্রিটিশরা তাদের ব্যবসায়িক সামগ্রী পাহাড়গুলোতে রপ্তানি করতে শুরু করে।

রেলগাড়ি সংযোগ

ব্রিটিশরা প্রধানত শিতপ্রধান দেশের নাগরিক ছিল পাশাপাশি চায়ের চাহিদা ব্রিটেন সহ গোটা বিশ্বে বাড়ছিল। সুযোগ বুঝে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশরা দার্জিলিং শহরকে দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে তৈরি করে। যার ফলস্বরূপ দার্জিলিং যাতায়াত এবং চা পাতা পরিবহনের জন্য ব্রিটিশদের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং প্রযন্ত রেল ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য করে ১৮৭৮ সালে এবং শিলিগুড়ি শহরটি গড়ে তোলা হয় শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন (একমাত্র হেরিটেজ রেলষ্টেশন)। এই ষ্টেশনে বহু বিখ্যাত ভারতীয় স্মৃতি বহন করে রেখেছে, যেমন - মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাঘা যতিন প্রমূখ। আবার ১৮৮০ সালে ন্যানো গ্যাজের রেলওয়ে ব্যবস্থা চালু করা হয়, যা এখনও হিমালয়ান রেলওয়ের ট্রয় টেন হিসেবে বিখ্যাত, এবং এটিও বিশ্ব হেরিটেজ হিসাবে নথিভুক্ত।

শিলিগুড়ির ইতিহাস: কীভাবে একটি গ্রাম থেকে একটি মহানগর হয়ে উঠল।। History of Siliguri: How a Village Became a Metropolis।।
শিলিগুড়ি টয় ট্রেন 

 চিকেন নেক

ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাবার আগে ভারতের বৃহৎ ভূ-খন্ডকে ভারত এবং বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হিসেবে সিরিল রেডক্লিভ শিলিগুড়ির উপর দিয়ে বয়ে চলে যাওয়া মহানন্দা নদী যেখানে বাংলাবান্ধা পার করেছে সেখান থেকে নদীর এপার ভারত এবং ওপার বাংলাদেশ হিসেবে ভাগ করেন। যার ফলে শিলিগুড়ির একপাশে নেপাল অন্যপাশে বাংলাদেশ থাকার ফলে উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে সমগ্র ভারতের ভূ যোগাযোগের খুবই পাতলা সরু করিডোরের তৈরি হয়েছে, যেটি আজ শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডর হিসাবে পরিচিত। মূলতঃ যে কোনো দেশ এই স্থানটি দখল করলে ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে উত্তর পূর্ব ভারতের যোগাযোগ নষ্ট হতে পারে। সুতরাং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই করিডোরের গুরুত্ব অসীম।

আরো পড়ুন - বালুরঘাটের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের এক শহর।।

তবে এত কিছুর পরেও শিলিগুড়ির অগ্রগতিতে বাধা পরেনি। যার দরুন ১৯৯৪ সালে শিলিগুড়িতে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন তৈরী করে ফেলে নগর সৌন্দর্যায়ন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। 

রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বালুরঘাটের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের এক শহর।। History of Balurghat: A City from Ancient to Modern Age।।

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩

 বালুরঘাট দক্ষিণ দিনাজপুরের সদর, সময়ের উত্থান পতনের ইতিহাস বয়ে নিয়ে আজ একুশ শতকের আঙ্গিনায় পৌঁছে গেছে। বর্তমানে একুশটি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি বালুরঘাট পৌরসভা। এক সময়‌ পশ্চিম দিনাজপুরের অংশ হিসেবে বালুরঘাট শহর প্রতিষ্ঠিত থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুর পৃথক ভাবে অস্তিত্বে এলে বালুরঘাট দক্ষিণ দিনাজপুরের সদর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

আত্রেয়ী নদীর তীরে গড়ে উঠা এই ছোট শহরে, আত্রেয়ী নদীর জলপ্রবাহের ধারার মতো বয়ে গেছে যুগের পর যুগ। প্রাচীন থেকে বর্তমান সবকিছু মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে এই শহরে।

 প্রাচীন যুগ

বালুরঘাটের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ইতিহাসের ধারা, প্রাচীন যুগে মৌর্য, গুপ্ত, কুষাণ, শুঙ্গ সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বালুরঘাট ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীন যুগে বালুরঘাট পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের অংশ ছিল। বেদে উল্লেখ একটি বিশেষ জাতির লোকেরা পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিল। পুন্ড্রবর্ধনের অস্তিত্বে বালুরঘাটের ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষন না বালুরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকা বা দক্ষিণ দিনাজপুরের ইতিহাস যুক্ত‌ না করা হয়। হরষেন রচিত প্রাচীন গ্রন্থ বৃহৎ কথা কোষ‌ অনুযায়ী মৌর্য সাম্রাজ্যের স্থাপক চন্দ্রগুপ্ত পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের দেবীকোট শহরের এক ব্রাহ্মণের সন্তান ছিলেন। বর্তমানে এই দেবীকোট হিসেবে গঙ্গারামপুরকে চিহ্নিত করা হয়। এই সময় দেবীকোট ছিল ব্রাহ্মণদের আশ্রিত মন্দিরে পরিপূর্ণ শহর। আবার আরেক তথ্য অনুযায়ী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জৈন গুরু ভদ্রবাহু দেবীকোটে জন্মগ্রহণ করেছিল।

গুপ্ত যুগে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাষন কাল থেকেই বালুরঘাট তথা তার পার্শ্ববর্তী এলাকা উন্নতি লাভ করতে থাকে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের উত্তর পুরুষ হিসেবে দ্বিতীয় কুমার গুপ্ত তার এই কার্যকলাপকে অনবরত রাখেন , এবং কয়েকটি বৌদ্ধ মঠ নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় কুমার গুপ্তের নাম অনুসারে বালুরঘাটের পার্শ্ববর্তী একটি এলাকার নাম হয়েছে কুমারগঞ্জ। হিলির বৈগ্রাম নামের একটি গ্রামে একটি তাম্রপট্ট ( তামার পাতলা পাতের উপর লিখিত আকারে দস্তাবেজ) পাওয়া গেছিল, যেটি থেকে প্রথম কুমার গুপ্ত এর জমি ব্যবস্থা জানা যায়। যেখান থেকে বোঝা যায় যে এই এলাকায় গুপ্ত শাষকের রাজ ছিল। এখনো দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে উঠে আসা প্রাচীন কালের মূর্তিগুলো সেই সময়ের শিল্পকলার উৎকর্ষতা প্রমাণ করে আসছে প্রতিনিয়ত।

মধ্যযুগ

প্রাচীন যুগের বিষয়ে তেমন কিছু তথ্য না পাওয়া গেলেও মধ্য যুগে বালুরঘাট এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহের উন্নতি সাধন হয়েছিল তা নিঃ সন্দেহে বলা যায়। বিশেষ করে পাল সাম্রাজ্যের সময়ে, পাল যুগের কয়েকটি রাজার নাম অনুসারে বালুরঘাটের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকার নাম রয়েছে, যেমন - মহিপাল, রামপুর, গোপালপুর, এছাড়াও আরো কয়েকটি স্থান রয়েছে।

প্রথম মহিপাল প্রজাহৈতষী রাজা হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। তিনি উত্তরবঙ্গ সহ পূর্ব বঙ্গের বেশ কিছু রাজ্যে জয়লাভ করেন, যার ফলে বালুরঘাট তার রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। কৃষক তথা জনগণের জন্য কয়েকটি দিঘী খনন করেন, যার একটি রয়েছে মহিপাল এলাকায়, যেটি বর্তমানেও মহিপাল দিঘী নামেই পরিচিত। 

তবে এখানেই শেষ নয়, পাল সাম্রাজ্যের অন্যতম রাজা ধর্মপাল যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন, তার একটি বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ দিনাজপুরের কোন এক স্থানে করেছিলেন, অনেক ঐতিহাসিকদের মতে সেটি বর্তমানে হরিরামপুর অথবা বালুরঘাটের কোনো পাশ্ববর্তী এলাকাতে অবস্থিত ছিল।

পাল বংশের অবনতি ঘটতে থাকে দ্বিতীয় মহিপালের‌ সময়ে, তার দ্বারা শাসিত ১০৭০-১০৭৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব কালে তার অপশাসন কৈবর্ত জনগনকে বিদ্রোহ করে তুলেছিল। কৈবর্তরা দিব্যক নামের এক নেতার নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে পাল সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়। বালুরঘাট থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত মুরারীবাদ নামের স্থানে কৈবর্তরা একত্রিত হয়ে দিব্যক, ভিম নামক নেতাদের নেতৃত্বে যুদ্ধের ঘোষণা করেছিল।


আরো পড়ুন - মালদার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।।


মধ্যযুগের ইতিহাস এখানেই থেমে থেকেছিল এমনটি না। দ্বাদশ শতকে দিকে বালুরঘাটের উপরে হিন্দু সেন বংশের রাজত্ব ছিল। এরপর ১২০৬ সালে বখতিয়ার খিলজীর দ্বারা হঠাৎ আক্রমনের মাধ্যমে লক্ষন সেন পালিয়ে গেলে, বালুরঘাট সহ দক্ষিণ দিনাজপুরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হিন্দু ধর্মে পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটিতে মুসলিম শাসন লাভ করলে , হিন্দুদের মাঝে মুসলিম ধর্মের দর্শন তুলে ধরার প্রয়োজন পরে, যেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল মৌলানা আতা উদ্দিন শাহ, যার সমাধি এখনো গঙ্গারামপুরের ধলদিঘীতে রয়েছে। এমনকি বখতিয়ার খিলজীর সমাধি এখনো গঙ্গারামপুরে রয়েছে।

বালুরঘাটের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের এক শহর।। History of Balurghat: A City from Ancient to Modern Age।।
বালুরঘাট স্বাধীনতা সংগ্রাম

এরপর ১৪৯৯-১৫৩৩ পর্যন্ত যে যে সুলতানরা শাসন করেছিলেন, তারা সকলেই বালুরঘাট এলাকায় বিশেষ নজরদারি রেখেছিলেন, যারা হলেন সামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ, নাসিরুদ্দিন নাসরত শাহ প্রমূখ। যাদের মধ্যে হুসেন শাহের নাম আজও সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয় বালুরঘাট লাগোয়া হোসেনপুর গ্রামে।

মুঘল আমলে বালুরঘাট মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, কিন্তু এতবড় সাম্রাজ্যে মুঘল শাষকের একার দ্বারা পরিচালনা করা সহজ ছিল না। সুতরাং মুঘল শাষকের সহযোগী হিসেবে হিন্দু রাজা কাশীনাথ রায় বালুরঘাটের কাছেই আত্রেয়ী নদীর তীরে দূর্গ নির্মাণ করেন।

আধুনিক যুগ

সময়ের ব্যবধানে বালুরঘাট সহ সমগ্র বাংলাই ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে আসে , সেই সময় বাংলার এই অংশ শাসন করতেন রাজা রাধানাথ রাই। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার ফকির আর সন্ন্যাসীরা গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, যেখানে ফকিরদের নেতৃত্ব দিয়েছেন মজনু শাহ এবং সন্ন্যাসীদের নেতৃত্ব দেন ভবানী পাঠক। মূলতঃ এরা রংপুর, কুড়িগ্রাম থেকে গেরিলা যুদ্ধের পরিচালনা হলেও, প্রয়োজনে বালুরঘাট কেও তারা গেরিলা যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করতেন। 

স্বাধীনতা প্রেমী বালুরঘাট বাসিন্দাদের মধ্যে দেশভক্তি তুলে ধরতে একে একে কাজী নজরুল ইসলাম, মুকুন্দ দাস, এমনকি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বালুরঘাট পরিদর্শনে আসেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীর তীরে কংগ্রেসের কার্যালয় স্থাপন করেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বালুরঘাটের বাসিন্দারা একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৪২ সালের ভারতছাড়ো আন্দোলনে বালুরঘাটে নেতৃত্ব দেন সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কানু সেন, শুটকা বাগচী প্রমূখ। আত্রেয়ী নদীর পূর্বতীরে সমবেত হন প্রায় ১০ হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা, যারা ১৪ ই সেপ্টেম্বর বালুরঘাটের ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত থানা এবং অনেক কয়েকটি প্রশাসনিক ভবনের দখল নিয়ে উত্তোলিত ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক সরিয়ে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বালুরঘাট থানার দারোগা সহ সকলে পালিয়ে প্রান বাঁচায়। আন্দোলন কারীদের রোষানলে সেদিন বালুরঘাটে প্রায় ১৬টি অফিস ভস্মীভূত হয়েছিল। টেলিফোনের তার কেটে যানবাহন থেকে সড়ক সংযোগ, সবই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বালুরঘাট প্রথমবারের মত স্বাধীন হয় কিন্তু বালুরঘাট তিনদিন স্বাধীন থাকার পর বৃটিশ সরকার পুনরায় দখল নেয়। বালুরঘাটের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তাৎক্ষণিক সাফল্যের আগুন বালুরঘাটের আশেপাশের এলাকায় ছড়াতে দেরি হয়নি। দেখতে দেখতে ডাঙি, মদনাহার, তপন, লস্করহাট, পারিলাহাটে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি পারিলাহাটে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে আন্দোলন কারীদের খন্ডযুদ্ধ হয়, যেখানে মোট চার জন ভারতীয় শহীদ হন। অবশেষে পুলিশের অত্যাচারের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বালুরঘাট অভিযানের ১০ দিনের অধ্যায় সমাপ্ত হয়।

ব্রিটিশ সরকারের জোর পূর্বক খাজনা আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে বালুরঘাটের খাঁপুরে কৃষকরা এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। অর্ধেক নই, তিনভাগের একভাগ খাজনা হিসেবে গ্রহন করতে হবে সরকারকে। এই দাবিকে অস্ত্র করে ১৯৪৭- সালে ২০ ফেব্রুয়ারী প্রায় শতাধিক কৃষক মিছিলে বের হয়, মিছিলের দলটি এগিয়ে যেতেই ব্রিটিশদের পুলিশ বাহিনী মিছিলের উপর গুলি চালাতে থাকে। মোট ২২ জন কৃষক শহীদ এবং প্রায় ৫০ জন কৃষক পুলিশের গুলিতে জখম হন।

কিন্তু এত রক্তক্ষয় সংগ্রামের পরেও বালুরঘাট ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা লাভ করেনি। ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের কালপঞ্জী ঘোষণা করা হলেও, বালুরঘাটের অস্তিত্ব পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে নাকি ভারতের সাথে যুক্ত হবে, তা নিয়ে বিড়াম্বনা দেখা দেয়। কেননা বালুরঘাট বাসিদের অন্তরে ভারতের সাথে যুক্ত হবার ইচ্ছা প্রবল ছিল, এবং সেই হিসেবে পাকিস্তানের সৈনিকদের বালুরঘাট ছেড়ে চলে যেতে হত ১৪ আগষ্টের মধ্যে। কিন্তু ১৪ অগাস্ট রাতে পাকিস্থানি সৈন্য বাহিনী ও পাকিস্তানি নেতারা বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে হাজির হয় এবং সমস্ত কিছুর দখল নিতে থাকে। প্রায় গোটা বালুরঘাট ছেয়ে ফেলা হয় পাকিস্তানের পতাকায়। পরের দিন ১৫ অগাস্ট স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বালুরঘাটে মহকুমা শাসক পানাউল্লা সাহেব পাকিস্তানের পতাকা তোলেন।

এই সময় ভারতের প্রতি ভালোবাসা সম্পন্ন বালুরঘাটের বেশ কিছু জায়গায় সাধারণ যুবক ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্র ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, এবং বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় পাকিস্তানি পতাকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তুলতে বাধা দেন।

পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু স্থানে জনগনের এহেন প্রতিরোধে স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ বালুরঘাট সহ বেশ কিছু এলাকাকে "নোশনাল এরিয়া" বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হন। অবশেষে "নোশনাল এরিয়া" এর তকমা সরিয়ে দিয়ে ১৭ অগাস্ট বালুরঘাট সহ মোট পাঁচটি থানা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তার ফলে পাকিস্তানি সেনাদের বালুরঘাট ছাড়তে হয় এবং ১৮ অগাস্ট সকালে বালুরঘাটে ভারতের সেনাবাহিনী প্রবেশ করে, এবং পাকাপাকি ভাবে ১৮ অগাস্ট বালুরঘাট ভারতের অংশ হিসেবে ভাবে স্বাধীনতা লাভ করে ও স্বাধীন বালুরঘাটে প্রথম সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় দ্বারা ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ফুলন দেবীর ডাকাত দলের সর্দার বেনডিট কুইন থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার কাহিনী।। Phoolan Devi is the story of Bandit Queen becoming a politician ।।

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

 কথায় বলে - নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকে তখন নির্যাতিতা নারীরাও পুরুষের মত আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। এমনি কয়েকটি বাস্তব চরিত্রের কয়েকজন নারী ছিলেন ফুলন দেবী, সীমা পরিহার,পুতলী বাঁই, মুন্নি দেবী প্রমুখ।

ভারতের ইতিহাসে এই নারীরা বিখ্যাত নাকি কুখ্যাত? বলা সম্ভব নয়, তবে তাদের জীবনি নিশ্চিত করে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের জাতিভেদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নারী নির্যাতনের ধারাবাহিকতা কতটা উলঙ্গপনাই রয়েছে, যার দরুন এই নারীরা বাধ্যতামূলক ভাবে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র এবং নিজেদের রুপান্তরিত করেছিল ডাকাতদের রানি হিসেবে। শুধুমাত্র ফুলন দেবীর উপরেই ছিল আটচল্লিশটি অপরাধের অভিযোগ, যার মধ্যে রয়েছে অপহরণ, লুটপাট এবং বাইশটি খুন, এবং সীমা পরিহারের উপরে ছিল ফুলন দেবীর থেকেও বেশী অপরাধের দায়ভার। তবুও অপরাধ জগতের গন্ডী পেরিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ তৈরি করে এক লোমহর্ষক কাহিনীর‌‌।

 ফুলন দেবী
 ১০ আগস্ট ১৯৬৩ সালে উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামের দলিত দারিদ্র পরিবারে ছোট্ট মেয়েটি একদিন চম্বল এলাকার ত্রাস হয়ে উঠবে তার ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার বাবা দেবীদিন। কিন্তু নিয়তির খেলায় সেই ছোট্ট ফুলনী হয়ে ওঠে ডাকাত রানী।
বাবার নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে ফুলনের মামা তাদের স্থাবর অস্থাবর দখল করে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে। গরিব পিতা দেবীদিন বাধ্যতামূলক মাত্র এগারো বছর বয়সে ফুলনের বিয়ে দিয়ে দেন ৩১ বছর বয়সি পুট্টিলালের সাথে। বাল্যবিবাহের শিকার ছোট্ট ফুলন স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসে বাবার বাড়িতেই।

ফুলন-দেবীর-ডাকাত-দলের-সর্দার-বেনডিট-কুইন-থেকে-রাজনীতিবিদ-হয়ে-উঠার-কাহিনী-Phoolan-Devi-is-the-story-of-Bandit-Queen-becoming-a-politician
ফুলন দেবীর আত্মসমর্পণ 


তবুও ফুলনের জীবনের অভিশাপ পিছু ছাড়েনি, বাবু গুজ্জর নামের এক ডাকাত সর্দারের নেতৃত্বে ডাকাতের দলেরা ফুলন দেবীকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাই, সেই পুরনো জমির অমীমাংসিত কারনের জন্য, এবং এই গুজ্জর ডাকাত এবং তার সঙ্গীদের দ্বারা তাকে বারবার ধর্ষণ করা হয়।
এভাবে চলতে থাকা বিষাক্ত জীবনে কিছুটা আশার আলো দেখা দেয়। বাবু গুজ্জরের ঘনিষ্ঠ সেকেন্ড ইন কমান্ড বিক্রম মাল্লার সাথে ফুলন দেবী প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিক্রম মাল্লা হয়ে উঠে সেই ব্যাক্তি যে ডাকাত সর্দার বাবু গুজ্জরকে মেরে ফেলে ফুলন দেবীকে বিয়ে করেন এবং ডাকাত দলের নতুন সর্দার হয়ে উঠেন। বিক্রম মাল্লাই ফুলন দেবীকে রাইফেল ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেন এবং বিক্রম মাল্লার হাত ধরেই ফুলন দেবী পুরুষের মতন পোষাক পড়ে বছরের পর বছর ধরে ট্রেন ডাকাতি, বাস ডাকাতি, বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতি করতে শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে পরিচয় লাভ করে ডাকাত রাণী হিসেবে।
আরো পড়ুন- পাশমিনা শাল আভিজাত্যের প্রতীক।

ফুলন দেবীর ভাগ্য পুনরায় পাল্টি খেয়ে যাই। তাদের পূর্বতন ডাকাত দলের অন্যতম প্রাক্তন সর্দার রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিং সাথে জেল থেকে মুক্তি পাই। এই দুই ডাকাত ভাইরা ছিল উচ্চ সম্প্রদায় ঠাকুর সম্প্রদায়ের (ঠাকুররা উচ্চ ক্ষত্রিয় বর্ণের উপজাতি ) লোক। তারা পুনরায় ফিরে দলে ফিরে এলে, দলের ক্ষমতা দখলের জন্য এই দুই ভাই এবং বিক্রম মাল্লার সাথে লড়াই শুরু হয়। এই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে বিক্রম মাল্লার মৃত্যুর সাথে। ফুলন দেবীর স্বামী বিক্রম মাল্লার মৃত্যু হলে রাম শিং ও তার ভাই লল্লারাম শিং ফুলন দেবীকে তাদের আগের গ্রাম বেইমাতে তুলে নিয়ে আসে। এই গ্রামে ফুলন দেবী একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হন ঠাকুর কুলের দ্বারা।

ফুলন দেবী এই নরকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। একদিন সুযোগ বুঝে তিনি সেই গ্রাম থেকে পালিয়ে যান, এবং মান শিং নামের আরেক ডাকাতের শরনাপন্ন হন। ডাকাত মান শিং এবং ফুলন দেবী আরেকটি ডাকাত দলের নির্মাণ করেন। ফুলন দেবী রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিং এবং ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেদের দ্বারা ধর্ষণের প্রতিশোধের জন্য তার দলের সাথে বেইমাতে ফিরে আসে আর শুরু করে লুন্ঠন রাজ। রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিংকে গ্রামে না পেয়ে ফুলন দেবী ঠাকুর কুলের বাইশজন লোককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ইতিহাসের এই হত্যা কান্ডটি বেইমাই গণহত্যা কান্ড নামে পরিচিতি পাই।

বেহমাই হত্যাকাণ্ডের পর ফুলন দেবীর জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি দুটোই বাড়তে থাকে। কেননা দলিত নারী হয়েও তিনি উচ্চ কুল ঠাকুরদের কাছ থেকে তার ধর্ষনের বদলা নিতে পেরেছিল। কিন্তু অন্যদিকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেরা ফুলন দেবীর আকস্মিক উত্থানের ভয়ে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে শুরু করে। ফলে ঠাকুর কৃষকদের চাপে পড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হয়। যার ফলে ১৯৮৩ সালে ফুলন দেবী কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে তার দলবল সহ গ্রেফতার হন।
সেই শর্তগুলো ছিল-
তার দলের কোনো সদস্যদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া যাবেনা।
আট বছরের বেশি তাদের কারাগারে পাঠানো যাবে না‌।
তার পরিবারের অন্যায় ভাবে দখল করা স্থাবর অস্থাবর ফিরিয়ে দিতে হবে।
তার ভাইকে একটি সরকারি চাকরি প্রদান করতে হবে।
একটি দল হিসেবে তাদের মধ্যপ্রদেশের জেলে রাখতে হবে।

শর্তসাপেক্ষে ফুলন দেবীর আট বছর না হয়ে এগারো বছরের জেল হয়। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি সমাজবাদী পার্টির সদস্য হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের সংসদ সদস্য হিসাবে লোকসভায় একটি আসন গ্রহণ করেন। এই জয়ের পিছনে তার জীবনের লড়াই সংগ্রামকে কারন হিসাবে অনেকেই বিবেচনা করেন। যাই হোক ক্ষমতা থাকা কালীন সমাজবাদী পার্টি থেকে মুলায়ম সিং যাদবের চেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু ২০০১ সালের পঁচিশে জুলাই বেইমাই গনহত্যার প্রতিশোধ স্বরুপ শের সিং রানা তাকে তার বাড়ির বাইরে গুলি মেরে হত্যা করে।
ফুলন দেবীর জীবনি এতটাই লোমহর্ষক ছিল মে তার জীবনীর উপর বলিউডে "ব্যান্ডিট কুইন" নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, যেটি গোটা বিশ্বে সারা ফেলেছিল। তার আত্মজীবনী শিরোনাম ছিল "আমি, ফুলন দেবী"। যে বইটিতে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

রহস্যময় অন্ধ লোকেদের গ্রাম টিলটাপেক।। TILTEPEC, THE VILLAGE OF THE MYSTERIOUS BLIND PEOPLE ।।

আগস্ট ২৮, ২০২৩

 অদ্ভুত অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এ যেন ঠাকুরমার ঝুলি থেকে পার্থিব জগতে প্রবেশ করা কোনো এক গ্রাম। যার রহস্য একুশ শতকের বৈজ্ঞানিকদের কাছেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কি সেই রহস্য! যার রহস্য উন্মোচনে সকল তাবোড় তাবোড় বৈজ্ঞানিকরা আজও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে বাস্তব পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেই গ্রামের পশু পাখি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ মানুষজন অন্ধ। সেই গ্রামটির নাম টিলটাপেক গ্রাম, অবস্থিত মেক্সিকো প্রদেশের অক্সজাকা এলাকায়।

কিন্তু এমন কেন? তার উত্তর রয়েছে দুটি, এক প্রচলিত স্থানীয় মতবাদ, দ্বিতীয়টি বৈজ্ঞানিক মতবাদ। দুটি মতবাদের মধ্যে কোনটি সঠিক তার কোনো পরীক্ষিত প্রমান নেই। তবে প্রথম মতবাদটি স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য।

 প্রথম মতবাদ

প্রথম মতবাদটি কল্পকাহিনীর মতনই খুবই রোমাঞ্চকর, কোনো এক অভিষিক্ত গাছ। এই অভিষিক্ত গাছ স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে লাভাজুয়েলা গাছ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

রহস্যময় অন্ধ লোকেদের গ্রাম টিলটাপেক।। TILTEPEC, THE VILLAGE OF THE MYSTERIOUS BLIND PEOPLE ।।
টিলটাপেক গ্রামের অন্ধ ব্যাক্তি 

এই গ্রামের অধিবাসীদের মতে এই গাছটির অস্তিত্ব রয়েছে, এবং এই গাছের দর্শন যারা পাই (পশু পাখি যাই হোকনা কেন।) তারা চিরতরে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে বা অন্ধ হয়ে যাই। তাদের মুখে এই অভিষিক্ত গাছের বিষয়ে একটি লোককথা শোনা যায়। সেই গল্পটি হল নিম্নরূপ-

এক সময় এই টিলটাপেক গ্রামে লাভাজুয়েলা নামে এক দর্শনীয়, অহংকারী, দয়ামায়া হীন এক যুবক বাস করতো। সে একদিন জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে পরে। শিকার করার সময় সে খুবই সুন্দর হরিণ দেখতে পাই। লাভাজুয়েলা সেই হরিণটিকে তির দিয়ে মারতে গেলে হরিণটি মানুষের সুরে বলে উঠে - আমাকে মেরো না আমি ভগবানের দ্বারা পাঠানো এক দূত, আমাকে মারলে তোমাদেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু লাভাজুয়েলা তার কোনো কথা না শুনে অহংকারের সাথে ভগবানের তাচ্ছিল্য করে এবং তির দিয়ে হরিণটিকে বিদ্ধ করে। বিদ্ধ হবার সাথে সাথেই সাদা উজ্জ্বল আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার সাথেই লাভাজুয়েলা তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। লাভাজুয়েলা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার পরেই তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পড়ে। এই অন্ধ অবস্থায় সে টিলটাপেক গ্রামে পৌঁছলে গ্রামের সকলকে তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণে ব্যাক্ষা দেয়। এতে গ্রামের মানুষজন লাভাজুয়েলার উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কেননা গ্রামবাসীদের মতে লাভাজুয়েলা গ্রামে প্রবেশ করাই সেই অভিশাপ গ্রামেও প্রবেশ করবে। তাই গ্রামের সকলে লাভাজুয়েলাকে তাড়িয়ে দেই। লাভাজুয়েলা অনুতপ্ত হয়ে শিকার করার স্থানে গিয়ে বুঝতে পারে যে, ঠিক যেই স্থানে সে হরিণটিকে বিদ্ধ করেছিল ঠিক সেই স্থানেই লতাপাতাহীন, কাঁটাযুক্ত একটি গাছের উদয় হয়েছে। লাভাজুয়েলা সেই গাছের সামনে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা যাচনা করে। কিন্তু গাছটি সেই স্থানেই বিদ্যমান ছিল, এবং সেই গাছের নিচেই লাভাজুয়েলা মারা যাই। লাভাজুয়েলা মারা যাবার পর তার এই কৃতকর্মের ফল টিলটাপেক গ্রামকে বহন করতে হয় এখনো। সেই থেকেই এই গাছের নাম রাখা হয়েছে লাভাজুয়েলা।

রহস্যময় অন্ধ লোকেদের গ্রাম টিলটাপেক।। TILTEPEC, THE VILLAGE OF THE MYSTERIOUS BLIND PEOPLE ।।
শিল্পীর চোখে টিলটাপেক অন্ধদের গ্রাম

লোককথা অনুযায়ী এই গাছ যারা দেখে তারা তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে পরে।

দ্বিতীয় মতবাদ

এই মতবাদ বৈজ্ঞানিক মতবাদ তবে এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত নয়। বৈজ্ঞানিকদের মতে টিলটাপেক গ্রামের এই পরিস্থিতির পিছনে দায়ি এক বিশেষ ধরনের বিষাক্ত মাছি। এই মাছি যাদের কামড়ায় তারা এক বিশেষ ধরনের পরজিবীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিজেদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে, তা সে পশুপাখি বা মানুষই হোক না কেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি বৈজ্ঞানিক মতবাদ হলেও, এর কোনো প্রমাণ নেই। কেনোনা এযাবৎ যতজন বৈজ্ঞানিকরা টিলটাপেক গ্রামে গেছেন তারা শুধুমাত্র স্বল্প দিনের পরিদর্শনের জন্যে গেছেন। কেনোনা তাদের মধ্যেও সেই একই, অন্ধ হবার ভয়টাই কাজ করে।

তাছাড়াও শহর থেকে গভীর জঙ্গলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সরঞ্জামসহ এমন একটি গ্রামে যেখানে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় রয়েছে, সেই গ্রামে বৈজ্ঞানিকদের দল যেতে খুব একটা সাহস পায় না। যার দরুন এই অন্ধদের গ্রামের এই রহস্য এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছে। 

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

মালদা জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।। SHORT HISTORY OF MALDA DISTRICT ।।

আগস্ট ২৭, ২০২৩


মালদা জেলার মালদা শহর পশ্চিমবঙ্গের বুকে এক অনবদ্য জায়গা করে নিয়েছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ফজলি আম, গম্ভীরা গান, হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের বড় ধরনের আবেগ, প্রাচীন থেকে বর্তমান পর্যন্ত সুবিস্তৃত ইতিহাস এবং তার ধ্বংসাবশেষ সব কিছু মিলিয়ে মালদা যেন আজ বাংলার সম্মান স্বরুপ। প্রাচীন থেকে বর্তমান পর্যন্ত সুবিস্তৃত ইতিহাসের আঁতুড়ঘর মালদা। তাই বর্তমানে ইতিহাস প্রেমি দর্শনার্থীদের জন্য মালদা এক অনন্য গন্তব্য। চলুন হালকা করে জেনে নিই সেই ইতিহাস।

প্রাচীন কাল:
মালদা ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন নামের রাজ্যের অংশ, যেখানে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং পাল সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত ছিল। চন্দ্রগুপ্ত নন্দ বংশকে পরাজিত করলে মগধ তার দখলে চলে আসে, আর মালদা সে সময় তার অংশ ছিল। এরপর বিন্দুসার রাজত্ব করে। বিন্দুসারের পর সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের বিভীষিকা দেখে অনুতপ্ত হলে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন ও প্রচারে ব্রতি হন এবং তার সাক্ষ্য হিসেবে অনেকগুলো শিলালিপি তিনি খদিত করান। যার কয়েকটি মালদাতে রয়েছে, উদাহরণ স্বরূপ ঘোষরায়ন পিলার এবং মাহাশথাঙ্গার শিলালেখ।

আদিনা মসজিদের ইতিহাস জানতে ক্লিক করুন -> আদিনা মসজিদের ইতিহাস 
এরপর গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ে সমুদ্রগুপ্ত থেকে স্কন্দগুপ্ত সকলের সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে মালদা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতিহাসের প্রবাদ প্রতিম ব্যাক্তি পাণিনি তার গ্রন্থ "অষ্টাধ্যায়ী" তে গৌরপুরা নামের একটি শহরের উল্লেখ করেছেন, সম্ভবত সেটি মালদাতে অবস্থিত ছিল। এমনকি চীনা পরিব্রাজক জুয়ানজাং পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর পরিদর্শন করেন যেটি ছিল গৌরপুরার পাশ্ববর্তী এবং তিনি এখানে অনেক স্তূপ ও মঠ দেখেছিলেন।
পরবর্তীতে পাল সাম্রাজ্যের সময়ে গোপাল পাল থেকে শুরু করে একে একে ধর্মপাল,দেবপাল, মহিপাল, রামপাল, সকলেই রাজত্ব করেছেন। পাল রাজত্বের আমলে মালদার গৌড় হয়ে উঠেছিল প্রাণকেন্দ্র। মালদার পাশ্ববর্তী বর্তমানে যেটি পাহাড়পুর সেটি পালযুগে সোমাপুর নামে পরিচিত ছিল, যা ধর্মপালের আরেক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অন্যদিকে মহিপাল মালদার পাশ্ববর্তী অনেক এলাকায় কৃষকদের জন্য জলাধার তৈরি করেন। এছাড়াও দেবপাল তৎকালীন মালদার জগদ্দলে বৌদ্ধ মঠ তৈরি করেছিলেন। প্রথম মহিপাল আদিনায় একটি হিন্দু মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও পালযুগের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে, যেমন সন্ধ্যাকর নন্দির রামচরিতমানস, খালিমপুর তাম্রলিপি , তারানাথের লেখা থেকেও মালদার তৎকালীন অবস্থার কথা জানতে পারা যাই।
 মধ্যযুগে মালদা:
মধ্যযুগে পাল রাজাদের পরাজিত করে মালদাতে সেন রাজবংশের উত্থান হয়েছিল, এবং এই সেন বংশের রাজারা ধর্মীয় দিক দিয়ে হিন্দু ছিল। লক্ষন সেন রাজা হয়ে তাদের রাজধানী মালদার গৌড়ে স্থানান্তর করেন এবং তার নাম অনুসারেই তিনি তার রাজধানীর নাম রাখেন লক্ষ্মণাবতী, সুতরাং আমরা বলতে পারি মালদার পূর্বের নাম ছিল লক্ষ্মণাবতী। লক্ষন সেন একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন যা বর্তমানে মালদার রামকেলিতে অবস্থিত।

মালদা জেলার কিছু ঐতিহাসিক স্থান 


কিন্তু ১২০৬ খ্রীঃ বখতিয়ার খিলজী বর্তমানের মালদা তৎকালীন লক্ষ্মণাবতীতে আক্রমন করলে লক্ষন সেন পালিয়ে গেলে সেন রাজত্ব শেষ হয় এবং মালদাতে মুসলিম শাসন শুরু হয়। বর্তমানে মালদাতে ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলো মুসলিম আমলেই তৈরি যেমন- আদিনা মসজিদ, ছোটসোনা মসজিদ,বড়সোনা মসজিদ,ফিরোজ মিনার, লোটন মসজিদ, চিকা মসজিদ এবং দাখিল দরওয়াজা ইত্যাদি। এছাড়াও বখতিয়ারের আক্রমনে দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর রাজত্বের অংশ হিসেবে মালদা সংযুক্ত হয়, তার প্রমাণ স্বরুপ রয়েছে মালদার ফিরোজ মিনার যেটি তৈরি করেন সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ।
পরবর্তীতে মুঘল রাজারা প্রায় গোটা ভারতব্যাপী রাজত্ব কায়েম করলে মালদা তার অংশ হয় এবং মালদাতে শাহ সুজা দাখিল দারয়াজা তৈরি করেন।
প্রারম্ভিক আধুনিক সময়ের মালদা:
ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের দূর্বলতার সুযোগে বাংলার নবাব শক্তিশালী হয়ে উঠে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন মুর্শিদকুলি খান, যিনি মুর্শিদাবাদ শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটিকে তার রাজধানী করেছিলেন। কিন্তু মালদার প্রতি তার আনুগত্য ধরে রেখেছিলেন।
ঔপনিবেশিক সময়কাল‌ থেকে স্বাধীনতা
১৮৫৭ সালে ইংরেজদের সাথে সিরাজদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধের পর  মালদা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। মালদা ছিল ইংরেজদের প্রথম পছন্দ তাই ইংরেজরা তাদের প্রশাসনিক সদর দফতর সেই সময় মালদাতে নির্মাণ করেন, সেই স্থান বর্তমানে ইংরেজবাজার নামে পরিচিত, এমনকি তারা মালদায় একটি কোষাগার ও আদালতও খোলেন। কিন্তু বাংলার বিপ্লব থেকে কিছুটা রেহাই পেতে এবং প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে বাংলাকে কয়েকটি জেলা ও মহকুমায় বিভক্ত করে। যার ফলে মালদা প্রথমে দিনাজপুর জেলার অংশ তারপর পূর্ণিয়া জেলা, তারপর রাজশাহী বিভাগের সাথে যুক্ত হয়, কিন্তু ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর, মালদা ভারতের সংযুক্ত হয়, এবং স্বাধীনতার পর মালদা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮১ সালে একটি পৃথক জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? বিটকয়েন দিয়ে লেনদেন কিভাবে হয়? WHAT IS BITCOIN AND CRYPTOCURRENCY? HOW DOES BITCOIN TRANSACTIONS WORK?

আগস্ট ২৩, ২০২৩

 "বিটকয়েন" শব্দটি শুনলেই মনে হয় যেন এটি ধনকুবের তার হিসাব খাতা নিয়ে হিসেব নিকেষ করছে। অনেকের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঁকি মারে যখন তারা বিটকয়েন শব্দটি শুনে। বর্তমানে বিটকয়েন দ্বারা অনলাইনে কেনাকাটার বিপুল পরিমাণ ব্যবহার মানুষ করে থাকেন, এবং বিটকয়েনের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বিশ্বের জনমানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা বাড়ছে। কিন্তু কি এই বিটকয়েন? কোন সরকার একে নিয়ন্ত্রণ করে? ভারতীয় বাজারে এর বাট্টাই (এক বিটকয়েন সমান ভারতীয় কত টাকা) বা কত? আরো বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো বিষয়ে অনেক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভুল ধারণা রয়েছে।

 বিটকয়েন 

"বিটকয়েন" আসলে এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল সেই কারেন্সি যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই, অন্য দেশের মুদ্রা যেমন ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশী টাকা, আমেরিকার ডলার যাদের ভৌত অস্তিত্ব আছে বা আপনি চাইলে কারেন্সিগুলো পকেটে বা মানিব্যাগে রেখে যে কোনো দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি হল সেই কারেন্সি যা আপনি মানিব্যাগে রাখতে পারবেন না, অর্থাৎ যে কারন্সির অস্তিত্ব শুধুমাত্র ইন্টারনেটে ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে।

Bitcoin-minning-cryptocurrency
বিটকয়েন মাইনিং 

বর্তমানে অনেক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, প্রায় চার হাজারের উপরে যেমন- বিটকয়েন, এথেরিয়াম, লাইটকয়েন, ডোজকয়েন, ফেয়ারকয়েন, মনেরো ইত্যাদি। যাদের মধ্যে ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে বিটকয়েন সবথেকে বেশী পরিচিত। ভারতীয় রুপির যেমন সংকেত ₹, তেমনি বিটকয়েনের সংকেত ₿।

গোটা বিশ্বে যত ধরনের কারেন্সি রয়েছে (তা সে ডিজিটাল হোক বা মুক্ত কারেন্সি) সবথেকে বিটকয়েনের মূল্য বেশি যার বর্তমান বাট্টা রয়েছে এক বিটকয়েন সমান ২১ লক্ষ ৭৩ হাজার ভারতীয় রুপির সমান। অবাক করার বিষয় হল জন্মলগ্ন থেকে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে যার বাট্টা শূন্য রুপি থেকে প্রায় ২২ লক্ষে পৌঁছে গেছে। এবং এটিও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্মলগ্ন

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি দ্বারা লেনদেনের যে প্রক্রিয়া চলছে তা একটি ধারনার ফসল। ভাবতেও অবাক লাগে কোনো এক ব্যক্তির বিশেষ কল্পনা বাস্তবে রূপ নেবে।

সেই ধারনাটা কি ছিল? এমন একটি কারেন্সি ব্যবস্থা চালু করা যা কোনো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না, তবুও তার গ্রহনযোগ্যতা সব দেশেই থাকবে। মূলতঃ ভারতের কারেন্সি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বাংলাদেশের কারেন্সি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আমেরিকার ফেডারাল রিজার্ভ সেই দেশের কারেন্সিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনা। এক্ষেত্রে লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না এবং এটি কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রা নয়। তবুও এর প্রচলন প্রায় সব দেশেই রয়েছে।

আরো পড়ুন - কিছু মরন ফাঁদ পাতা ভিডিও গেম।

২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনাম (প্রকৃত পরিচয় এখনো জানা যায়নি) নিয়ে কোনো এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারনা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। যেখানে ডিজিটাল কারেন্সি বিটকয়েনের ব্যবহার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি তার শ্বেতপত্রে বলেছেন- “ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল সমস্যা হলো এর চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিশ্বাস।”

এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের পরের বছরেই কম্পিউটারের অপেন সোর্স কোড গুলো ব্যবহার করে অনলাইন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের পরিষেবা শুরু করেন যা পিয়ার-টু-পিয়ার মুদ্রা বলে অভিহিত হয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনে লেনদেন

বিটকয়েন যেহেতু এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা কারেন্সি, আবার পাশাপাশি যার নিয়ন্ত্রণ কোনো প্রতিষ্ঠান দ্বারা হয় না তাই এর লেনদেনের প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতা থাকে না। উদাহরণ হিসেবে আপনি কোনো বৈদেশিক বন্ধুকে টাকা পাঠাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কোনো ব্যাঙ্কের দারস্থ হতে হবে, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধুকে বিটকয়েন পাঠাতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ওয়ালেট টু ওয়ালেট পাঠাতে হবে, এবং এদের মাঝে মধ্যস্থতা করে কম্পিউটারের বিশেষ মাইনর প্রক্রিয়া যেটি ব্লকচেইন হিসাবে পরিচিত। যার ফলে দাতা ও গ্রহীতার দুজনের পরিচয় গোপন থাকে। এবং আদান প্রদানের মধ্য যে কম্পিউটারের জটিল গানিতিক সমস্যা সমাধান করে তাকে মাইনর বলা হয়, আর এই মাইনর তার কাজের জন্য বিটকয়েন অর্জন করে। মাইনররা তাদের এই কাজটিকে BITCOIN MINNING বলে থাকেন।

বিটকয়েন লেনদেনের সমস্যা

বিটকয়েনের বিপুল চাহিদা ও জনপ্রিয়তা এবং ক্রেতা বিক্রেতার গোপনীয়তা রক্ষা এছাড়াও বহু কারন রয়েছে যার জন্যে বিটকয়েনকে অনেকে ফিউচার মানি হিসেবে মনে করছে। যার দরুন সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। তবুও এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বিটকয়েনে লেনদেন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণ কি?

বিটকয়েন-ক্রিপ্টোকারেন্সি-ডিজিটাল
ভবিষ্যতের মুদ্রা 

প্রথমতঃ- দেশীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিটকয়েনের ব্যবহার, দেশীয় অর্থনীতি বিভাগের কার্যক্ষমতা দুর্বল করে দেবে, এবং ছোট ব্যবসায়িদের ক্ষতি করবে।

দ্বিতীয়তঃ- বিটকয়েনের লেনদেনে সব কিছু গোপন থাকায় কালোধনের পরিমাণ হাজার গুণ বেড়ে যাবে।

তৃতীয়তঃ- বিটকয়েনে মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি লেনদেনে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

চতুর্থত-হ্যাকার এবং স্ক্র্যামাররা হামেশাই বিটকয়েন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যার শিকার জনগন সহজেই হতে পারে।

পঞ্চম- বিটকয়েনে বিনিয়োগে কোনো প্রকার ব্যাঙ্কিং গ্যারিন্টি না থাকায় তা যে ফেরত আসবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

এছাড়া আরো এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার জন্যে বিটকয়েনে লেনদেন অনেক দেশেই অবৈধ। এই বিষয়ে বিটকয়েনের জনক সাতোশি নাকামোতো লিখেছেন -“ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল সমস্যা হলো এর চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিশ্বাস।”

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

পাশমিনা শাল আভিজাত্যের প্রতীক ও ভারতের গর্ব ।। PASHMINA SHAWL THE PRIDE OF INDIA ।।

আগস্ট ১৬, ২০২৩

 পাশমিনা শাল, ভারতের তৈরি এবং গোটা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় তাঁত নির্মিত খুবই উচ্চমানের শাল। পাশমিনা মূলতঃ কাশ্মিরে তৈরি করা হয়, এবং যার সুনাম রয়েছে সমগ্র ভারতে। পাশমিনা শাল অন্যান্য শালের তুলনায় আরামদায়ক এবং উষ্ম। ভারত সরকারের দ্বারা ২০০৮ সালে কাশ্মিরের উৎপাদিত এই শালটিকে G.I ট্যাগ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাশমিনা শালের ব্যবহারের ইতিহাস বহু পুরাতন, ভারতীয় রাজা, মহারাজারা পাশমিনা শাল ব্যবহার করতেন। পঞ্চদশ শতকের দিকে এই পাশমিনা শালের ব্যবহার আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো, এবং এখনো কোনো বিশিষ্ট অনুষ্ঠানে সম্মান প্রদর্শনের জন্য পাশমিনা শালের ব্যবহার করা হয়।

কিভাবে তৈরী করে

পাশমিনা শাল তৈরী হয় বিশেষ প্রজাতির পাহাড়ী ছাগলের পশম দিয়ে। ছানথাঙ্গি নামক এই পাহাড়ী ছাগলের প্রজাতি মূলতঃ ভারতের কাশ্মিরের লাদাখের, হিমাচল প্রদেশের এবং নেপালের উচ্চ পাহাড়ী এলাকায় পাওয়া যায়। মাংস এবং পশম উভয়ের জন্যই ছানথাঙ্গি ছাগলের চাষ করা হয় বহুল পরিমানে। প্রথমে সুন্দর পশমযুক্ত ছানথাঙ্গি ছাগল বেছে আলাদা করে রাখা হয়, অতঃপর সেই ছাগলগুলো থেকে কাঁটাই যন্ত্র দ্বারা লোমগুলো আলাদা করা হয়ে থাকে। 

ছানথাঙ্গি ছাগল 

জমাকৃত পশম উনগুলো তাদের গুনগত মান অনুযায়ী আলাদা করা হয়, মূলতঃ ছাগলের লোমের দৈর্ঘ্য যত লম্বা ও যত পাতলা হবে সেই লোমের গুনগতমান ততবেশী মনে করা হয়। এবং, তারপর খুবই যত্ন সহকারে বাছায় করা পশমগুলো জল দিয়ে ধুয়ে সূর্যের আলোয় শুকতে দেওয়া হয়। শুকোনোর পর সেই পশমগুলো প্রচলিত স্থানীয় সুতো কাটার যন্ত্র ইয়েন্দার নামক চড়কা দ্বারা সুতোকাটা হয়, যদিও বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত সুতোকাটা যন্ত্র বহুল প্রচলিত হয়েছে। সুতো তৈরি হয়ে গেলে, সেই সুতো নক্সা অনুযায়ী শাল তৈরীর বুনোন যন্ত্রে সাজানো হয়, যেমনটা শাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এরপর শালগুলোকে রং করে, শেষবারের মতো ধুয়ে বাজারজাত করা হয়।

 নকল ও আসল

বাজারজাত পাশমিনা শাল হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করা হয়, তবে তা অবশ্যই তার গুনগত মান এবং তার নক্সার উপর নির্ভর করেই। কিন্তু বর্তমানে বাজারে এমন কৃত্রিম ফাইবারের তৈরি এমন অনেক শাল রয়েছে যা দেখে চেনা প্রায় অসম্ভব যে এটি প্রকৃত পাশমিনা শাল, নাকি অন্য কিছু। সুতরাং পাশমিনা শাল ক্ষরিদের সময় অত্যন্ত সজাগ চোখেই পাশমিনা শাল কেনা উচিত। আর এই সজাগ চোখে যে যে বিষয়গুলো নজর রাখা উচিত সেগুলো হলো - প্রথমেই বলে রাখি কৃত্রিম ফাইবারের তৈরি হলেও, তা মানুষের চুলের তুলনায় পাতলা হবেনা। সুতরাং প্রথমেই আপনাকে শাল তৈরীর সুতোর উপরেই নজর দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ অতিরিক্ত পাতলা পশম দিয়ে তৈরী হবার ফলে পাশমিনা শাল অত্যন্ত মুলায়ম। এছাড়াও লেবেল থেকে তার মান ও পরিমাণ দেখে নিতে পারেন, তবে মনে রাখবেন পাশমিনা শালে আঠা দিয়ে লেবেল লাগানো সম্ভব নয়, যদিও বর্তমানে নকল পাশমিনা শালে লেবেল সেলাই করে লাগানো হচ্ছে।

যদি এতকিছু করেও সন্তুষ্টি না আসে তবে এই দুটি বিষয় মেনে চলবেন, এক- পাশমিনা শালে বেশ পারদর্শী এমন ব্যাক্তির সাহায্য নিন। দুই- ছোট বেলার সেই মাথার চুলে কলম ঘষে স্থীর তড়িৎ দ্বারা কাগজের টুকরো হাওয়াতে উড়ানোর পরীক্ষা করতে পারেন।