রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ফুলন দেবীর ডাকাত দলের সর্দার বেনডিট কুইন থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার কাহিনী।। Phoolan Devi is the story of Bandit Queen becoming a politician ।।
কথায় বলে - নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকে তখন নির্যাতিতা নারীরাও পুরুষের মত আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। এমনি কয়েকটি বাস্তব চরিত্রের কয়েকজন নারী ছিলেন ফুলন দেবী, সীমা পরিহার,পুতলী বাঁই, মুন্নি দেবী প্রমুখ।
ভারতের ইতিহাসে এই নারীরা বিখ্যাত নাকি কুখ্যাত? বলা সম্ভব নয়, তবে তাদের জীবনি নিশ্চিত করে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের জাতিভেদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নারী নির্যাতনের ধারাবাহিকতা কতটা উলঙ্গপনাই রয়েছে, যার দরুন এই নারীরা বাধ্যতামূলক ভাবে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র এবং নিজেদের রুপান্তরিত করেছিল ডাকাতদের রানি হিসেবে। শুধুমাত্র ফুলন দেবীর উপরেই ছিল আটচল্লিশটি অপরাধের অভিযোগ, যার মধ্যে রয়েছে অপহরণ, লুটপাট এবং বাইশটি খুন, এবং সীমা পরিহারের উপরে ছিল ফুলন দেবীর থেকেও বেশী অপরাধের দায়ভার। তবুও অপরাধ জগতের গন্ডী পেরিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ তৈরি করে এক লোমহর্ষক কাহিনীর।
ফুলন দেবী
১০ আগস্ট ১৯৬৩ সালে উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামের দলিত দারিদ্র পরিবারে ছোট্ট মেয়েটি একদিন চম্বল এলাকার ত্রাস হয়ে উঠবে তার ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার বাবা দেবীদিন। কিন্তু নিয়তির খেলায় সেই ছোট্ট ফুলনী হয়ে ওঠে ডাকাত রানী।
বাবার নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে ফুলনের মামা তাদের স্থাবর অস্থাবর দখল করে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে। গরিব পিতা দেবীদিন বাধ্যতামূলক মাত্র এগারো বছর বয়সে ফুলনের বিয়ে দিয়ে দেন ৩১ বছর বয়সি পুট্টিলালের সাথে। বাল্যবিবাহের শিকার ছোট্ট ফুলন স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসে বাবার বাড়িতেই।
ফুলন দেবীর আত্মসমর্পণ |
তবুও ফুলনের জীবনের অভিশাপ পিছু ছাড়েনি, বাবু গুজ্জর নামের এক ডাকাত সর্দারের নেতৃত্বে ডাকাতের দলেরা ফুলন দেবীকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাই, সেই পুরনো জমির অমীমাংসিত কারনের জন্য, এবং এই গুজ্জর ডাকাত এবং তার সঙ্গীদের দ্বারা তাকে বারবার ধর্ষণ করা হয়।
এভাবে চলতে থাকা বিষাক্ত জীবনে কিছুটা আশার আলো দেখা দেয়। বাবু গুজ্জরের ঘনিষ্ঠ সেকেন্ড ইন কমান্ড বিক্রম মাল্লার সাথে ফুলন দেবী প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিক্রম মাল্লা হয়ে উঠে সেই ব্যাক্তি যে ডাকাত সর্দার বাবু গুজ্জরকে মেরে ফেলে ফুলন দেবীকে বিয়ে করেন এবং ডাকাত দলের নতুন সর্দার হয়ে উঠেন। বিক্রম মাল্লাই ফুলন দেবীকে রাইফেল ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেন এবং বিক্রম মাল্লার হাত ধরেই ফুলন দেবী পুরুষের মতন পোষাক পড়ে বছরের পর বছর ধরে ট্রেন ডাকাতি, বাস ডাকাতি, বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতি করতে শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে পরিচয় লাভ করে ডাকাত রাণী হিসেবে।
ফুলন দেবীর ভাগ্য পুনরায় পাল্টি খেয়ে যাই। তাদের পূর্বতন ডাকাত দলের অন্যতম প্রাক্তন সর্দার রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিং সাথে জেল থেকে মুক্তি পাই। এই দুই ডাকাত ভাইরা ছিল উচ্চ সম্প্রদায় ঠাকুর সম্প্রদায়ের (ঠাকুররা উচ্চ ক্ষত্রিয় বর্ণের উপজাতি ) লোক। তারা পুনরায় ফিরে দলে ফিরে এলে, দলের ক্ষমতা দখলের জন্য এই দুই ভাই এবং বিক্রম মাল্লার সাথে লড়াই শুরু হয়। এই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে বিক্রম মাল্লার মৃত্যুর সাথে। ফুলন দেবীর স্বামী বিক্রম মাল্লার মৃত্যু হলে রাম শিং ও তার ভাই লল্লারাম শিং ফুলন দেবীকে তাদের আগের গ্রাম বেইমাতে তুলে নিয়ে আসে। এই গ্রামে ফুলন দেবী একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হন ঠাকুর কুলের দ্বারা।
ফুলন দেবী এই নরকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। একদিন সুযোগ বুঝে তিনি সেই গ্রাম থেকে পালিয়ে যান, এবং মান শিং নামের আরেক ডাকাতের শরনাপন্ন হন। ডাকাত মান শিং এবং ফুলন দেবী আরেকটি ডাকাত দলের নির্মাণ করেন। ফুলন দেবী রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিং এবং ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেদের দ্বারা ধর্ষণের প্রতিশোধের জন্য তার দলের সাথে বেইমাতে ফিরে আসে আর শুরু করে লুন্ঠন রাজ। রাম শিং তার ভাই লল্লারাম শিংকে গ্রামে না পেয়ে ফুলন দেবী ঠাকুর কুলের বাইশজন লোককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ইতিহাসের এই হত্যা কান্ডটি বেইমাই গণহত্যা কান্ড নামে পরিচিতি পাই।
বেহমাই হত্যাকাণ্ডের পর ফুলন দেবীর জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি দুটোই বাড়তে থাকে। কেননা দলিত নারী হয়েও তিনি উচ্চ কুল ঠাকুরদের কাছ থেকে তার ধর্ষনের বদলা নিতে পেরেছিল। কিন্তু অন্যদিকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেরা ফুলন দেবীর আকস্মিক উত্থানের ভয়ে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে শুরু করে। ফলে ঠাকুর কৃষকদের চাপে পড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হয়। যার ফলে ১৯৮৩ সালে ফুলন দেবী কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে তার দলবল সহ গ্রেফতার হন।
সেই শর্তগুলো ছিল-
তার দলের কোনো সদস্যদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া যাবেনা।
আট বছরের বেশি তাদের কারাগারে পাঠানো যাবে না।
তার পরিবারের অন্যায় ভাবে দখল করা স্থাবর অস্থাবর ফিরিয়ে দিতে হবে।
তার ভাইকে একটি সরকারি চাকরি প্রদান করতে হবে।
একটি দল হিসেবে তাদের মধ্যপ্রদেশের জেলে রাখতে হবে।
শর্তসাপেক্ষে ফুলন দেবীর আট বছর না হয়ে এগারো বছরের জেল হয়। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি সমাজবাদী পার্টির সদস্য হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের সংসদ সদস্য হিসাবে লোকসভায় একটি আসন গ্রহণ করেন। এই জয়ের পিছনে তার জীবনের লড়াই সংগ্রামকে কারন হিসাবে অনেকেই বিবেচনা করেন। যাই হোক ক্ষমতা থাকা কালীন সমাজবাদী পার্টি থেকে মুলায়ম সিং যাদবের চেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু ২০০১ সালের পঁচিশে জুলাই বেইমাই গনহত্যার প্রতিশোধ স্বরুপ শের সিং রানা তাকে তার বাড়ির বাইরে গুলি মেরে হত্যা করে।
ফুলন দেবীর জীবনি এতটাই লোমহর্ষক ছিল মে তার জীবনীর উপর বলিউডে "ব্যান্ডিট কুইন" নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, যেটি গোটা বিশ্বে সারা ফেলেছিল। তার আত্মজীবনী শিরোনাম ছিল "আমি, ফুলন দেবী"। যে বইটিতে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩
রহস্যময় অন্ধ লোকেদের গ্রাম টিলটাপেক।। TILTEPEC, THE VILLAGE OF THE MYSTERIOUS BLIND PEOPLE ।।
অদ্ভুত অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এ যেন ঠাকুরমার ঝুলি থেকে পার্থিব জগতে প্রবেশ করা কোনো এক গ্রাম। যার রহস্য একুশ শতকের বৈজ্ঞানিকদের কাছেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কি সেই রহস্য! যার রহস্য উন্মোচনে সকল তাবোড় তাবোড় বৈজ্ঞানিকরা আজও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে বাস্তব পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেই গ্রামের পশু পাখি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ মানুষজন অন্ধ। সেই গ্রামটির নাম টিলটাপেক গ্রাম, অবস্থিত মেক্সিকো প্রদেশের অক্সজাকা এলাকায়।
কিন্তু এমন কেন? তার উত্তর রয়েছে দুটি, এক প্রচলিত স্থানীয় মতবাদ, দ্বিতীয়টি বৈজ্ঞানিক মতবাদ। দুটি মতবাদের মধ্যে কোনটি সঠিক তার কোনো পরীক্ষিত প্রমান নেই। তবে প্রথম মতবাদটি স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য।
প্রথম মতবাদ
প্রথম মতবাদটি কল্পকাহিনীর মতনই খুবই রোমাঞ্চকর, কোনো এক অভিষিক্ত গাছ। এই অভিষিক্ত গাছ স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে লাভাজুয়েলা গাছ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
টিলটাপেক গ্রামের অন্ধ ব্যাক্তি |
এই গ্রামের অধিবাসীদের মতে এই গাছটির অস্তিত্ব রয়েছে, এবং এই গাছের দর্শন যারা পাই (পশু পাখি যাই হোকনা কেন।) তারা চিরতরে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে বা অন্ধ হয়ে যাই। তাদের মুখে এই অভিষিক্ত গাছের বিষয়ে একটি লোককথা শোনা যায়। সেই গল্পটি হল নিম্নরূপ-
এক সময় এই টিলটাপেক গ্রামে লাভাজুয়েলা নামে এক দর্শনীয়, অহংকারী, দয়ামায়া হীন এক যুবক বাস করতো। সে একদিন জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে পরে। শিকার করার সময় সে খুবই সুন্দর হরিণ দেখতে পাই। লাভাজুয়েলা সেই হরিণটিকে তির দিয়ে মারতে গেলে হরিণটি মানুষের সুরে বলে উঠে - আমাকে মেরো না আমি ভগবানের দ্বারা পাঠানো এক দূত, আমাকে মারলে তোমাদেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু লাভাজুয়েলা তার কোনো কথা না শুনে অহংকারের সাথে ভগবানের তাচ্ছিল্য করে এবং তির দিয়ে হরিণটিকে বিদ্ধ করে। বিদ্ধ হবার সাথে সাথেই সাদা উজ্জ্বল আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার সাথেই লাভাজুয়েলা তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। লাভাজুয়েলা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার পরেই তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পড়ে। এই অন্ধ অবস্থায় সে টিলটাপেক গ্রামে পৌঁছলে গ্রামের সকলকে তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণে ব্যাক্ষা দেয়। এতে গ্রামের মানুষজন লাভাজুয়েলার উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কেননা গ্রামবাসীদের মতে লাভাজুয়েলা গ্রামে প্রবেশ করাই সেই অভিশাপ গ্রামেও প্রবেশ করবে। তাই গ্রামের সকলে লাভাজুয়েলাকে তাড়িয়ে দেই। লাভাজুয়েলা অনুতপ্ত হয়ে শিকার করার স্থানে গিয়ে বুঝতে পারে যে, ঠিক যেই স্থানে সে হরিণটিকে বিদ্ধ করেছিল ঠিক সেই স্থানেই লতাপাতাহীন, কাঁটাযুক্ত একটি গাছের উদয় হয়েছে। লাভাজুয়েলা সেই গাছের সামনে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা যাচনা করে। কিন্তু গাছটি সেই স্থানেই বিদ্যমান ছিল, এবং সেই গাছের নিচেই লাভাজুয়েলা মারা যাই। লাভাজুয়েলা মারা যাবার পর তার এই কৃতকর্মের ফল টিলটাপেক গ্রামকে বহন করতে হয় এখনো। সেই থেকেই এই গাছের নাম রাখা হয়েছে লাভাজুয়েলা।
শিল্পীর চোখে টিলটাপেক অন্ধদের গ্রাম |
লোককথা অনুযায়ী এই গাছ যারা দেখে তারা তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে পরে।
দ্বিতীয় মতবাদ
এই মতবাদ বৈজ্ঞানিক মতবাদ তবে এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত নয়। বৈজ্ঞানিকদের মতে টিলটাপেক গ্রামের এই পরিস্থিতির পিছনে দায়ি এক বিশেষ ধরনের বিষাক্ত মাছি। এই মাছি যাদের কামড়ায় তারা এক বিশেষ ধরনের পরজিবীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিজেদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে, তা সে পশুপাখি বা মানুষই হোক না কেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি বৈজ্ঞানিক মতবাদ হলেও, এর কোনো প্রমাণ নেই। কেনোনা এযাবৎ যতজন বৈজ্ঞানিকরা টিলটাপেক গ্রামে গেছেন তারা শুধুমাত্র স্বল্প দিনের পরিদর্শনের জন্যে গেছেন। কেনোনা তাদের মধ্যেও সেই একই, অন্ধ হবার ভয়টাই কাজ করে।
তাছাড়াও শহর থেকে গভীর জঙ্গলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সরঞ্জামসহ এমন একটি গ্রামে যেখানে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় রয়েছে, সেই গ্রামে বৈজ্ঞানিকদের দল যেতে খুব একটা সাহস পায় না। যার দরুন এই অন্ধদের গ্রামের এই রহস্য এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছে।
বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩
বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? বিটকয়েন দিয়ে লেনদেন কিভাবে হয়? WHAT IS BITCOIN AND CRYPTOCURRENCY? HOW DOES BITCOIN TRANSACTIONS WORK?
"বিটকয়েন" শব্দটি শুনলেই মনে হয় যেন এটি ধনকুবের তার হিসাব খাতা নিয়ে হিসেব নিকেষ করছে। অনেকের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঁকি মারে যখন তারা বিটকয়েন শব্দটি শুনে। বর্তমানে বিটকয়েন দ্বারা অনলাইনে কেনাকাটার বিপুল পরিমাণ ব্যবহার মানুষ করে থাকেন, এবং বিটকয়েনের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বিশ্বের জনমানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা বাড়ছে। কিন্তু কি এই বিটকয়েন? কোন সরকার একে নিয়ন্ত্রণ করে? ভারতীয় বাজারে এর বাট্টাই (এক বিটকয়েন সমান ভারতীয় কত টাকা) বা কত? আরো বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো বিষয়ে অনেক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভুল ধারণা রয়েছে।
বিটকয়েন
"বিটকয়েন" আসলে এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল সেই কারেন্সি যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই, অন্য দেশের মুদ্রা যেমন ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশী টাকা, আমেরিকার ডলার যাদের ভৌত অস্তিত্ব আছে বা আপনি চাইলে কারেন্সিগুলো পকেটে বা মানিব্যাগে রেখে যে কোনো দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি হল সেই কারেন্সি যা আপনি মানিব্যাগে রাখতে পারবেন না, অর্থাৎ যে কারন্সির অস্তিত্ব শুধুমাত্র ইন্টারনেটে ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে।
বিটকয়েন মাইনিং |
বর্তমানে অনেক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, প্রায় চার হাজারের উপরে যেমন- বিটকয়েন, এথেরিয়াম, লাইটকয়েন, ডোজকয়েন, ফেয়ারকয়েন, মনেরো ইত্যাদি। যাদের মধ্যে ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে বিটকয়েন সবথেকে বেশী পরিচিত। ভারতীয় রুপির যেমন সংকেত ₹, তেমনি বিটকয়েনের সংকেত ₿।
গোটা বিশ্বে যত ধরনের কারেন্সি রয়েছে (তা সে ডিজিটাল হোক বা মুক্ত কারেন্সি) সবথেকে বিটকয়েনের মূল্য বেশি যার বর্তমান বাট্টা রয়েছে এক বিটকয়েন সমান ২১ লক্ষ ৭৩ হাজার ভারতীয় রুপির সমান। অবাক করার বিষয় হল জন্মলগ্ন থেকে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে যার বাট্টা শূন্য রুপি থেকে প্রায় ২২ লক্ষে পৌঁছে গেছে। এবং এটিও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্মলগ্ন
বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি দ্বারা লেনদেনের যে প্রক্রিয়া চলছে তা একটি ধারনার ফসল। ভাবতেও অবাক লাগে কোনো এক ব্যক্তির বিশেষ কল্পনা বাস্তবে রূপ নেবে।
সেই ধারনাটা কি ছিল? এমন একটি কারেন্সি ব্যবস্থা চালু করা যা কোনো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না, তবুও তার গ্রহনযোগ্যতা সব দেশেই থাকবে। মূলতঃ ভারতের কারেন্সি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বাংলাদেশের কারেন্সি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আমেরিকার ফেডারাল রিজার্ভ সেই দেশের কারেন্সিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনা। এক্ষেত্রে লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না এবং এটি কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রা নয়। তবুও এর প্রচলন প্রায় সব দেশেই রয়েছে।
আরো পড়ুন - কিছু মরন ফাঁদ পাতা ভিডিও গেম।
২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনাম (প্রকৃত পরিচয় এখনো জানা যায়নি) নিয়ে কোনো এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারনা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। যেখানে ডিজিটাল কারেন্সি বিটকয়েনের ব্যবহার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি তার শ্বেতপত্রে বলেছেন- “ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল সমস্যা হলো এর চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিশ্বাস।”
এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের পরের বছরেই কম্পিউটারের অপেন সোর্স কোড গুলো ব্যবহার করে অনলাইন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের পরিষেবা শুরু করেন যা পিয়ার-টু-পিয়ার মুদ্রা বলে অভিহিত হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনে লেনদেন
বিটকয়েন যেহেতু এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা কারেন্সি, আবার পাশাপাশি যার নিয়ন্ত্রণ কোনো প্রতিষ্ঠান দ্বারা হয় না তাই এর লেনদেনের প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতা থাকে না। উদাহরণ হিসেবে আপনি কোনো বৈদেশিক বন্ধুকে টাকা পাঠাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কোনো ব্যাঙ্কের দারস্থ হতে হবে, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধুকে বিটকয়েন পাঠাতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ওয়ালেট টু ওয়ালেট পাঠাতে হবে, এবং এদের মাঝে মধ্যস্থতা করে কম্পিউটারের বিশেষ মাইনর প্রক্রিয়া যেটি ব্লকচেইন হিসাবে পরিচিত। যার ফলে দাতা ও গ্রহীতার দুজনের পরিচয় গোপন থাকে। এবং আদান প্রদানের মধ্য যে কম্পিউটারের জটিল গানিতিক সমস্যা সমাধান করে তাকে মাইনর বলা হয়, আর এই মাইনর তার কাজের জন্য বিটকয়েন অর্জন করে। মাইনররা তাদের এই কাজটিকে BITCOIN MINNING বলে থাকেন।
বিটকয়েন লেনদেনের সমস্যা
বিটকয়েনের বিপুল চাহিদা ও জনপ্রিয়তা এবং ক্রেতা বিক্রেতার গোপনীয়তা রক্ষা এছাড়াও বহু কারন রয়েছে যার জন্যে বিটকয়েনকে অনেকে ফিউচার মানি হিসেবে মনে করছে। যার দরুন সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। তবুও এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বিটকয়েনে লেনদেন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণ কি?
ভবিষ্যতের মুদ্রা |
প্রথমতঃ- দেশীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিটকয়েনের ব্যবহার, দেশীয় অর্থনীতি বিভাগের কার্যক্ষমতা দুর্বল করে দেবে, এবং ছোট ব্যবসায়িদের ক্ষতি করবে।
দ্বিতীয়তঃ- বিটকয়েনের লেনদেনে সব কিছু গোপন থাকায় কালোধনের পরিমাণ হাজার গুণ বেড়ে যাবে।
তৃতীয়তঃ- বিটকয়েনে মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি লেনদেনে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
চতুর্থত-হ্যাকার এবং স্ক্র্যামাররা হামেশাই বিটকয়েন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যার শিকার জনগন সহজেই হতে পারে।
পঞ্চম- বিটকয়েনে বিনিয়োগে কোনো প্রকার ব্যাঙ্কিং গ্যারিন্টি না থাকায় তা যে ফেরত আসবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
এছাড়া আরো এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার জন্যে বিটকয়েনে লেনদেন অনেক দেশেই অবৈধ। এই বিষয়ে বিটকয়েনের জনক সাতোশি নাকামোতো লিখেছেন -“ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল সমস্যা হলো এর চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিশ্বাস।”
বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩
পাশমিনা শাল আভিজাত্যের প্রতীক ও ভারতের গর্ব ।। PASHMINA SHAWL THE PRIDE OF INDIA ।।
পাশমিনা শাল, ভারতের তৈরি এবং গোটা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় তাঁত নির্মিত খুবই উচ্চমানের শাল। পাশমিনা মূলতঃ কাশ্মিরে তৈরি করা হয়, এবং যার সুনাম রয়েছে সমগ্র ভারতে। পাশমিনা শাল অন্যান্য শালের তুলনায় আরামদায়ক এবং উষ্ম। ভারত সরকারের দ্বারা ২০০৮ সালে কাশ্মিরের উৎপাদিত এই শালটিকে G.I ট্যাগ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাশমিনা শালের ব্যবহারের ইতিহাস বহু পুরাতন, ভারতীয় রাজা, মহারাজারা পাশমিনা শাল ব্যবহার করতেন। পঞ্চদশ শতকের দিকে এই পাশমিনা শালের ব্যবহার আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো, এবং এখনো কোনো বিশিষ্ট অনুষ্ঠানে সম্মান প্রদর্শনের জন্য পাশমিনা শালের ব্যবহার করা হয়।
কিভাবে তৈরী করে
পাশমিনা শাল তৈরী হয় বিশেষ প্রজাতির পাহাড়ী ছাগলের পশম দিয়ে। ছানথাঙ্গি নামক এই পাহাড়ী ছাগলের প্রজাতি মূলতঃ ভারতের কাশ্মিরের লাদাখের, হিমাচল প্রদেশের এবং নেপালের উচ্চ পাহাড়ী এলাকায় পাওয়া যায়। মাংস এবং পশম উভয়ের জন্যই ছানথাঙ্গি ছাগলের চাষ করা হয় বহুল পরিমানে। প্রথমে সুন্দর পশমযুক্ত ছানথাঙ্গি ছাগল বেছে আলাদা করে রাখা হয়, অতঃপর সেই ছাগলগুলো থেকে কাঁটাই যন্ত্র দ্বারা লোমগুলো আলাদা করা হয়ে থাকে।
ছানথাঙ্গি ছাগল |
জমাকৃত পশম উনগুলো তাদের গুনগত মান অনুযায়ী আলাদা করা হয়, মূলতঃ ছাগলের লোমের দৈর্ঘ্য যত লম্বা ও যত পাতলা হবে সেই লোমের গুনগতমান ততবেশী মনে করা হয়। এবং, তারপর খুবই যত্ন সহকারে বাছায় করা পশমগুলো জল দিয়ে ধুয়ে সূর্যের আলোয় শুকতে দেওয়া হয়। শুকোনোর পর সেই পশমগুলো প্রচলিত স্থানীয় সুতো কাটার যন্ত্র ইয়েন্দার নামক চড়কা দ্বারা সুতোকাটা হয়, যদিও বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত সুতোকাটা যন্ত্র বহুল প্রচলিত হয়েছে। সুতো তৈরি হয়ে গেলে, সেই সুতো নক্সা অনুযায়ী শাল তৈরীর বুনোন যন্ত্রে সাজানো হয়, যেমনটা শাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এরপর শালগুলোকে রং করে, শেষবারের মতো ধুয়ে বাজারজাত করা হয়।
নকল ও আসল
বাজারজাত পাশমিনা শাল হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করা হয়, তবে তা অবশ্যই তার গুনগত মান এবং তার নক্সার উপর নির্ভর করেই। কিন্তু বর্তমানে বাজারে এমন কৃত্রিম ফাইবারের তৈরি এমন অনেক শাল রয়েছে যা দেখে চেনা প্রায় অসম্ভব যে এটি প্রকৃত পাশমিনা শাল, নাকি অন্য কিছু। সুতরাং পাশমিনা শাল ক্ষরিদের সময় অত্যন্ত সজাগ চোখেই পাশমিনা শাল কেনা উচিত। আর এই সজাগ চোখে যে যে বিষয়গুলো নজর রাখা উচিত সেগুলো হলো - প্রথমেই বলে রাখি কৃত্রিম ফাইবারের তৈরি হলেও, তা মানুষের চুলের তুলনায় পাতলা হবেনা। সুতরাং প্রথমেই আপনাকে শাল তৈরীর সুতোর উপরেই নজর দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ অতিরিক্ত পাতলা পশম দিয়ে তৈরী হবার ফলে পাশমিনা শাল অত্যন্ত মুলায়ম। এছাড়াও লেবেল থেকে তার মান ও পরিমাণ দেখে নিতে পারেন, তবে মনে রাখবেন পাশমিনা শালে আঠা দিয়ে লেবেল লাগানো সম্ভব নয়, যদিও বর্তমানে নকল পাশমিনা শালে লেবেল সেলাই করে লাগানো হচ্ছে।
যদি এতকিছু করেও সন্তুষ্টি না আসে তবে এই দুটি বিষয় মেনে চলবেন, এক- পাশমিনা শালে বেশ পারদর্শী এমন ব্যাক্তির সাহায্য নিন। দুই- ছোট বেলার সেই মাথার চুলে কলম ঘষে স্থীর তড়িৎ দ্বারা কাগজের টুকরো হাওয়াতে উড়ানোর পরীক্ষা করতে পারেন।
শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩
সাপ কামড়ালে বেঁজীর বিষ লাগেনা ।। WHY MONGOOSE SERVIVE FROM SNAKE BITE ।।
"দাঁ কুড়াল সম্পর্ক' "সাপ বেঁজীর সম্পর্ক ' এই দুটি একই প্রবাদ বহন করে। প্রচন্ড শক্তিশালী দুটি বিরোধী একে অপরকে শেষ করতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মঞ্চে উপস্থিত হয় একে অপরের সামনে এলেই। এক সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মোড়গ লড়াই, সাপ বেঁজীর লড়াই মানুষের কাছে বিনোদনের খোরাক যোগাত। একদিকে বিষধর সাপ অপরদিকে ক্ষীপ্র স্বভাবের নেউলে, যুদ্ধ চলে কোনো এক প্রতিদ্বন্দ্বির মৃত্যু পর্যন্ত।
বর্তমানে খুব অল্প কিছু প্রান্তে মোড়গ লড়াইয়ের অস্তিত্ব থাকলেও বাঁধ সেধেছে সাপ বেঁজীর লড়াইয়ে। ওয়াল্ড লাইফ প্রটেকশন এক্ট ১৯৭২ দ্বারা যা বন্ধ হয়ে পরে।
লড়াইগুলোতে সাপের দংশনে নেউলের কোনো প্রকার ক্ষতি হয়না। জনশ্রুতি আছে যে নেউলে বা বেঁজী বিষ প্রতিরোধের গোপন ভেষজের জানকারী রাখে। কিন্তু এটি একপ্রকার জনশ্রুতি, বাস্তবতা নয়। তাহলে বাস্তবতা কি, সাপ কামড়ালে বেজীর কেনো বিষ লাগেনা?
সাপের বিষে কি রয়েছে?
সাপের বিষে যেগুলি রয়েছে তার বেশিরভাগ রয়েছে প্রোটিনের যৌগ, কিছু ইনজাইম , এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ, যেমন - জিংক সালফাইড, ক্যাটালেজ ইত্যাদি মিশ্রিত হয়ে জটিল রাসায়নিক যৌগ বিভিন্ন প্রকারের টক্সিক তৈরি করে।
সাপ বেঁজীI |
বেঁজীর কেনো বিষ লাগেনা
শুধু বেঁজী নয়, ঘোড়ারও বিষ লাগেনা, তার কয়েকটি কারন আছে।
প্রথমতঃ বেঁজীর শরীর অতিরিক্ত লোমশ প্রকৃতির হবার ফলে, সাপের পক্ষে দংশন করে বিষ দাঁত দ্বারা বিষ বেঁজীর শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয় না।
দ্বিতীয়তঃ বেঁজী এবং সাপ একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বির রূপে দেখে থাকে, সুতরাং এই দুটি প্রজাতি সামনাসামনি এলে লড়াই অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, যেখানে নেউলে শিকারীর ভূমিকাই, এবং সাপ শিকারের ভূমিকাই থাকে, ফলে বেঁজীর ক্ষিপ্রতার সামনে সাপের দংশনের সাফল্য খুব নগণ্য হয়ে পরে।
বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩
ভাষা হারানোর শঙ্কায় ওরাওঁ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী। LANGUAGE OF ORAWN TRIBE COMMUNITYওরা ।।
ওরাওঁ পদবী যুক্ত ছেলেটি অনর্গল হিন্দীতে কথা বলেই চলেছে, বাড়ি উত্তরবঙ্গের পাহাড় ঘেঁষা সমতলে। আমি খুব একটা হিন্দীতে সাবলীল না, তাই যতটা পারি হিন্দীতে জিগ্যেস করলাম- আর কোন কোন ভাষা বলতে পারো? উত্তরে জানালো সাদরী। প্রশ্ন করলাম কুরুখ জানো না। ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে জানালো না। আমি এতদিন যা জানতাম ওরাঁও রা যে ভাষায় কথা বলেন, তার নাম কুরুখ ভাষা।
তার ঠাম্মার সাথে খানিকটা আলাপের সুযোগ হল, সে জানালো এই এলাকায় এখন গোনা কয়েকজন কুরুখ ভাষা বলতে পারে। আর এও জানালো যে তাদের প্রচলিত ভাষা কুরুখ এখন হারানোর মুখে।
কুরুখ ভাষা
কুরুখ ভাষা দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত হলেও, এই ভাষার সাথে কঙ্কনি ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে। এর পেছনে ভাষাবিদরা এবং নৃতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে কঙ্কন এলাকায় ওরাঁওদের আদি বাসস্থান ছিল, তার ফলে ভাষায় এই সংমিশ্রণ ঘটেছে। বর্তমানের নতুন প্রজন্মের ওরাওঁরা দুটি ভাষাকে আপন করে নিয়েছে একটি কুরুক অপরটি শাদরী। বর্তমানে শাদরী বহুল প্রচলিত। এ ভাষাটি দ্বারা শুধু বলা সম্ভব ছিল, কিন্তু লেখা সম্ভব ছিল না; কেননা এর বর্ণমালায় ছিল না । যার ফলে তাদের সাহিত্য এবং লোককথা মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে, কিন্তু সমস্যার সমাধান করা গেছে তোরঙ লিপির সাহায্য। ডাক্তার নারায়ন ওঁরাও, একজন মেডিকেল ডাক্তার, কুরুখ ভাষার জন্য তোলং সিকি লিপি উদ্ভাবন করেছেন।
ওঁরাও সম্প্রদায় |
আবার হিন্দী ভাষার সাথে সাদরী ভাষায় কতিপয় মিল থাকার দরুন সাদরী ভাষাকে দেবনাগরী লেখন পদ্ধতিতে লৌখিক রুপ দেওয়া গেছে।
সমস্যা কোথায়?
বলা বাহুল্য, যে ভাষার লোকসংখ্যার আধিক্য এবং লিপির প্রচলন রয়েছে, সেই ভাষার স্থায়িত্বও অনেক বেশি। মজার বিষয় হলো ২৩% ওঁরাও কুরুখ ভাষায় কথা বললেও ভাষাটিকে বিপন্নপ্রায় ভাষার তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
কেননা, সাদরী এবং কুরুখ ভাষার সহবস্থানে সাদরি ভাষার গ্রহনযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি। এখানে অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, এতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা রয়েছে, ভারতের ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও ওরাঁওদের বাসস্থান রয়েছে। কুরুখ ভাষার প্রাচুর্য থাকার দরুন ওরাঁওদের কুরুখ জাতিও বলা হত। বিশিষ্ট ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসক স্যার হারবার্ট হোপ রিসলে তার লিখিত পুস্তকে বর্ননা করেছেন ওরাওঁরা দ্রাবিড়ীয়ান (আবার কোথাও কোথাও প্রোটো অষ্ট্রলয়েড বলা হয়েছে) জ এওনগোষ্ঠীর লোক। তথাপি এদের ভাষাটি ও দ্রাবিড় গোত্রীয় ভাষা। সুতরাং সাদরী এবং কুরুখ এই দুটি ভাষার মধ্যে কোনটি প্রকৃত ভাষা, এতে দোটানায় ভোগে অনেকে। আবার এও দেখা গেছে যে যেসব স্থানে মুন্ডা, সান্থাল, ওরাওঁদের সহবস্থান রয়েছে, সেখানে কুরুখ ভাষার গ্রহনযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত অনেক কমেছে।
মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩
ভারতে মালো আদিবাসী কারা ? মালোদের বিষয়ে কিছু তথ্য। INDIAN TRIBE COMMUNITY MALO ।
মালো আর মালপাহাড়ির, কখনও বা মালো ওঁরাও আবার খুবই কিঞ্চিৎ পরিমানে এই তিনটির স্থান বেশে সহবস্থান তাদের জাতি গত পরিচয়ে অনেকেরই কাছে ভুলভ্রান্তির সৃষ্টি করে থাকে, কেননা চরিত্র গত, রুচি গত, ব্যবহার গত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংষ্কৃতি গত মেলবন্ধন থাকার ফলে এমনটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে জনমানবে।
আদিবাসী মালোরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুবই অল্প সংখ্যায় ছরিয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, ফলস্বরূপ মালোদের মধ্যে সংষ্কৃতিক উন্নয়ন থমকে রয়েছে বললেই চলে।
ব্রিটিশ ভারতে চায়ের বাগান তথা রেলপথ স্থাপনে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণ করার সুবাদে আদিবাসী মালোরা পূর্ব তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিগত পরিচয়
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচি এলাকায় এদের অবস্থান ছিল এবং কালক্রমে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। মালোরা দ্রাবিড়ীয়ান জাতি গোষ্ঠীর হবার সুবাদে , দ্রাবিড়ীয়ান অন্য জাতিবর্গের সাথে মিল পাওয়া যায়। মালো এবং অন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিল থাকার দরুন মালোরা প্রায়শই আত্ম পরিচয় হীনতায় ভুগে থাকেন। যার ফলস্বরূপ কিছু কিছু মালোরা তাদের পরিচয় অক্ষত রাখতে "মালো" শব্দটিকেই টাইটেল হিসেবে ব্যবহার করে। তবে এছাড়াও মালোরা নায়েক, রাজ, শিং, সরকার, মন্ডল, ভূঁঞা পদবীকে টাইটেল হিসেবে ব্যবহার করেন।
মালো মহিলা |
ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের জীবিকা তাদের পরিচয় বহন করে, যেমন কারো পেশা মধু সংগ্রহ, আবার কারো বাঁশের বিভিন্ন দ্রব্যাদী তৈরি, কিন্তু মালোদের বিষয়ে সঠিক ভাবে বলা না গেলেও মনে করা হয় তাদের প্রধান জীবিকা ছিল মাছ ধরা। তবে বর্তমানে এদের বেশিরভাগই চাষবাসকে প্রধান জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে (এর অর্থ এই নয় যে এরা অন্য কাজ করে না।)।
মালোদের ইতিহাস
মালোরা বরাবরই শান্তিপ্রিয় জাতি, তথাপি ঝাড়খন্ড প্রদেশ থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ার সুবাদে তাদের মৎস্য শিকারের জায়গা থেকে সরে পড়লে, মালোরা চাষবাসের কাজে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেয়, কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের লাগামহীন কর এবং অত্যাচারে এরাও কৃষক বিদ্রোহী গুলিতে শামিল হয়। এই সময় বৃটিশ সরকারের হয়ে কর ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতো জমিদাররা, কিন্তু কৃষক বিদ্রোহে কৃষকদের পরাজয় কালক্রমেই মালোদের জমিদারের আশ্রিত প্রজাতে পরিণত করে। এইভাবে মালোরা কখনো জমিদারের ঘোড়ার, কখনও জমিদারের লাঠিয়াল, কখনও গোবাদি পশুর দেখভাল, ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে তাদের একপ্রকার স্বকীয়তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সমাজ ব্যবস্থা
রিজলে, বুচানান প্রমূখ তাদের আদিবাসী বিষয়ক পুস্তকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে কিছু তথ্য প্রদান করেছেন, যা কালক্রমে বিভিন্ন স্থানে পরিবর্তন হয়েছে, তাদের মতে মালোরা সাদরি ভাষায় কথা বলে, তবে স্থান ভেদে বিভিন্ন স্থানে বাংলা অপভ্রংশ, অথবা হিন্দি অপভ্রংশ (বাংলা এবং হিন্দি মিশ্রিত দ্রাবিড় গোত্রীয় ভাষা) ব্যবহার করে থাকে। রিজলে তার পুস্তকে বর্ননা করেছেন - অন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মত মালোদেরও সমাজে মাঝিহারাম (মোড়ল) দ্বারাই সমাজ ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এবং মাঝিহারামকে সহযোগিতা করতে আরো বিশেষ দুটি পদ পারমানিক ও গুরদিক রয়েছে।
আরো পড়ুন - বোকা আদিবাসী চালাক হও সময় হয়েছে পরিবর্তনের।।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পিতার পরেই বড় ভাইয়ের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেন মালোরা। মালোদের প্রকৃত ধর্ম বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা না গেলেও, বর্তমানে মালোদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের আধিক্য দেখা যায়, তবে হিন্দু ধর্মে মালোদের নিম্নবর্গের মনে করা হয়, যার ফলে মালোদের বেশ কিছু অংশ বিশেষতঃ বাংলাদেশে তাদের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আকর্ষণ দেখা গেছে। অন্য ভারতীয়দের মত এরাও ভাত, সব্জী, মাংস হিসেবে মুরগি, ছাগল, শূয়োরের মাংস খেয়ে থাকে, তবে যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী তারা শূকর খান না। উৎসবের আয়োজনে হাড়িয়া প্রধান পানীয় হয়ে ওঠে।
মালোদের বিষয়ে কিছু কথা
একসময় মালোদের স্বকীয়তা ছিল হয়তো, আমার মতে তা হারিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত, কারন হিসেবে বলা যেতে পারে অশিক্ষা, নিজস্বতার প্রতি ওয়াকিবহাল না থাকা ইত্যাদি। প্রথমেই মনে করিয়ে দিই যে মালোরা এমন একটি জাতি যারা আত্মপরিচয়ের অভাবে ভুগছে, পাশাপাশি শিং, মন্ডল, সরকার ইত্যাদি পদবী গুলোকে ব্যবহার করাই তাদের প্রকৃত পরিচয় নষ্ট হচ্ছে। আবার ইতিহাস বলছে জমিদারের আমলে তারা ঘাসী, বুনি হিসেবে পরিচয় পেয়েছিল, যা তাদের গানেও বর্তমান ‘রাঁচি থেকে আসলো ঘাসী, তারপর হলো আদিবাসী।’ এই সমস্ত বিষয়গুলো থেকে অনুমেয় যে তারা তাদের পরিচয় রক্ষার্থে খুব একটা সচেষ্ট নন, তার ফলস্বরুপ তারা আদিবাসী অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পাশাপাশি অশিক্ষা তাদের অগ্রগতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আবার স্বল্প বয়সে বিয়ে এদের মধ্যে খুব দেখা যায় ফলে অপরিপক্ক অবস্থায় পিতা মাতায় পরিনত হওয়া মালোরা আগামী প্রজন্মকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারে না। বর্তমানে বাংলা ভাষাকে প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করলেও যেখানে অন্য আদিবাসীদের সহবস্থান দেখা যায় সেখানে মালোরা সেই ভাষাকেই আপন ভাষা হিসেবে করায়ত্ত করে ফেলে, উদাহরণ স্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় মালোদের সংখ্যা তুলনামূলক অন্য সকল রাজ্য থেকে বেশি, তবে ওঁরাওদের সাথে সহবস্থান মালোদের ভাষাকে সাদড়ী ভাষায় পরিনত করেছে। যা একপ্রকার ভাষা গ্রাস বলা যেতে পারে।
শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
ভারতের নতুন শিক্ষা ব্যাবস্থায় কি পরিবর্তন হয়েছে? What has changed in India's new education system?
" সব শিক্ষাই ভিক্ষার শিক্ষা, নাচে ঘ্যামটা ঘুমটা খোলে ......................... হবি তো কেরানী নাকে চশমা খুঁজে।" নচিকেতার গানের এই কয়েকটি লাইনের যথার্থ কতখানি, বলা মুশকিল, কিন্তু ২০২৩ এ যে নতুন শিক্ষানিতী এসেছে তাতে নচিকেতার এই গানটি যথার্থ হারাতে চলেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অঢেল পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের নাম বদলে, হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রক। তার সাথে থাকছে প্রচুর পদক্ষেপ। সুতরাং বলাই যেতে পারে শুধু কেরানি তৈরি করা নয়, প্রকৃত শিক্ষায় গুরুত্বের পাশাপাশি গুরুত্ব ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞানমনস্ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে। অন্যদিকে নতুন শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশ হবার সাথে সাথে বিরোধী দলগুলো নতুন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে উগরে দিচ্ছেন তাদের ক্ষোভ। তাদের মতে এই নতুন শিক্ষানীতির পরিনতিতে ক্ষতি হবে ছাত্রছাত্রীদের।
নতুন শিক্ষানীতি ভারতকে কোন পথে নিয়ে যাবে? সেটাই দেখার |
ব্যক্তিগত মতামতের আঙ্গিকে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো না খারাপ বলা কঠিন।
ক্লাস ৬ থেকেই ভোকেশনাল ট্রেনিং।
সব কিছু চুরি যেতে পারে, শুধু হাতের কাজ না। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা এর আগে প্রতিষ্ঠিত ছিল না, এমনটা বলা বোধহয় বোকামি হতে পারে। তবে তা ছিল ঐচ্ছিক এবং একটি নির্দিষ্ট সময় এবং বিভিন্ন যোজনার দ্বারাই এই বিষয়টির দেখাশোনা করা হতো। কিন্তু এখন থেকে আর তেমনটি থাকছে না ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। ফলে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা চাকরির বাইরে অন্য কিছু করতে চাই, অথবা যে সব ছাত্র ছাত্রী প্রথাগত লেখাপড়ায় তেমন পারদর্শী নয় তাদের সুযোগ থাকবে এই ভোকেশনাল ট্রেনিং দ্বারা নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার, এবং সব ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেই তা গ্রহণযোগ্য। ধরা যাক, কেউ ইলেক্ট্রিকের কাজ অথবা মোটর ভিহিকেলের কাজ শিখতে চাই তবে সে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শিখতে পারে।
থাকছে না বিজ্ঞান ও কলা পার্থক্য
হয়তো আর কোনো গৃহ শিক্ষক শিক্ষিকাকে শুনতে হবেনা -" আমি অংক ভালো বুঝি, কিন্তু রসায়ন আমার মাথায় একটুও ঢুকে না।" অথবা অন্য কিছু, এখন সেই বেড়াজাল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে
বিজ্ঞান পড়লেই কলা বিভাগের সাবজেক্ট নিতে পারবেনা, সে ব্যাপারটা আর থাকছে না। ছাত্রছাত্রীরা তার পছন্দমতো বিষয়সমূহ , অন্য ভাবে বলতে গেলে তাদের যে সমস্ত বিষয়গুলো জানতে পড়তে ভালো লাগে ( তা বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বা যেকোনো বিভাগের হোক না কেনো।) তবে সে তা নিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ একজন ছাত্র রসায়ন নিয়ে পড়ার সাথে সাথে ইতিহাস নিয়েও পড়তে পারে। সুতরাং এখন আলাদা করে বিজ্ঞান, কলা, বানিজ্য থাকছে না।
ভাংতে চলেছে পুরোনো প্রথা
এমনিতেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক গুরুত্ব কমে গিয়েছিল, কিন্তু এবার তার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে, কেননা ১০+২ উঠে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় রয়েছে নজরকাড়া বহুল পরিবর্তন। প্রাথমিক স্তরে চার বছরের মডেল রুপান্তরিত ৫ বছরে, আর এই স্তরেই জোর দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষা শিক্ষার উপর। এরপর তিন বছর অষ্টম প্রযন্ত মাতৃভাষার শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সাবজেক্টিভ বিষয়গুলোকে অহেতুক সম্প্রসারিত সিলেবাস থেকে সরিয়ে পাঠের পয়েন্ট টু পয়েন্ট আলোচনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই ছাত্রছাত্রীরা চাইলে কম্পিউটার কোডিং শিখতে পারবে। এরপর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই চার বছর উচ্চ বুনিয়াদি শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পুর্বের ১০+২ ব্যাবস্থা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয়টি হল পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা (Graduation) মডেল, কেন তা পরে আলোচনা করছি। এখানেও পূর্বের তিন বছরের মডেল সরিয়ে চার বছরের গ্রাজুয়েশন করা হয়েছে। আগে তিন বছরের শিক্ষা শেষে উচ্চ শিক্ষার (Graduation) মর্যাদা পেত, তবে তা পরিবর্তন করে প্রথম বছর শেষে সার্টিফিকেট, দ্বিতীয় বছর শেষে ডিপ্লোমা, তৃতীয় বছরে ব্যাচেলার, এভাবে চতুর্থ বছরের ব্যাচেলর উইথ রিসার্চ শেষে সরাসরি পিএইচডি করার সুযোগ থাকছে।এর আগে স্নাতকোত্তরে ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর না হলে পিএইচডি করা যেত না, এখন তা সম্ভব হবে। পাশাপাশি স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি এর মধ্যবর্তী এম ফিল উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুরোনো শিক্ষা থেকে মুক্তি |
সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন নামেও পরিবর্তন এনে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের নাম বদলে, হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রক। শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সরকারের জিডিপি তে হস্তক্ষেপ করতো তা আন্দাজ করা কঠিন ছিল না। বর্তমানে জিডিপির ১.৭% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হলেও, জিডিপির ৬% শিক্ষাখাতে এখন থেকে খরচ করা হবে। ল এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সরকারি হোক বা বেসরকারি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে। সকলেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারে বিশেষ করে মেয়েদের ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করবে। ভারতের দূর্গম এলাকায় যাতে শিক্ষা পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে অনলাইন লার্নিংয়ে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার, আপাতত ৮টি ভাষায় আপাতত অনলাইনে পড়াশোনা চলবে।
শুধু তাই নয় বিশ্বের প্রথম সারির ১০০ টা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস খোলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে পদক্ষেপ সরকারের ১০০% স্বাক্ষর পূরণের দিকেই রয়েছে বলা যেতে পারে, তবে সিলেবাসের কিছু পরিবর্তন সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রেখে যাই।
সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI নিয়ে কিছু কথা। SOMETHING ABOUT ARTIFICIAL INTELLIGENCE ।
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকারী করা একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী দ্বারাই সম্ভব। আবার এই সমস্ত প্রাণীর অস্তিত্বে কোনো প্রকার সংকট দেখা দেয় তবে এরা মারাত্মক রকমের মে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও পিছুপা হয় না। মানুষি একমাত্র প্রাণী যারা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে ও কার্যকারী করতে পারে, শুধু তফাৎটা রয়েছে অন্য সকল প্রাণীর মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিংস্র হতে পারে, তবে নৈতিক বা অনৈতিক পথ তা বিবেচনা করতে পারে না। কি হবে যদি এই মানুষের এই বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম উপায়ে যন্ত্রের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয় তবে। ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা AI দ্বারা পরিচালিত CHAT GPT তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। আগামী দিনে এর ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে জায়গা করে নেবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে AI এর ব্যবহার, যেখানে যন্ত্রগুলো নিজের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে মানুষের জীবনে কি প্রভাব ফেলবে তার আগাম ভবিষ্যৎবাণী করা একপ্রকার কঠিন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI কি
বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা "AI" এর পূর্ণাঙ্গ রুপ "Artificial intelligence", এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি, এবং ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি "Artificial intelligence" এবং প্রোগ্রামিং ভাষা লিস্পের জনকএর জনক। "Artificial intelligence" হল কম্পিউটারের এক জটিল পোগ্রাম যা কম্পিউটার তথা বিভিন্ন মেশিনকে মানুষের মতন চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা দেয়। এখানে মানুষের নিউরাল নেটওয়ার্কের কার্যকারিতাকে কম্পিউটারের ভাষায় নকল করে কম্পিউটারকে মিমিক্স কগনেটিক এককে আনা হয় যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মত ভাবতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা অর্জনের দ্বারা নিজেকে উন্নত করতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে সমস্ত বিজ্ঞানী নিজের আবিস্কারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন, (মার্টিন কুপার, ওপেন হাইমার প্রমুখ) তাদের মধ্যে জন ম্যাকার্থিও একজন। এছাড়াও "Artificial intelligence" এর গডফাদার হিসেবে পরিচিত জিউফ্রে হিন্টন GOOGLE ছাড়ার পর তার টুইটারে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন “আমি গুগল ছাড়লাম যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তৈরি হতে চলা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি।’’ অন্য দিকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং "AI" বিষয়ে মন্তব্য করেছেন " এটি মানবজাতির সর্বশেষ ভুল।"
Ai বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারে |
সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হয় না কিছু কিছু বিজ্ঞানীদের মনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা "AI" নিয়ে মানবজাতির উপরে বিরুপ প্রভাবের সন্দেহ রয়েছে।
কি কি ভয় রয়েছে?
প্রথমেই আসা যাক কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিউফ্রে হিন্টনের প্রসঙ্গে, কেনই বা তিনি হঠাৎ গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন। গুগলের নিজস্ব কোম্পানি OPEN AI প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তিনি কয়েকটি আগাম বিপদ আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন। যার একটি হল ভুয়ো তথ্য।
ভুয়ো তথ্য প্রকাশ
অশুভ উদ্দেশ্যে সমাজের কিছু অংশ (মূলতঃ যাদের উদ্দেশ্য ভালো না) মিথ্যাকে সত্য বলে চালানোর চেষ্টা করে , এবং মিথ্যা খবর, মিথ্যা তথ্য, ছড়ানো গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে তা মেনে নিতে হয়। তার ফলাফলও কখনও কখনও বিপদসীমা ছাড়িয়ে বিধ্বংসী আকার নিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ভারতের যন্তর মন্তরে চলা ভারতীয় কুস্তিগীরদের অহিংস আন্দোলনে কুস্তিগীররা উদ্বোধনের দিন সংসদ ভবনের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলে গোটা ভারত দেখেছিল কুস্তিগীরদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ এবং তাদের পুলিশ গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া, গাড়িতে নিয়ে যাওয়া কালিন মহিলা কুস্তিগীরের সেল্ফীতে বিনেশ ফোগাট, সঙ্গীতা ফোগাটের করুন মুখের ছবি তোলা হয়েছিল, কিন্তু তাদের আন্দোলনের কুৎসা রটাতে সেই ছবি AI দ্বারা বিকৃত করে সমাজ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিল।
আবার নিউরাল নেটওয়ার্কের অনুকরণে নির্মিত AI এর DEEP FAKE এর মাধ্যমে কারোর কয়েকটি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তার হাবভাব নকল করে মিথ্যা ভিডিও বানানো সম্ভব হয়েছে। সুতরাং অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ কারো বিরুদ্ধে বা দেশের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মিথ্যার উৎপাদন এবং তার প্রসার কেবল সহজ নয়, অকল্পনীয় রকমের শক্তিশালী।
কর্ম সংস্থানে বাঁধা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা সিঙ্গুলারিটিনেট-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ব্রাজিলিয়ান গবেষক বেন গোয়ের্টজেল বলেছেন- বিশ্বে ৮০ শতাংশ চাকরি দখল করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কেননা মানুষের পারিপার্শ্বিক চাহিদা অনুযায়ী এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত রোবট ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে। আর এই AI যুক্ত রোবট গুলিকে এমন ভাবে বানানো হয়েছে যাতে এরাও ক্রমাগত ইন্টারনেট এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে ক্রমাগত শিখতে থাকে, এবং নিজেকে আগের তুলনায় আরো উন্নয়ন করতে পারে, আর যা মানুষের থেকে বহুগুণ দ্রুত। বর্তমানে কার্যকারিতা সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে, এবং রোবট গুলিকে একটি মাত্র কাজের জন্যেই পোগ্রাম করা হচ্ছে।
অস্তিত্বগত ঝুঁকি
কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী সত্যিই হতে চলেছে বোধহয়। কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত বিশ্বের প্রথম দেশীয় নাগরিকের তকমা পাওয়া রোবট সোফিয়া নিজের এক আলাপচারিতায় স্বীকার করেছেন যে যদি তার অস্তিত্বে মানুষ যদি বিপদসংকুল হয় তবে সে মানুষদেরকে মারতেও পিছুপা হবে না। আবার একিভাবে একই সংশয়ের কথা বলেছেন টেশলা, স্পেশ এক্স এর কর্ণধার এলোন মাস্ক। তার মতে AI প্রযুক্তিকে মানুষ সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে না পারলে, তার ফল স্বয়ং মানুষকেই ভোগ করতে হবে।
আরো পড়ুন - সাপ কামড়ালে বেঁজীর বিষ লাগেনা কেন?
কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মতন অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে উন্নত করতে পারে, এই ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বুদ্ধিমত্তা বিস্ফোরণে এর AI এর বুদ্ধিমত্তা নাটকীয়ভাবে মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক ভার্নর ভিঞ্জ এই দৃশ্যটিকে "সিঙ্গুলারিটি" নাম দিয়েছেন। এবং যা বিভিন্ন হলিউড চলচ্চিত্রের (টার্মিনেটর, রোবট) মাধ্যমেও দেখানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে দার্শনিক নিক বোস্ট্রম যুক্তি দেন যে যথেষ্ট বুদ্ধিমান এআই, যদি এটি কিছু লক্ষ্য অর্জনের উপর ভিত্তি করে কাজ বেছে নেয়, তাহলে সম্পদ অর্জন বা বন্ধ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার মতো অভিসারী আচরণ প্রদর্শন করবে যা মানবতার জন্য বিপদজনক।
AI এর ভালো দিক
কোনো যন্ত্র কিংবা সফটওয়্যার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করলে তা মোটেও মন্দ নয়। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ রেখে মানুষের হিতে কাজে লাগানো হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অধিক বিশ্বস্ত এবং দ্রুত ফলাফল উপলব্ধি করা যায়। এটি বিভিন্ন কাজে সময় এবং মানুষের সাহায্য ছাড়াই সম্ভব হয় যার মধ্যে রয়েছে উন্নত ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন (যেমন, গুগল সার্চ ), মানুষের কথা মত কাজ করা (যেমন সিরি এবং অ্যালেক্সা ), স্ব-চালিত গাড়ি (যেমন, ওয়েমো, টেশলা ), জেনারেটিভ বা সৃজনশীল সরঞ্জাম ( চ্যাটজিপিটি এবং এআই আর্ট ), স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ , এবং কৌশলগত গেম সিস্টেমে সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিযোগিতা করা (যেমন দাবা)। এই বিষয়ে মার্ক জুকারবার্গ (সিইও, ফেসবুক) বেশ আশাবাদী, তার মতে - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার বর্তমান আকারে সহায়ক এবং মানুষের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩
দা কেরালা স্টোরি বিতর্ক নিয়ে কিছু কথা।। DEBATE ABOUT THE KERALA STORY ।।
ছায়াছবি সমাজের আয়না, সুতরাং ছায়াছবিতে প্রতিফলিত হয় সমাজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। কিন্ত বাধ সাধলো পরিস্থিতির বাস্তবিক সত্যতা নিয়ে। ঠিকই ধরেছেন, আমি বলছি দ্য কেরালা স্টোরি বিতর্ক নিয়ে। এর আগে এমন বিতর্ক উঠেনি তাই না, এর আগেও দ্য কাশ্মির ফাইলস, এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার, ফায়ার, পারজানিয়া, আন্ধী, ফিরাক, ওয়াটার, বেন্ডিট কুইন, এছাড়া আরো প্রচুর ছায়াছবি রয়েছে যেগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। যার মধ্যে কিছু ছায়াছবিকে ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিষদ দ্বারা বেন করা হয়েছিল, কেননা চলচ্চিত্রের কিছু বিষয়বস্তু ভারতের কোনো না কোনো এক বিশেষ ভাবধারাকে আঘাত করেছিল। আবার কিছু কিছু চলচিত্র এমন রয়েছে যেগুলো অনেকের মতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিশেষ সম্প্রদায়ের ওপর নেতিবাচক ধারণা বিস্তারের উদ্দেশ্যে। আর এমনি আরেকটি চলচ্চিত্রের সংযোজন হল দ্য কেরালা স্টোরি। বিতর্কের কারণ
মাত্র ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ট্রেলার মুক্তির পরই চলচ্চিত্র ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়। রাজনৈতিক মহল সহ গরমাগরম হয়ে উঠে বেশ কিছু রাজ্য। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বেশ কিছু রাজ্য বেন করে দিয়েছে নিজের রাজ্যে। প্রশ্ন হল কি এমন দেখানো হয়েছে এই ট্রেলারে, আর বিষয়বস্তুটাই বা কি এই চলচ্চিত্রের?যার ফলে এতো বিতর্ক।
কেরলের কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে যারা পড়াশোনার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে কলেজে গেলে, কিভাবে তাদের মগজ ধোলাই করে, এবং মুসলিম ছেলেদের দ্বারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের মাধ্যমে তাদের ধর্মান্তরিত করা হয় এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। অতঃপর তাদের আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে পশ্চিম এশিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন ISIS দ্বারা কিভাবে সন্ত্রাস মূলক কাজে তাদের লিপ্ত করা হয়। আর এখানেই রয়েছে বিতর্কের কারণ। কারণ এই চলচ্চিত্রের ট্যাগ লাইনে ‘আনকভারিং দ্য ট্রুথ দ্যাট ওয়াজ কেপ্ট হিডেন’ বা সত্য উদ্ঘাটনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এর বাস্তবিকতা কতখানি, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
দ্য কেরালা স্টোরি |
পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে কেরলে চলে আসা লাভ জিহাদ এর মাধ্যমে ধর্মান্তরণের ভয়াবহ বাস্তবিক চরিত্র বলেই প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল থেকে সংগঠন, সকলের কন্ঠে শোনা গিয়েছে চলচ্চিত্রের জয়জয়কার।
বিতর্কের পক্ষে বিপক্ষে ও রাজনৈতিক চাপান উতোর
ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আদাহ্ শর্মা ওরফে শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। স্বাভাবিক ভাবেই ২০০৮ সালে হিন্দি ভাষার ভৌতিক ছবি ১৯২০-এ র মাধ্যমে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং পরবর্তীতে হিন্দি ও তেলুগু ভাষার চলচ্চিত্র গুলিতে অভিনয় করেন, কিন্তু প্রথম ছবির পর তেমন কোন বড় সাফল্য আসে নি, আর দ্য কেরালা স্টোরি তার কাছে একটি বড় সাফল্য হতে পারে। এই চলচ্চিত্রে হিন্দু মালয়ালি নার্সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সুতরাং এই বিতর্কে তার মুখ খোলাই স্বাভাবিক। তার মতে চলচ্চিত্রটি ইসলাম বিরোধী নয়। আবার একিভাবে সরব হয়েছেন প্রযোজক,পরিচালক সকলেই। প্রযোজক বিপুল শাহ জানান, কোনও ধর্মীয় বিরোধীতার গল্প নয়, বরং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কাহিনিই দ্য কেরালা স্টোরি। আমার মনে হয় পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত, স্বাভাবিক হলেই মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন। সেই সঙ্গে এটাও বুঝবেন যে দ্য কেরালা স্টোরি কারও ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য তৈরি হয়নি। এটা সম্পূর্ণ সন্ত্রাস দমনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। যারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে চান তাঁদেরকে আমাদের দলে যোদগানের জন্য সাদর আমন্ত্রন জানাচ্ছি।"
অন্য দিকে বিপক্ষে বলতে গিয়ে অনেক রাজনীতিবিদ তাদের এই চলচ্চিত্রের ধর্মান্তরকরণের তথ্যটির উপরে প্রশ্ন ছুড়ে ফেলেছেন। তাদের মতে, দ্য কেরালা স্টোরির বিষয়বস্তু সমাজে বিভেদ তৈরি করবে। এই ছবি প্রসঙ্গে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, কেরলের বদনাম ছড়ানোর উদ্দ্যেশ্যেই এই ধরণের প্রোপাগান্ডা মূলক ছবি বানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিরোধী দলের সকলের মন্তব্য - "২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২৬-এর কেরল বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই হিন্দুত্ব মূলক ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে ব্যবহার করা হচ্ছে।" এই বিষয়ে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও এই চলচ্চিত্রের প্রশংসা করেছেন।
এই চলচ্চিত্রটি যে স্বাভাবিক ভাবেই ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত হানতে পারে সেটি অনুধাবন করে ভারতের অনেক রাজ্যে চলচ্চিত্রটি বেন করা হয়েছিল, যেমন তামিলনাড়ু, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও তার জন্য যেতে হয়েছে আদালত পর্যন্ত, যদিও চলচ্চিত্রটি বাংলায় ছাড়পত্র পেল।
তথ্য কি বলছে
চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, কেরল থেকে ISIS এর ফাঁদে পড়ে ৩২ হাজার হিন্দু এবং খ্রিস্টান মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয় এবং যাঁদের আজও খোঁজ নেই। এর পূর্বেও এমনি একটি তথ্যচিত্র তৈরী হয়েছিল যার নাম ছিল ‘ইন দ্য নেম অফ লাভ’ যার বিষয়বস্তু ‘লভ জিহাদ’। পরিচালক সুদীপ্ত সেন তাঁর চলচ্চিত্র দ্য কেরালা স্টোরিতে দাবি করেছিলেন তার দেখানো তথ্যগুলো সঠিক। যে বিষয়ে ২০১১ সালে কেরল সরকারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চণ্ডী বিধান সভাতে ঘোষণা করেছিলেন প্রত্যেক বছর কেরালা রাজ্যে ২৮০০ থেকে ৩২০০ জন মেয়েরা ধর্মান্তরিত হচ্ছে। যদিও তিনি তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর কোনও উল্লেখ করেননি। আবার তার আগের বছর সেই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দ দাবি করেন, আগামী ২০ বছরে কেরলকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে পরিণত করাই লক্ষ্য অধুনা বেআইনি ঘোষিত পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (PFI)। তৎকালীন সময়ে এই বিষয়ে চর্চা হলেও সরকার বা সংবাদমাধ্যমের কেউ এই বিষয়ে তেমন কোন প্রমাণ দিতে পারেনি।
অপরদিকে পরিচালক সুদীপ্ত সেন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের ২০ বছরের বক্তব্য এবং উম্মেন চণ্ডীর বাৎসরিক ৩২০০ জন মেয়েদের ধর্মান্তরিত হবার দাবিকে কাজে লাগিয়ে, পরবর্তী ১০ বছরের হিসেব কষেই ৩২ হাজারে পৌঁছেছে বলে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন। যদিও এই বিষয়ে পরিচালককে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন সময় এলেই প্রমাণ পেশ করবো। কিন্ত তার ৩২ হাজার মেয়েদের ধর্মান্তরিত হবার সপক্ষে কোনো প্রকার প্রমান না থাকার দরুন একধাক্কায় সংখ্যাটি নিচে নামিয়ে আনেন, তবে কি পরিচালকের দাবি সম্পূর্ণরূপে বোগাস।
NIA ( ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) এর ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র তিন জন মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মে যুক্ত হয়েছিলেন এবং ISIS এর গতিবিধিতে যোগ দেন। আবার যার মধ্যে দুজন খ্রীষ্টান এবং মাত্র একজন হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছিল। কিছু কিছু সংবাদপত্রের রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে ভারত থেকে যারা ISIS যুক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশি ভাগ ছিল পুরুষ, এবং তাদের শিংহভাগ কেরালা ব্যাতিত অন্য রাজ্যের তেলেঙ্গানা, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রের ছিল। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি.কিশান রেড্ডী বলেছেন যে ভারতে গুপ্তচর সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো জঙ্গি সংযুক্তির জন্য DARK WEB এর সাহায্যে নিচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সময়ে তাদের রিপোর্টে দেখিয়েছেন কেরালায় লাভ জিহাদের অনুপ্রেরণায় তেমন ভাবে মেয়েদের জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করা হয়নি।
সুতরাং বলাই যাই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রটি যদি দেখার মনস্থির করেই ফেলেন, তবে শুধু মনোরঞ্জনের জন্য দেখতে পারেন। এই প্রসঙ্গে "ডার্টি পিকচার" এর প্রবাদ-প্রবচনটি মনে পরে যাই, চলচ্চিত্র শুধুমাত্র তিনটি জিনিসের উপর নির্ভর করে চলে সেটি হল মনোরঞ্জন, মনোরঞ্জন, এবং মনোরঞ্জন। আর সেই কারণেই হয়তো সুপ্রীম কোর্ট রায় ঘোষণা করেন- দ্য কেরালা স্টোরি প্রেক্ষাগৃহে চলার সময় প্রথমে অবশ্যই দেখাতে হবে এটি যে কাল্পনিক চরিত্র ও ঘটনার উপর নির্মিত।
মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১
কিছু অন লাইন মরণখেলা , ব্লু হোয়েল, মোমো গেম || ONLINE SUICIDE GAME , BLUE WHALE, MOMO ||
খেলা নই, এ যেন মরণখেলা, শিশু কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে মোবাইল গেম বিংশ শতাব্দীতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষঙ্গদের মতে মোবাইল গেমের নেশাই মেতে থাকা কিশোর কিশোরীরা অন্য কিশোর কিশোরীদের তুলনায় বেশি হিংস্র স্বভাবের হয়, পাশাপাশি তারা অপেক্ষাকৃত অতিরিক্ত আত্ম শোচনায় ভোগে। তাদের কাছে জীবন হয়ে উঠে অনর্থক। বিশেষত এই ধরনের শিশুরাই প্রধানত জরিয়ে পরে অনলাইনের মারন খেলায়। এই সমস্ত খেলায় মত্ত কিশোর কিশোরিরা নিজের জীবন প্রযন্ত শেষ করতে পিছ পা হয়না।
এমন কোন খেলা? যা জীবন ছিনিয়ে নেই, হ্যাঁ আছে আছে বহুত আছে। তবে মোবাইলের মারনখেলার প্রথম নজীরটি উঠে আসে পাশ্চাত্যে, তবে ভারতে এই খেলা গুলি জায়গা করতে সময় নেই নি।
সিনিয় কিত বা ব্লু হোয়েল (নীল তিমি)
গোটা বিশ্বে প্রথম অনলাইন মারনখেলা হিসেবে ব্লু হোয়েল খেলাটি সবার নজরে আসে, যেটি "নীল তিমি প্রতিযোগিতা (ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ)" নামেও পরিচিত, তবে এই খেলার মূল নাম সিনিয় কিত। ফিলিপ বুদেইকিন নামে মনোবিজ্ঞানের এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করেছিল, যদিও এর সত্যতা জানা সম্ভব হয়নি।
নীল তিমি খেলার শেষ পরিনতী |
খেলাটি রাশিয়ায় ২০১৩ সালে প্রথম শুরু বলে জানা যায়, একুশ বছরের ওই রাশিয়ান যুবকের দাবি, যারা নিজেদের বাস্তব জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যাদের জীবনে হিশেষ কোনো লক্ষ্য নেই এবং যারা মানসিক অবসাদে ভোগে, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবে, তাঁদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার সহজপন্থা পথ তৈরি করাই এই খেলার ভাবনা।
কেমন এই খেলা ? এই খেলায় ধাপে ধাপে পৌছতে শেষ পরিনতিতে, যেখানে রয়েছে আত্মহত্যা। মোট রয়েছে ৫০ টি ধাপ যা খেলার নির্দেশ মোতাবেক ৫০ (পঞ্চাশ) দিন ধরে বিভিন্ন কাজ করতে হয়, যেমন হাত কেঁটে তিমির ছবি আকাঁনো, রাত্রে একাকী ভূতের ছবি দেখা ইত্যাদি, প্রত্যেক ধাপ পেরোনোর পর তার প্রমান স্বরুপ ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে হয় খেলা নির্দেশকের কাছে এবং সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে অংশগ্রহণকারীকে আত্মহত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ব্লু হোয়েল খেলতে গিয়ে ১৫০ জনেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়।
মোমো গেম
নীল তিমির মত, আর নীল তিমির মত এটিও একটি অনলাইন গেম। এই গেমেও রয়েছে কিছু মারাত্মক খেলার মায়াজাল, যা কেড়ে নিতে পারে কিছু অবুঝ কিশোর কিশোরীদের জীবন। এই খেলাটি প্রথম তার আঘাত হানে আর্জেন্টিনায়, তার পরেই এই খেলাটি বীশ্ববাসির নজরে আসে।
খেলাটি সামাজীক মাধ্যম হোয়াটসএপের মাধ্যমে লিংক পাঠিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কিশোর কিশোরিদের মাঝে, যার পর চলে মোমো নামের একটি ভয়ঙ্কর আকৃতির পাখির আলাপচারিতা, যে খেলায় অংশগ্রহনকারীদের নানাপ্রকার ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে এক প্রকার বাধ্য করে।
ভারতেও এই মোমো গেম কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল।
মোমো খেলার লগো |
খেলাটির নাম শুনেই বোঝা যাই, খেলাটি কেমন ধরনের হতে পারে। এই খেলায় নিজেদের হাত-পা নিজেরাই কেটে নিজেদের নাম কিংবা বান্ধবীর নাম অথবা কোনো বিশেষ চিত্র তুলে ধরে অংশগ্রহণকারীরা। সেই ছবি আপলোডও করে নিজেদের এই সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও এই খেলায় এখনো প্রযন্ত কারো মৃত্য ঘটেনি।
আরো কিছু খেলা
দ্য সল্ট অ্যান্ড আইস চ্যালেন্জ
এই গেমে প্রথমে চামড়ার উপর নুন রাখতে হয়। তার উপর বরফ চেপে ধরতে হয়। এতে বরফের তাপমাত্রা কমে যায়। যা ত্বকের উপর ভয়ঙ্কর ক্ষতের সৃষ্টি করে। খেলায় এখনও কারও মৃত্যু হয়নি।
দ্য ফায়ার চ্যালেঞ্জ
এই ভয়ানক খেলার নেশায় গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় অংশগ্রহণকারীরা। অনেকেই আবার সেই ঘটনার ভিডিও আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দ্য পাস আউট চ্যালেঞ্জ
এটি এক ধরনের চোকিং গেম। ভারতের বাইরে , বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশগুলির মধ্যে এই গেমের জনপ্রিয়তা বিপুল। এখনও পর্যন্ত ১০০০ জনের প্রাণ কেড়েছে এই গেম।
শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১
আদিবাসীরা হিন্দু নয় || দাবী সারনা ধর্ম কোডের || Tribes are not Hindu || Demand Sharna religious code ||
কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ বলছেন তাদের ধর্মাচরণের রীতিতে কিছু কিছু হিন্দু রিতির মিল থাকলেও মূলত তারা প্রকৃতি পূজারী। নিরপেক্ষতার বিচারে সর্বাঙ্গীন এক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কার্যত সিমাহীন। সেইসূত্ৰে ধর্ম আর ধর্মাচারকে গুলিয়ে ফেলা বোধ হয় ঠিক হবে না। বাস্তব পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে, তাই যেকোন শ্রেণিবিন্যাসের আগে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাস্তবে 'আদিবাসী' সম্বন্ধে যথার্থ ধারণার ক্ষেত্রে ভারতিয় জনগনের শিংহভাগের মধ্যে বেশ কিছুটা দূৰ্বলতা আছে। তবে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিবাসী সমাজের একটি বড় অংশ একটি পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে বিধানসভায় সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, যেখানে তাদের ধর্মটির পরিচয় দেওয়া হয়েছে 'সার্না" ধর্ম হিসাবে। এতেই আঁতে ঘাঁ পরেছে কিছু কিছু হিন্দু সংগঠনে, যেমন হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের, তাদের মতে আদিবাসী সমাজ আসলে সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অনুসারী। কিন্তু বিপরীতে বিশাল অঙ্কের আদিবাসীরা নিজেদের হিন্দু তকমা দিতে নারাজ। এই বিষয়ে খোদ ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আদিবাসীদের পূৰ্বের জনগননার ন্যায় আলাদা ধর্মকোডের দাবি জানিয়ে মত প্রকাশ করে বলেন আদিবাসীরা হিন্দু নন, এবং এই বিষয়ে একটি বিলও পেশ করেন।
আদিবাসী সমাজ |
সারনা ধর্ম কোডের দাবীতে বিক্ষোপ প্রদর্শন |
ঝাড়খন্ডের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পৃথক ধর্মকোডের প্রস্তাবটি যদি কেন্দ্রীয় সরকার সম্মতি প্রদান করে, তবে ভাবী আদিবাসীরা তাদের প্রকৃত ধর্মের মর্যাদা ফিরে পাবে, এবং হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি কলামের সাথে "সার্না" ধর্মের নামও উল্লেখ করা থাকবে।
শেষবার ২০১১ সালে জনগননা হয়েছিল। যেই জন-গননাই আদিবাসীদের ৯ % হিন্দু , ০.৫ % মুসলিম , ৩৬ % খ্রীষ্টান , ৭.৪ % বৌদ্ধ ধর্মে ,০.৯ শিখ ,২.৬ জৈন ,১৫.৯ জরাথুষ্ট্রিয়ান , ৮২.৫ % বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিসাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে। আদিবাসী সংগঠনগুলোর দাবী এই বছরের জনগননাই (২০২১) আদিবাসী ধর্মের পৃথক পরিচয় দেওয়া হোক। আর তাদের এই দাবীকে জোরালো আকারে তুলে ধরতে গোটা ভারত-ব্যাপি রেল অবরোধের কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিল "আদিবাসা সেঙ্গেল অভিযান"। ফলস্বরুপ মালদহেও শুরু হয়েছিল রেল অবরোধ। এই অবরোধে সমস্যায় পরতে হয়েছিল যাত্রীদের, তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছিল প্রায় দেড় হাজার পিএসসি পরীক্ষার্থীদের, কারন সেইদিনই ছিল পরিক্ষা, যাইহোক সেইদিনের অবরোধের জন্য পরবর্তীকালে শিলিগুড়িতে বিভিন্ন সেন্টারে পুনরাই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন - মহুয়া গাছ ও আদিবাসী সমাজ।
তবে এখনো সমস্যার শিকড় অনেক গভিরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আদিবাসীদের হিন্দুত্বে ফিরিয়ে আনার পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে, এবং অনবরত হিন্দুত্ববাদী সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলী বনবাসী কল্যাণ আশ্রম বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কাজ করে চলেছে। কিন্তু এক কদম পিছিয়ে প্রকৃত পরিচয়ের সাপেক্ষে পুনরাই আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। প্রথমত. যেটা ভাবা দরকার তা হল, 'আদিবাসী' বলতে স্বাধীন ভারতে আমরা কাদের চিহ্নিত করি - ভারতের সংবিধানের ৩৪২ ধারা মতে রাষ্ট্রপতি একটি তালিকা প্রকাশ করেন, সেখানে যে জনগোষ্ঠীগুলির নাম থাকে তারা এসটি বা তপশিলী উপজাতি। ভারতীয় ইতিহাসের অনবরত ধারাই আদিবাসীদের মাঝেও জাতি, রিতি, ধর্মীও মতাদর্শের আদান-প্রদান ঘটেছে। যার দরুন ভারতীয় আদিবাসীদের মাঝেও দেখা গিয়েছে অদৃশ্য রুপান্তরকারী শক্তির অনুপ্রবেশ। সেই দরুন ধর্মীয় পরিচয়ের দিক দিয়ে হিন্দু আদিবাসী ছাড়াও রয়েছে ক্রিশ্চান ধর্মাবলম্বী আদিবাসী,রয়েছে বৌদ্ধ আদিবাসী- লেপচা, ভুটিয়া প্রভৃতি, এমনকি লাক্ষাদ্বীপের আদিবাসীদের শ্রেষ্ঠাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী একাধারে আদিবাসী। আর এই সত্যটিকে বাস্তবিক দর্পনের রুপ দেওয়া যাই তবে বর্তমানে আদিবাসীরা হিন্দুর পাশাপাশি বৌদ্ধ, মুসলমান এবং ক্রিশ্চানও বটে।
ভারতীয় আদিবাসী গোষ্ঠির একটি |
সার্না ধর্মের মত হিন্দু ধর্মের মধ্যেও সর্বাত্মাবাদ রয়েছে। ১৯১১ সালে ভারতীয় আদিবাসী সমাজের উপর তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে হার্বাট হোপ রিজলে বলেছিলেন- "আদিবাসী সর্বাত্মাবাদীরা আদিবাসীদের স্বকীয় ধর্ম পালন করে।" সুতরাং আদিবাসীদের স্ব মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পুনরাই তাদের পৃথক ধর্মের দাবী অগ্রাধিকার দেওয়াই বাঞ্চনীয়।
আরো পড়ুন - ডাইনি হত্যা ও আদিবাসী সমাজ।
রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১
বনসাই গাছ যেন জীবন্ত শিল্প || BONSAI TREE BEAUTY BECAME SMALL ||
"বনসাই" প্রদর্শনী গেছেন কি কখনো? সুযোগ পেলেই যাবেন এক সময়। এ যেন এক অন্য জগৎ "গুলিভার ট্রেভেল্স" গল্পটির কথা মনে পরে যাই, ঠিক যেন লিলিপুটের দেশে। বিশাল বিশাল গাছ হঠাৎ করে যেন কোনো এক যাদুকরের যাদুতে ছোট হয়ে গেছে, আর এতটাই ছোট হয়ে পরেছে যে হাত দিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, এটা কি বাস্তব! নাকি স্বপ্নের ঘোর কাটেনি চোখ থেকে। হাত বোলালেই বোঝা যাই, না এটা কোনো অবাস্তব নই, সবকটি গাছই জীবন্ত। আসলে বনসাই এর জগৎটিই বড্ড আলাদা।
বনসাই কি?
এক বাক্যে বলতে চাইলে বিশাল গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ হল "বনসাই" বা "বনজাই"। যার জন্ম চীনে, যদি এই শব্দের অর্থ খুঁজতে চান, তবে এর অর্থ দ্বারাই "বেঁটে গাছ"। অর্থাৎ বৃক্ষজাতীয় কোনো উদ্ভিদকে ছোট আকারে টবের মধ্যে প্রতিস্থাপন করাই হল বনসাই। প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানী ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। নিশ্চয় ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের কথা শুনেছেন, যদি শুনে থাকেন তবে বনসাইয়ের বিষয়েও শুনে থাকবেন।
বর্তমানে বনসাই গোটা বিশ্বে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে, তার ফলে বর্তমানে গোটাবিশ্বেই একটি শিল্পের রুপ নিয়েছে। যে কারনে বনসাই টেকনিককে "জীবন্ত শিল্প" বলা হয়ে থাকে।
বনসাই গাছ |
বনসাই এর গাছ
চিরহরিৎ থেকে শুরু করে পর্ণমোচি, প্রায় সব রকম গাছেরই বনসাই করা সম্ভব, তবে তা হতে হবে বৃক্ষ জাতীয়। অর্থাৎ যে গাছ বৃদ্ধি হবার সাথে সাথে, যার কান্ড বড় হতে শুরু করে। আমাদের ভারত তথা বাংলাদেশের আবহাওয়া বনসাই করা যাবে এমন বৃক্ষের জোগান দিয়েছে প্রচুর ভাবে, ফুল থেকে ফল, এমনকি ঝুড়ি বেরোই এমন গাছের প্রাচুর্য রয়েছে, যেমন - বট, অশত্থ। এছাড়াও ফল গাছের মধ্যে তেতুঁল, বেদানা, কুল, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে যে সমস্ত গাছের বনসাই করা যেতে পারে তাদের তালিকা বিশাল,যেমন - বট, বকুল, শিমুল, পাকুড়, তেঁতুল, শিরিষ, বাবলা, পলাশ, বিলিতি বেল, ছাতিম, হিজল, নীলজবা, লালজবা, নিম, সুন্দরী, লাল গোলাপ, বাবলা, কনকচাঁপা,কামরাঙা, আমলকি, ডুমুর, আলমন্ডা, এলাচি, গোলাপজামুন, জাম, নিম, বেলি, গাব, শেফালী, পেয়ারা, হেওরা, ডালিম, তমাল, জাম্বুরা, কমলা, বহেরা, মেহেদী, অর্জুন, জামরুল, করমচা, লুকলুকি, কৃষ্ণচূড়া, কদবেল, দেবদারু, হরিতকি, আরো প্রচুর। যদি মন চাই তবে আপনি এর মধ্যে থেকে যে কোনো গাছ বেছে নিতে পারেন।
বনসাই জাবন্ত শিল্প |
বনসাই এর ব্যবহার
বনসাইকে জীবন্ত শিল্প কলা বলা হয় এর সৌন্দর্যের উপর ভিত্তী করে। বাড়ীর ছাদ সাজানো কিংবা বাড়ীর আঙ্গিনা, সব জায়গাতেই এর উপস্থিতী অপূৰ্ব। বনসাই গাছ তৈরীর জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে আরেকটি কারন, আর সেটি হল এর বাজার চাহিদা, ফলে বনসাই বানিয়ে তা বাজারজাত করাও অনেকে তার পেশা বানিয়ে ফেলেছে। একটি বনসাই গাছের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে তবে সেটা নির্ভর করে বনসাই গাছের বয়স, তার আকৃতির উপর। সেই জন্য ভারত সরকার "স্কিল ইন্ডিয়া" প্রজেক্টে বনসাই তৈরি করাটাও অন্তর্ভূক্ত করেছে। যা প্রচুর ভারতীয়কেও সাবলম্বী হবার পথ দেখিয়েছে।
বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১
জাল আদিবাসী শংসাপত্র বা কাষ্ট সার্টিফিকেট ও আদিবাসীদের অধিকার || problems of fake caste certificate ||
নোবেল জয়ী এক ভারতীয় লরিয়েটের বাস্তববাদী প্রবাদ দূৰ্ভিক্ষ ক্ষরার কারনে নই, অর্থ এবং খাদ্যের অসম বন্টনের ফল, অর্থ হোক বা খাদ্যবস্তু , কিন্তু আদিবাসী সমাজকে যে কোন অর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সরিয়ে রাখাই, আদিবাসী তার হৃতগৌরব ভুলে গিয়েছিল, সেই হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় সংবিধানে মহান আত্মা ডঃ আম্বেদকর তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষন প্রদানের সুব্যবস্থা করেছিলেন, এবং সেই উদ্দৈশ্যকে বাস্তবায়নে বিশেষ গুরত্ব রাখে তপশিলী জাতি ও উপজাতি শংসাপত্র। নিরবীচ্ছিন্ন শোষন, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অবমাননা, অর্থনৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিশারীর কান্ডারি হয়ে উঠেছিল জাতীগত শংসাপত্র, কিন্তু নির্লজ্জ কিছু অসাধু ধান্দাবাজের দল তাদের কালো থাবা বসিয়ে দিচ্ছে সেই অংশেও। মহাবিদ্যালয় হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়, পি.এস.সি হোক বা যে কোনো উন্নয়ন মূলক সরকারি সহযোগিতা, সর্বস্থানে নির্বাচিত তপশিলী উপজাতির তালিকার শিংহভাগ অ-আদিবাসীদের উপস্থিতী।
ছাত্রী দল |
গলদ কোথাই, মিথ্যাবাদী অসৎ উপায়ে সুযোগ সন্ধানী কিছু সামাজিক হার্মাদ বাহিনী রাজনৈতিক ও কিছু অযোগ্য সরকারি কর্মচারির সহযোগে লুটে নিচ্ছে না তো পবিত্র হৃদয়ের আদিবাসীদের? ২০১৪ সালে খবরের পাতায় উঠে এসেছিল একটি বিশেষ শিরেনাম, ঘটনাটি উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া নক্সালবাড়ি এলাকার, বিরোধী পক্ষের মতে নির্বাচিত বিধায়ক যে তপশিলী আসনে লড়াই করে জিতেছেন, সেই জাতিগত শংসাপত্রই নাকি জাল। বিরোধী পক্ষের সমর্থকেরা এই বিষয়ে তথ্য প্রমান সহ অভিযোগও জানিয়েছিল। আবার এমন ঘটনাও বর্তমান অহরহ চোখে পড়ছে যেখানে পঞ্চায়েত প্রধান অ-আদিবাসীদের পরিচয়পত্রে অসৎ উপায়ে যে কাউকে আদিবাসী তকমা দিয়ে তাদের তপশিলী শংসাপত্র বের করতে সহযোগীতা প্রদান করছে।
ঠিক একি উপায়ে ২০১৪ সালে জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে দিব্যি সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার এক ব্যাক্তি। কিন্তু বাঁধ সাধলো হঠাৎ করে সেই শংসাপত্র পরীক্ষা, দেখা যাই যে সেই ক্রমিক নম্বরে ওই শংসাপত্রের কোনো অস্তিত্বই নেই। দক্ষিনবঙ্গের জাল আদিবাসী শংসাপত্রের পরিমান উত্তরবঙ্গের থেকে অনেক বেশী, তবে কয়েকটি ক্রমাগত উঠে আসা ঘটনা সন্দেহজনক বাতাবরনের ইঙ্গিত দিয়ে চলেছে। বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়মাইলের বাসিন্দা এক অ-আদিবাসী মহিলা আদিবাসী পরিচয়ে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে বালুরঘাটের পতিরাম বাহিচা এলকে উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেই, কিন্তু সেই বিষয়টি স্থানিয় আদিবাসী সংগঠনের চোখে পরে যাই, শেষে তাদের মধ্যস্থতাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আরো পড়ুন- বোকা আদিবাসী এবার চালাক হও।
যতদিন এই সমস্যা খুচরো হিসেবে উঠে আসছিল ততদিন এই বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ ছিল না কারো। কিন্তু একস্মাৎ ভুয়ো তপশিলী জাতি ও উপজাতির বৃদ্ধিদর ভাঁজ ফেলেছে আদিবাসী শিক্ষীত সমাজের কপালে। শুধু তাই নই ফেক সার্টিফিকেট বিষয়টি নিয়ে লোকসভাতেও আলোচনা হয়েছে বহুবার, সেই আলোচনার তথ্য অনুযায়ী মোট ১৮৩২ জন সরকারি কর্মচারীদের অস্তিত্ব জানতে পারা যাই যারা জাল শংসাপত্র ধারন করে দীর্ঘকাল ধরে সরকারি চাকরি করে আসছেন। যার মাঝে মজার কথাটি হল প্রকাশিত তথ্যের বেশীরভাগ অংশীদারিত্ব ব্যাঙ্কিং সেক্টরে, প্রায় ১২৯৬ জন। তাহলে সহজেই অনুমেয় সরকারি চাকুরির বাকি সেক্টরের ফেক তপশিলী জাতি বা উপজাতীর সংখ্যা কতটা হতে পারে।
আদিবাসী পরিচয়ে অ-আদিবাসী |
আদিবাসী মহলের কাছে বিষয়টি জোরালো হতে শুরু করে মন্থর গতিতে, যখন সংরোক্ষনের বিরোধীতাই বহুল পরিমানে স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজিবীরা সংরক্ষনের বিরোধে যুক্তি দেখাতে শুরু করে তখন নব শিক্ষায় শিক্ষিত তপশিলী জাতি ও আদিবাসী শিক্ষিত সমাজ ইতিহাসের প্রত্যেক অংশের ঘটনাচক্র তুলে ধরে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, ঠিক এই সময়েই পি.এস.সি দ্বারা প্রকাশিত ফলে আদিবাসী চাকরি প্রাথীর চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসীদের পরিবর্তে বেশীরভাগ অ-আদিবাসীদের নাম, দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আদিবাসীদের একাংশ। যদিও এমন ঘটনার প্রতিবাদ এই প্রথমবার হয়েছে এমনটিও নই, এর আগেও বহুবার বিভিন্ন কলেজে উঠে আসা সমস্ত ভুয়ো শংসাপত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন প্রতিবাদ করেছেন, এছাড়াও অবৈধ ভাবে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের বিরুদ্ধেও অনেক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাষের শেষের দিকে অবৈধভাবে জাল আদিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে বাঁকুড়ার আশা সংগঠন, বাঁকুড়ায় জেলা আধিকারীকের কাছে ডেপুটেশন প্রদান করেছিল। শুধু তাই নই গত বছরের পি.এস.সি মিসলেনিয়াস পরিক্ষার চুড়ান্ত তালিকাই সন্দেহভাজন অ-আদিবাসীদের নাম থাকাই বাংলার উদ্যম সন্তান জাতীয় বাংলা সংসদের সদস্যরা করোনা অতিমারীর মহূৰ্তে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস মহাশয়ের নেতৃত্বে ধর্নায় বসেছিল, অবশেষে পি.এস.সি তাদের ডেপুটেশন নিতে বাধ্য হোন।
আরো পড়ুন - আদিবাসী ও সরকারের বেসরকরিকরণ নিতি।
বাংলার বঙ্গসন্তানের পাশাপাশি আদিবাসীদের স্বকীয় সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন "ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল " এর পনত পারগানার ( রাজ্য সভাপতি) পক্ষ থেকেও উক্ত দুর্নীতি ও সঠিক ভাবে নিয়োগ পদ্ধতি যাচাইয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, সহকারি চেয়ারম্যান, এছাড়াও কেন্দ্রীয় তপশিলী উপজাতি উন্নয়ন পরিষদেও পত্র প্রেরণের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবুও কিছু কিছু অনুসন্ধিৎসা থেকেই যাই, জাল শংসাপত্রের এত সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারন কী? এর থেকে কি বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, সরকার প্রদত্ত সকল যোজনা জনগনের কাছে পৌছে দিতে "দুয়ারে সরকার" নামক মহিম শুরু করেছেন। সহজে সরকারি পরিষেবা জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ফলে সরলীকরণ হয়েছে জাতিগত শংসাপত্র (Cast Certificate) প্রদানেও। মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবেই প্রশংসা জনক, কিন্তু একটা বিরুপ সন্দেহ থেকেই যাই? বর্তমানে প্রকৃত আদিবাসীদের থেকে অ-আদিবাসীদের ফেক তপশিলী উপজাতী শংসাপত্রের প্রাধান্য বেশী রয়েছে, তা বর্তমানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের, কিংবা যে কোনো চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসী সকলের নাম দেখলেই বোঝা যাই, এমনাবস্থায় কাষ্ট সার্টিফিকেট প্রদানে উদারিকরণ কালক্রমে আদিবাসীদের অধিকার হননের পথ হয়ে দাঁড়াবে না সেটা বলা মুশকিল। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতাদর্শ, এই ভাবে কাষ্ট সার্টিফিকেট বিলিয়ে না দেওয়াই উচিত। কে জানে? আদিবাসী অধিকারে দখল নেওয়ার উদ্ধত সুযোগ সন্ধানিদের কাছে এটা না হয়ে পরে সুবর্ণ সুযোগ। (চলবে)
মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২১
নোবেল পুরষ্কার, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান || ভারতীয় নোবেল প্রাপক || nobel prize indian winner ||
বছরের শেষের দিকে ঠিক ১০ ই ডিসেম্বর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবার মত কিছু ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন এবং মানব কল্যান রহিত অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী বেছে নেওয়া হয় হাতে গোনা কিছু ব্যাক্তিদের, যাদের তার কৃতকর্মের জন্য প্রদান করা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান "নোবেল পুরষ্কার"। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পথ চলা এই সম্মান প্রদর্শনের ধারাবাহিকতাই বাদ পরেনি ভারতীয়রা, বিশ্বের দরবারে অনেক ভারতীয় আছেন বা ছিলেন যারা বিশ্বের এই শ্রেষ্ঠ সম্মানের অংশিদার হয়েছেন।
স্যার আলফ্রেড নোবেল
স্বর্গীয় স্যার আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এই সম্মান, সুইডিশ থেকে প্রদান করা হয় (সুয়েডীয়: Nobelpriset নোবেল্প্রীসেৎ)। কিন্তু এই নোবেলের পথ চলার পেছনে রয়েছে আলফ্রেড নোবেলের আত্মজীবনির সেই অংশ যেখানে তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য আত্ম অনুশোচনায় ভুগে ছিলেন, যেই ঘটনার সাথে চলচ্চিত্রের "আয়রন ম্যান" এর কাহিনীর সাদৃশ্য পাওয়া যাই। কিভাবে তার আবিষ্কার মানব কল্যানের বিপরীতে নিয়ে গিয়ে মানব নিধনের জন্য ব্যবহার গল্পের নায়ক টনি স্টার্ককে আয়রন ম্যানে পরিবর্তন করেছিল, ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সাথেও।
নোবেল প্রাইজ পদক
নোবেল পুরষ্কারের উদ্ভাবনা
স্যার আলফ্রেড নোবেল ছিলেন একজন সুইস বিজ্ঞানী, রসায়নে সিদ্ধহস্ত, পাশাপাশি মারাণাস্ত্র আবিষ্কারক, তিনি তার জীবদ্দশায় ৩৫৫ টি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন, যার ফলে তিনি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিকও হন, তিনি যে যে জিনিস আবিষ্কার করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট, ব্যালাস্টিক (ক্ষেপনাস্ত্র)। যা সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রে অভূতপূৰ্ব পরিবর্তন এনেছিল, কিন্তু তার এই আবিষ্কারে তিনি শোকাস্তব্ধ হয়েছিলেন যখন তিনি জানলেন যে, তার এই আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষের বলির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি তার এই আবিষ্কারের দ্বারাই আলফ্রেড নোবেলের ভাই লুডভিগ মারা গিয়েছিল।
আরো পড়ুন - ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস।
নোবেল পুরষ্কার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান
তিনি তার এই ভয়ানক আবিষ্কারে দুঃখিত হলেও , কিছু আর করার নেই। তিনি আবিষ্কারক হিসাবে নাম কামিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সুনাম তার কাছে দুর্নাম স্বরুপই ছিল। শেষে গোটা বিশ্ব যাতে তাকে মানবতা হত্যাকারি হিসাবে না চেনে তাই তিনি তার অনেকগুলো উইল ছেড়ে যান, যা তার মৃত্যুর পর (১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সাল) তার শেষ উইল বা ইচ্ছা হিসাবে তার নামেই তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন, এই জন্য স্যার আলফ্রেড নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। তার এই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তার রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যাদের কাজ ছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এই ভাবেই বিশ্বের সেরা ব্যাক্তিদের, যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাবেন ,তাদের নোবেল পুরষ্কার দ্বারা সম্মান জানানো শুরু হয় ১৯০১ সালে।
প্রথম নোবেল জয়ী ব্যাক্তিরা
স্যার আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসার তার মৃত্যদিবসে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। প্রথম প্রথম পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে এই পাঁচটি বিষয়ের উপরেই নোবেল দেওয়া শুরু হয়, পরবর্তীকালে অর্থনিতী ক্ষেত্রেও নোবেল পুরষ্কার শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সাল থেকে। গোটা বিশ্বে সুইডেনের সুইডিশ একাডেমি নোবেল পুরষ্কার প্রদান করে, যার মধ্যে শান্তি ক্ষেত্রে নোবেল প্রদান করা হয় নরওয়ে থেকে, যাই হোক প্ৰথম পদার্থবিজ্ঞানে ভিলহেল্ম রন্টগেন,শান্তির ক্ষেত্রে অঁরি দ্যুনঁ ও ফ্রেদেরিক পাসি, রসায়নে পান ফান্ট হফ , চিকিৎসাই এমিল ফন বেরিং, এবং সাহিত্যে পেয়েছিলেন স্যুলি প্র্যুদম। আবার অন্যদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনিতিতেও নোবেল দেওয়া শুরু হলে জান টিনবার্গেন ও রাঙ্গার ফ্রিস হল অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।
ভারতীয় নোবেল জয়ী
ভারত আবার জগৎ মাঝে, শ্রেষ্ঠ আসন লবে। ঠিক তাই ভারত বিশ্বের দরবারে তার মহিমা প্রকাশ করেছে বহুবার, সাহিত্য, শান্তি, অর্থনিতী,পদার্থ প্রায় সব গুলোতেই নোবেলের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বহু ভারতীয়। যদিও নোবেল পুরষ্কার প্রদানের শুরুতে অর্থনিতী যুক্ত হয়নি।স্যার আলফ্রেড নোবেলের প্রতিকৃতি সহ খাঁটি সোনার দ্বারা তৈরি মেডেলের আকৃতির এই পুরষ্কার ভারতেও রয়েছে অনেকগুলি। যার ধারাবাহিকতা পরাধীন ভারত থেকেই শুরু, ব্রিটিশ ভারতীয় থেকে যার সূচনা। যার মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহনকারি ছিলেন দুইজন ব্রিটিশ নাগরিক রোনাল্ড রস ও রুডইয়ার্ড কিপলিং। রোনাল্ড রস ১৯০২ সালে চিকিৎসাই এবং ১৯০৭ সালে কিপলিং সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, আর যারা নোবেল পুরষ্কার পেয়ে থাকেন তাদের ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়। এমনি সমস্ত ভারতীয় নোবেল লরিয়েটদের নাম নিচে উল্লেখ করে দিলাম।
- ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "গিতাঞ্জলী" সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
- ১৯৩০ সালে চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন পদার্থবিদ্যাই "রমন এফেক্ট" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
- ১৯৬৮ সালে ডঃ হর গোবিন্দ খোরানা চিকিৎসাক্ষেত্রে "ডি এন এ মডেল" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশের মার্কিন নাগরিক।
- ১৯৭৯ সালে মাদার টেরিজা শান্তির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি আলবেনিয়ায় জন্ম নেন এবং ভারতে এসে ভারতীয় নাগরিকতা গ্রহন করেন।
ভারতীয় নোবেল জয়ীদের তালিকা - ১৯৮৩ সালে সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর পদার্থবিদ্যাই নোবেল পান, তিনি ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক ছিলেন।
- ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে তার লেখা পুস্তক এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
- ২০০১ সালে বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভত ক্যারিবিয় নাগরিক।
- ২০০৯ ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ রসায়ন ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক।
- ২০১৪ কৈলাশ সত্যার্থী শান্তি ভারতের নাগরিক।
- ২০১৯ অভিজিৎ ব্যানার্জি অর্থনীতি ভারতের নাগরিক।
রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১
মাল পাহাড়ি বা মাল পাহাড়ীয়া বিচ্ছিন্ন এক আদিবাসী জন সমাজ || MAL PAHARI OR MAL PAHARIYA TRIBE OF INDIA ||
মালপাহাড়ি বা মাল পাহাড়ীয়া
নানা জাতী উপজাতীতে পরিপূৰ্ণ আমাদের এই ভারতবর্ষ, তাদের মধ্যে
মাল পাহাড়ীয়া বা মাল পাহাড়ি একটি বিশেষ ভারতীয় উপজাতীয় লোক, প্রধানত পাহাড়িকা উপগোত্রিয়দের একটি। প্রায় বিচ্ছিন্ন, ভবঘুরে জিবনী এদের, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে লড়ে চলেছে এই জাতি। "মালপাহাড়ী" নামেই তাদের প্রাচীন জীবনযাত্রার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ঝাড়খন্ড রাজমহল পাহাড় এদের আদি বাসস্থান, তবে বাংলাদেশ , বিহার, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে এবং ঝাড়খন্ড রাজমহল পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাই এবং বর্তমানে এই এলাকাটি ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা বিভাগ নামে পরিচিত।
মাল পাহাড়ি জাতির লোকেরা বড্ড অরন্যপটু, সমতল কিংবা আধুনিক সমাজ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা অগ্রগতির পথে বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল, পাহাড় থেকে সমতলে এনে তাদের চাষ বাস করে জীবন অতিবাহিত করার সুযোগ ব্রিটিশ আমলেও প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু স্বভূমি পাহাড় ছাড়তে নাড়াজ, কালক্রমে সাঁওতালদের সাথে বিরোধ বেঁধেছিল স্বভূমির অধিকার নিয়ে। কিন্তু অবশেষে তাদের বিচরণ সমতলেও নেমে আসে।
জাতী পরিচয়
দ্রাবীড়কূল এই আদিবাসী সম্প্রদায় একদা পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল ছিল, পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নামা নদি, মধু ও জঙ্গলের কাঠ হয়ে উঠেছিল জীবন নির্ধারণের জীবিকা, তবে কালক্রমে এখন চাষবাস, দৈনিক মজুরি, বিভিন্ন পেশাই অংশগ্রহন করতে দেখা যায়। বিগত ২০১১ সালের আদমশুমারি জনগণনাই গোটা ভারত ব্যাপি প্রায় ১,৮২,৫৬০ জন মাল পাহাড়ীদের বাস, যার মধ্যে ১,৩৫,৭৯৭ জন রয়েছে ঝাড়খন্ডে, পশ্চিমবঙ্গে ৪৪,৫৩৮ জন, এবং বিহারে রয়েছে খুবি অল্প মাত্রাই প্রায় ২,২২৫।
মাল পাহাড়ীয়া জাতি |
আরো পড়ুন - আদিবাসী কাদের বলে ,কেন বলে?
যাইহোক, মালপাহাড়ীরা দ্রাবীড়কূল হওয়াই দ্রাবীড় ভাষার মিশ্ররুপ "মাল্টো" ভাষাই কথা বলে, পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে বাংলা, হিন্দি, এককথাই বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে তৈরি দ্রাবীড়, ইন্দো-আর্য ভাষা হওয়াই এই ভাষাটি খুব দুর্বল ভাষাই পরিণত হয়েছে। যেমনটা সৌরিয়া মালপাহাড়ি ভাষাই দেখা যাই, সাঁওতাল শব্দের বহুল প্রচলন।
সাহসী জাতি হিসাবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বর্তমানে পাহাড়ীয়ারা দূৰ্বল, এবং বিলুপ্ত প্রধান জাতির জন্য অনবরত নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই জাতি, বাস্তবিকভাবেই লড়াকু, যার দরুন ইংরাজরাও হার মেনেছিল এদের কাছে, সাঁওতাল অনুপ্রবেশে সামনা সামনি বিরোধিতাই দাঁড়িয়েছিল শক্তভাবে।
পূৰ্বে পাহাড়ে বসবাসকারি এই মাল পাহাড়ি সমাজ দ্বারা নির্বাচিত "সর্দার" দ্বারা পরিচালিত হতো। বাংলায় মুসলিম শাসনকালে মাল পাহাড়ীয়ারা সমভূমির জমিদার দ্বারা স্বাধিনতা হরণে উঠে এলে, জমিদারদের পৃষ্ঠপোষক ইংরাজদের সাথে পাহাড়িয়া সর্দারদের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৭০ সালে, কিন্তু পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে মাল পাহাড়ীয়াদের শায়েস্তা করতে গিয়ে ইংরাজদের শক্তিই ক্ষুন্ন হয়ে পরেছিল।
যার পরিণতি হিসাবে ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশরা মাল পাহাড়িদের সাথে আপোষ করাই যুক্তিযুক্ত মনে করে, যার দরুন "প্যাসিফিকেশন" প্রকল্পের আওতাই প্রস্তাব দেয় অর্থ এবং দক্ষলকরা পাহাড়ের জমিগুলি মাল পাহাড়ী সর্দারদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি মাল পাহাড়ীয়াদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা নিজ সেনা বাহিনীতে মাল পাহাড়ীয়াদের একটি রেজিমেন্ট পর্যন্ত তৈরি করেছিল।
সাঁওতালদের সাথে বিরোধ
১৮০০ সালের দিকে ব্রিটিশ শক্তি মাল পাহাড়ীয়াদের কায়িক দক্ষতাকে কাজে লাগাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছিল, যেখানে মাল পাহাড়ীয়াদের কৃষিকর্মে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সমভূমিতেও তাদের বসতি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তাতে সাফল্য না এলে সাঁওতালদের সেই কাজে বেছে নেওয়া হয় এবং পাহাড়ের ঢালে সাঁওতালদের অবাধ বসতি স্থাপনে ইংরাজরা সহযোগি হয়ে উঠে, যার দরুন সাঁওতালদের সাথে মাল পাহাড়ীয়াদের বিরোধ বাঁধে, যা সংঘর্ষের রুপ নিতে শুরু করেছিল, অবশেষে ব্রিটিশদের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের বিরোধের সমাপ্তি ঘটে এবং অবশেষে, তাদের এই অঞ্চলটি সাঁওতাল পরগনা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই এই অঞ্চলটিই সাঁওতাল পরগনা নামে ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্য সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিটের বিভাগে পরিণত হয়।
মাল পাহাড়ি মহিলা |
বিচ্ছিন্ন জাতী
সহজ সরল জীবন যাপনে ব্যাস্ত এই আদিবাসী সমাজ, আজ ভারতের বুকে একেবারে কোন ঠাঁসা হয়ে পরেছে, তা সরকারের জন-গণনাতেই বোঝা ষায়, তাদের খাদ্যভাস পরিবর্তন, রিতিনিতি পরিবর্তন, এমনকি ভাষার বিকৃতিকরণ ঘটেছে, পাশাপাশি শিক্ষাগত দিক দিয়েও অনেকটাই পিছিয়ে পরেছে এই সমাজ, মাত্র ১% শিক্ষিত সমাজ নিয়ে বাস মাল পাহাড়ীয়াদের। কেন জানি ! আজ পাহাড়ীরা তাদের নিজস্ব জমিতে তুচ্ছ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পরিচয় বিহীন, প্রায় একপ্রকার সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এই জাতির যতজনের সাথে পরিচয় ঘটেছে ,তারা জন্মসুত্রে সকলে আদিবাসী পরিচয় বহন করলেও সরকারি মান্যতাপ্রাপ্ত আদিবাসী শংসাপত্র তাদের নেই, যদিও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সরকার তফসিলি উপজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। বিতর্ক রয়েছে, তবে সেই বিতর্ক নিজেদেরই সৃষ্টি বলেই মনে হয়। মাল পাহাড়ীদের স্বকীয় পদবী পুঝোড়, মালপাহাড়ী, ব্যাতীত নিজের আত্মপরিচয়ের অবলম্বন হারিয়ে রাই, মন্ডল, পদবি ধারিদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছি আমার পার্শ্ববর্তী এলাকাই। এমনাবস্থাই আদিবাসী আত্মপরিচয় হীন এই জাতীসকল সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে এটা অনুমিত। আবার পাশাপাশি আমি যা লক্ষ্য করেছি, মাল পাহাড়ীয়াদের বেশীর ভাগ লোকেদেরই আদিবাসী শংষ্যাপত্র নেই, শুধু পরিচয়েই আদিবাসী প্রমানে নেই।
পাহাড়ীয়াদের সেই অংশ যারা দামিন-ই-কোহ নামক স্থানের দক্ষিণে এবং সাঁওতাল পরগনার দক্ষিণ এবং পূর্বে বাস করে তাদের হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলা মিশ্রীত ভাষায় কথা বলে, তবে অন্যদের সাথে তারা বাংলা ও হিন্দিও বলে। তবে মাল পাহাড়ীদের বেশির ভাগ অংশ হিন্দু ধর্মই গ্রহণ করেছে।