Unique knowledge bangla

History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

CHRISTIANITY লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
CHRISTIANITY লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩

হিন্দুদের ভবিষ্য পুরাণে যীশুর বিষয়ে যা বলা হয়েছে।। JESUS IN HINDU MANUSCRIPT BHAVISHYA PURANA ।।

আগস্ট ০৪, ২০২৩

 প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জীবনী ও তার মতাদর্শ আজও গোটা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের আস্থা স্বরুপ, তথাপি তার বাণী খ্রীষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বহুকাল থেকেই তার জীবনির উপরে চলে এসেছে নানা বিতর্ক। কেনোনা শুধু বাইবেলে নয়, বাইবেল ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যের মধ্যেও এমন এক ব্যক্তিত্বের আভাষ রয়েছে, যাকে বিভিন্ন গবেষকরা যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই কিংবদন্তি মতে যীশু খ্রীষ্ট তার হারিয়ে যাওয়া সময় অন্তরালে ভারতে এসেছিলেন। এমনকি হিন্দু ধর্মের বিশেষ গ্রন্থ "ভবিষ্য পুরাণ' এতেও রয়েছে এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ যাকে অনেক শাস্ত্রবিদেরা যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে মনে করেন।

এমন কি লেখা রয়েছে এই পুরাণে, যার জন্যে এত বিতর্ক? সে বিতর্কে না হয় পরে আসছি। আগে জানা প্রয়োজন "পুরাণ' কি? 

ভবিষ্য পুরাণ

 "পুরাণ' তার অর্থ পুরানো, যা অতীতের সাথে সম্পর্কিত। এযাবৎ হিন্দু ধর্মে আঠারোটি মহাপুরাণ এবং আঠারোটি উপ পুরাণ রয়েছে, যেগুলি হল-

 ব্রহ্ম পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ,বায়ু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, নারদ পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, ভরহা পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, ভামনা পুরাণ, কূর্মা পুরাণ, মৎস্যা পুরাণ, গরুড় পুরাণ, ব্রহ্মান্ডা পুরাণ। এছাড়া উপ পুরাণগুলির নামগুলি হল: সনাত-কুমার, নরসিংহ, বৃহন্নারদীয়, শিব-রহস্য, দুর্বাসা, কপিল, ভামনা, ভর্গব, বরুণ, কালিকা, শম্ভা, নন্দী, সূর্য, পারাশর, বসিষ্ঠ, গণেশ, মুদ্গলা এবং হংস।

সকল পুরাণ গুলির মধ্যে ভবিষ্য পুরাণ কিছুটা ব্যতিক্রম। সকল পুরাণ গুলি বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মীয় দেবতার কাহিনী, চিকিৎসা, ব্যাকরণ, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু ভবিষ্য পুরাণ উপরোক্ত অল্প কিছু বিষয় খানিকটা আলোচনার পাশাপাশি আনুমানিক আন্দাজে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে বা ভবিষ্যতের রুপরেখা নিয়ে আলোচনা করে। এই ভবিষ্য পুরাণ ব্যাসদেব দ্বারা প্রথম শতকের শেষ দিকে রচিত বলেই অনেকে মনে করেন। তবে হিন্দু ধর্মের বৃহৎ অংশের অনুসারী আরো প্রাচীন কালে লিখিত বলেই মনে করেন।

 যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে ভবিষ্য পুরাণ

ভবিষ্যপুরাণের উনিশ অধ্যায়ের চতুরয়ূগা খন্ডে, কিংবদন্তি রাজা শালিবাহন, যিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে প্রতিষ্ঠানে রাজত্ব করতেন এবং যিনি ছিলেন পরমার রাজ রাজা ভোজের পূর্বপুরুষ। এই শালিবাহন রাজার সাথে এক দিব্য পুরুষের পরিচয় এবং কথোপকোথন হয়, অনেকেই মনে করেন এই দিব্য পুরুষই হলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। যে কথোপকথনটি শুরু হয় উনিশ অধ্যায়ের চতুরয়ূগা খন্ডের তেইশ নম্বর শ্লোক থেকে।

বলা হয়েছে - 

কো ভারাম ইতিতাম প্রাহা

 সূ হবাচা মুদানভিতাহা

 ইশা পুত্রাম নাম ভিদ্দী

 কুমারীগর্ভা সম্ভাবাম

যার অর্থ - শালিবাহন রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে মহাশয়? উত্তরে তিনি বললেন আমি ইশাপু্ত্র, ঈশ্বরের সন্তান এবং আমি কুমারী মা থেকে জন্মগ্রহন করেছি।

Jesus Christ in Bhavishya Purana Hindu religion
হিন্দু যোগি রুপে যীশু খ্রীষ্ট (কল্পনায়)

যদি আমরা খ্রীষ্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের দেখি তবে আমরা দেখবো যে, যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে বহু জায়গায় ঈশ্বরের সন্তান বলেই দাবি করেছেন, যার কয়েকটি উদাহরণ হল যোহন লিখিত- 

১০:৩০ - আমি ও পিতা এক।

১৪:৯ - যে কেউ আমাকে দেখে সে আমার পিতাকে দেখে।

এছাড়াও আরো বহু জায়গায় এমন উল্লেখ রয়েছে। আবার একি ভাবে বাইবেলের পুরানো নিয়মের ইশাইয়া লিখিত ৭:১৪ তে কুমারী মায়ের দ্বারা পুত্র সন্তান হবার ভবিষ্যৎ করা হয়েছিল, আর যার প্রমান স্বরুপ বাইবেলের নতুন নিয়মে মথি লিখিত প্রথম অধ্যায়ের ১৮-২৫ এ যীশুর মা মরিয়মকে কুমারী মা হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও লুক লিখিত প্রথম অধ্যায়ে যীশুর কুমারী মা দ্বারা প্রসবের বিবরণ পাওয়া যায়।

 আরো পরুন 👇

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি ভারতে এসেছিলেন??

এছাড়াও ভবিষ্য পুরাণের ৩০ নং শ্লোকে যীশু খ্রীষ্ট তার ধর্ম প্রচার এবং যীশুকে মাশিহা কেনো বলা হয়েছে সে বিষয়ে বলেছেন - "হে পৃথিবী গ্রহের রক্ষক, পরম ভগবানের চিরন্তন পবিত্র ও শুভ রূপ আমার হৃদয়ে স্থাপন করে, আমি ম্লেচ্ছদের নিজস্ব বিশ্বাসের মাধ্যমে এই নীতিগুলি প্রচার করেছি এবং এইভাবে আমার নাম 'ইশা-মাসিহা' হয়েছে।"

 খ্রীষ্টানদের মধ্যে ভবিষ্য পুরাণের গ্রহনযোগ্যতা

এই প্রশ্নের এক কথার উত্তর খ্রীষ্টানদের মধ্যে পুরাণের এই শ্লোকগুলির গ্রহনযোগ্যতা একটুও নেই। যার পিছনে অনেক কারন রয়েছে , ক্যাথলিক, প্রোটেষ্টান সহ অন্য খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের বিশ্বাসীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন পুরাণের উল্লেখিত ব্যাক্তি এবং তাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট একই ব্যাক্তি নন। কেনোনা বাইবেল হিসাবে সকল খ্রীষ্টানরা মনে‌ করেন যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে জীবিত হবার পর স্বর্গে উত্থিত হয়েছেন, এবং পুরাণের এই শ্লোকগুলি তার সমর্থন করে না।

দ্বিতীয়তঃ যে শালিবাহন রাজার সাথে এই কথোপকথন হয়েছে , ঐতিহাসিক মতে তার অস্তিত্ব ছিল আনুমানিক ৪৮-৫৮ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন , এবং এটি যদি সত্যি ধরে নেওয়া হয় তবে এটা ধরে নিতে হবে যে সেই মূহুর্তে রাজা কোনো পুরুষের সাথে নয় বরং তিনি কোনো এক বৃদ্ধের সাথে কথোপকথন করেছিলেন, কিন্তু শ্লোকে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে ২২ নং শ্লোকে - "হুনা দেশের মাঝখানে (হুনাদেশ - মনসা সরোবরের নিকটবর্তী এলাকা বা পশ্চিম তিব্বতের কৈলাস পর্বত) শক্তিশালী রাজা একজন শুভ পুরুষকে দেখতে পেলেন যিনি একটি পাহাড়ে বাস করছেন। লোকটির গায়ের রং ছিল সোনালী এবং তার পোশাক ছিল সাদা।‌‌" যা পরস্পর বিরোধী মতবাদ তৈরি করে। 

তৃতীয়তঃ যতগুলো পুরাণ রয়েছে, সেগুলো প্রায়শই একে অপরকে সমর্থন করে, এবং প্রতিটি পুরাণেই প্রতিফলিত হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে যীশুর বিষয়ে শুধুমাত্র একটি পুরাণেই বলা হয়েছে অন্যগুলিতে নয়।

চতুর্থতঃ এছাড়াও বর্তমানে আমরা যে পুরাণটি লক্ষ্যে করি তা কিছুটা বিকৃত অবস্থায় রয়েছে, এটি জানা যায় যে এই পাঠ্যের প্রায় ২০০ টি পৃষ্ঠা হারিয়ে গেছে বা ভুল স্থান পেয়েছে।

পঞ্চমতঃ ইসা নামটি তৎকালীন সময়ে বহুল প্রচলিত নাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো বলে অনেকে মনে করেন। সুতরাং খ্রীষ্ট ধর্মের ইসা এবং পুরাণে বর্ণিত ইসা মে একই ব্যাক্তি তা সম্পূর্ণরূপে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।

ভারত ব্রিটিশ অধীনে থাকাকালীন যখন ভারতে ছাপাখানার ব্যবহার শুরু হয়, তখন ব্রিটিশ সাহায্য প্রাপ্ত খ্রীষ্টান মিশনারীরা ভারতে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের নানা ফন্দী আঁটতে থাকে। তাই অষ্টাদশ শতকের দিকে খ্রীষ্টান মিশনারীরা হিন্দুদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আস্থা বাড়াতে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের (ভবিষ্য পুরাণ) অনুবাদ করে ছাপার সময় চতুরতার সাথে এই শ্লোকগুলি যুক্ত করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

সুতরাং পুরাণ বর্ণিত সেই পুরুষ যে যীশু খ্রীষ্টই ছিলেন সেই বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়, যার ফলস্বরূপ খ্রীষ্টানরা পুরাণের এই শ্লোকগুলিকে মান্যতা দেয় না। 

(বিঃদ্রঃ - ভবিষ্য পুরাণের যীশুর সাথে শালিবাহনের কথোপকথনের সম্পূর্ণ শ্লোকগুলির বাংলা মানে পরের লেখায় তুলে ধরবো।)

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

যীশু খ্রীষ্টের ভারতে আগমন কতটা সত্য? Did Jesus Christ visit India?

জুন ১৫, ২০২৩

 পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিচক্ষণ পন্ডিতেরা প্রভু যীশুর জীবনি এবং তার জীবনে‌ ঘটে যাওয়া জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। গবেষণা এবং পর্যালোচনা যেখানে রয়েছে সেখানে সমালোচনা তো থাকবেই। যীশুর বিয়ে, যীশুর পলায়ন, যীশুর ক্রুশে বলিদান সব কিছুতেই রয়েছে লাগামহীন তর্ক বিতর্ক। ঠিক একই ভাবে তর্কের সূত্রপাত দেখা দিয়েছে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের (নতুন নিয়ম) সাইলেন্ট ইয়ার্স নিয়ে, সাইলেন্ট ইয়ার্স কি সেটিও হালকা করে জেনে রাখা ভালো - প্রভু যীশুর কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার সময় প্রযন্ত বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে তেমন কিছু বলা হয়নি, মাঝখানের এই আঠারো বছর তিনি কোথায় ছিলেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অনেক বিজ্ঞ সমাজ রয়েছে যারা মনে করেন এই সময়কালে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং প্রাচীন হিন্দু এবং বৌদ্ধ দর্শনের সংস্পর্শে এসে ধর্মিয় জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

থ্য এবং মতবাদ সমূহ

প্রভু যীশু নাকি ভারতের মাটিতে দু বার তার পদধূলি রেখেছেন, ক্রুশবিদ্ধ হবার আগে এবং ক্রুশবিদ্ধ হবার পরে। প্রথম বার মিশরের পথ ধরে ভারতে এসেছিলেন বৈদিক, বৌদ্ধ ও আয়ুর্বেদ শিক্ষার জন্য। তক্ষশীলাতে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা সহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ ক‍রেন। কথিত আছে যে এই সময় তিনি গৌতম বুদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ভারতে প্রাপ্ত এই সমস্ত ধর্মীয় জ্ঞান প্রভু যীশু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর প্রচারিত করেন। যার জন্যে প্রভু যীশুর প্রচারিত ধর্মে বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসবাদী নিতী প্রকটভাবে রয়েছে।

দ্বিতীয় বার তবে কখন‌ আসেন? বলেছি তো ক্রুশবিদ্ধের পর, মুসলিমদের মতে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ক্রুশবিদ্ধের সময় হয় নি অথবা‌ তিনি পুনরুজ্জীবিত হন নি, বরং তিনি কবর থেকে পালিয়েছেন। কবর থেকে বেরিয়ে কয়েকদিন তিনি লুকিয়ে বেরিয়েছেন এবং সুযোগ বুঝে তার শিষ্যদের সাথেও দেখা করেছেন। শরীরের ক্ষত সেরে উঠলে তিনি বিখ্যাত রেশম পথ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন, এবং মৃত্যু পর্যন্ত ভারতেই থেকে যান।

আচ্ছা বকবকানি না, আমার কাছে প্রমাণ পেশ করতে হবে, বললেই মেনে নিতে হবে নাকি? প্রমাণ স্বরুপ কি কি তথ্য রয়েছে! 

আছে আছে, তথ্য আছে, একটি নয় কয়েকটি তথ্য, তবে তথ্যগুলো প্রমাণিত সত্য না।

Did Jesus Christ visit India kasmir tibbet
যীশু খ্রীষ্টকে নিয়ে নানা মতবাদ 

নিকোলাস নটোভিচের তথ্য 

নিকোলাস নটোভিচ নামে এক ব্যক্তি ১৮৯৪ সালে প্রভু যীশুর ১২ থেকে ৩০ বছরের যে সাইলেন্ট ইয়ার্স ছিল তার উপর ভিত্তি করে ফরাসি ভাষায় একটি বই লেখেন 'লা ভি ইনকনিউ দ্য জেসাস ক্রাইস্ট'। যদিও পরে এটি "আননোন লাইফ অফ যেসাস ক্রাইষ্ট" নামে বেশি পরিচয় লাভ করে। যেখানে তিনি লিখেছেন প্রভু যীশুর ভারতে পালিয়ে আসার কথা, এবং ভারতে প্রভু যীশুর দেহ ত্যাগের কথা।

নটোভিচ বিতর্কিত বই লিখেছেন, ভালো কথা কিন্তু কোন তথ্যর উপরে ভরসা করে লিখেছেন?

নটোভিচ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ দর্শনের উপরে গবেষণার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যে ভারতের লাদাখের হেমিস মঠের লাইব্রেরি থেকে সেখানকার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সহায়তায় কিছু প্রাচীন তিব্বতিয় পান্ডুলিপির পাঠ উদ্ধার করেন, যেখানে ইসা (মুসলিমরা প্রভু যীশুকে ইসা নবী হিসাবে চেনেন) নামে এক পশ্চিমদেশীয় জ্ঞানী ধর্মীয় পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়। তিব্বতিয় সেই পান্ডুলিপির অনুবাদ করে তিনি পুনরায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং বিতর্কিত বইটি লেখেন।

স্বামী অভেদানন্দ

একটি বই দ্বারা এটি কি করে প্রমানিত হল যে প্রভু যীশু ভারতে এসেছিলেন? 

না না একটি বই নয়, আরো রয়েছে স্বামী অভেদানন্দ, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা, নিজ চোঁখে সেই পান্ডুলিপি গুলো দেখেছিলেন এবং প্রভু যীশুর সেই রমস্যময় সময়ের বৃত্তান্ত স্বরুপ ‘কাশ্মীর ও তিব্বতে’ নামক একটি বই লেখেন। শুধু তাই নয় তিব্বতীয় সেই পান্ডুলিপির ২২৪ টি লাইন তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন। প্রভু যীশু নাকি ভারতের তিব্বতে ছিলেন তাই নয়, তিনি এখানে মৃত্যুবরণ প্রযন্ত করেছেন। যার কবর এখনো বর্তমান।

এতবড় একটি যুগান্তকারী তথ্য, সেটি নিয়ে মাত্র দু জনেই গবেষণা করেছে? 

ধূর' তেমনটি নয়, এর আগেও অনেক গবেষক গবেষণা করেছেন সেই পান্ডুলিপি নিয়ে। যেমন- হেনরিয়েটা মেররিক ১৯২১ সালে পান্ডুলিপিটি দেখেন এবং "ইন দা ওয়ার্ল্ডেটিক" নামে বই লেখেন। আবার ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মীর ইজ্জুৎউল্লাহ নামে একজন পারস্যবাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্দেশে মধ্য এশিয়া ও লাদাখ সফর করেন এবং তিনিও ওই পান্ডুলিপি গুলো দেখে "ট্রাভেলস ইন সেন্ট্রাল এশিয়া" নামের বই লিখেন।

আমার একটু আপত্তি আছে, এতক্ষণ যাদের কথা বললেন তারা সকলেই দেখছি শুধুমাত্র তিব্বতীয় পান্ডুলিপির উপর নির্ভর করে একি কথা বলে চলেছে, একটি পান্ডুলিপিকে তো আর প্রমান ধরা চলে না।

রাজতরঙ্গিনী

কলহন রচিত রাজতরঙ্গিনী, মনে করা হয় এটা ছাড়া নাকি কাশ্মিরের ইতিহাস জানা খুব মুশকিল। সেই গ্রন্থে ইসানা নামের এক দিব্য পুরুষের নাম পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে বলা হয়েছে “ইসানা নামক একজন মহৎ সন্ত ডাল হ্রদের তীরে ইসাবারে বসবাস করিতেন। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ছিল।” অনেকেই মনে করেন এই ইসানাই হলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। রাজতরঙ্গিনীতে বলা হয়েছে সন্ধিমতী নামক একজন জনতার দ্বারা রাজা নির্বাচিত হন, যিনি স্বয়ং ইসানার শিষ্য পাশাপাশি ইসানার ইচ্ছেতেই তিনি শিংহাষনে বসেন।

যীশু খ্রীষ্ট 

ও বাবা যীশুর উপরে এতগুলো লোকের প্রায় একই অভিমত, এবার একটু অবাক লাগছে।

এতটুকু জেনে যদি অবাক হয়ে গেলে? তাহলে আরো শোনো।

বৈশ্যমহাপুরাণ

"পুরাণ" হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মধ্যে একটি।

হিন্দু ধর্মে মোট আঠারোটি পুরাণ রয়েছে, শিবপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ, ইত্যাদি। যাদের মধ্যে অন্যতম আরেকটি নাম “বৈশ্যমহাপুরাণ”। বৈশ্যমহাপুরাণে ইসা নামের এক জনের সাথে কাশ্মীরের রাজার কথোপকথন বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে, তার থেকেও অবাক করার মত বিষয়টি হল বাইবেলে‌ যেমন প্রভু যীশুকে কুমারী মায়ের সন্তান বলা হয়েছে, তেমনি বৈশ্যমহাপুরাণে ইসাকে "কুমারীগর্ভস্বংবরণ" বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন - ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার কিভাবে শুরু হয় আর কে করেন প্রথম প্রচার?

আরো কিছু তথ্য

সবকিছু শুনলাম, জানলাম প্রভু যীশুর ভারতে আসার বিষয়ে এত কিছু তথ্য থাকা সত্ত্বেও খ্রীষ্টানরা কেন মেনে নেননি এই বিষয়টি?

মানা আর না মানা দুটোরই আলাদা আলাদা মুক্তি থেকে থাকে। কোন যুক্তি সঠিক, কোন যুক্তি বেঠিক সেটা কি বলা সম্ভব। প্রভু যীশুর ভারতে আসা নিয়ে আরো অনেক কথা রয়েছে।

অনেকেই মনে করেন, যীশু কাশ্মীরে, আবার কেউ বলেন তিনি গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণের শহর, কুশিনগরে মারা গিয়েছিলেন। আবার বাইবেল মতে তিনি রোমেই মারা গিয়েছেন। কাশ্মীরের যীশুর মৃত্যুর পর শ্রীনগরের কাছে প্রভু যীশুকে কবরস্থ করা হয়। কাশ্মীরের অধিবাসীরা একজন প্রাচীন হিব্রুভাষী ইহুদি পুণ্যবান পুরুষের কথা বলে আসছে, যার নাম উজ আসাফ। প্রভু যীশু নিজেও হিব্রু ভাষাতেই কথা বলতেন। তাই অনেকের ধারণা তিনিই যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন।

খ্রীষ্টানদের এই মতবাদ না মানার কারন

এবার বিচার করো, কোনটিকে সঠিক মনে করবে?

সত্যিই তো? এক জনের বিষয়ে এত বিভিন্ন রকমের মতবাদ।

শুধু তাই নয়, আরো অনেকে আছেন যারা আরো ভিন্ন মত দিয়েছেন। যেমন মধ্যযুগীয় শেষের দিকের আর্থারিয়ান কিংবদন্তি অনুযায়ী যুবক যীশু ব্রিটেনে গিয়েছিলেন।

তাহলে প্রশ্নটা আবার একি জায়গাই গিয়ে ঠেকছে, যীশু ভারতে এসেছিলেন নাকি ব্রিটেনে?

আসলে বিষয়টি হল বিখ্যাত লোকেদের জীবনি নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠতেই থাকে, তার উপরে যীশু খ্রীষ্ট এমন একজন ছিলেন যার প্রচারিত মতবাদ বিশ্বের সবথেকে বেশি মানুষ মেনে চলে, তার বিষয়ে গুঞ্জন ওঠাটাই স্বাভাবিক, তাই কি না।

 আরো পড়ুন - হিন্দু পুরাণে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে কি বলা হয়েছে।

যেই তথ্যগুলো নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম সেগুলোতে একটি কথা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, প্রভু যীশু কিশোর অবস্থায় মাত্র বারো বছর বয়সে ভারতে এসেছিলেন, অবাক করার মত বিষয়টি হল ভারত থেকে ইজরায়েল কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তাছাড়াও সেই সময় আধুনিক সময়ের মত যানবাহন চলাচলের জন্য ছিল না, এক কিশোরের পক্ষে কি এতটা দূরত্ব পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব ছিল কি? যেখানে ভাষা ছিল প্রকৃত প্রতিবন্ধকতা।

হুম, যুক্তিটা বেশ জোরদার।

আবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে যাচাই করি, তবে ঐতিহাসিকরা এখনো প্রমান করতে পারিনি যে সেই সময়ে কাশ্মিরে এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ দুটোই চর্চা করা হতো। পরবর্তী সময়ে তক্ষশীলাতে বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা শুরু হলেও, দুটো সময়ের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

তাছাড়াও ইজরায়েলের সমাজ মতে পিতার কাছ থেকে পুত্ররা তার কাজ শিখত। প্রভু যীশুর পিতা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, সুতরাং প্রভু যীশু নিজেও সেই কাজ শিখেছিলেন, যার জন্যে সমাজে তার পরিচয় ছিল কাঠমিস্ত্রি হিসেবেই, যদি প্রভু যীশু কিশোর কালেই ভারতে আসতেন তবে তার দ্বারা কাঠমিস্ত্রির কাজ শেখা সম্ভব ছিল না, এই বিষয়ে বাইবেলের মার্ক লিখিত ৬ অধ্যায়ের ৩ নং পংক্তিতে বলা হয়েছে - এ তো সেই ছুতোর মিস্ত্রি এবং মরিয়মের ছেলে;।

এছাড়াও বহু বিষয় রয়েছে, যা পরস্পর বিরোধী অর্থডক্স তৈরি করে। সর্বোপরি পান্ডুলিপি এবং অন্যান্য গ্রন্থে ইসা নামের প্রাচুর্য পাওয়া যায়, তারপরেও এটা জানা সম্ভব হয়নি যীশু আর ইশা আসলে একই মানুষ।

শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩

ভারতে খ্রীষ্ট বা খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার সাধু থোমা যেভাবে শুরু করেন। How Christianity began in India । The reason why Saint Thomas came to India।

জুন ১০, ২০২৩

 ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রসারের ইতিহাস ও সময়কাল বিষয়ে ভারতের জনমানুষের শিংহভাগের মধ্যে ভূল মতামত জায়গা করে নিয়েছে। বস্তুত ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার প্রায় দু হাজার বছর আগেই শুরু হয়েছে। তিব্বতীয় কিছু পান্ডুলিপিকে প্রমাণ ধরে কিছু বৌদ্ধ পন্ডিত এও দাবি করেন যে ভারতে স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট এসেছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের কাছ হতে প্রচুর জ্ঞান প্রাপ্ত করেছিলেন। বস্তুত খ্রীষ্টানদের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলে যীশু খ্রীষ্টের জীবনের কয়েকটি বছরের, বিশেষ করে যুবক কালের কয়েক বছরের ইতিহাস জানা যায়নি, কথিত আছে যে সেই সময়ে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং বেদ জ্ঞানের অধ্যায়ন এবং বৌদ্ধ দর্শনের অধ্যায়ন করেছেন। যদিও বা‌ আজকের আলোচ্য বিষয় ভারতে প্রভু যীশুর আগমন নিয়ে না, ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার নিয়ে।

ভারতে খ্রীষ্ট বা খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার সাধু থোমা যেভাবে শুরু করেন। How Christianity began in India । The reason why Saint Thomas came to India।
সেন্ট থমাস ক্যাথেড্রালে রাখা সেন্ট থমাস হত্যার প্রতিকৃতি 

স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয়দের মধ্যে এই ভূল ধারনা রয়েছে যে, ফ্রান্স এবং ব্রিটিশদের দ্বারাই ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচারের ইতিহাস দুই হাজার বছর পুরোনো, এবং ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের পথিকৃৎ সাধু থোমার সেই কর্মকান্ডকে স্মরণে রেখে ১৯৬৪ সালে ভারতের ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগ দ্বারা প্রেরিত থোমার নামে ডাকটিকিট ও স্ট্যাম্প তৈরী করা হয়েছিল। 

 ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার 

বাইবেল মতে যীশু খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের আগে তার বারো জন শিষ্যদের গোটা বিশ্বে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতে বলেন, আর এই খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তার এক শিষ্য পিতর (ইংরাজিতে পিটার)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যীশু খ্রিস্টের আরেক শিষ্য থোমাকে নিয়োজিত করেন। পবিত্র আত্মায় দিক্ষীত থোমা বর্তমানের ইজরায়েলের জেরুশালেম থেকে আকাবার উপসাগর এরপর লোহিত সাগর হয়ে আরব সাগরের পথে দক্ষিণ ভারতে ৫২ খ্রীষ্টাব্দে মালাবার উপকূলে প্রবেশ করেছিলেন। 

ভারতে প্রবেশ করার পর থেকেই তিনি এখানকার বেশ কিছু পরিবারকে পবিত্র আত্মার নামে তাদের খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকেন। এই বিষয়ে কথিত আছে যে তিনি প্রভু যীশুর নামে বিভিন্ন রোগিদের সুস্থতা প্রদান করতে এবং যীশুর নামে বদ আত্মাদের মানুষের মধ্যে থেকে বিতাড়িত করতে পারতেন, যার ফলশ্রুতিতে তার দ্বারা‌ প্রচারিত খ্রীষ্ট ধর্মে মানুষের আস্থা বাড়তে থাকে। এইভাবে থোমা পাকালোমাত্তোম, সংকরপুরি, থইয়িল, পাইপ্যাপিলি, কল্লী, কালিয়ানঙ্কাল এবং পাতামুক্কু নামক কয়েকটি পরিবারকে বাপ্তিস্ম প্রদানের দ্বারা খ্রীষ্ট ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়ে কিছু রাজা যেমন গন্ডোনিফার্স খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতে কিছু রাজা খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে, থোমার দ্বারা সেই স্থানের কোডুঙ্গল্লুর, পলয়ূর, কোট্টাক্কাভু (পরাভুর), কোকামঙ্গালাম, নীরনাম, নীলকল (ছায়াল), কোল্লাম এবং তিরুভিথামকোডে খ্রীষ্ট ধর্মের উপাসনা স্থল বা গীর্জা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়ে ওঠে।

ভারতে খ্রীষ্ট বা খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার সাধু থোমা যেভাবে শুরু করেন। How Christianity began in India । The reason why Saint Thomas came to India।
সেন্ট থমাস ক্যাথেড্রাল চেন্নাই 

সাধু থোমার মৃত্যু 

দক্ষিণ ভারতের মাটিতে থোমা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার করলে খ্রীষ্ট ধর্ম বিস্তার লাভ শুরু করে, তার প্রচারিত খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষন বৃদ্ধি পেতে থাকলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ভিতীর কারন হয়ে পড়ে। এমনাবস্থায় তামিলনাডুর ময়লাপুরে ধর্ম প্রচারের পর সাধু থোমা আত্মগোপনে প্রার্থনা করা কালিন বর্শা দ্বারা তাকে হত্যা করা হয়, এবং এখনো তার মৃতদেহ রাখা হয়েছে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের সেইন্ট থমাস ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা বা স্যান্ট থোমাস চার্চে।


 আরো পড়ুন - ভারতে খ্রীষ্টানদের উপর অত্যাচার কতটা সত্য এবং কারা দায়ী?

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

ভারতে ভারতীয় খ্রীষ্টানদের উপর অত্যাচার কতটা সত্য । VIOLENCE OVER INDIAN CHRISTIAN ।

জুন ০১, ২০২৩

 ধার্মিক হওয়া ভালো ধর্মান্ধ নয়। কিন্ত বিগত এক দশকে ভারতের মাটিতে ধর্মকে কেন্দ্র করে যা চলে আসছে তার আগামীদিনের উপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তার কিছুটা আন্দাজ করা কঠিন নয়। ভারতীয় সংবিধানে ভারতকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা হয়েছে, কিন্তু এই ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেশ কিছু সংগঠন ভারতকে "হিন্দু রাষ্ট্র" ঘোষণা করার এক অদ্ভুত লড়াই সংগ্রামে মেতে উঠেছে। যার আঁচ গিয়ে পড়েছে মুসলিম সহ ভারতের অন্যান্য ধর্মের উপরেও। ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম হিন্দু, এর পূর্বেও এমনটি নয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম হিসাবে হিন্দু ধর্মের তথাকথিত কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের উপর আঘাত হানে নি। তবে নাটকীয়ভাবে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রে‌ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)  তাদের শাসন শুরু করার পর থেকে খ্রিস্টান-বিরোধীরা একটু একটু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং এই সময় থেকেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। আগামী ২০০৪ সালে কেন্দ্রে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সেটিও কিছুটা প্রশমিত হয়। কিন্ত ১৯১৪ সালের ২৬শে মে মাসে পুনরায় কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টি নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র দামোদর মোদী প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসলে তথাকথিত হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠনগুলোর দ্বারা অন্যান্য ধর্মের উপরে উপদ্রব চড়া হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার প্রভাব খ্রীষ্ট ধর্মের উপরেও দেখা যায়। 

হিন্দু কট্টরপন্থীদের ধারনা

উচ্চবর্ণের হিন্দুদের একাংশ মনে করেন "হিন্দুস্তান " পক্ষান্তরে "ভারত" শুধুমাত্র হিন্দুদের সমাজ ব্যবস্থা দ্বারাই শাষিত হওয়া উচিত। এমন অবস্থায় কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো ভয় পান যে ভারতে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের আগমন, তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা হিন্দুদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে পারে, এবং এমনটি চলতে থাকলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP), বজরং দল এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) দ্বারা প্রচারিত "রাম রাজ্যে" প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। এই সংগঠনগুলি সকলেই যুক্তি দেখিয়েছে যে যেহেতু হিন্দুরা ভারতীয়দের একটি বড় অংশ তৈরি করে, তাই ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত। এই ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের বিশ্বাস করতে শেখায় যে ভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য এবং বাকি মুসলিম, খ্রীষ্টান সকলেই বহিরাগত আক্রমণকারী, সুতরাং তাদের ভারত থেকে উৎখাত করাই বাঞ্ছনীয়।
বিভিন্ন রিপোর্ট
স্বাধিনতা লাভের পরবর্তী কয়েক দশক ভারতের ধর্মিয় সম্প্রীতি অন্য মাত্রা পেয়েছিল।
খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হিংসার শতাধিক ঘটনা প্রতি বছর বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা রিপোর্ট করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রক এবং সংখ্যালঘুদের জাতীয় কমিশন (NCM)। এই কমিশন গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বছর খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে শতাধিক ধর্মীয় হামলার তালিকা তৈরি করে। যে তালিকায় ঘনঘন উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)  এর নাম। কিন্তু স্বাধিনতার আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) তার শিকড় ছড়াতে শূরু করেছিল। ১৯৯৯ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে বলেছে যে কিছু রাজনৈতিক‌ দল তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে তৎপর। এবং এতে এও বলা হয়েছে যে ভারতে খ্রীষ্টান মিশনারীদের দ্বারা উপজাতীয় ও দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার এছাড়া শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য এবং আর্থিক সহায়তাকে অপপ্রচারের নাম দিয়ে মিশনারী খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ করতে শুরু করেছে কট্টরপন্থী ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো।

ভারতে ভারতীয় খ্রীষ্টানদের উপর অত্যাচার কতটা সত্য । VIOLENCE OVER INDIAN CHRISTIAN ।
ভারতীয় খ্রিষ্টানরা কি বাস্তবেই শঙ্কিত 


রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৬৪ থেকে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে  হিংসাত্মক আক্রমণ চলতে থাকে এবং কালক্রমে তা প্রতিবছর বাড়তে শুরু করে। ১৯৬৪ থেকে এখন পর্যন্ত হাজারের উপরে ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গীর্জায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর অন্যান্য খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানের ভাংচুর, বাইবেলের কপি পোড়ানো, যাজক ও ধর্মপ্রচারকদের হত্যা, জোর করে খ্রিস্টানদের ধর্মান্তরিত করা, মারপিট, জোর পূর্বক স্থান পরিবর্তন করা, যৌন নিপীড়ন, খুন, ধর্ষণ এবং খ্রিস্টান স্কুল, কলেজ এবং কবরস্থান ধ্বংস করা।এই বিষয়ে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো যে হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠনগুলোর দ্বারা যে সমস্ত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে তার মাত্র ১০% রিপোর্ট করা সম্ভব হয়েছে।
আরো পড়ুন - হিন্দুদের ভবিষ্য পুরাণে যীশুর বিষয়ে কি বলা হয়েছে।
ভারতের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন (NCM) ২০০১ সালের নভেম্বরে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত করে, যেখানে বলা হয়েছে ১৯৯৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) ক্ষমতায় আসার পর থেকে খ্রিস্টানদের অত্যাচার বহুগুণ বেড়েছে। ভারতীয় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের মতে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট ৩৬৩ টি হামলা চালানো হয়েছে খ্রীষ্টানদের প্রতি। আবার মে বছর এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সেই বছরই সর্বভারতীয় খ্রিস্টান কাউন্সিল রিপোর্ট করে যে ভারতীয় খ্রিস্টানরা প্রতি ৩৬ ঘণ্টায় একবার করে  আক্রমনের শিকার হতে হচ্ছে। আবার একিভাবে ২০০৮ সালে ভারতের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন রিপোর্ট করেছিল - মে সমস্ত রাজ্যে BJP শাষিত ছিল, সেই সমস্ত রাজ্যে খ্রীষ্টানদের উপর অবিশ্বাস জনক ভাবে হিংসাত্মক ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল।
 ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রিপোর্ট করেছিল  উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমন সবথেকে বেশি হয়েছে।
ইভাঞ্জেলিক্যাল ফেলোশিপ অফ ইন্ডিয়া (EFI) অনুসারে ২০১৭ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে খ্রীষ্টানদের বিভিন্ন উৎসবের সময় কট্টর হিন্দুদের আক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে BJP শাষিত রাজ্যে। গির্জা এবং বাড়িতে সেই রাজ্যগুলিতে উপাসনা বাধাগ্রস্ত করতে এবং বাধা দিতে পুলিশ প্রযন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
ভারতীয় রিপোর্টেই যে খ্রীষ্টানদের প্রতি এমন অমানবিক তথ্য উঠে এসেছে তা নয়। আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা এবং সংবাদপত্রে এই ভয়াবহতার সত্যতা প্রকাশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ(VHP), বজরং দল , এবং আরএসএস হল ভারতে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হিংস্রতার জন্য সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত সংগঠন। ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারনেশনাল রিলিজিয়াস ফ্রীডম  (USCIRF) অন্য দেশগুলির সাথে ভারতকেও সংখ্যালঘু নিপীড়নে  টিয়ার-1 হিসাবে স্থান দিয়েছে। এছাড়াও একটি বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট "খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সামাজিক আক্রমনের বৃদ্ধি"র জন্য ভারতের সমালোচনা করেছিল। এমনকি ভারতের খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারীদের এই শোচনীয় অবস্থার দরুন মানবাধিকার সংস্থাগুলো ২০২১ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ সর্বমোট ১৮ টি মানবাধিকার সংস্থা ভারতে খ্রিস্টানদের ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।
সমালোচনা
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে গেরুয়া সঙ্ঘ পরিবার হিন্দু ধর্মের প্রচারের জন্য গঠনমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি এটিও অবগত হওয়া উচিত যে হিন্দু ধর্মের চিন্তাধারার মধ্যে বর্ণবাদ থাকাই স্বাভাবিক ভাবেই দলিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা মনে করেন যে- যেভাবেই হোক খ্রিস্টান জনসংখ্যা বাড়লে তা নির্বাচনী রাজনীতির গতিশীলতা এবং হিন্দু জাতি হিসেবে ভারতের মর্যাদাকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা সম্ভবপর নয় কেননা ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের মাটিতে খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা মাত্র ২.৩%।
এযাবৎ যতগুলো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তার সবগুলোতেই ভারতীয় জনতা পার্টির মদতপুষ্ট কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোর নাম উঠে এসেছে, এবং যারা এই নারকীয় ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তাদের বেশিরভাগই ছিল নামধারী অপরাধীরা। সুতরাং বলাই যাই ভারতের মত এমন ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এই সংগঠনগুলো হিংসার জন্ম দিয়ে চলেছে। আর এই কারনেই হয়তো পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর অহিংস মনোভাবের কথা উল্লেখ করে খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অহিংসার বিশ্বাস গড়ে তোলার কথা বলেন। এবং তার পরের দিনই ১৩ অক্টোবর ২০০৮ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং- এর সভাপতিত্বে ভারতের জাতীয় সংহতি পরিষদে একটি বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছিল, যেখানে তিনি বজরং দল, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের মতো হিন্দু জঙ্গি সংগঠনগুলির নিন্দা করেছিলেন এবং প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এই হিংসা একটি বড় "জাতীয় লজ্জা"।

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

বাংলা বানানের জটিলতা তার সংস্কার ।। BANGLA SPELLING HISTORY ||

নভেম্বর ২৬, ২০২০

 এ যেন এক অদ্ভুত বাংলা, বাংলার বাঙ্গালি এত দিন ইংরাজি জানতো এবং প্রয়োজন বোধেই তার ব্যবহার করতো, কিন্তু বর্তমানের বাঙ্গালি যেন ইংরাজি জানছে না, বরং গ্রহন করছে। তাই, বাংলা ভাষা যেন আর বাংলার গর্ব আর তেমন মনে হয় না। বাংলা আর ইংরাজির মিশ্রিত রুপ যেন বেঙ্গলিশ, উদাহরণ রয়েছে প্রচুর, যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানের আশির্বাদে বেশির ভাগ নবাগত বস্তুর বাংলা অর্থ হয় না, কিন্তু যে জিনিসগুলোর বাংলা রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা দেওয়া অবশ্যক। বাংলার বাঙ্গালিদের কাছে "নদি" নাকি "নদী" , "কাহিনি" নাকি "কাহিনী", "প্রতিযোগিতা" নাকি "প্রতিযোগীতা" কোনটা সঠিক বানান সেটা নিয়েই ধন্দে পরে যাই, আর এমনটাই স্বাভাবিক, বর্ণমালাই "৯" তার অস্তিত্ব হারিয়েছে বহুআগেই ,কিন্তু পাঠ্য পুস্তকে জায়গা করে রেখেছে এখনো। তাহলে কি বাংলা বানানের মান্যী রুপ আসবে না কখনো?

বাংলা-বানান-শব্দ
বাংলা বানানের বিবিধ সমস্যা

বানান সংস্কারে রবীন্দ্রনাথ
মান্যী রুপ আসবে, এমন নই যে আসবে না। পরিবর্তন বাংলা ভাষাতে যেমন রয়েছে তেমনি পরিবর্তিত বাংলা উচ্চারণকে সামনে রেখেই বাংলা বানানের সংস্কার প্রদানের চেষ্টা চলে আসছে আগে থেকেই, উদ্দেশ্য একটাই বাংলা ভাষার সরলিকরণ। বাংলা ভাষাকে যিনি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন যিনি, সেই বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা বানানের শুদ্ধ রুপ প্রদানে এগিয়ে আসেন প্রথম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব জয়ের পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে তাকে আংশিক অধ্যাপকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলা বিভাগের জন্য ১৯৩২ সালে।
আরো পড়ুন = নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।
তখন তিনি বাংলা বানানের সংস্কার প্রয়োজন মনে করেন এবং বানান সংস্কারকে চুড়ান্ত রুপ দিতে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুপারিশ প্রদান করেন, এবং সেই সময় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (তখনো উপাচার্য হন নি) সেই প্রস্তাবে সারা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই তার দায়িত্ব ভার তুলে দেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র দুই বছরের জন্য।
 বাংলা বানান সংস্কার সমিতি
১৯৩২-৩৪ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক রুপে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যাবার পরেই ১৯৩৫ সালে বাংলা বানানের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজশেখর বসুর সভাপতিত্বে "কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানান সংস্কার সমিতি" গঠন করা হয়, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বংলা বানানের শুদ্ধতা প্রদান আর বাংলা ভাষার সরলিকরণ।

াখেলবাংলা-বানান-শব্দ-
বাংলা লেখা বাস্তবেই জটিল
পরিবর্তী কালে এই সমিতি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে গুরত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং "বাংলা বানানের নিয়ম" রচনা করে তা পুস্তক আকারে প্রকাশিত করে, যার প্রথম সংস্করণ ১৯৩৬ সালে ছাপানো হয়, আবার সেই বছরি এর দ্বিতীয় সংস্করণটিকেও ছাপানো হয় বছরের শেষের দিকে। তবে এর তৃতীয় সংস্করণটি বিশেষ গুরত্বপূৰ্ণ, কারণ এর অভিধানের অর্থগুলো দীর্ঘকালিন প্রচলিত।
পরিবর্তীকালে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে তেমন বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি, কিন্তু ১৯৮১ সালে অধ্যাপক বিজন কুমার বন্দোপাধ্যায় সভাপতি হয়ে এলে বানান সংস্কারের কিছু বেগ পাই।
বাংলা আকাদেমি
এই সময়ের কিছু পর থেকেই নব কবিরা, তাদের লেখনশৈলির সঠিক বানানের প্রয়োজনিয়তা মনে করে, ফলে বাংলা আকাদেমি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের জন্য রুচিবোধ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষার সমতা বিধান, লেখনশৈলী ও বাংলা বানানের সরলিকরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি ১৯৯৫ সালে তাদের সুপারিশ পত্র প্রকাশ করে এবং সেই বছরি শেষের দিকে সেই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জ্ঞানি গুনি ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এবং সেই আলোচনার সাপেক্ষে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও বাংলা বানানের নিয়ম হিসাবে একটি পুস্তিকা পরের বছর বের করা হয়, যার নিয়ম অনুসারে বর্তমান বাংলা বানান নির্ধারিত হয়েছে, যেমন "নদী" শব্দটি  পরিনত হয়ে সঠিক শব্দ হিসাবে বিবেচীত হয়েছে "নদি" তে, তেমনি ইরানী হয়েছে ইরানি ,কোষ হয়েছে কোশ, জাপানী বানান পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে জাপানি।
তবে গৃহিত সিদ্ধান্তে আরো বলা হয়েছে যে সময়ের সাথে মানুষের উচ্চারণ পরিবর্তনের সাথে সাথে বানানের রিতিও পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও কিছু বাংলা বানানের কিছু নিয়ম রয়েছে যা বিস্তর আলোচনা ও ব্যাকরণ যুক্ত, যেমন- মন্ত্রী শব্দটি সঠিক কিন্তু মন্ত্রীপরিষদ শব্দটি সঠিক নই, সঠিক বানান মন্ত্রিপরিষদ, ঠিক একি ভাবে প্রাণিবিদ্যা, গুনিজন ইত্যাদি ইত্যাদি।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিভিন্ন অলৌকিক কাজ সমূহ || miracle of jesus christ ||

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

 বর্তমানে গোটা বিশ্বে সর্বাধিক পালিত ধর্মের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রধান, যার প্রবর্তক ছিলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মোও কোনেো অলৌকিক থেকে কম নই। প্রভু যীশুর জন্মকে মান্যতা দিয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়ে আসছে আজো। প্রভু যীশু যে জন্মগ্রহন করবেন, তার ভবিষ্যত বাণি তার আগেই অনেক ভাব-বাদী করে গিয়েছেন, যেগুলো বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও প্রভু যীশুর জন্মের ভবিষ্যৎবানি দেখতে পাওয়া যাই। যাই হোক প্রভু যীশুর জন্মের দিনটিকে গোটা বিশ্ব "বড়দিন" হিসাবে পালন করে থাকে। কথিত আছে যে তার জন্মের মহূৰ্তে আকাশে একটি বড় আকারের তারা উদিত হয়েছিল, যা কোনো অলৌকিক বা চমৎকারের থেকে কম নই, কিন্তু সেই চমৎকার গুলো তার জন্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল তেমনটিও নই। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার জীবনে বহু অলৌকিক কাজ বা চমৎকার করে গেছিলেন।

প্রভু যীশুর অলৌকিক কাজ

অগভির সমুদ্রে মাছ
ঈশ্বরের বানি প্রচারের জন্যে শীঘ্রই প্রভু যীশুর জীবনে শিষ্যর প্রয়োজন পরে। গালিল প্রদেশে ভ্রমনরত যীশু খ্রীষ্ট শিষ্য নির্বাচন করতে শুরু করেন। সেই সময় দুই ভাই শিমোন ও আন্দ্রিয় সমুদ্রে মাছ ধরছিল, তারা সারাদিন চেষ্টা করেও কোনো মাছ ধরতে পারে নি। যীশু তাদের গভির জলে গিয়ে জাল ফেলতে বললেন, প্রভু যীশুর কথা শুনে তারা তাই করলেন এবং গভির জলে গিয়ে জাল ফেললেন, যীশুর কথা মত এবার তাদের জালে প্রচন্ড পরিমানে মাছ ধরা পরলো।
যীশু সেই দুই ভাইকে তার শিষ্য হবার আহ্বান জানালে তারা যীশুর শিষ্যত্ব গ্রহন করে।
জলকে দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন
বাইবেলে উল্লেখিত প্রভু যীশুর দ্বারা প্রথম অলৌকিক কাজ যেটি ছিল সেটি হল জলকে দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন করা। দ্রাক্ষারস আঙ্গুর থেকে নির্যাস করা রস, যেটি আমোদ-প্রমোদের সময় নেশা জাতীয় পানিয় হিসাবে ব্যবহার করে।
একদিন একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিথীদের সেবাই রাখা দ্রাক্ষারস শেষ হয়ে পরে। অতিথীদের দ্রাক্ষরসের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রভু যীশুর মা, মারিয়াম প্রভু যীশুকে দ্রাক্ষরস শেষ হয়ে যাবার বিষয়ে জানাই এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে দ্রাক্ষরসের ব্যবস্থা করতে বলেন। প্রভু যীশু মায়ের কথা রাখলেন এবং প্রভু যীশুর দ্বারা ঘটিত তার জীবনের প্রথম অলৌকিক কাজ করলেন।
আরো পড়ুন: প্রভু যীশুকে "মেষ শাবক" বলা হয় কেনো।
প্রভু যীশু শেষ হয়ে যাওয়া দ্রাক্ষারসের পিপেঁ গুলিকে জল দ্বারা পরিপূৰ্ন করতে বললেন, এবং সেই জল আমন্ত্রিত অতিথিদের দ্রাক্ষারস হিসাবে পরিবেশন করতে বললেন। যীশুর মায়ের আদেশে সকলে তাই করলেন, কিন্তু চমৎকারি ভাবে পিপেঁতে ভরা জল নিজে থেকেই দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন হয়ে গেলো। যা পরবর্তিতে অতিথিদের পরিবেশন করা হয়, যা পান করে অতিথিরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল।
ভূতে ধরা লোক উদ্ধার
একবার প্রভু যীশু কফরনাহুম শহরে তার মতবাদ প্রচার করতে গেলেন, সেখানকার লোকেরা যীশুর মুখে ঈশ্বরের বানি শুনে তার প্রতি আকর্ষিত হতে শুরু করে। প্রভু যীশু তার বানি প্রচার করছিলেন ,এমন সময় একজন ভূতে ধরা লোক তার সামনে এসে চিৎকার করতে শুরু করে - " হে নাসরতের যীশু, আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে? আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।"
যীশু লোকটির মধ্যে থাকা ভূতগুলিকে ধমক দিলেন এবং সেই লোকটির শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সেই মহূৰ্তেই একটি বিকট শব্দ করে সকল লোকের সামনে দিয়ে ভূতগুলি সেই লোকটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে গেল।
বিভিন্ন রোগিদের অলৌকিক ভাবে সুস্থতা প্রদান
প্রভু যীশু যেখানেই যাতেন সেখানেই তার পিছনে অনেক লোকে জমা হতেন তাদের অসুস্থ পরিজনদের নিয়ে। প্রভু যীশু তাদেরকে ঐশ্বরিক আশির্বাদে সুস্থ করে দিতেন যার মধ্যে রয়েছে, কুষ্ঠ রোগি, অন্ধ ব্যাক্তি, খোঁড়া ,অন্ধ লোকেরা। একবার প্রভু যীশু প্যালেস্টাইনে কফরনাহুম নামের এক ধর্মপ্রান ব্যাক্তির বাড়ীতে ছিলেন, ঠিক সেই সময় পক্ষাঘাত যুক্ত রোগিকে তার সামনে আনার জন্য বাড়ীর চাল সরিয়ে সেখান থেকে খাটুলি দিয়ে ঝুলিয়ে প্রভু যীশুর সামনে আনা হল। সেই পক্ষাঘাত রোগি এতটাই অসহায় ছিল যে, তার দ্বারা উঠে দ্বারানোর ক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলে ছিলেন। যীশু সেই পক্ষাঘাত রোগিকেও সুস্থ করলেন। এমনি বহু রোগিদের তিনি সুস্থ করেছেন, যেগুলি বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

Jesus-christ-miracle-of-healing-super-natural-lord-power
প্রভু যীশু অন্ধকে দৃষ্টি দিলেন।


যীশুর ঝড় থামানো
একদিন প্রভু যীশু তার শিষ্যদের নিয়ে নৌকা করে সমুদ্রে ক্ষানিকক্ষন যাত্রা করবেন ভাবলেন। তিনি তার শিষ্যদের নিয়ে সমুদ্রে পারি দিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সমুদ্রে প্রবল বেগে ঝড় বইতে শুরু করে দিল, যা দেখে প্রভু যীশুর শিষ্যরা প্রবল ভয় পেয়ে গেছিলেন। তাদের অনেকেই মনে করেছিলেন এটা বোধ হয় তাদের শেষ যাত্রা, আর সেই মহূৰ্তে যীশু গভির ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন।
শিষ্যরা বাঁচার কোনো উপায় না দেখে প্রভু যীশুকে ঘুম থেকে উঠালেন আর বললেন-" প্রভু, আপনি দেখছেন না কেন? আমরা যে মরতে বসেছি।" প্রভু যীশু তাদের খানিকটা তিরষ্কার করে, বললেন -"তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস নেই কেনো?" তারপর যীশু উঠে দাড়াঁলেন এবং হাত বাড়িয়ে ধমকের সুরে ঝড়ের উদ্দেশ্যে বললেন "শান্ত হও, স্থির হও", প্রভু যীশুর এই কথা বলার পরেই সমুদ্রের ঝড় ও জলের ঢেউ শান্ত হয়ে গেল।
 মৃত বালিকার জীবন দান
প্রভু যীশু গালিল প্রদেশে থাকা কালিন একজন পিতা যীশুর সামনে এসে তাকে তার সাথে, তার বাড়ীতে যাওয়ার অনুরোধ করলেন, কেননা তার ছোট কন্যা ছিল অসুস্থ। যীশু সেই লোকটির কথা মত সেই ব্যাক্তির সাথে তার বাড়ীর দিকে চলতে শুরু করলেন, কিন্তু মাঝপথে খবর আসে যে অসুস্থ ছোট মেয়েটি মারা গেছে সুতরাং প্রভু যীশুকে তার বাড়ী নিয়ে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু প্রভু যীশু তবুও সেই ব্যাক্তির সাথে তার বাড়ীতে গেলেন, এবং মৃত মেয়েটির হাত ধরে বললেন-"খুকি উঠো"। প্রভু যীশুর এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি উঠে পরলো। যা দেখে তার শিষ্যরা প্রচন্ড অবাক হয়ে গেছিল।
পাঁচটি রুটি ও দুটো মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার লোকেদের পরিবেশন
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নাম তার চমৎকারি কাজ ও ঈশ্বরের বাক্যের জন্য গোটা ইজরাইলে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে, তার বাক্য শোনার জন্য তিনি যেখানে যেখানে যেতেন তার পিছনে পিছনে বহুলোক অনুসরণ করতেন। একদিন গালীল প্রদেশের এক প্রান্তরে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বানি শোনার জন্য পাঁচ হাজার লোকের কাছাকাছি জমায়েত দেখা যাই। যার মধ্যে অনেকেই বহু দূর-দুরান্ত থেকে এসেছিল।
প্রভু যীশু তাদের সেদিন ফিরে যাবার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন তাই তাদের সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন। কিন্তু শিঘ্রই এত লোকের খাবারের প্রয়োজন দেখা দেই। প্রভু যীশুর এক শিষ্য আন্দ্রীয় জমায়েতের মাঝ থেকে একজন বালক কে আনলেন জার কাছে তাদের খাবার জন্য পাঁচটি রুটি আর দুটো ভাঁজা মাছ ছিল।
প্রভু যীশু তার শিষ্যদের আদেশ দিলেন পাঁচ হাজার লোকেদের খাবারের জন্য বসাতে। শিষ্যরা তাই করলো। প্রভু যীশু সেই রুটি ও মাছ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করে সেই রুটি ও মাছগুলো পরিবেশন করতে বললেন, কিন্তু অলৌকিক ভাবে সেই রুটি আর মাছ সংখ্যায় বাড়তে থাকলো এবং সেই রুটি ও মাছ দিয়ে পাঁচ হাজারের মত লোকেদের সেদিন খাদ্য পরিবেশন করেছিলেন।
জলের উপর দিয়ে হাটা
ঈশ্বরের বানি প্রচারের পর প্রভু যীশু ও তার শিষ্যরা কফরনাহুমে ফিরে যাবার পথ ধরলেন। সেই মহূৰ্তে প্রভু যীশু প্রার্থনাই লীন ছিলেন। প্রভু যীশুর আগমনে দেরি দেখে শিষ্যরা সমুদ্রে নৌকাই কিছুটা সময় কাটাবে বলে ঠিক করলো। সেই সময় চারেদিকে ছিল ঘন অন্ধকার, শিষ্যরা নৌকা নিয়ে সমুদ্রে কিছুটা দূর যাবার পরে, কিছু সময় বাদেই প্রচন্ড বেগে ঝড় আসতে শুরু করে। এমন সময় তারা প্রভু যীশুকে জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখলেন , যীশু তাদের বললেন "ভয় পেও না" ।
Jesus-christ-miracle-of-healing-super-natural-lord-power
যীশু খ্রীষ্টের জলের উপর দিয়ে হাঁটা

 যীশু তাদের, তাকে ছেড়ে আসার কারন জানতে চাইলেন, তখন তার এক শিষ্য পিতর বললেন তারা যীশুকে ছেড়ে আসেনি। প্রভু যীশু পিতরকে তার কাছে আসতে বললেন, পিতর বিশ্বাসের সাথে নৌকা থেকে নেমে জলের উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন কিন্তু হঠাৎ বিদ্যূতের চমকানিতে পিতরের বিশ্বাস নেমে গেলো এবং পিতর জলে ডুবতে শুরু করলেন। সেই সময় বাকি শিষ্যরা দেখতে পাই প্রভু যীশু ঝড়ের মাঝে সমুদ্রের জলের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে এসে, জলে পরে যাওয়া শিষ্যকে জল থেকে টেনে তুললেন। এবং তারপরে তারা কফরনাহুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
প্রভু যীশু বেঁচে থাকা কালিন জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত বহু অলৌকিক কাজ করে গেছেন, মৃত্যর পরে তার পুনরাই জীবিত হয়ে উঠা বড় চমৎকারের থেকে কম নই, পাশাপাশি সকলের সামনে আকাশ পথে হারিয়ে যাওয়াও অলৌকিক কাজের একটি অংশ মাত্র। প্রভু যীশুর অলৌকিক কাজ গুলো তার শিষ্যরা পবিত্র বাইবেলে লিপিবদ্ধ করে গেছেন, যে অলৌকিক কাজ গুলো একটি পর্বে সম্পূৰ্ন করা সম্ভব নই। সেই সুবাদেই হইতো খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করেন - প্রভু যীশু ছিলেন, আছেন এবং পুনরাই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

আরো পড়ুন: প্রভু যীশুকে "মেষ পালক" বলার কারন।


বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

প্রভু যীশু শীঘ্রই ফিরে আসছেন সময় হয়েছে মন পরিবর্তনের ।। jesus came second time .

এপ্রিল ১৫, ২০২০

খ্রীষ্ট ধর্ম ত্রিতত্বে (TRINITY) বিশ্বাসী পিতা,পুত্র ও পবিত্র আত্মা। এই তিনটি বিষয় আলাদা হলেও এক , উদাহরণ স্বরুপ যাহা জল তাহাই বরফ আবার তাহাই হাইড্রজেন ও অক্সিজেন। কিন্তু তবুও তা প্রমানের অপেক্ষা রাখে যেই পিতা , সেই পুত্র আবার সেই পবিত্র আত্মা।
তার পাশাপাশি আরো তিনটি খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস রয়েছে খ্রীষ্ট মৃত্যবরণ করেছেন , খ্রীষ্ট পুনর্জীবিত হয়েছেন , খ্রীষ্ট পুনরাই আগমণ করবেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যে পুনরাই পৃথিবীতে তার মহান মহাজাগতিক রুপ নিয়ে ফিরে আসবেন, এই কথাটি বাইবেলে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তার আগে এই বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন বাস্তবেই কি প্রভু যীশু মৃতদের মধ্যে থেকে জীবিত হয়েছিলেন। যতক্ষন না এটা প্রমান হই যে প্রভু যীশু পুনরুত্থান করেছিলেন ততক্ষন , তার পুনরাগমন বিষয়টিও কল্পনার ন্যায় মনে করাই বাঞ্চনীয়।
প্রভু যীশুর স্বর্গোন্নয়ন

প্রভু যীশুর স্বর্গোরোহন

প্রভু যীশু মানবজাতির পাপের ক্ষমার জন্য মারা গিয়েছিলেন তার একটা স্পষ্ট ধারনা আমি আগেই আলোচনা করেছি। প্রভু যীশুর মৃত্য ও পুনরুত্থান যে ঘটেছিল এবং প্রভু যীশুকে যে জিবিত অবস্থায় স্বর্গে উত্তরণ করা হয়েছে তার বিষয়ে বাইবেলের শিষ্যচরিৎ প্রথম অধ্যায়ের ৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-প্রেরিতদের চোখের সামনে তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়া হল৷ আর এক খানা মেঘ তাঁকে তাদের দৃষ্টির আড়াল করে দিল৷

প্রভু যীশুর জীবিত অবস্থাই স্বর্গোরোহণ বাস্তবেই ঘটেছিল এবং এটি যে কোন কাকতালীয় বিষয় যে নই তার প্রমান শুধু বাইবেলে নই পবিত্র কোরান ও হিন্দু পবিত্র গ্রন্থ ভবিষ্যপুরাণেও রয়েছে , যার একটি উদাহরণ দিয়ে রাখছি - পবিত্র কোরানের সূরা মারিয়াম: ৩৪
وَالسَّلٰمُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
যার বাংলাই অর্থ দ্বারাই - আর আমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হয়েছিল, যেদিন আমি জন্মেছিলাম। যেদিন আমি মারা যাবো এবং যেদিন আমাকে জীবিত করে উত্থিত করা হবে।
প্রভু যীশুর বেঁচে উঠা
প্রভু যীশু যে স্বর্গোরোহনের পর তিনি যে পুনরাই ফিরে আসবেন তার একটি পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায় যোহন লিখিত ১৪ অধ্যায়ের ২ নং ও ৩ নং শ্লোকে- ২ আমার পিতার বাড়িতে অনেক ঘর আছে, যদি না থাকতো আমি তোমাদের বলতাম৷ আমি তোমাদের থাকবার একটা জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি৷এবং তিন নং শ্লোকে বলা হয়েছে - সেখানে গিয়ে জায়গা ঠিক করার পর আমি আবার ফিরে আসব ও তোমাদের আমার কাছে নিয়ে যাব, যাতে আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার৷ 

প্রভু যীশু পুনরাই ফিরে আসবেন

প্রভু যীশুকে বাইবেলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাংকেতিক রুপে ডাকা হয়েছে, এমনকি প্রভু যীশু নিজেও নিজেকে বিভিন্ন সময় সাংকেতিক রুপে উল্লেখ করছেন, যেমন - ঈশ্বরের মেষ শাবক, উত্তম মেষ পালক, মানবপুত্র এছাড়া আরো বিভিন্ন ভাবে।
প্রভু যীশুর জীবনে যা কিছু ঘটেছে (জন্ম থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত) তা ছিল ঈশ্বরের অনুগ্রহে পূৰ্ব পরিকল্পিত , যার উদ্দেশ্য ছিল মানবজাতির কল্যান সাধন। এবং তিনি যে অন্তিম লগ্নে পুনরাই আকাশ পথে মহিমাপূৰ্ণ রুপে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন সে বিষয়ে প্রভু যীশু নিজেই বলেছেন অনেক বার , যার কয়েকটি আপনাদের জন্য উল্লেখ করছি যেমন মথি লিখিত ১৬ অধ্যায়ের ২৮ নং শ্লোক -
মানবপুত্র যখন তাঁর স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে প্রতিদান দেবেন৷ এছাড়া মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ৩০ নং শ্লোক -
‘সেই সময় আকাশে মানবপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে৷ তখন পৃথিবীর সকল গোষ্ঠী হাহুতাশ করবে; আর তারা মানবপুত্রকে মহাপরাক্রম ও মহিমামণ্ডিত হয়ে আকাশের মেঘে করে আসতে দেখবে৷
তিনি পুনরাই ফিরে আসবেন


ফিরে আসার মহুর্ত


প্রভু যীশু স্বর্গোরোহনের আগে তার শিষ্যরা প্রভু যীশুকে তার আগমনের সন্ধিক্ষণ জানতে চাইলে প্রভু যীশু তার আগমনের সময় বিষয়ে বলেন , যেটা লেখা রয়েছে মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ৪-৪৪ পদ প্রযন্ত( সব শ্লোক গুলি তুলে ধরছিনা,কারন এতে প্রতিবেদনটি বিশাল বড় হয়ে পরবে) এছাড়া আরো বহু জায়গাই। তবে আপনাদের সুবিধার্তে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি-
১ তোমরা নানা যুদ্ধের কথা শুনবে এবং তোমাদের কানে যুদ্ধের গুজব আসবে।
২ এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে; আর এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যাবে৷
৩ সর্বত্র দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে৷
৪ সেই সময় অনেক লোক বিশ্বাস থেকে সরে যাবে৷
৫ অনেক ভণ্ড ভাববাদীর আবির্ভাব হবে, যাঁরা বহু লোককে ঠকাবে৷
৬ অধর্ম বেড়ে যাওযার ফলে অধিকাংশ লোকদের মধ্য থেকে ভালবাসা কমে যাবে৷
এছাড়া আরো বিভিন্ন জায়গাই ( লুক ১৭ অধ্যায় ও ২১ অধ্যায় ,যোহন ) ,বহু কিছু বলেছেন প্রভু যীশু যেগুলো প্রভু যীশুর পুনরাই আগমনের পূৰ্বে আগামি দিনে ঘটতে চলেছে উদাহরণ স্বরুপ মহামারী, জলপ্রলয়, দুর্ভিক্ষ ,ভূমিকম্প ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই বিষয়ে সতর্ক করে প্রভু যীশু বলেছেন, যেটি রয়েছে মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে- কিন্তু এসব কেবল যন্ত্রণার আরম্ভ মাত্র৷
এবং বাইবেলে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে পৃথিবী ধ্বংসের আগের মহুর্ত গুলিতে এগুলি ঘটতে চলেছে, এবং এই সমস্থ ঘটনার পর  মহূৰ্তে ঠিক পৃথিবী ধ্বংসের সময় প্রভু যীশু আগমন করবেন যেটিকে আক্ষরিক অর্থে DOOMS DAY বলা হয়ে থাকে , যার আগে এই সমস্ত ঘটনা গুলো ঘটবে , এবং পৃথিবী ধ্বংসের মহূৰ্তেই তিনি আসবেন, যেটি লেখা রয়েছে মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ২৯ নং শ্লোকে - মহাক্লেশের সেইদিনগুলির পরই, ‘সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না৷ তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়বে আর আকাশমণ্ডলে মহা আলোড়নের সৃষ্টি হবে৷’

মন পরিবর্তনের সময় এসে গেছে

সেই সময় আর দেরি নই যে সময় প্রভু যীশু পুনরাই ফিরে আসবেন। সুতরাং সময় হয়েছে সকল মানবজাতির মন পরিবর্তনের। প্রভু যীশু পুনরাই আগমনের আগে যা যা ঘটার ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন তার প্রায় সবগুলোই বর্তমান পৃথিবীতে লক্ষ্য করা যাই। নেপালের ভূমিকম্প, সুনামি, করোনার ভাইরাসের মহামারী,সিরিয়ার দুর্ভিক্ষ, সব কিছু যেন একের পর এক ঘটেই চলেছে। সুতরাং সেই দিন আর দেরি নেই যেদিন প্রভু যীশু তার স্ব মহিমায় আকাশপথে ফিরে আসবেন। সুতরাং মানবজাতির সকলের মন পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে , প্রভু যীশু নিজেই বলেছেন যেটি রয়েছে মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ৩৩ নং শ্লোকে - যখন তোমরা দেখবে এসব ঘটছে, বুঝবে মানবপুত্রের পুনরাগমনের সময় এসে গেছে, তা দরজার গোড়ায় এসে পড়েছে৷

ফিরে আসার কারন

ধ্বংসের শেষ মহূৰ্তে তিনি ফিরে আসবেন কারন ধ্বংসের শেষ মহূৰ্তে   পৃথিবীতে পাপাচার বেড়ে যাবে , শুধুমাত্র তার মনোনিত ব্যাক্তিরাই সেদিন রক্ষা পাবেন , প্রভু যীশু নিজেই স্বর্গে উত্তোলনের আগে বলেছিলেন - আমি তোমাদের থাকবার একটা জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি৷(যোহন লিখিত ১৪ অধ্যায়)
ঠিক একই ভাবে বলেন তিনি পুনরাই ফিরে আসবেন এবং তার মনোনিত লোকেদের তিনি তার সাথে নিয়ে যাবেন এবং সেই মহুর্তে কিভাবে তার মনোনিত ব্যাক্তিদের বেছে নেওয়া হবে সেটি লেখা রয়েছে মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ৩১ নং শ্লোকে -খুব জোরে তূরীধ্বনির সঙ্গে তিনি তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠাবেন৷ তাঁরা আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত, চার দিক থেকে তাঁর মনোনীত লোকদের জড়ো করবেন৷
এই মনোনিত ব্যাক্তি তারাই যারা শেষ মহূৰ্ত প্রযন্ত ঈশ্বরের পথে চলবেন ( মথি লিখিত ২৪ অধ্যায়ের ১৩ নং শ্লোক -শেষ পর্যন্ত যে নিজেকে স্থির রাখবে, সে রক্ষা পাবে৷)
ক্রুশে যীশুর মৃত্যু
এবং এই চরম অন্তিম মহূৰ্তে মাত্র ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিদের মনোনিত হবেন আর এই বিষয়টি উল্লেখ্য করা হয়েছে বাইবেলের উদ্ঘাটন ১৪ অধ্যায়ের ৪ নং শ্লোকে -
এই ১,৪৪,০০০ জন লোক হলেন তাঁরা যাঁরা স্ত্রীলোকদের সংসর্গে নিজেদের কলুষিত করেন নি, কারণ তাঁরা খাঁটি৷ তাঁরা মেষশাবক যেখানে যান সেখানেই তাঁকে অনুসরণ করেন৷ পৃথিবীর লোকদের মধ্য থেকে এই ১,৪৪ ,০০০ জন লোককে মুক্ত করা হয়েছে৷ ঈশ্বর ও মেষশাবকের উদ্দেশ্যে তাঁরা মনুষ্যদের মধ্য থেকে অগ্রিমাংশরূপে গৃহীত হয়েছেন৷
সুতরাং এখনো মন পরিববর্তন করুন ও সত্যের পথে ফিরে আসুন কারন স্বর্গে যাবার পথ হিসাবে প্রভু যীশু নিজেই বলেছেন , যেটি রয়েছে যোহন লিখিত ১৪ অধ্যায়ের ৬ নং শ্লোকে - যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমিই পথ, আমিই সত্য ও জীবন৷ পিতার কাছে যাবার আমিই একমাত্র পথ৷

সুমন্ত মাহালী হেমরম

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

ক্ষমাশীল ধর্ম হিসাবে খ্রীষ্ট ধর্ম।। বাইবেলের মত পাপ ও পাপের ক্ষমা।। christian religious and forgiveness according to bible.

এপ্রিল ০৯, ২০২০

পাপমুক্ত সমাজ ,পাপাচার থেকে মানব সমাজকে রক্ষার্থে ধর্ম তার বিকাশ ঘটাই। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব ব্রম্ভান্ডে এমন কেও নাই যে অন্তরে হাত রেখে বলতে পারে সে পাপ করেনি এই বিষয়ে বাইবেলের যোহনের ১ম পত্রের ১ অধ্যায়ের ১০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - **আর যদি বলি, আমরা পাপ করিনি, তবে আমরা ঈশ্বরকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করি এবং তাঁর বার্তা আমাদের অন্তরে নেই৷**

পাপ কি?

পাপ ও পূণ্য এই দুটির সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক। পাপের কোন বিশেষ সংঙ্গা নেই, তবে একটি মৌলিক ধারনা বর্তমান "যা কিছু ঈশ্বর ও মানব কল্যান বিরুদ্ধ তাহা হইলো পাপ।"
পাপস্বীকার,অনুতাপ,প্রায়চিত্ত,ক্ষমা প্রার্থনা,
প্রভু আমাদের পাপ ক্ষমা কর
মৌলিক ধারনা ব্যতিত বাইবেলে পাপাচার মুক্ত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বর দশটি আজ্ঞা পস্তর ফলকে লিপিবদ্ধ করেন এবং মোশিকে তা প্রেরন করেন এবং বলেন যেটি রয়েছে যাত্রা পুস্তকের ২৪ অধ্যায়ের ১২ অনুচ্ছেদে- ** প্রভু মোশিকে বললেন, “পর্বতের ওপর আমার কাছে এসো এবং ওখানে থাকো| আমি লোকদের জন্য আমার শিক্ষামালা ও বিধিগুলি দুটো প্রস্তর ফলকে লিখে রেখেছি| আমি এই প্রস্তর ফলকগুলি তোমাকে দিতে চাই|”**
সেই প্রস্তর ফলকে যে সমস্ত আদেশ বা আজ্ঞা ক্ষোদিত করা হয়েছে সেগুলো নিম্ন রুপ।
১) “আমি ব্যাতিত অন্য কোন দেব-দেবতা আরাধ্য করবে না”
২) “ কোন প্রকার মূর্তি পূজা করবে না।
৩) “তোমরা  তোমাদের ঈশ্বর-সদাপ্রভুর নামে অনর্থক লইবে না।
৪) “বিশ্রামবার পবিত্রতার সাথে তা পালন করবে।
৫) “ তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করবে।
৬) “নর হত্যা বা খুন করবে না”।
৭) “ব্যভিচার করবে না।
৮) “চুরি করবে না।”
৯) “কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না”
১০) পরের দ্রব্য লোভ করবে না।
( এই দশ আজ্ঞাগুলো পবিত্র বাইবেলের যাত্রা পুস্তক ২০:১-১৭ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৬-২১ পদের মধ্যে পাবেন আমি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে দিলাম বিস্তারিত পড়তে বাইবেলে লিখিত ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা প্রতিবেদন পড়তে পারেন।)
Ten commandment,the ten commandment,দশ আঙ্গা,ঈশ্বরের দশ আঙ্গা,
ঈশ্বরের দশটি আজ্ঞা

পাপের ক্ষমা

প্রতিনিয়ত পাপাচার বেড়েই চলেছে পৃথিবীতে, বিচারের আশাই সকলেই হত্যাকারির হত্যা করাকেই অগ্রগন্য মনে করেন। ভারতীয় তথা বীশ্ব সমাজের প্রত্যেক নাগরিক জোর গলায় আর্তনাদ করে খুনিদের বিচার চাই , আর এই অপরাধের একমাত্র বিচার হিসাবে খুনির মৃত্যদন্ডকেই অগ্রাধিকার মনে করা হচ্ছে (আঁখকে বাদলে আঁখ ,খুনকে বাদলে খুন)। আমার বিচারে কোন অপরাধির মৃত্যদন্ড কাম্য করার অর্থ "আমি তো আমার সন্তান বা প্রীয়জনকে হারিয়েছি , বিনিময়ে আপনাকেও আপনার প্রীয়জনকে হারাতে হবে।"
এমন প্রতিহিংসা পরায়ণ পরস্থিতীতে মানবজাতীকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় ক্ষমাশীল ধর্মবিশ্বাসের। যথার্থেই প্রভু যীশু বলেছেন যেটি রয়েছে মার্ক লিখিত ১১ অধ্যায়ের ২৫ অনুচ্ছেদে  - **তোমরা যখনই প্রার্থনা করতে দাঁড়াও, যদি কারোর বিরুদ্ধে তোমাদের কোন কথা থাকে, তাকে ক্ষমা কর,’ **
সুতরাং খ্রীষ্ট ধর্মমতে পাপের ক্ষমা রয়েছে, আর এই পাপের একমাত্র উপায় হল প্রায়শ্চিত্ত বা অনুতাপ। এই বিষয়ে বাইবেলের লুক লিখিত ১৭ অধ্যায়ের ৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে -**সে যদি এক দিনে সাতবার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর সাতবারই তোমার কাছে ফিরে এসে বলে, ‘আমি অনুতপ্ত,’ তবে তাকে ক্ষমা কর৷’** এই প্রসঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন আমি কেনই বা  আমার শত্রুকে ঘনঘন ক্ষমা করতে যাব? এর উত্তর স্বরুপ বাইবেলের মথি লিখিত ৬ অধ্যায়ের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে -**তোমরা যদি অন্যদের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গের পিতাও তোমাদের ক্ষমা করবেন৷**
পাপস্বীকার,অনুতাপ,প্রায়চিত্ত
অনুতাপ ও প্রায়শ্চিত্ত

ক্ষমাহীন পাপ

বাইবেলে উল্লেখ্য দশ আজ্ঞা বিরুদ্ধ কর্মের প্রত্যেকটির জন্য আপনি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য, তা সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধ অনর্থক হোক বা নর হত্যা কিন্তু তার জন্য একান্ত অবশ্যক প্রায়শ্চিত্ত , যে বিষয়ে বলা হয়েছে যোহনের ১ অধ্যায়ের ৯ অনুচ্ছেদে-**আমরা যদি নিজেদের পাপ স্বীকার করি, বিশ্বস্ত ও ধার্মিক ঈশ্বর আমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করবেন ও সকল অধার্মিকতা থেকে আমাদের শুদ্ধ করবেন৷**
কিন্তু তার পরেও একটি বিশেষ পাপ রয়েছে যেটি বাইবেল অনুসারে ক্ষমার অযোগ্য যেটি বলা হয়েছে মথি ১২ অধ্যায়ের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে-**"তাই আমি তোমাদের বলছি, মানুষের সব পাপ এবং ঈশ্বর নিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কোন অসম্মানজনক কথা-বার্তার ক্ষমা হবে না।**এবং ৩২ অনুচ্ছেদ **মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোন কথা বলে, তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বললে তার ক্ষমা নেই , এযুগে বা আগামী যুগে কখনইনা৷**

পাপ থেকে বাঁচার উপায়

পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার যেমন উপায় রয়েছে তেমনি পাপাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় রয়েছে বাইবেলে। মানবজাতীর প্রত্যেকেই পাপাচার থেকে মুক্ত থাকতে সচেষ্ট, কেননা স্বর্গরাজ্যে পাওয়ার একমাত্র উপায় পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা, কেননা পাপাচার মুক্ত থাকা পবিত্রতার প্রতিক আর পবিত্রতা সরলতার প্রতীক , সুতরাং পাপ থেকে মুক্ত থাকতে হলে শিশুর ন্যায় সরল থাকা বাঞ্চনিয়, প্রভু যীশু এই প্রসঙ্গে মথি ১৮ অধ্যায়ের ৩ অনুচ্ছেদে বলেছেন -**আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতদিন পর্যন্ত না তোমাদের মনের পরিবর্তন ঘটিয়ে এই শিশুদের মতো হবে, ততদিন তোমরা কখনই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না৷** এছাড়াও মথি লিখিত ৫ অধ্যায়ের ৩ অনুচ্ছেদ -**‘ধন্য সেই লোকেরা যাঁরা আত্মায় নত-নম্র, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই৷**
সরলতার পাশাপাশি "ক্রোধ" সংযমের কথাও বলা হয়েছে অনেক জায়গাই যার মধ্যে একটি হল কলসিয় ৩ অধ্যায়ের ১৩ অনুচ্ছেদে -**পরস্পরের প্রতি ক্রুদ্ধ ভাব রেখো না কিন্তু একে অপরকে ক্ষমা কর৷**
এবং ক্রোধের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু বলা হয়েছে যেগুলো মানুষকে পাপ কাজ থেকে দুরে রাখে যেটি রয়েছে এফিসিয় ৪ অধ্যায়ের ৩১ অনুচ্ছেদে-** সব রকমের তিক্ততা, রোষ, ক্রোধ, চেঁচামেচি, নিন্দা ও সব রকমের বিদ্বেষভাব তোমাদের থেকে দূরে রাখ৷**

 খ্রীষ্ট ধর্মে ক্ষমার স্থান

খ্রীষ্ট ধর্মে ক্ষমার স্থান সর্বোচ্চ। ক্ষমার বিষয়ে বাইবেলে প্রচুর বলা হয়েছে, যথার্থেই বলা চলে খ্রীষ্ট ধর্ম মানবতার প্রতিক, শত্রুদের ক্ষমা করাও তার একটি অংশ যেমনটি লেখা রয়েছে লুক লিখিত ৬ অধ্যায়ের ২৭ অনুচ্ছেদে-** ‘তোমরা যাঁরা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো৷ যাঁরা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল কোর৷** এছাড়াও রোমিও ১২ অধ্যায়ের ১৪ অনুচ্ছেদ -**তোমাদের যাঁরা নির্য়াতন করে তাদের জন্য প্রার্থনা করো, যেন ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন৷ তাদের মঙ্গল কামনা কর, অভিশাপ দিও না৷** এছাড়াও আরো প্রচুর জায়গাই।
খ্রীষ্ট ধর্মে ক্ষমাই হল মূল কথা প্রভু যীশু নিজেও ক্রুশে বিদ্ধ হওয়া কালিন বলেছিলেন - **হে পিতা তুমি এদের ক্ষমা কর ,কারন এরা জানে না এরা কি করছেন।**
প্রভু যীশু এই প্রসঙ্গে আরো বলেছেন -**পাপিকে নই বরং পাপকে ঘৃনা কর।** আর এমনটা বলার পিছনে যে ব্যাক্ষাটি রয়েছে সেটি হল ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য ,আর এই পার্থক্য বিশ্লেষনের জন্য প্রভু যীশু লুক লিখিত ৬ অধ্যায়ের ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদে বলেছেন-**যাঁরা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে৷**  এবং ৩৩ অনুচ্ছেদ **যাঁরা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে৷ **
বাস্তবেই মহান ধর্ম এই খ্রীষ্ট ধর্ম যেখানে গোটা বিশ্ব প্রতিহিংসা মূলক কার্যকলাপকে উন্নয়নের সোপান হিসাবে গ্রহন করা হচ্ছে সেখানে পুরো মানবজাতীকে মানবতার পাঠ পড়ানোর দিকে নিজের পদাঙ্ক অগ্রসর করেছে খ্রীষ্ট ধর্ম। যেখানে বিশ্বে "খুন কে বাদলে খুন" বানীতে সবাই ভরাডুবি খাই সেই স্থানে বাইবেলের স্তিফান নামক চরিত্র মৃত্য কালিন তার হত্যাকারিদেরো ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল ,যেটি রয়েছে বাইবেলের শিষ্যচরিতের ৭ অধ্যায়ের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে-**তারা যখন স্তিফানকে পাথর মেরে চলেছে তখন তিনি প্রার্থনা করে বললেন, ‘প্রভু যীশু আমার আত্মাকে গ্রহণ কর!’এরপর তিনি হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে বললেন, ‘প্রভু, এঁদের বিরুদ্ধে এই পাপ গন্য করো না!’ এই বলে তিনি মৃত্যুতে ঢলে পড়লেন৷**

সুমন্ত মাহালী হেমরম

ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা ।। the ten commandment .

এপ্রিল ০৯, ২০২০
দশ আজ্ঞা মানব জাতীকে সুপথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে মোশির কাছে ঈশ্বরের প্ররিত দশটি বিশেষ আজ্ঞা। যেটি রয়েছে বাইবেল অল্ড টেষ্টামেন্টের যাত্রাপুস্তকের 20 অধ্যায়ে , যেগুলো আপনাদের সুবিধার্থে হুবহু অনুচ্ছেদ অনুযায়ি পরপর সাজিয়ে দিলাম।
Ten,ten commandment,দশ আজ্ঞা,ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা,
ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা
2 “আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর| আমিই তোমাদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছি| তাই তোমরা এই নির্দেশগুলি মানবে:
3 “আমাকে ছাড়া তোমরা আর কোনও দেবতাকে উপাসনা করবে না|
4 “তোমরা অবশ্যই অন্য কোন মূর্তি গড়বে না য়েগুলো আকাশের, ভূমির অথবা জলের নীচের কোন প্রাণীর মত দেখতে|
5 কোন মূর্ত্তির উপাসনা বা সেবা করবে না| কারণ, আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর| যারা অন্য দেবতার উপাসনা করবে তাদের আমি ঘৃণা করি| আমার বিরুদ্ধে যারা পাপ করবে তারা আমার শত্রুতে পরিণত হবে| এবং আমি তাদের শাস্তি দেব| আমি তাদের সন্তানসন্ততি এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও শাস্তি দেব|
6 কিন্তু যারা আমায ভালবাসবে ও আমার নির্দেশ মান্য করবে তাদের প্রতি আমি সর্বদা দযালু থাকব| আমি তাদের হাজার প্রজন্ম পর্য়ন্ত দযা প্রদর্শন করব|”
7 “তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের নাম ভুল ভাবে ব্যবহার করবে না| যদি কেউ তা করে তাহলে সে দোষী এবং প্রভু তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করবেন না|
8 “বিশ্রামের দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে মনে রাখবে|
9 সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করো|
10 কিন্তু সপ্তমদিনটি হবে অবসরের| প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের প্রতি সম্মান প্রর্দশনের দিন| সুতরাং সেই দিনে কেউ কাজ করবে না-তুমি নয়, অথবা তোমার ছেলেরা এবং মেয়েরা, অথবা তোমার স্ত্রী, অথবা তোমার ক্রীতদাস-দাসীরা কেউ নয়| এমনকি তোমাদের গৃহপালিত পশু এবং তোমাদের শহরে বাস করা বিদেশীরাও বিশ্রামের দিনে কোন কাজ করবে না|
11 কারণ প্রভু সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে এই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছু বানিয়েছেন এবং সপ্তমদিনে তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন| এইভাবে বিশ্রামের দিনটি প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য - ছুটির দিন| প্রভু এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন|
12 “তুমি অবশ্যই তোমার পিতামাতাকে সম্মান করবে, তাহলে তোমরা তোমাদের দেশে দীর্ঘ জীবনযাপন করবে| য়েটা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের দিচ্ছেন|
13 “কাউকে হত্যা কোরো না|
14 “ব্যাভিচার কোরো না|
15 “চুরি কোরো না|
16 “অন্যদের সম্বন্ধে মিথ্যা বোলো না|
17 “তোমাদের প্রতিবেশীর ঘরবাড়ীর প্রতি লোভ কোরো না| তার স্ত্রীকে ভোগ করতে চেও না| এবং তার দাস-দাসী, গবাদি পশু অথবা গাধাদের আত্মসাত্‌ করতে চেও না| অন্যদের কোন কিছুর প্রতি লোভ কোরো না|”
এছাড়াও দশ আজ্ঞার বিষয়ে বলা হয়েছে দ্বিতীয় বিবরনের 5 অধ্যায়ে যেগুলো নিম্নরুপ-
প্রার্থনা
 6‘আমি প্রভু তোমাদের ঈশ্বর| তোমরা যেখানে ক্রীতদাস হয়েছিলে সেই মিশর থেকে আমি তোমাদের পথ দেখিয়ে বের করে নিয়ে এসেছিলাম| সুতরাং তোমরা অবশ্যই এই আজ্ঞাগুলো মানবে:
7 “তোমরা অবশ্যই আমাকে ছাড়া অন্য কোনোও দেবতার পূজা করবে না|
8 “তোমরা অবশ্যই কোনো প্রতিমা তৈরী করবে না| আকাশের ওপরের কোনো কিছুর অথবা পৃথিবীর ওপরের কোনো কিছুর অথবা জলের নীচের কোনো কিছুর মূর্ত্তি অথবা ছবি তোমরা তৈরী করবে না|
9 তোমরা অন্য কোনোও প্রকার মূর্ত্তির পূজা অথবা সেবা করবে না| কেন? কারণ আমি প্রভু তোমাদের ঈশ্বর| আমার লোকদের অন্য কোনো দেবতার পূজা করাকে আমি ঘৃণা করি|আমার বিরুদ্ধে য়ে সব লোক পাপ কাজ করে তারা আমার শত্রুতে পরিণত হয় এবং আমি ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি দেব| আমি তাদের সন্তানদের, তাদের পৌত্র ও পৌত্রীদের এবং এমনকি তাদের প্রপৌত্র, প্রপৌত্রীদেরও শাস্তি দেব|
10 কিন্তু য়ে সব লোকরা আমাকে ভালবাসে এবং আমার আজ্ঞাগুলো মেনে চলে, হাজার হাজার পুরুষ ধরে আমি তাদের পরিবারের প্রতি আমার বিশ্বস্ত ভালবাসা প্রদর্শন করব!
11 “তোমরা অবশ্যই ভুলভাবে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করবে না| যদি কোনো ব্যক্তি ভুলভাবে প্রভুর নাম ব্যবহার করে, তাহলে সেই ব্যক্তি দোষী এবং প্রভু তাকে নিরপরাধী বলে মনে করবেন না|
12“প্রভু তোমাদের ঈশ্বর য়ে রকম আজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুসারে তোমরা অবশ্যই বিশ্রামের দিনটিকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে পালন করবে|
13 কর্মস্থানে তোমরা সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করবে|
14 কিন্তু প্রভু তোমাদের ঈশ্বরকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সপ্তম দিনটি হল বিশ্রামের দিন, সুতরাং সেই দিনে কোনো ব্যক্তির কাজ করা উচিত্‌ নয়| তোমরা, তোমাদের পুত্ররা এবং কন্যারা, তোমাদের শহরে বসবাসকারী বিদেশীরা অথবা তোমাদের পুরুষ অথবা স্ত্রী, ক্রীতদাসরা কেউই কাজ করবে না| এমন কি তোমাদের গরুদের, গাধাদের এবং অন্যান্য পশুদেরও কোনো কাজ করা উচিত্‌ হবে না| ঠিক তোমাদের মতোই তোমাদের ক্রীতদাসরা বিশ্রাম করবে|
15 ভুলো না য়ে মিশরে তোমরা ক্রীতদাস ছিলে| প্রভু তোমাদের ঈশ্বর তাঁর মহাশক্তির দ্বারা তোমাদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন| তিনি তোমাদের মুক্ত করেছিলেন| সেই কারণে প্রভু তোমাদের ঈশ্বর, বিশ্রামের দিনটিকে এক বিশেষ দিন হিসেবে পালন করার জন্য আদেশ করেছেন|
16 “ঈশ্বরের আজ্ঞা মত তোমরা অবশ্যই তোমাদের পিতামাতাকে সম্মান জানাবে| তোমরা এই আদেশ অনুসরণ করলে দীর্ঘজীবি হবে এবং প্রভু তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের য়ে দেশ দিয়েছেন সেই দেশে তোমাদের মঙ্গল হবে|
17 “তোমরা নরহত্যা করো না|
18 “তোমরা ব্যভিচার করো না|
19 “তোমরা চুরি করো না|
20 “তোমরা প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না|
21 “তোমরা অবশ্যই অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রীতে লোভ করবে না| তোমরা অবশ্যই তার বাড়ী, তার শস্যক্ষেত্র, তার পুরুষ দাস অথবা স্ত্রী দাসীকে, তার গরুদের বা গাধাদের অর্থাত্‌ প্রতিবেশীর অধিকৃত কোনো দ্রব্যসামগ্রীতেই লোভ করবে না|”

সুমন্ত মাহালী হেমরম

শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০

প্রভু যীশু মানবজাতির জন্য প্রেরিত উত্তম মেষপালক ।।JESUS CHIRST CALLED AS GOOD SHEPHERD

এপ্রিল ০৪, ২০২০
বাইবেলে প্রভু যীশুকে যে শুধু "ঈশ্বরের মেষ শাবক" বলা হয়েছে তেমনটি নই ,তার পাশাপাশি প্রভু যীশুকে উত্তম মেষপালক GOOD SHEPHERD হিসাবেও উল্লেখ্য করা হয়েছে বহুবার। প্রভু যীশুকে মেষ শাবক বলা হয় কেন সেটা আগেই বিশ্লেষণ করেছি। এবার প্রভু যীশুকে মেষ পালক বলা হয় কেন সেটা আলোচনা করতে চাই।
উত্তম মেষপালক
প্রভু যীশু নিজেই স্বয়ং নিজেকে অনেকবার উত্তম মেষপালক GOOD SHEPHERD  হিসাবে বর্ণনা করেছেন , যার মধ্যে একটি হল যোহন লিখিত ১০ অধ্যায়ের ১১ অনুচ্ছেদে - আমিই উত্তম মেষপালক৷ উত্তম পালক মেষদের জন্য তার জীবন সমর্পণ করে৷
এছাড়াও রয়েছে যোহন লিখিত ১০ অধ্যায়ের ১৪ অনুচ্ছেদে - ‘আমিই উত্তম মেষ পালক৷ আমি আমার মেষদের জানি আর আমার মেষরা আমায় জানে৷ ঠিক যেমন আমার পিতা আমাকে জানেন, আমিও আমার পিতাকে জানি; আর আমি মেষদের জন্য আমার জীবন সঁপে দিই।

প্রভু যীশুকে মেষ শাবক বলার অর্থ

বাইবেলে প্রভু যীশুকে উল্লেখ্য করা "মেষ শাবক" এবং "মেষ পালক" দুটো ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে, কিন্তু দুটো অর্থেই মানুষের প্রতি ঈশ্বরের করুনা ও ভালোবাসা প্রকাশ পাই।
যেখানে "মেষ শাবক" বলতে প্রভু যীশুকে মানুষের পাপের জন্য বলি প্রদত্ত পবিত্র প্রানি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে , যার বিষয়ে লেখা হয়েছে উদ্ঘাটন ৫ অধ্যায়ের ৯ অনুচ্ছেদে  - তাঁরা মেষশাবকের জন্য এক নতুন গীত গাইছিলেন:‘কারণ তুমি বলি হয়েছিলে; আর তোমার রক্ত দিয়ে সমস্ত উপজাতি, ভাষা, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্য থেকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে লোকদের কিনেছ৷
প্রভু যীশুকে মেষ পালক বলার অর্থ
প্রভু যীশু নিজেকে অনেকবার মেষ পালক হিসাবে বাইবেলে উল্লেখ্য করেছেন । "মেষ পালক" শব্দের স্বাভাবিক অর্থ যদি বের করি তবে তা দ্বারাই - যিনি মেষ পালন করেন বা লালন-পালন করেন বা পরিচালনা করেন।
প্রভু যীশু নিজেকে মেষ পালক হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং যোহন ১০ অধ্যায়ের ১১ ও ১৪ অনুচ্ছেদে বলেছেন - ‘আমিই উত্তম মেষপালক।
উত্তম মেষপালক ও মেষ শাবক
এখন প্রশ্ন একটি উঠে আসে তাহলে প্রভু যীশু মেষ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন ,সেটি একটু বোঝার চেষ্টা করি। যার উত্তর পাওয়া যাবে যোহন লিখিত ১০ অধ্যায়ে - আমি আমার মেষদের জানি আর আমার মেষরা আমায় জানে৷ ঠিক যেমন আমার পিতা আমাকে জানেন, আমিও আমার পিতাকে জানি; আর আমি মেষদের জন্য আমার জীবন সঁপে দিই৷
বিষয়টি জটিল তাই আপনাদের বোঝানোর স্বার্থে বাক্যটি খন্ডন করছি।
১ - আমি আমার মেষদের জানি আর আমার মেষরা আমায় জানে৷
সুতরাং প্রভু যীশু এই অংশটিতে মেষ বলতে তাদের বুঝিয়েছেন যারা প্রভু যীশুকে জানেন বা চেনেন এবং তাকে মানে।
২ =  আমি মেষদের জন্য আমার জীবন সঁপে দিই ৷
এখানে বাক্যটি অনুধাবন করলে দাঁড়াই প্রভু যীশু প্রয়োজনে সেই মেষদের জন্য জীবন দিতে পারেন, যেমনটা আমরা বাইবেলে লক্ষ্য করেছি ক্রুশে প্রভু যীশুর মৃত্যবরণ। প্রভু যীশুর মৃত্যবরণ যে কাকতালীয় ছিল তেমনটি নয় তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। যে রাত্রে প্রভু যীশু তার শিষ্যদের সাথে অন্তিম ভোজ করেন তখন তিনি তার শিষ্যদের আগামি ঘটনার বিষয়ে সতর্ক করে দেন এবং বলেন - মেষপালককে আঘাত করা হবে৷ তাঁর মৃত্যু হলে পালের মেষরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে৷’
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে তিনটি বাক্যে পেলাম , প্রথম - আমি আমার মেষদের জানি আর আমার মেষরা আমায় জানে৷, দ্বিতীয় - আমি মেষদের জন্য আমার জীবন সঁপে দিই ৷ , এবং তৃতীয় - মেষপালকের মৃত্য হলে পালের মেষরা ছড়িয়ে পরবে। সুতরাং ধারাবাহিকতার বিচারে প্রভু যীশু মেষ বলতে তার অনুগামী শিষ্যদের বুঝিয়েছেন বা যারা প্রভু যীশুকে অনুসরণ করেন বা মানেন। কারন প্রভু যীশুর শিষ্যরা প্রভু যীশুকে জানেন এবং মানেন, এবং প্রয়োজনে প্রভু যীশু তাদের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারতেন এবং প্রভু যীশুর মৃত্যর পর তার শিষ্যরাই ছরিয়ে পরেছিল।
এবার এর দ্বিতীয় অংশে আসছি  কারন অবাক করার মত অনেক কিছুই রয়েছে বাইবেলে। প্রভু যীশু যে জন্ম গ্রহন করবেন এবং তাকে যে মানবজাতির পাপের ক্ষমার জন্য মরতে হবে সেটা প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৭০০ বছর আগেই বলা হয়েছে বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে। বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে প্রায় ৩০০ এর উপরে প্রভু যীশুর উপর ভবিষ্যতবানি করা হয়েছিল। যার মধ্যে প্রভু যীশুকে মানুষের পাপের ক্ষমার জন্য ক্রুশে মৃত্যবরনের বিষয়ে বর্ননাও করা হয়েছে অনেক জায়গাই। যার উদাহরণ স্বরুপ ওল্ড টেষ্টামেন্টের  ইশাইয়া লিখিত ৫৩ অধ্যায়ের ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে -কিন্ত আমাদেরই ভুল কাজের জন্য তাকে আহত হতে হয়েছিল| আমাদের পাপের জন্য সে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল।।
ক্রুশে যীশুর মৃত শরির
যে ভবিষ্যতবানি সফল হয়েছিল ক্রুশে প্রভু যীশুর বলিদানের দ্বারা। সুতরাং বলা চলে মেষপাল বলতে যেটি বোঝায় মানব জাতীর সকলেই যারা প্রভু যীশুকে অনুসরণ করে বা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের।

 মেষ পালক হিসাবে প্রভু যীশু

প্রভু যীশু গোটা মানবজাতীর পাপের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং একজন মেষ পালক হিসাবে সকল মানব জাতীকে মেষপাল রুপে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায় মার্ক লিখিত ৬ অধ্যায়ের ৩৪ অনুচ্ছেদে -যীশু নৌকা থেকে বাইরে বেরিয়ে বহু লোককে দেখতে পেলেন, তাঁর প্রাণে তাদের জন্য খুবই দয়া হল; কারণ তাদের পালকহীন মেষপালের মতো দেখাচ্ছিল৷ তখন তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷
তিনি চেয়েছিলেন তার বলিদানের দ্বারা সকল মানবজাতি পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে , যার দরুন প্রভু যীশু নিজেই বলেছেন যোহন লিখিত ১০ অধ্যায়ের ৭ অনুচ্ছেদে - ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি; আমি মেষদের জন্য খোঁয়াড়ের দরজা স্বরূপ৷
এছাড়া আরো বলেছেন যোহন লিখিত ১০ অধ্যায়ের ১০ অনুচ্ছেদে -  আমি এসেছি, যাতে লোকেরা জীবন লাভ করে, আর যেন তা পরিপূর্ণ ভাবেই লাভ করে৷’
প্রভু যীশুর চেয়েছিলেন তার বলিদান ও তার পুনরুত্থানের পরেও যেন তার অনুসরণ কারি মেষ পাল অনন্তজীবন পাই এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে তার জন্য প্রভু সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রুপে বলা যেতে পারে প্রভু যীশুর অন্তিম ভোজকালিন পিতরকে তার মেষপালের দেখাশোনা করতে বলা , যেখানে প্রভু যীশু পর পর তিনবার পীতরকে তার মেষপালকে তত্ত্বাবধান করতে বলেন , যেটি রয়েছে যোহন লিখিত ২১ অধ্যায়ের ১৫ থেকে ১৭ অনুচ্ছেদে -  ‘যোহনের ছেলে শিমোন, তুমি কি আমায় ভালবাসো?’ পিতর তাঁকে বললেন, ‘হ্যাঁ, প্রভু, আপনি জানেন যে আমি আপনাকে ভালবাসি৷’যীশু পিতরকে বললেন, ‘আমার মেষদের তত্ত্বাবধান কর৷’ তার পাশাপাশি প্রভু যীশু আরো বলেন যেটি রয়েছে পিতরের ১ম পত্রে  - যাদের দায়িত্বভার তোমরা পেয়েছ তাদের ওপর প্রভুত্ব চালিও না; কিন্তু পালের আদর্শ স্বরূপ হও৷
প্রভু যীশুর অন্তিম ভোজ
সর্বশেষে বলবো মেষপালক রুপে প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করুন এবং গ্রহন করুন কারন স্বর্গ রাজ্যে সন্নিকটে ,তাই বাইবেলের একটি অনুচ্ছেদ দিয়েই এই প্রতিবেদন শেষ করতে চাই যেটি রয়েছে লুক লিখিত ১২ অধ্যায়ের ৩২ অনুচ্ছেদে - ‘ক্ষুদ্র মেষপাল! তোমরা ভয় পেও না, কারণ তোমাদের পিতা আনন্দের সাথেই সেই রাজ্য তোমাদের দেবেন, এটাই তাঁর ইচ্ছা৷
সুমন্ত মাহালী হেমরম