পরম্পরা আর ঐতিহ্য সম্পুর্ণভাবে একে অপরের পরিপূরক, যেখানে পরম্পরা বলতে বোঝায় বংশানুক্রমিক ভাবে বিশেষধারা, যেটি অনুক্রমিক ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের এক ব্যক্তি বা ঘটনা থেকে অন্য ব্যক্তি বা ঘটনায় পরিণতি বা গতি ধারাকে । আর ঐতিহ্য বলতে গেলে সেই বিষয়টিকে বোঝায় পরম্পরাকে অনুসরণ করে সেই গতি ধারাকে অব্যাহত রাখার এক মানসিক সংকল্প ,মুলত
সামাজিক চেতনাই ঐতিহ্যকে সঞ্চিত পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে- অন্যদিকে ঐতিহ্য যে ব্যক্তি, সমাজ ও জনগোষ্ঠীর সুকীর্তিরই উপলব্ধি ঘটাই তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ঠিক এমনি একটি পরম্পরা আর ঐতিহ্যের খোঁজ পাওয়া গেল, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়গ্রামে। যে ঐতিহ্য ও পরম্পরা চলে আসছে প্রায় তিনশো বছর থেকে। যার কোনো কিছুরি আজো পরিবর্তন হয়নি।
যখন কালীপুজোর আগে লক্ষ্মী পুজো হয় বাংলার ঘরে ঘরে তখন পুরনো রীতি, রেওয়াজ মেনে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়গ্রামে মুখার্জী জমিদার বাড়িতে চলে শতাব্দী প্রাচীন পারিবারিক কালি পুজো,মুখার্জী পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও এই পুজোই আনন্দে মেতে ওঠেন৷ আর এই পুজোটি চলে আসছে বিগত ২৭৭ বছর ধরে । এই পুজোটি যতটা প্রাচীন, ঠিক ততটাই অদ্ভুত কাহিনী রয়েছে এই পুজো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে। পুর্বে এই উদয়গ্রাম পরিচিত ছিল তারাজুগ্রাম নামে।১৭৪২ সালে বর্গি হামলা থেকে বাঁচতে বর্ধমানের সিংহীগাম থেকে তারাজুগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী তাই বলতে হয় ১৭৪২ সাল থেকে উদয় গ্রামেই বসবাস করছেন মুখোপাধ্যায় পরিবারেরা, আর সেসময় তারাজু বা উদয়গ্রামের জমিদার ছিলেন পূর্ণচন্দ্ররায়। জমিদার পূর্ণচন্দ্ররায়ের সভাতে দেশ-বিদেশের নামকরা তর্কবিদেরা আসতেন, ঠিক সেই সময় কাশির পণ্ডিতের বিরুদ্ধে তর্কযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন রঘুনাথ মুখার্জী আর় সেজন্য পূর্ণচন্দ্র জমিদার পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জীর উপর খুশি হয়ে তাকে তর্কালঙ্কার উপাধি দিয়েছিলেন আর তার পাশাপাশি তৎকালিন তারাজুগ্রাম বা বর্তমানের উদয়গ্রামকে উপহার স্বরূপ পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জীকে দিয়েছিলেন, তারপর তিনিই তারাজু গ্রামের নাম পরিবর্তন করে উদয় গ্রাম রাখেন এবং সেই থেকেই পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী ১৭৪৩ সাল থেকে কালিপূজোর সূচনা করেন ।
এই বনেদি বাড়ির পুজাে এখন পুরনো রীতি, রেওয়াজ মেনে আজও এই কালিপুজো হয়ে আসছে এইভাবে শত শত বছর একই রীতি ও নিয়ম মেনে পুজো হয় কালির তাও বংশানুক্রমে ,এই বনেদি পরিবার রীতি অনুযায়ী আজো প্রচলিত আছে একাদশী থেকে পাঁঠাবলি । কথিত আছে যে স্বপ্নাদেশ পেয়ে পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী এই পুজোটি আয়োজন করেন এবং লক্ষ্মী পুর্নিমার পক্ষ কালে কালি পুজোর সঙ্গে মনসাপুজাের ঘটও বাড়িতে বসান। পরিবার সূত্রে জানা যায় পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী মহাশয়ের বংশধর ব্যাতিত অন্যকেও মাত্র পুজা অর্পন করতে পারে না, বর্তমানে এই বনেদি পরিবারের এটি ২৭৭ তম কালীপুজো এবং পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী় মহাশয়ের ১৩ তম বংশধর মহাশয় সুদীপ্ত মুখার্জী তাদের বংশ পরম্পরাই চলে আসা তার এই কর্তব্য পুরন করেছেন। সুদিপ্তবাবু এই বিষয়ে বলেছেন তিনি এই বিষয়ে খুবই আশাবাদী তাদের আগামী প্রজন্মও এই পরম্পরা ধরে রাখবেন। বর্তমানে মুখার্জী পরিবারের সকলে কর্মসূত্রে উদয়গ্রামের বাইরে থাকেন তবে উক্ত অনুষ্ঠানে বংশের সকল সদস্যই একত্রিত হন এবং মায়ের পুজোয় শরিক হন।
পরিবার সূত্রে খবর, এই বাড়ির পুজােয় বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে৷ লক্ষ্মী পুর্নিমার তিথিতে কালীপুজোর পাশাপাশি দুর্গাপুজোও ও দুর্গাপুজোর সাথে সাথে মনসা পুজোও হয়
সপ্তমী ও অষ্টমিতে চলে সন্ধিপুজো, নবমী ও একাদশীর দিনে এ পাঁঠাবলির আয়োজন আছে, এবং সেই বলিকৃত পাঠাঁর মেটে দেবীকে ভোগ হিসাবে অর্পিত হয়। এছাড়াও সেই বাবুয়ানা ও জাঁকজমক ধরে রাখার জন্য এখনো ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পাঁচদিন বাবদ চলে শ্রীমঙ্গলের গান ও মনসা পালাগান ও বিভিন্ন নামকের্তন। পুজোর ওই পাঁচ দিন গ্রামে মেলা বসে৷ আগে মাটির তৈরি মন্দিরে পুজো হতো তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গামন্দির পাকা হয়েছে, আর এই বিষয়ে আমিও আশা রাখছি, ঐতিহ্যশালি ও বংশানুক্রমে চলে আসা এই বনেদি পরিবারের কালিপুজো আজীবন অখত থাকবে।
WhatsApp
UNIQUE KNOWLEDGE
সামাজিক চেতনাই ঐতিহ্যকে সঞ্চিত পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে- অন্যদিকে ঐতিহ্য যে ব্যক্তি, সমাজ ও জনগোষ্ঠীর সুকীর্তিরই উপলব্ধি ঘটাই তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ঠিক এমনি একটি পরম্পরা আর ঐতিহ্যের খোঁজ পাওয়া গেল, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়গ্রামে। যে ঐতিহ্য ও পরম্পরা চলে আসছে প্রায় তিনশো বছর থেকে। যার কোনো কিছুরি আজো পরিবর্তন হয়নি।
জমিদার মুখার্জী পরিবারের দুর্গা পুজো |
যখন কালীপুজোর আগে লক্ষ্মী পুজো হয় বাংলার ঘরে ঘরে তখন পুরনো রীতি, রেওয়াজ মেনে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়গ্রামে মুখার্জী জমিদার বাড়িতে চলে শতাব্দী প্রাচীন পারিবারিক কালি পুজো,মুখার্জী পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও এই পুজোই আনন্দে মেতে ওঠেন৷ আর এই পুজোটি চলে আসছে বিগত ২৭৭ বছর ধরে । এই পুজোটি যতটা প্রাচীন, ঠিক ততটাই অদ্ভুত কাহিনী রয়েছে এই পুজো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে। পুর্বে এই উদয়গ্রাম পরিচিত ছিল তারাজুগ্রাম নামে।১৭৪২ সালে বর্গি হামলা থেকে বাঁচতে বর্ধমানের সিংহীগাম থেকে তারাজুগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী তাই বলতে হয় ১৭৪২ সাল থেকে উদয় গ্রামেই বসবাস করছেন মুখোপাধ্যায় পরিবারেরা, আর সেসময় তারাজু বা উদয়গ্রামের জমিদার ছিলেন পূর্ণচন্দ্ররায়। জমিদার পূর্ণচন্দ্ররায়ের সভাতে দেশ-বিদেশের নামকরা তর্কবিদেরা আসতেন, ঠিক সেই সময় কাশির পণ্ডিতের বিরুদ্ধে তর্কযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন রঘুনাথ মুখার্জী আর় সেজন্য পূর্ণচন্দ্র জমিদার পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জীর উপর খুশি হয়ে তাকে তর্কালঙ্কার উপাধি দিয়েছিলেন আর তার পাশাপাশি তৎকালিন তারাজুগ্রাম বা বর্তমানের উদয়গ্রামকে উপহার স্বরূপ পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জীকে দিয়েছিলেন, তারপর তিনিই তারাজু গ্রামের নাম পরিবর্তন করে উদয় গ্রাম রাখেন এবং সেই থেকেই পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী ১৭৪৩ সাল থেকে কালিপূজোর সূচনা করেন ।
জমিদার মুখার্জী পরিবারের সদস্যবৃন্দ |
এই বনেদি বাড়ির পুজাে এখন পুরনো রীতি, রেওয়াজ মেনে আজও এই কালিপুজো হয়ে আসছে এইভাবে শত শত বছর একই রীতি ও নিয়ম মেনে পুজো হয় কালির তাও বংশানুক্রমে ,এই বনেদি পরিবার রীতি অনুযায়ী আজো প্রচলিত আছে একাদশী থেকে পাঁঠাবলি । কথিত আছে যে স্বপ্নাদেশ পেয়ে পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী এই পুজোটি আয়োজন করেন এবং লক্ষ্মী পুর্নিমার পক্ষ কালে কালি পুজোর সঙ্গে মনসাপুজাের ঘটও বাড়িতে বসান। পরিবার সূত্রে জানা যায় পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী মহাশয়ের বংশধর ব্যাতিত অন্যকেও মাত্র পুজা অর্পন করতে পারে না, বর্তমানে এই বনেদি পরিবারের এটি ২৭৭ তম কালীপুজো এবং পণ্ডিত রঘুনাথ মুখার্জী় মহাশয়ের ১৩ তম বংশধর মহাশয় সুদীপ্ত মুখার্জী তাদের বংশ পরম্পরাই চলে আসা তার এই কর্তব্য পুরন করেছেন। সুদিপ্তবাবু এই বিষয়ে বলেছেন তিনি এই বিষয়ে খুবই আশাবাদী তাদের আগামী প্রজন্মও এই পরম্পরা ধরে রাখবেন। বর্তমানে মুখার্জী পরিবারের সকলে কর্মসূত্রে উদয়গ্রামের বাইরে থাকেন তবে উক্ত অনুষ্ঠানে বংশের সকল সদস্যই একত্রিত হন এবং মায়ের পুজোয় শরিক হন।
মুখার্জী পরিবারের সাবেকী ও নতুন মন্দির |
পরিবার সূত্রে খবর, এই বাড়ির পুজােয় বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে৷ লক্ষ্মী পুর্নিমার তিথিতে কালীপুজোর পাশাপাশি দুর্গাপুজোও ও দুর্গাপুজোর সাথে সাথে মনসা পুজোও হয়
সপ্তমী ও অষ্টমিতে চলে সন্ধিপুজো, নবমী ও একাদশীর দিনে এ পাঁঠাবলির আয়োজন আছে, এবং সেই বলিকৃত পাঠাঁর মেটে দেবীকে ভোগ হিসাবে অর্পিত হয়। এছাড়াও সেই বাবুয়ানা ও জাঁকজমক ধরে রাখার জন্য এখনো ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পাঁচদিন বাবদ চলে শ্রীমঙ্গলের গান ও মনসা পালাগান ও বিভিন্ন নামকের্তন। পুজোর ওই পাঁচ দিন গ্রামে মেলা বসে৷ আগে মাটির তৈরি মন্দিরে পুজো হতো তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গামন্দির পাকা হয়েছে, আর এই বিষয়ে আমিও আশা রাখছি, ঐতিহ্যশালি ও বংশানুক্রমে চলে আসা এই বনেদি পরিবারের কালিপুজো আজীবন অখত থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন