পরিচিতী
ভারতের মধ্যে যে সকল আদিবাসী সমূহ বাস করে তাদের মধ্যে সাঁওতাল হল প্রধান, এই অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল.,সান্তাল, সান্তালি, হোর, হর, সাঙ্তাল, সান্দাল, সন্থাল, সান্থাল, সান্তালি, সাতার প্রভৃতি নামে অভিহিত হয়ে থাকে আর সেটা নির্ভর করে স্থানবেশে। সাঁওতালরা খুবই উৎসবপ্রিয় জাতি তবে প্রধান সোহরাই উৎসব । সোহরাই উৎসব সাঁওতালদের একপ্রকার জাতীয় উৎসব যা পৌষ সংক্রান্তির দিন অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়। ফসলের দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই হল এর অর্থ। এই জনজাতিকে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়।জাতি পরিচয়
সাঁওতালরা ভারতের আদিম অধিবাসী ও প্রোটো-অস্ট্রালয়েড জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এদের ভাষাটি মুলত অস্ট্রো-এশীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। এরা মাঝারি আকৃতির শরীর, ত্বকের গাঢ় রঙ, চ্যাপ্টা নাক, পুরু ঠোঁট এবং কোঁকড়ানো চুল তাদের অস্ট্রেশীয় নৃতাত্বিক উৎস নির্দেশ করে যে গোষ্ঠির মানুষভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল দ্রাবিড়দেরও বহু আগে অস্ট্রেলিয়া এবং সন্নিহিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা থেকে।
ধর্ম
সাঁওতালদের প্রধান ধর্ম হল "সারনা" বা "সারি " ধর্ম ,আর যার অর্থ হল "বাস্তব "। মুলত এরা প্রকৃতির পুজা করে । সাঁওতালী ভাষায় দেবতাকে ‘বোংগা‘ বলে। এদের প্রধান দেবতা হচ্ছে সূর্যদেব " সিম বোংগা"। অন্ দেবতাদের মধ্যে প্রধান হল চন্দ্র দেব বা "চান্দু বোংগা‘" এছাড়া "মারাং বুরু‘ ‘আবগে বোংগা‘ প্রমুখ । সাঁওতালরা যে ধর্মপুস্তক দ্বারা পরিচালিত হয় তার নাম " সিরজম পুথিঁ " । তবে বর্তমানে বেশির ভাগ সাঁওতাল খ্রীষ্ট ও হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে।সমাজ
সারি ধরম মতে সাঁওতালদের আদি পিতা ও মাতা পিলচু হাড়াম ও পিলচু বুড়ির সাত জোড়া সন্তান থেকেই তাদের উদ্ভব। এজন্যই সাঁওতালরা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। সাঁওতালী ভাষায় এ গোত্র গুলো ‘পারিস‘ নামে অভিহিত আর এগুলো হল হাঁসদা, সরেন, টুডু, কিসকু, মুর্মু, মাণ্ডি, বাস্কে, বেসরা, হেম্বরম, পাউরিয়া, চঁড়ে, বেদেয়া। এই সাতটি গোত্র ছাড়াও আরো পাচঁটি গোত্রের কথা জানা যায়।সাঁওতাল সমাজে সম গোত্রে বিবাহ হয় না। তবে এর সমাজে কয়েক ধরনের বিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো হল -
1 আসলি বিবাহ - পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সম্মতিতেই দেখাশোনার মাধ্যমে বিয়ে। 2 রাজারাজি বিবাহ - প্রেম করে বিয়ে, তবে এই প্রসঙ্গে বলি , নারিরা চাইলে নিজেরাই তাদের জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারে আর যে বিষয়ে মধ্যস্থতা করেন সমাজের মোড়ল বা জোকমাঝি। তবে যে বিবাহটি সবথেকে অদ্ভুত সেটি হল
হুর কাটারা বিবাহ, হুর কাটারা বিবাহ হচ্ছে জোর করে বিবাহ। কোন যুবক যদি কোন যুবতীকে ভালোবেসে ফেলে বা পছন্দ করে এবং সেই যুবতী যদি তাকে অপছন্দ করে তবে সুযোগ বুঝে যুবতীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে জোরপুর্বক তুলি নিয়ে গিয়ে পরবর্তী কালে সামাজিক বোঝাপরা ও অর্থদন্ডের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা। তবে বর্তমানে এই রিতিটি আর দেখা যায় না।
উৎসব
সাঁওতালরা খুব উৎসব প্রীয় জনজাতি । সাওতালদের পালিত অনুষ্ঠানগুলো বেশ আকর্ষনিয়। এরা জাকজমকভাবে নিজেদের অনুষ্ঠানগুলো পালন করে। অনুষ্ঠানগুলো হল -সরহায়, বাহা পরব,বারনি, হুল প্রমুখ।এরা ঢোল, দোতারা, বাঁশি, মেগো প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে ও বাজায় আর নারীরা একত্রিত ভাবে হাত ধরে নাচে যেটি আখরা নৃত্য নামেও বেশ পরিচিত,এছাড়াও দুর্গাপুজোর মহুর্তে পুরুষেরা দলবদ্ধ ভাবে নারির বেশভূষা গ্রহনের মাধ্যেম একটি বিশেষ নৃত্য করে থাকে যেটি দাসাঁই নামে পরিচিত।
ভাষা
প্রথম্ সাঁওতালি ভাষার নিজস্ব কোন লিপি ছিলনা, তাই রোমান লিপি ও দেবনাগরীতেও এই ভাষার লিখা হত। কিন্তু শ্রদ্ধেয় রঘুনাথ মুর্মুর একক প্রচেষ্টাই সাঁওতালদের নিজস্ব বর্ণমালা প্রচলিত হচ্ছে যার নাম অলচিকি লিপি ।Ever such a nice boy..... SUMANTA HEMBROM
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন