History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯

দুর্গাপুজা ও আদিবাসী সমাজ। হুদুর দুর্গা বা এই মহিষাসুর আসলে কে?

দুর্গাপুজা বাংলার প্রধান উৎসব , অন্যায় এর উপর ন্যায়ের জয়, কিন্তু যে মহিষাসুরের বুকে ত্রিশূল  বিধে রয়েছে , যার বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুর্গা , আর যাকে অন্যান্য হিংস্র পশুরা ছিড়ে খাচ্ছে সেই অসুরেরা আদিম আদিবাসীদের মত কেন, সেটা কখন ভেবেছেন ,আর ঠিক এই জন্য গোটা পশ্চিমবঙ্গ যখন ‘দেবী বন্দনায়’ মাতোয়ারা তখন পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ‘মহিষাসুর স্মরণ দিবস’।
খেরওয়াল আদিবাসীদের মধ্যে বিশেষত সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাঁও প্রভৃতি জনজাতির মানুষেরা ষষ্টী থেকে দশমী পর্যন্ত বিশেষত সাঁওতাল জনগোষ্ঠির খেরওয়াল সম্প্রদায়ের অসুর জাতিরা মনে করেন মূলনিবাসীদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে আদিবাসী মানুষের উপর ছলে- বলে-কলে-কৌশলে চাপিয়ে  দেওয়া হচ্ছে দুর্গাপুজা উৎসবটি যার ফলে অনেকেই অতীত ইতিহাস ভুলে গিয়ে দুর্গাকে বন্দনা করেন৷ কিন্তু আজ ভারতের সকল মূলনিবাসীদের মধ্যে সচেতনতার জন্ম নিচ্ছে - তারা নিজেদের উৎস ও ইতিহাস জানতে আগ্রহী হচ্ছেন৷ ফলে তাদের হারিয়ে যাওয়া সেই গর্বান্বিত ইতিহাস ও সংস্কৃতির পুনর্জন্ম হচ্ছে ধীরে ধীরে। তাহলে  এই মহিশাষুর কে একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

অসুর শব্দের অর্থ ও ইতিহাস।
অসুর শব্দের উৎপত্তি 'অস্" ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো শক্তি, ছোড়া ও এগনো৷এই 'অসূ" ধাতু থেকেই এসেছে অসি, অস্ত্র ইত্যাদি(আর অসুর(অকসুর) শব্দের আরেকটি অর্থ হল যারা সুরা বা মদ পান করে না' অপর দিকে সুর শব্দের অর্থ-' যারা সুরা(মদ) পান করে। এই "সুর"রা ছিল আর্য গোষ্ঠী বা বিদেশি ও অসুররা ছিল অনার্য- মূলনিবাসী-ভারতীয় আদিম অধিবাসী ৷ এই অনার্য পরাক্রমশালী হুদুড় দুর্গার সঙ্গে যুদ্ধে স্বর্গ -পাতালের দেবকুল অর্থাৎ বিভিন্ন বিভন্ন আর্য গোষ্ঠী বা গোষ্ঠীপতিরা হুদুড় দুর্গাকে আখ্যাদেয় "'অহুর" বলে - যার অর্থ ' অসীম ক্ষমতার অধিকারী'| ভারতের অনার্য অসুর জাতি ছিল খুবই, উন্নত ও খাদ্য উৎপাদনশীল জাতি৷পৃথিবীখ্যাত "হরপ্না ও মহেঞ্জদারো" সভ্যতা বা 'সিন্ধু সভ্যতা" এই অসুর জাতির কীর্তি৷ তাই সিন্ধু সভ্যতার আরেক নাম 'অসুরীয় সভ্যতা"| ভাবলে বিস্ময়ে বিস্ষারিত হতে হয় যে, আজ থেকে আট হাজার বছর আগের এই সভ্যতা ছিল নগর কেন্দরিক সভ্যতা, মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতা!
 ঘর ছিল ইটের তৈরি৷শহর ছিল পরিকল্পিত এবং সাজানো গোছানো৷এতোই সুউন্নত স্নানাগার ছিল, যা এখনকার উন্নত বাথরুম গুলিকেও হার মালাই। এখনকার সময় সম্পদ বলতে যেমন টাকা- পয়সা গাড়ি-বাড়ি বোঝায়, অতীতে সম্পদ বলতে বুঝাতো গরু, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি৷ ভারতের মূলনিবাসী সমাজে " হুদুড় দুর্গা " নামে এক সৎ, দয়াবান, পরাক্রমশালী মহিষাধিপতি ছিলেন৷ আদিবাসীদের প্রধান দেবতা ' মারাংবুরুর" কাছ থেকে হুদুড় দুর্গা বর পেয়ে অজেয় শক্তির অধিকারি হয়েছিলেন ৷তার রাজত্ব ছিল হিমালয় পর্বত থেকে শুরু করে গাঙ্গেয় সমভূমি পর্যন্ত ।অসুর গোষ্ঠীর মানুষ নারী জাতিকে সবচেয়ে বেশী সম্মানের চোখে দেখতো সুর বা আর্যরা ঠিক তার উল্টো ছিল৷ ভারতবর্ষে প্রবেশ করে আর্যরা প্রথমে এই ' হরগ্পামহেঞ্জদারো বা অসুরীয় সভ্যতাকে ধ্বংস করে তার অধিবাসীদের নির্মম ভাবে হত্যা করে৷

ইতিহাস 
বোঘাজকোই লিপি থেকে জানা যাই যে সুর বা আর্যরা  ছিল অনুৎপাদনশীল জাতি/অর্থাৎ খাদ্য-শস্য উৎপাদন বা চাষবাস করতে এরা জানত না৷তাই ইন্দো-ইউরোপ থেকে খাদ্যের সন্ধানে এরা ধীরে ধীরে ভারতের উত্তরদিকে আগত হয় পশ্চিম বিন্দপর্বতের পাশ দিয়ে, মতান্তরে সিন্ধু নদীর উপত্যকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে৷
অস্ত্রসস্ত্রে পারদর্শী এই সুর বা আর্যরা সহজেই অনার্য আদিম অনার্য অসুরদের পরাস্ত করে৷এরপর শুরু হয় অনার্যদের
উপর নৃশংস, অত্যাচার।যা আজও চলছে৷
তাই অসুরেরা ভয়ে জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করে৷ তাই বলা যেতে পারে এই ভারতের প্রথম অধিবাসী অসুরেরা।

পৌরাণিক মতে অসুর। 
 এবার আসবো কি করে সুর- অসুরের যুদ্ধ হলো সেই প্রসঙ্গে । আর্য বা ব্রাহ্মনবাদীদের রচিত বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায় , যার এটিকে একরকম তো ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আরেক রকম, আবার কালিকাপুরাণে আরেক রকম কিন্তু কোনটা প্রকৃত সেটা বলা মুশকিল। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতো অসুরদের পিতা জন্তাসুর ব্রম্ভার কঠোর তপস্যা করলে ব্রম্ভা সম্ভষ্ট হয়ে জম্ভাসুরকে এক সন্তানেরা বর দেন যে হবে স্বর্গ- মর্ত্য-পাতাল বিজয়ী বীর৷একথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র ভীত হয়ে তার দলবল নিয়ে জন্তাসুরকে আক্রমণ করলে জন্তাসুর নিরুপায় হয়ে সামনে থাকা মহিষীর সঙ্গে শৃঙ্কার করে এবং জন্ম হয় মহিষাসুরের এরপর মহিষাসুর ১৭ বার সুর বা দেবতাদের পরাস্ত করলে, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব এক শক্তি মিলে সৃষ্টি করে  দুর্গার ,এই দুর্গা পরমবিক্রমের দ্বারা বীর মহিষাসুরকে নিরস্ত্র করে হত্যা করে ।
এবার আসছি অসুর বধের দ্বিতীয় কাহিনী নিয়ে সেটি হল ঋগবেদের ১.১০৮.৮ শ্লোক থেকে যানা যায়, আর্য গোষ্ঠী গুলির মধ্যে পাঁচ বিশেষ জাতি গোষ্ঠী যেমন- পুরু, যদু, তরবাসা, নু এবং দ্রুহয়ু- এর সঙ্গে অনার্য বীর  মহিষাসুরের যুদ্ধ হয়৷ এবং এই  যুদ্ধগুলিতে বেশ কয়েকবার পরাজিত হলে তারা একত্রে বসে পরামর্শ করে ও  অহুর হুদুড় দুর্গাকে ছলে বলে কূট কৌশলে নিধনের জন্য নৃত্যগীতে পারদর্শী এক পতিতা নর্তকী আর্যনারিকে নিযুক্ত করে আর এই  আর্য কন্যা পার্বতী বা দুর্গা ছলনায় সত্যনিষ্ঠ মারাংবুরুকে( ততকালিন অনার্য ধর্ম পণ্ডিত)  তার ছলনাই মহিত করে তাঁর কাছ থেকে হুদুর দুর্গাকে মারার উপায় জেনে নেয় এবং রাজা মহিষাসুর বা হুদুর দুর্গা যখন অস্ত্র ত্যাগ করে শয়ন কক্ষে জান, তখন নিভৃত ঘরে ছলনাময়ী- কামিনী দুর্গা তাকে হত্যা করে এই বিষয়ে জানিয়ে রাখি অসুরেরা নারিদের আর্যদের বিজয় গাঁথা রচনা করে৷

দুর্গাপুজা ও আদিবাসী অসুর সমাজ

হিন্দুধর্ম মতে দুর্গার হাতে অসুরের নিধন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয় আর সেই জুটিতে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত দুর্গোৎসবের নামে আনন্দে মেতে ওঠে , আবার অপর দিকে সপ্তমীর দিন থেকে শোকের প্রতীক হিসাবে সাঁওতাল জনজাতির এর খেরওয়াল বা অসুর সমপ্রদায়ের লোকেরা দুখের দিন হিসাবে পালন করে থাকে। আর এই দুর্গা পুজার সময় এই আদিবাসী সম্প্রদায়েরা দাঁশাই নাচ বা ভুয়াং নাচের মাধ্যমে তাদের বীরপুরুষ হুদুর দুর্গা বা মহিশাষুর খুনের বিয়ে শোক প্রকাশ করে । আর এই নাচে পুরুষেরা দলে দলে মহিলাদের পোষাক পরে ও দাঁশাই নাচ ও গানের মধ্য দিয়ে 'হায় হায় " করে তাদের বীর যোদ্ধার স্মৃতিতে শোক প্রকাশ করে ৷তাই প্রতিটি দাঁশাই গানের শুরুতে এবং শেষে 'হায় হায়" শব্দ ব্যবহৃত দ্বারা।
ভারতের মূলবাসিন্দা আদিবাসী জীবনে অহুর হুদুড় দুর্গা ন্যায়পরায়ন মহান বীরযোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক শহিদ৷আর দুর্গা আর্যসংস্কৃতি তথা ব্রাহ্মন্যবাদের প্রতীক৷
                 From ever such a nice boy
                          SUMANTA HEMBROM
        9614661719

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন