History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

ভাষা, সংষ্কৃতি, ও ধর্ম হারানোর শঙ্কায় মাহালী উপজাতি , ও মাহালি জাতির উপর আগ্রাসন নিতি (১ম পর্ব)|| ORIGIN OF MAHALI TRIBE (1st PART) ||


বাংলার গ্রামাঞ্চল এমনকি শহরাঞ্চলেও মলি বাঁশের বেড়া ,কিংবা মলি বাঁশের খুঁটি এই শব্দটা আকছাড় শোনা যায়। অন্য বাঁশের তুলনাই এই মলি বাঁশের চাহিদা জনমানবে প্রচুর। "মাহালি বাঁশ " > মহলি বাঁশ > মলি বাঁশ । বস্তুত "মলি বাঁশ" এর নাম জনমানসে পরিচীত হলেও, যেই উপজাতীর নামকরণে এই বাঁশের নামকরন করা হয়েছে মলি বাঁশ`, সেই "মাহালী" উপজাতীদের নাম ,পরিচয় ,ভাষা, সংষ্কৃতি, সঠিকার্থে কোনো জাতীর  সার্বীক উন্নয়ণে যা কিছু গুরত্বপূৰ্ণ ,তার সবটাই আজ হারাতে বসেছে।
মাহালী শব্দটা আজ প্রায় শুধু খাতা কলমে নিমজ্জীত , মাহালীরা ক্রমশঃ তার ভাষা ও সংষ্কৃতি ক্রমশঃ হারানোর পথে, তাই মাহালী আদিবাসীদের একাংশের মনে নিজের ঐতিহ্য ,ভাষা ও সংষ্কৃতি হারানোর আশঙ্কার ভয় দেখা দিয়েছে।
মাহালি,দার্জিলিং,চাবাগান,
চা পাতা তুলতে ব্যাস্ত মাহালী নারি
বস্তুুত আমার একটা ছোট্ট অভিঙ্গতা  বলতে চাই ,বহুদিন কাজের সূত্ৰে শিলিগুড়ী লাগোয়া চাম্পাসরি এলাকাই ইলেক্ট্রকিক্স দোকানের রসিদে মাহালী টাইটেল ধারি ব্যাক্তির নাম দেখে মাহালী ভাষায় আলাপ জমাতে চাইলাম ,প্রতি উত্তরে যা শুনলাম তা আমার বোধগম্যের বাইরে। শেষে হিন্দীতেই আলাপ জমাতে হলো , স্বল্প আলাপচারিতাই যা জানতে পেলাম তা কিছুটা অবাক করার মত' তিনি যে ভাষাই বলছিলেন সেটি মূলত সান্দঁরি। বক্তার মতে তিনি যে ভাষায় কথা বলছেন সেটিই নাকি তাদের কাছে মাহালী ভাষা এবং পূৰ্বপুরুষ থেকেই তারা মাহালী ভাষা হিসাবে এটিই ব্যবহার করে আসছেন। তার মুখ থেকেই জানতে পেলাম চা বাগানের অভ্যন্তরে স্বল্প পরিমান মাহালীদের আধিপত্যে রয়েছে, এবং জীবনশৈলী হিসাবে চা বাগানের উপর নির্ভরশীল। বস্তুত সেই ক্ষনিকের আলাপচারিতাই উৎসুকতা বেড়ে উঠলো মাহালী সমাজের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করার। আমার দিদা (বুডী) অবশ্য জানিয়ে ছিলেন মাহালীদের চা বাগানে কাজের সূত্ৰে ছড়িয়ে পড়ার কাহিনীটি , কিভাবে বাবুরা ছোটনাগপুর , সিংভূম , ইত্যাদি স্থান থেকে মাহালীদের চা বাগানে নিয়ে আসে , এবং কিভাবে তারা সেই স্থানের স্থানীয় বাসিন্দাতে পরিনত হন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উত্তরবঙ্গের দার্জিলীং জেলা , জলপাইগুড়ি জেলার চা বাগানগুলিতে মুন্ডা, ওড়াঁও, লেপচা , ভূটিয়া, মাহালি জনজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, এমন কি উত্তরবঙ্গ লাগোয়া আসামের বঙ্গাইগাঁও জেলার চা বাগানগুলিতেও মাহালী ,সাঁওতাল , মুন্ডা, ওড়াঁও ইত্যাদির সংখ্যা লক্ষ্য করা যাই। এমনাবস্থাই অল্পসংখ্যক মাহালীদের উপর আগ্রাসনের প্রভাব ফেলাটাই স্বাভাবিক।
মাহালী,বাংলা,বাঁশের কাজ,
বাঁশের কাজের ব্যাস্ততাই মাহালী
মাহালী উপজাতির শিংহভাগই উদারপন্থি জাতীয়তাবাদের শিকার ,তাই খুবই সহজে সান্দঁরি ভাষাকে আপন করে নিয়েছে চা বাগানের মাহালীরা ,ও বংশপরম্পরাই টাইটেল কে গ্রহনের মাধ্যমে নিজের জাতীগত মাহালী পরিচয়টি ধরে রেখেছে।
তথাপি একপ্রকার মাহালীদের মধ্যে আগ্রাসন  বিভিন্ন পদে বিভিন্ন ভাবে হয়েছে , উপরক্ত ঐতিহাসিক তথ্য প্রমানাদির অভাব ও বিশেষ লিখিত কোনো দস্তাভেজ না থাকার দরুন মাহালি জাতীর অবক্ষয় , প্রসারণ , ও পরিবর্তিত ভাষাতাত্ত্বিক দিকটি বিভিন্ন সূত্ৰ তথা ঐতিহাসিক ঘটনাবলির প্রবাহমানকে প্রমান হিসাবে ধরে নিয়ে চলতে হয়।
ভারতে গোঁদ উপজাতীর সংখ্যা সর্বাধিক কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখা গেলেও উত্তরবঙ্গের প্রশস্ত চা বাগানগুলোতে ওড়াঁও ,মুন্ডা ,কোড়া ,লোধা ,ভূমিজ ,ভূটিয়া , লেপচা, মাহালীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখা যায়। মাহালীদের আদি বাসভূমি হিসাবে বর্তমান ঝাড়খন্ডের দুমকা জেলাকে (মারে দিশম) মনে করা হয়। কালক্রমে সেই স্থান হতে মাহালীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, বিশেষত তাদের ছড়িয়ে পরার মূল কারনটি কায়িক শ্রম ও পর্যাপ্ত পরিমানে বিভিন্ন স্থানে ঘড়োয়া বাঁশের ব্যবহারিক সামগ্রির চাহিদাপূরন। দার্জিলিং তথা জলপাইগুড়ি , এছাড়া আসামের বঙ্গাঁইগাঁও এলাকার চা বাগান গুলোতে মাহালিদের ছড়িয়ে পরার কারন হিসাবে অভিঙ্গ কায়িক শ্রমিকের চাহিদা পূরন বলা যেতে পারে।
বিষয়টি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই বিচার করা যাক - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসায়িক ছাড়পত্র পেয়ে ব্যবসা শুরু করে, এবং কালক্রমে এসে চীনের সহিতে সংঘাতও বেধেছিল কোম্পানির। সেই থেকেই শুরু হলো চায়ের বিশ্বায়ন।
যাই হোক, দেখতে দেখতে অষ্টাদশ শতাব্দীতে চিনের উৎপাদিত চা ব্রিটেনে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
মনে করা হয় স্কটিশ বটানিস্ট রবার্ট ফরচুন ১৮৪২ সালে তিনি চীনে পারি দেন এবং ১৮৪৮ সালে চীন থেকে চায়ের বীজ ও চারা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে কলকাতায় গভর্নর জেনারেলকে দেন চা চাষের উদ্দেশে, দার্জিলিং তার মধ্যে একটি জায়গা। সৌভাগ্যক্রমে দার্জিলিং-এর মাটি, আবহাওয়া ঐ চায়ের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছিলো। দার্জিলিং ও কার্সিয়াং অঞ্চলের মাকাইবাড়ি এলাকায় প্রথম চা ফ্যাক্টরি তৈরী হ'ল ১৮৫৯ সালে। শুরু হল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নতুন কর্মকান্ড , পর্যাপ্ত পরিমানে শ্রমিকের চাহিদা পূরনের উদ্দৈশে তরাই, ডুয়ার্স, ছোটনাগপুর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে ওড়াঁও ,মুন্ডা ,কোড়া ,লোধা ,ভূমিজ , মাহালী ইত্যাদি উপজাতীদের আনা হল।
দার্জিলিং জেলাই অবস্থানরত মাহালী পরিবার
চা চাষের উপার্জনকে কোম্পানি মূলত সেনা বাহিনীর উপার্জনের জন্য নিয়োজিত করেছিলো, মূলত সেই সূত্ৰ ধরেই হিমালায়ান রেলওয়ে জোন ও আসামে চা চাষের প্রসার ঘটতে থাকে,এরপর আসামে একে একে অনেক চা কোম্পানী তৈরী হল। ১৮৬২ সালের মধ্যে আসামে ১৬০-টি TEA STETE তৈরী হয়। সুতরাং সেই স্থানের শ্রমিকের যথেষ্ট চাহিদা পূরনের জন্য অন্যান্য উপজাতীদের পাশাপাশি মাহালিদেরো আনা হয়েছিল।
ব্রিটিশ কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার থাকাই এই চা বাগানের সহজ সরল আদিবাসীদের মধ্যে খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার করা হয়ে পরে খুবই সহজপন্থা ।
মাহালী উপজাতীরা অতিত কাল থেকেই জাতীগত , ভাষাগত, ধর্মগত আগ্রাসণের শিকার হয়ে আসছে অনবরত।
কথিত আছে যে, সেইন্ট টমাস ছিলেন প্রথম খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক যিনি ৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন , এবং রাজা হেলিওডোরাসকে খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষীত করেন। কোম্পানি বাহাদুর খ্রীষ্ট ধর্মকেও বহন করে আনেন ভারতে, যদিও খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারে ওলন্দাজরা প্রথম ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করে, তথাপি কোম্পানির খ্রীষ্ট ধর্ম পৃষ্ঠপোষকতায় ১৬৩৩ সালে  শাহজাহানের এক  ফরমান এর মাধ্যমে গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধাসহ ৭৭৭ বিঘা নিষ্কর জমি দান করেন। আঠারো শতকের শেষ দশকে ব্রিটিশ প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মপ্রচারকদের আগমনের সাথে সাথে বাংলায় খ্রিস্টান ধর্মপ্রচার কাজ একটি সংগঠিত আন্দোলনের রূপ নেই। সমসাময়িক ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের পুনরুজ্জীবনের ফলে সকল দেশে খ্রিস্টের বাণী প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রচারক সমিতি গঠিত হয়। এগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো ১৭৯২, ১৭৯৫ ও ১৭৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত যথাক্রমে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি, লন্ডন মিশনারি সোসাইটি ও চার্চ মিশনারি সোসাইটি যারা তৎকালিন বিহার প্রদেশের আদিবাসী এলাকা গুলোকে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারে আদর্শ স্থান হিসাবে বেছে নেন , ক্রমে এখানকার প্রাকৃতি পুজারী রুপি মাহালীদের মাঝে খ্রীষ্ট ধর্ম জায়গা করতে থাকে , মূলত এই আদিবাসী সমূহের মাঝে মাহালীরাও এই খ্রীষ্ট ধর্মাবেগের প্রতি আকৃষ্ট হন। মাহালী উপজাতীর উপর খ্রীষ্ট ধর্মের এই আগ্রাসন এই প্রযন্তই থেমে থাকেনি , তার শুরু বহুকাল আগে থেকেই।
মাহালীদের উপর খ্রীষ্ট ধর্মের আগ্রাসন

বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসাবে বলা যেতে পারে সাঁওতাল ও মাহালী উপজাতির মধ্যে ভাষাগত মিলের আধিক্য রয়েছে , খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারকদের পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ উপজাতিদের ওপর তাঁদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে , এই স্থানে সাঁওতাল উপজাতিদের পাশাপাশি মাহালী উপজাতিদেরো সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। দূর্বোধ আদিবাসীদের মাঝে খ্রীষ্টধর্ম প্রচারে মূল বাধা হয়ে দ্বারাই ভাষাগত বৈষম্য , সুতরাং সাঁওতাল তথা মাহালী ও অন্যান্য আদিবাসীদের মাঝে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের কাজ সহজ করার প্রচেষ্টাই উপজাতিদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা মূলক গবেষনা চালানো শুরু হয় , এই বিষয়ে P.O BOURDING গবেষণাকর্ম  সানতাল ডিক্সনারী (৫ খন্ডে, ১৯৩২-১৯৩৬ সালে প্রকাশিত) এবং L.O সানতাল গবেষনাই এই তথ্য পাওয়া যাই। (গবেষনা কালিন তারা মাহালি ও সাঁওতাল দের মধ্যে কতটা পার্থক্য করতে পেরেছিল তা নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত সন্দেহ রয়েছে) 
প্রতিবেদনটি পড়তে চেপে ধরুন
যাই হোক , খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারকরা সহজেই অনুধাবন করতে পারে এই সরল মনের আদিবাসীদের মাঝে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতে হলে তাদের ভাষাকেই হাতিয়ার বানাতে হবে , তাই উনিশ শতকের প্রথম দিকে খ্রীষ্টধর্মকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে মাহালীদের মাঝে সাঁওতাল ভাষাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কিন্তু একস্মাৎ সাঁওতাল বিদ্রোহ ১৮৫৫ সালে প্রকাশ পেলে কোম্পানীর ধর্মিও নিতিকেও দায় করা হয়, সুতরাং নতুন করে ধর্ম প্রচারের প্রয়োজনে সাঁওতাল ভাষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা ব্যবস্থা ও রোমান হরফের সহযোগিতায় খ্রীষ্টধর্মকে তুলে ধরা হয় আদিবাসীদের মাঝে। মিশনারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থাই নব শিক্ষায় শিক্ষিত মাহালী উপজাতীরাও খ্রীষ্টধর্মে দিক্ষিত হবার সুবাদে রোমান হরফে সাঁওতাল ভাষাকে অগ্রাধীকার দেওয়া শুরু করে। মাহালীদের ভাষাভিত্তীক দূৰ্বলতা ও সহজে কোন কিছু গ্রহন করা সেই সময়ে আগ্রাসণের কাজ করেছিল। অল্প সংখ্যক মাহালীরা খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষীত হবার সুবাদে রোমান হরফকে চুড়ান্ত মর্যাদা প্রদানে মাহালীদের স্বকীয় ভাষাতেও কিছুটা অবক্ষয় ঘটিয়েছে।
(চলবে)
লেখক

সুমন্ত মাহালী হেমরম
WhatsApp ,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন