"পড়তে হয় , নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়" খবরের কাগজের এই ট্যাগ লাইনটি বেশ চমকপ্রদ আর অনেকাংশে বাস্তবিক। ছাত্র জীবনে এই ট্যাগ লাইনটির মূল্য অনেকখানি ,কিন্তু পড়া যে মাথাই থাকে না আবার অনেকের সমস্যা হল আমার তো পড়াই মন বশে না। কিশোর কিশোরীদের মন এমনিতেই চঞ্চল স্বভাবের , সুতরাং পড়াশোনাই মন ফেরাতে হলে , চাই বিশেষ দাওয়াই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন অনেক ছাত্র ছাত্রী রয়েছে যারা পড়াশোনা তো বেশ করে কিন্তু মনে রাখতে পারে না। আজকের এই বিষয়টি তাদের জন্যেই যারা পড়াশোনাই একটু দুর্বল। পড়াশোনাকে কি ভাবে আকর্ষনিয় ও মজাদার বানানো যাই, ও কিভাবে পড়লে সহজেই মুখস্থ করা যাই তার টেকনিক আজকে জানিয়ে দিচ্ছি।
তবে তার আগে কয়েকটি বিষয়ে অবকাশ হওয়া দরকার, অনুশিলনী পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় জিনিস।
পড়াশোনা আনন্দের কারন |
মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা
অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা মনে করে , ভালো ছাত্র আর খারাপ ছাত্রদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা গত পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু বাস্তবটা কি সেটা জানা দরকার।
মানুষের মস্তিষ্কই মানুষের চালকশক্তি। মানুষের মস্তিষ্ক ২.৫ পেটাবাইট স্মৃতিশক্তি বা মেমোরি ধারন করতে পারে, আর ১ পেটাবাইট = ১০২৪ টেরাবাইটের সমান, আবার ১ টেরাবাইট = ১০২৪ গিগাবাইটের সমান । একটা শক্তিশালি কম্পিউটারের মেমোরি যদি ১০২৪ গিগাবাইটের সমান ধরাও যাই তবে একটা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ২৫৬০ শক্তিশালি কম্পিউটারের সমান হবে। তবে মানুষের মস্তিষ্ক সেই ভাবে কাজ করেনা যেমনটি কম্পিউটার করে থাকে। ঘুমানো অবস্থাই মানুষের মস্তিষ্ক সেই সব বিষয় গুলোকেই সংগ্রহ করে যেগুলো গুরত্বপূৰ্ণ । বাস্তবে পড়াশোনা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার ১% ও না। সুতরাং পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রদের এই বিষয়টি মাথাই ঢুকিয়ে নিতে হবে যে , সে অন্য যকল ছাত্রদের থেকে কম না।
বিখ্যাত মেমোরি মাষ্টার O brien তার YOU CAN HAVE A SUPER MEMORY বইয়ে মনে রাখার বা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কয়েকটি পদ্ধতি বলেছেন। তার মধ্যে যেগুলো ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে গুরত্বপূৰ্ণ এবং এছাড়াও বিশেষ কয়েকটি উপায় যেটি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছাত্রদের সহযোগিতা করবে সেগুলো আলোচনা করছি।
কল্পনা করার ক্ষমতা
শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রটির কল্পনা করার ক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উদাহরণ স্বরুপ :- তরাইনের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধ , যেখানে প্রথম যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ জিতেছিল এবং মহম্মদ ঘোরি হেরেছিল , আবার দ্বিতীয় যুদ্ধে মহম্মদ ঘোরি জিতেছিল এবং পৃথ্বীরাজ হেরেছিল। এটা যদি ইতিহাসের বিচারে মনে রাখার চেষ্টা করেন তবে সেটা দীর্ঘসময় ধরে মনে রাখা একটু কষ্টকরি হবে। কিন্তু সে জায়গাই যদি ছাত্র ছাত্রিরা কল্পনার সহযোগিতা নেই এবং নিজেকে সেই যুদ্ধের সাথে যুক্ত করে তবে সেটা মনে রাখা খুবি সহজ , যেমন - আমি (এখানে ছাত্র-ছাত্রী) মহম্মদ ঘোরির সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু পৃথ্বীরাজ আমাদের হারিয়ে দিল, কিন্তু আমরা হার মানার লোক নই দ্বিতীয় যুদ্ধে আমি আর মহম্মদ ঘোরি মিলে পৃথ্বীরাজকে হারিয়েছি।
তাহলে কত সহজেই না পড়াটা মুখস্থ হয়ে যাবে।
পড়াশোনা জীবন্ত হয় কল্পনাই |
এই পদ্ধতি শুধু যে ইতিহাসের ক্ষেত্রেই যে প্রযোজ্য তেমনটিও না , এই কল্পনা করার পদ্ধতিটি বেশির ভাগ বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উদাহরণ স্বরুপ ইংরাজির ক্ষেত্রে নতুন কোনো শব্দ যেমন BACCHANALIYA যার অর্থ ক্রমাগত বকবক করা , শব্দটি কঠিন এবং সাথে মনে রাখার ক্ষেত্রেও কষ্টকর, কিন্তু BACCHANALIYA শব্দটিকে এই ভাবে যদি পড়েন BACCHA বাচ্চা , NALIYA বাংলাই উচ্চারণ করুন না নিলে , সুতরাং BACCHANALIYA বাচ্চা না নিলে বৌ বকবক করবে - তাই BACCHANALIYA শব্দের অর্থ বকবক করা , তাহলে দেখুন শব্দটিকে আপনি কত সহজে মনে রাখতে পারছেন।
সংখ্যা মনে রাখার কৌশল
4 3 1 9 5 5 1 3 এই নম্বরটি মনে রাখার চেষ্টা করুন। অনেক চেষ্টার পরে আপনি হয়তো সফল হবেন , কিন্তু হয়তো সেটা দীর্ঘকালিন মনে নাও থাকতে পারে। কিন্তু আপনি এই নাম্বারটিকে খুব সহজেই মনে রাখতে পারেন যদি আপনি PEG পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
পেগ পদ্ধতি হলো সেই পদ্ধতি যেখানে সংখ্যা গুলিকে একটি বিশেষ বস্তুর আক্ষরিক অর্থে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ স্বরপ উপরের সংখ্যা গুলো 4 3 1 9 5 5 1 3 সংখ্যাগুলোকে মনে না রেখে যদি একটি শব্দ EDUCATION SYSTEM মনে রাখি তবে সেটি মনে রাখার ক্ষেত্রে আরো সহজ হয়।
পেগ টেবিল বা চার্ট |
এইবার এই পদ্ধতি একটু বিস্তারিত আলোচনা করছি , এই পদ্ধতিতে 0-9 প্রযন্ত সংখ্যাগুলোকে ইংরাজি বর্নমালার অক্ষর দিয়ে মান নির্নয় করা হয় , যেমন 1 = N,T,L ঠিক তেমনি 2= B,J, আবার 3= C,M ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই ক্ষেত্রে ইংরাজি বর্নমালার ভয়েলগুলোকে ( A E I O U) বাদ দিতে হবে। তাহলে পেগ পদ্ধতি অনুযায়ি EDUCATION SYSTEM শব্দটির মান বসাই E যেহেতু ভয়েল তাই এর মান নেই , D =4 ,U একটি ভয়েল ,C=3 ,A ভয়েল,T= 1, I ভয়েল , O ভয়েল N=9 (EDUCATIIN), এবার S=5,Y একটি সিমি ভয়েল, S=5,T=1, E একটি ভয়েল , M=3 দ্বারাই (SYSTEM)। সুতরাং নাম্বারটি হল 4 3 1 9 5 5 1 3 ।
আপনি প্রয়োজন অনুসারে এই পেগ পদ্ধতির সংখ্যা নির্নয়ের চার্ট বা টেবিল বানাতে পারেন। এই পদ্ধতি আপনাদের ইতিহাসের তারিখ মনে রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ ~ "তরাইনের প্রথম যুদ্ধ 1191 সালে ঘটে, যেখানে প্রথম যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ জিতেছিল এবং মহম্মদ ঘোরি হেরেছিল।"
আমি উপরের দুটি পদ্ধতিরই সাহায্য নিচ্ছি (কল্পনা ও পেগ পদ্ধতি) - আমি (এখানে ছাত্র-ছাত্রী) মহম্মদ ঘোরির সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম LAL PILA জামা পরে ,কিন্তু পৃথ্বীরাজ আমাদের হারিয়ে দিল ( LAL PILA শব্দের মান L=1,A= ভয়েল,L=1,P=9,I=ভয়েল,L=1,A=ভয়েল)। দেখলেন তো পেগ পদ্ধতির সাহায্যে কত দ্রত অথচ কত সহজে জিনিসটি মাথাই ঢুকে গেলো।
অধ্যাবসাই
এখন প্রশ্ন হল, এগুলোতো সব টেকনিক। আমার তো পড়াই মন বসেনা তাহলে এই টেকনিক বা পদ্ধতি কাজে আসবে কি করে?
আসলে মানুষ অভ্যাসের দাস , সুতরাং আপনি যতবেশি পড়তে বসবেন ততবেশি আপনার মনোনিবেশ বাড়বে। আবার মনোনিবেশ বাড়ানোরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে , তবে সবথেকে উত্তম পন্থা হল ধ্যান অবস্থায় পদ্মাসন করা। প্রতিনিয়ত ধ্যান আপনার মনোসংযোগ বাড়াবে শ শতাংশ সত্যি। সবশেষে যেটি বলবো- পড়ুন , আর মানুষকে পড়তে এগিয়ে আসতে বলুন , কারন শিক্ষিতরাই সমাজ সংষ্কারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন