নোবেল জয়ী এক ভারতীয় লরিয়েটের বাস্তববাদী প্রবাদ দূৰ্ভিক্ষ ক্ষরার কারনে নই, অর্থ এবং খাদ্যের অসম বন্টনের ফল, অর্থ হোক বা খাদ্যবস্তু , কিন্তু আদিবাসী সমাজকে যে কোন অর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সরিয়ে রাখাই, আদিবাসী তার হৃতগৌরব ভুলে গিয়েছিল, সেই হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় সংবিধানে মহান আত্মা ডঃ আম্বেদকর তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষন প্রদানের সুব্যবস্থা করেছিলেন, এবং সেই উদ্দৈশ্যকে বাস্তবায়নে বিশেষ গুরত্ব রাখে তপশিলী জাতি ও উপজাতি শংসাপত্র। নিরবীচ্ছিন্ন শোষন, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অবমাননা, অর্থনৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিশারীর কান্ডারি হয়ে উঠেছিল জাতীগত শংসাপত্র, কিন্তু নির্লজ্জ কিছু অসাধু ধান্দাবাজের দল তাদের কালো থাবা বসিয়ে দিচ্ছে সেই অংশেও। মহাবিদ্যালয় হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়, পি.এস.সি হোক বা যে কোনো উন্নয়ন মূলক সরকারি সহযোগিতা, সর্বস্থানে নির্বাচিত তপশিলী উপজাতির তালিকার শিংহভাগ অ-আদিবাসীদের উপস্থিতী।
ছাত্রী দল |
গলদ কোথাই, মিথ্যাবাদী অসৎ উপায়ে সুযোগ সন্ধানী কিছু সামাজিক হার্মাদ বাহিনী রাজনৈতিক ও কিছু অযোগ্য সরকারি কর্মচারির সহযোগে লুটে নিচ্ছে না তো পবিত্র হৃদয়ের আদিবাসীদের? ২০১৪ সালে খবরের পাতায় উঠে এসেছিল একটি বিশেষ শিরেনাম, ঘটনাটি উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া নক্সালবাড়ি এলাকার, বিরোধী পক্ষের মতে নির্বাচিত বিধায়ক যে তপশিলী আসনে লড়াই করে জিতেছেন, সেই জাতিগত শংসাপত্রই নাকি জাল। বিরোধী পক্ষের সমর্থকেরা এই বিষয়ে তথ্য প্রমান সহ অভিযোগও জানিয়েছিল। আবার এমন ঘটনাও বর্তমান অহরহ চোখে পড়ছে যেখানে পঞ্চায়েত প্রধান অ-আদিবাসীদের পরিচয়পত্রে অসৎ উপায়ে যে কাউকে আদিবাসী তকমা দিয়ে তাদের তপশিলী শংসাপত্র বের করতে সহযোগীতা প্রদান করছে।
ঠিক একি উপায়ে ২০১৪ সালে জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে দিব্যি সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার এক ব্যাক্তি। কিন্তু বাঁধ সাধলো হঠাৎ করে সেই শংসাপত্র পরীক্ষা, দেখা যাই যে সেই ক্রমিক নম্বরে ওই শংসাপত্রের কোনো অস্তিত্বই নেই। দক্ষিনবঙ্গের জাল আদিবাসী শংসাপত্রের পরিমান উত্তরবঙ্গের থেকে অনেক বেশী, তবে কয়েকটি ক্রমাগত উঠে আসা ঘটনা সন্দেহজনক বাতাবরনের ইঙ্গিত দিয়ে চলেছে। বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়মাইলের বাসিন্দা এক অ-আদিবাসী মহিলা আদিবাসী পরিচয়ে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে বালুরঘাটের পতিরাম বাহিচা এলকে উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেই, কিন্তু সেই বিষয়টি স্থানিয় আদিবাসী সংগঠনের চোখে পরে যাই, শেষে তাদের মধ্যস্থতাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আরো পড়ুন- বোকা আদিবাসী এবার চালাক হও।
যতদিন এই সমস্যা খুচরো হিসেবে উঠে আসছিল ততদিন এই বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ ছিল না কারো। কিন্তু একস্মাৎ ভুয়ো তপশিলী জাতি ও উপজাতির বৃদ্ধিদর ভাঁজ ফেলেছে আদিবাসী শিক্ষীত সমাজের কপালে। শুধু তাই নই ফেক সার্টিফিকেট বিষয়টি নিয়ে লোকসভাতেও আলোচনা হয়েছে বহুবার, সেই আলোচনার তথ্য অনুযায়ী মোট ১৮৩২ জন সরকারি কর্মচারীদের অস্তিত্ব জানতে পারা যাই যারা জাল শংসাপত্র ধারন করে দীর্ঘকাল ধরে সরকারি চাকরি করে আসছেন। যার মাঝে মজার কথাটি হল প্রকাশিত তথ্যের বেশীরভাগ অংশীদারিত্ব ব্যাঙ্কিং সেক্টরে, প্রায় ১২৯৬ জন। তাহলে সহজেই অনুমেয় সরকারি চাকুরির বাকি সেক্টরের ফেক তপশিলী জাতি বা উপজাতীর সংখ্যা কতটা হতে পারে।
আদিবাসী পরিচয়ে অ-আদিবাসী |
আদিবাসী মহলের কাছে বিষয়টি জোরালো হতে শুরু করে মন্থর গতিতে, যখন সংরোক্ষনের বিরোধীতাই বহুল পরিমানে স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজিবীরা সংরক্ষনের বিরোধে যুক্তি দেখাতে শুরু করে তখন নব শিক্ষায় শিক্ষিত তপশিলী জাতি ও আদিবাসী শিক্ষিত সমাজ ইতিহাসের প্রত্যেক অংশের ঘটনাচক্র তুলে ধরে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, ঠিক এই সময়েই পি.এস.সি দ্বারা প্রকাশিত ফলে আদিবাসী চাকরি প্রাথীর চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসীদের পরিবর্তে বেশীরভাগ অ-আদিবাসীদের নাম, দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আদিবাসীদের একাংশ। যদিও এমন ঘটনার প্রতিবাদ এই প্রথমবার হয়েছে এমনটিও নই, এর আগেও বহুবার বিভিন্ন কলেজে উঠে আসা সমস্ত ভুয়ো শংসাপত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন প্রতিবাদ করেছেন, এছাড়াও অবৈধ ভাবে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের বিরুদ্ধেও অনেক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাষের শেষের দিকে অবৈধভাবে জাল আদিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে বাঁকুড়ার আশা সংগঠন, বাঁকুড়ায় জেলা আধিকারীকের কাছে ডেপুটেশন প্রদান করেছিল। শুধু তাই নই গত বছরের পি.এস.সি মিসলেনিয়াস পরিক্ষার চুড়ান্ত তালিকাই সন্দেহভাজন অ-আদিবাসীদের নাম থাকাই বাংলার উদ্যম সন্তান জাতীয় বাংলা সংসদের সদস্যরা করোনা অতিমারীর মহূৰ্তে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস মহাশয়ের নেতৃত্বে ধর্নায় বসেছিল, অবশেষে পি.এস.সি তাদের ডেপুটেশন নিতে বাধ্য হোন।
আরো পড়ুন - আদিবাসী ও সরকারের বেসরকরিকরণ নিতি।
বাংলার বঙ্গসন্তানের পাশাপাশি আদিবাসীদের স্বকীয় সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন "ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল " এর পনত পারগানার ( রাজ্য সভাপতি) পক্ষ থেকেও উক্ত দুর্নীতি ও সঠিক ভাবে নিয়োগ পদ্ধতি যাচাইয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, সহকারি চেয়ারম্যান, এছাড়াও কেন্দ্রীয় তপশিলী উপজাতি উন্নয়ন পরিষদেও পত্র প্রেরণের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবুও কিছু কিছু অনুসন্ধিৎসা থেকেই যাই, জাল শংসাপত্রের এত সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারন কী? এর থেকে কি বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, সরকার প্রদত্ত সকল যোজনা জনগনের কাছে পৌছে দিতে "দুয়ারে সরকার" নামক মহিম শুরু করেছেন। সহজে সরকারি পরিষেবা জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ফলে সরলীকরণ হয়েছে জাতিগত শংসাপত্র (Cast Certificate) প্রদানেও। মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবেই প্রশংসা জনক, কিন্তু একটা বিরুপ সন্দেহ থেকেই যাই? বর্তমানে প্রকৃত আদিবাসীদের থেকে অ-আদিবাসীদের ফেক তপশিলী উপজাতী শংসাপত্রের প্রাধান্য বেশী রয়েছে, তা বর্তমানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের, কিংবা যে কোনো চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসী সকলের নাম দেখলেই বোঝা যাই, এমনাবস্থায় কাষ্ট সার্টিফিকেট প্রদানে উদারিকরণ কালক্রমে আদিবাসীদের অধিকার হননের পথ হয়ে দাঁড়াবে না সেটা বলা মুশকিল। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতাদর্শ, এই ভাবে কাষ্ট সার্টিফিকেট বিলিয়ে না দেওয়াই উচিত। কে জানে? আদিবাসী অধিকারে দখল নেওয়ার উদ্ধত সুযোগ সন্ধানিদের কাছে এটা না হয়ে পরে সুবর্ণ সুযোগ। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন