বছরের শেষের দিকে ঠিক ১০ ই ডিসেম্বর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবার মত কিছু ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন এবং মানব কল্যান রহিত অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী বেছে নেওয়া হয় হাতে গোনা কিছু ব্যাক্তিদের, যাদের তার কৃতকর্মের জন্য প্রদান করা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান "নোবেল পুরষ্কার"। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পথ চলা এই সম্মান প্রদর্শনের ধারাবাহিকতাই বাদ পরেনি ভারতীয়রা, বিশ্বের দরবারে অনেক ভারতীয় আছেন বা ছিলেন যারা বিশ্বের এই শ্রেষ্ঠ সম্মানের অংশিদার হয়েছেন।
স্যার আলফ্রেড নোবেল
স্বর্গীয় স্যার আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এই সম্মান, সুইডিশ থেকে প্রদান করা হয় (সুয়েডীয়: Nobelpriset নোবেল্প্রীসেৎ)। কিন্তু এই নোবেলের পথ চলার পেছনে রয়েছে আলফ্রেড নোবেলের আত্মজীবনির সেই অংশ যেখানে তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য আত্ম অনুশোচনায় ভুগে ছিলেন, যেই ঘটনার সাথে চলচ্চিত্রের "আয়রন ম্যান" এর কাহিনীর সাদৃশ্য পাওয়া যাই। কিভাবে তার আবিষ্কার মানব কল্যানের বিপরীতে নিয়ে গিয়ে মানব নিধনের জন্য ব্যবহার গল্পের নায়ক টনি স্টার্ককে আয়রন ম্যানে পরিবর্তন করেছিল, ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সাথেও।
|
নোবেল প্রাইজ পদক |
নোবেল পুরষ্কারের উদ্ভাবনা
স্যার আলফ্রেড নোবেল ছিলেন একজন সুইস বিজ্ঞানী, রসায়নে সিদ্ধহস্ত, পাশাপাশি মারাণাস্ত্র আবিষ্কারক, তিনি তার জীবদ্দশায় ৩৫৫ টি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন, যার ফলে তিনি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিকও হন, তিনি যে যে জিনিস আবিষ্কার করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট, ব্যালাস্টিক (ক্ষেপনাস্ত্র)। যা সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রে অভূতপূৰ্ব পরিবর্তন এনেছিল, কিন্তু তার এই আবিষ্কারে তিনি শোকাস্তব্ধ হয়েছিলেন যখন তিনি জানলেন যে, তার এই আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষের বলির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি তার এই আবিষ্কারের দ্বারাই আলফ্রেড নোবেলের ভাই লুডভিগ মারা গিয়েছিল।
আরো পড়ুন - ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস। |
নোবেল পুরষ্কার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান |
তিনি তার এই ভয়ানক আবিষ্কারে দুঃখিত হলেও , কিছু আর করার নেই। তিনি আবিষ্কারক হিসাবে নাম কামিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সুনাম তার কাছে দুর্নাম স্বরুপই ছিল। শেষে গোটা বিশ্ব যাতে তাকে মানবতা হত্যাকারি হিসাবে না চেনে তাই তিনি তার অনেকগুলো উইল ছেড়ে যান, যা তার মৃত্যুর পর (১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সাল) তার শেষ উইল বা ইচ্ছা হিসাবে তার নামেই তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন, এই জন্য স্যার আলফ্রেড নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। তার এই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তার রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যাদের কাজ ছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এই ভাবেই বিশ্বের সেরা ব্যাক্তিদের, যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাবেন ,তাদের নোবেল পুরষ্কার দ্বারা সম্মান জানানো শুরু হয় ১৯০১ সালে।
প্রথম নোবেল জয়ী ব্যাক্তিরা
স্যার আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসার তার মৃত্যদিবসে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। প্রথম প্রথম পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে এই পাঁচটি বিষয়ের উপরেই নোবেল দেওয়া শুরু হয়, পরবর্তীকালে অর্থনিতী ক্ষেত্রেও নোবেল পুরষ্কার শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সাল থেকে। গোটা বিশ্বে সুইডেনের সুইডিশ একাডেমি নোবেল পুরষ্কার প্রদান করে, যার মধ্যে শান্তি ক্ষেত্রে নোবেল প্রদান করা হয় নরওয়ে থেকে, যাই হোক প্ৰথম পদার্থবিজ্ঞানে ভিলহেল্ম রন্টগেন,শান্তির ক্ষেত্রে অঁরি দ্যুনঁ ও ফ্রেদেরিক পাসি, রসায়নে পান ফান্ট হফ , চিকিৎসাই এমিল ফন বেরিং, এবং সাহিত্যে পেয়েছিলেন স্যুলি প্র্যুদম। আবার অন্যদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনিতিতেও নোবেল দেওয়া শুরু হলে জান টিনবার্গেন ও রাঙ্গার ফ্রিস হল অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।
ভারতীয় নোবেল জয়ী
ভারত আবার জগৎ মাঝে, শ্রেষ্ঠ আসন লবে। ঠিক তাই ভারত বিশ্বের দরবারে তার মহিমা প্রকাশ করেছে বহুবার, সাহিত্য, শান্তি, অর্থনিতী,পদার্থ প্রায় সব গুলোতেই নোবেলের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বহু ভারতীয়। যদিও নোবেল পুরষ্কার প্রদানের শুরুতে অর্থনিতী যুক্ত হয়নি।স্যার আলফ্রেড নোবেলের প্রতিকৃতি সহ খাঁটি সোনার দ্বারা তৈরি মেডেলের আকৃতির এই পুরষ্কার ভারতেও রয়েছে অনেকগুলি। যার ধারাবাহিকতা পরাধীন ভারত থেকেই শুরু, ব্রিটিশ ভারতীয় থেকে যার সূচনা। যার মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহনকারি ছিলেন দুইজন ব্রিটিশ নাগরিক রোনাল্ড রস ও রুডইয়ার্ড কিপলিং। রোনাল্ড রস ১৯০২ সালে চিকিৎসাই এবং ১৯০৭ সালে কিপলিং সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, আর যারা নোবেল পুরষ্কার পেয়ে থাকেন তাদের ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়। এমনি সমস্ত ভারতীয় নোবেল লরিয়েটদের নাম নিচে উল্লেখ করে দিলাম।
- ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "গিতাঞ্জলী" সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
- ১৯৩০ সালে চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন পদার্থবিদ্যাই "রমন এফেক্ট" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
- ১৯৬৮ সালে ডঃ হর গোবিন্দ খোরানা চিকিৎসাক্ষেত্রে "ডি এন এ মডেল" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশের মার্কিন নাগরিক।
- ১৯৭৯ সালে মাদার টেরিজা শান্তির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি আলবেনিয়ায় জন্ম নেন এবং ভারতে এসে ভারতীয় নাগরিকতা গ্রহন করেন।
|
ভারতীয় নোবেল জয়ীদের তালিকা |
- ১৯৮৩ সালে সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর পদার্থবিদ্যাই নোবেল পান, তিনি ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক ছিলেন।
- ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে তার লেখা পুস্তক এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
- ২০০১ সালে বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভত ক্যারিবিয় নাগরিক।
- ২০০৯ ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ রসায়ন ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক।
- ২০১৪ কৈলাশ সত্যার্থী শান্তি ভারতের নাগরিক।
- ২০১৯ অভিজিৎ ব্যানার্জি অর্থনীতি ভারতের নাগরিক।
WhatsApp
UNIQUE KNOWLEDGE
ভারতীয় নোবেল লোরিয়েটদের জীবন ও কর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আহ্বান রাখছি, যাতে বর্তমান প্রজন্ম এদের সাথে বিস্তৃত পরিচিত হতে পারে।
উত্তরমুছুন