ওরাওঁ পদবী যুক্ত ছেলেটি অনর্গল হিন্দীতে কথা বলেই চলেছে, বাড়ি উত্তরবঙ্গের পাহাড় ঘেঁষা সমতলে। আমি খুব একটা হিন্দীতে সাবলীল না, তাই যতটা পারি হিন্দীতে জিগ্যেস করলাম- আর কোন কোন ভাষা বলতে পারো? উত্তরে জানালো সাদরী। প্রশ্ন করলাম কুরুখ জানো না। ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে জানালো না। আমি এতদিন যা জানতাম ওরাঁও রা যে ভাষায় কথা বলেন, তার নাম কুরুখ ভাষা।
তার ঠাম্মার সাথে খানিকটা আলাপের সুযোগ হল, সে জানালো এই এলাকায় এখন গোনা কয়েকজন কুরুখ ভাষা বলতে পারে। আর এও জানালো যে তাদের প্রচলিত ভাষা কুরুখ এখন হারানোর মুখে।
কুরুখ ভাষা
কুরুখ ভাষা দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত হলেও, এই ভাষার সাথে কঙ্কনি ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে। এর পেছনে ভাষাবিদরা এবং নৃতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে কঙ্কন এলাকায় ওরাঁওদের আদি বাসস্থান ছিল, তার ফলে ভাষায় এই সংমিশ্রণ ঘটেছে। বর্তমানের নতুন প্রজন্মের ওরাওঁরা দুটি ভাষাকে আপন করে নিয়েছে একটি কুরুক অপরটি শাদরী। বর্তমানে শাদরী বহুল প্রচলিত। এ ভাষাটি দ্বারা শুধু বলা সম্ভব ছিল, কিন্তু লেখা সম্ভব ছিল না; কেননা এর বর্ণমালায় ছিল না । যার ফলে তাদের সাহিত্য এবং লোককথা মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে, কিন্তু সমস্যার সমাধান করা গেছে তোরঙ লিপির সাহায্য। ডাক্তার নারায়ন ওঁরাও, একজন মেডিকেল ডাক্তার, কুরুখ ভাষার জন্য তোলং সিকি লিপি উদ্ভাবন করেছেন।
ওঁরাও সম্প্রদায় |
আবার হিন্দী ভাষার সাথে সাদরী ভাষায় কতিপয় মিল থাকার দরুন সাদরী ভাষাকে দেবনাগরী লেখন পদ্ধতিতে লৌখিক রুপ দেওয়া গেছে।
সমস্যা কোথায়?
বলা বাহুল্য, যে ভাষার লোকসংখ্যার আধিক্য এবং লিপির প্রচলন রয়েছে, সেই ভাষার স্থায়িত্বও অনেক বেশি। মজার বিষয় হলো ২৩% ওঁরাও কুরুখ ভাষায় কথা বললেও ভাষাটিকে বিপন্নপ্রায় ভাষার তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
কেননা, সাদরী এবং কুরুখ ভাষার সহবস্থানে সাদরি ভাষার গ্রহনযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি। এখানে অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, এতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা রয়েছে, ভারতের ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও ওরাঁওদের বাসস্থান রয়েছে। কুরুখ ভাষার প্রাচুর্য থাকার দরুন ওরাঁওদের কুরুখ জাতিও বলা হত। বিশিষ্ট ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসক স্যার হারবার্ট হোপ রিসলে তার লিখিত পুস্তকে বর্ননা করেছেন ওরাওঁরা দ্রাবিড়ীয়ান (আবার কোথাও কোথাও প্রোটো অষ্ট্রলয়েড বলা হয়েছে) জ এওনগোষ্ঠীর লোক। তথাপি এদের ভাষাটি ও দ্রাবিড় গোত্রীয় ভাষা। সুতরাং সাদরী এবং কুরুখ এই দুটি ভাষার মধ্যে কোনটি প্রকৃত ভাষা, এতে দোটানায় ভোগে অনেকে। আবার এও দেখা গেছে যে যেসব স্থানে মুন্ডা, সান্থাল, ওরাওঁদের সহবস্থান রয়েছে, সেখানে কুরুখ ভাষার গ্রহনযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত অনেক কমেছে।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন