ছোটোবেলা থেকেই জন্মেছিল সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখার প্রত্যাশা। কোলকাতা গিয়েছি অনেকবার কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠেনি একবারও। এবার যেহেতু সুযোগ পেয়েছি তাই ছাড়ার কোনো ইচ্ছে নেই। হেঁটে হেঁটেই স্মৃতি বিজড়িত স্থানের দিকে রওনা দিলাম।
পরপর দুই বছরের দুটি যুদ্ধ ১৮৫৭ সালে পলাশীর, এবং ১৮৫৮ সালে সিপাহী বিদ্রোহ হলে ব্রিটিশ সরকারের মনে হয় ভারতের মত এত বড় দেশকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাষনের মধ্যে না রাখাই উচিত, বরং ব্রিটিশ সরকার নিজেই সেই শাষনভার গ্রহন করুক। এই সুবাদেই রানি ভিক্টোরিয়া ১৮৭৬ থেকে ১৯০১ পর্যন্ত ভারত শাসন করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় জানা উচিত- অনেকেরই মনে হয় রানি ভিক্টোরিয়া, কোলকাতার এই মেমোরিয়াল থাকতেন এবং এখানে থেকেই তিনি তার শাসন চালাতেন। কিন্তু বাস্তবে রানি ভিক্টোরিয়া একবারও ভারতে আসেন নি।
কোলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে আমি |
ভারত শাসনকালেই ইংল্যান্ডেই রানীর মৃত্যু হলে, তার পরবর্তী সময়ে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মরণে একটি স্মারক নির্মাণের ধারণা প্রকাশ করেন তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন। এই কাজে তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত আর্কিটেক্ট উইলিয়াম এমারসন কে দায়িত্ব দেন এবং তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ভিনসেট এস। তাদের একান্ত তত্ত্বাবধানে শ্বেত মার্বেল দিয়ে ১৯০৬ সালে এই মেমোরিয়ালের নির্মাণ শুরু হয় এবং সমস্ত কাজ শেষ হয় ১৯২১ সালে। আবার এই বছরেই এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
কি কি রয়েছে এখানে
দেখার জন্য এখানে অনেক কিছু রয়েছে, বিশেষ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্পর্কিত বস্তু।
বর্তমানে মেমোরিয়ালটি একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যাতে ৫০,০০০ টিরও বেশি আইটেমের সংগ্রহ রয়েছে, যেমন চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছবি, হাতে লেখা গ্রহণপত্র, টাকা, টেকসটাইল এবং ভারতের ইতিহাস এবং শিল্পের সম্পর্কিত আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। ভারতের কয়েকজন শাষনকর্তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, বিখ্যাত লোকেদের চিত্রকলা এছাড়াও আরো বহু কিছু (সব বলছিনা, আমি চাই আপনারা এগুলো নিজে স্বচক্ষে দেখুন।)। এছাড়াও মেমোরিয়ালটিতে মন ভালো করার মত ৬৪ একরের একটি বাগান রয়েছে।
যেতে চাইলে যেতে পারেন কোলকাতার খুব একটা দূরে না। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সকাল দশটায় খোলে এবং সারাদিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকার পর সন্ধ্যা ছয়টায় বন্ধ করে দেয়া হয়। ভারতীয়দের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি তিরিশ টাকা।
কিভাবে যাবেন
আপনি উত্তরবঙ্গ থেকে কোলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখার জন্য বিভিন্ন উপায়ে যেতে পারেন। আমি আপনাকে কিছু সুবিধাজনক ও সস্তা উপায় বলে দিচ্ছি
রেল: আপনি উত্তরবঙ্গের যে কোনো রেলওয়ে স্টেশন থেকে কোলকাতা (শিয়ালদা, হাওড়া, কোলকাতা) এর দিকে রেলের টিকিট কাটিয়ে নিতে পারেন। এবং সেখান থেকে বাসে চেপে যেতে পারেন।
রোড: আপনি উত্তরবঙ্গের যে কোনো বাস-স্ট্যান্ড (শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদা) থেকে কোলকাতা ধর্মতলা গিয়ে সেখান থেকে খুব কাছে আপনারা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পেয়ে যাবেন , ধর্মতলা থেকে চাইলে আপনি বাসে করেও মেতে পারেন।
আকাশপথে: শিলিগুড়ি বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে কোলকাতা দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছে আপনি বাসে ধর্মতলা গিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল মেতে পারেন। অথবা দমদম এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি অথবা ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরে আসতে পারেন।
মনে রাখবেন, ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল যেতে গেলে আপনাকে ৭ নম্বর বাসে চেপে বসতে হবে।
WhatsApp FINDING HISTORY BY ME
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন