History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩

হিন্দুদের ভবিষ্য পুরাণে যীশুর বিষয়ে যা বলা হয়েছে।। JESUS IN HINDU MANUSCRIPT BHAVISHYA PURANA ।।

 প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জীবনী ও তার মতাদর্শ আজও গোটা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের আস্থা স্বরুপ, তথাপি তার বাণী খ্রীষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বহুকাল থেকেই তার জীবনির উপরে চলে এসেছে নানা বিতর্ক। কেনোনা শুধু বাইবেলে নয়, বাইবেল ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যের মধ্যেও এমন এক ব্যক্তিত্বের আভাষ রয়েছে, যাকে বিভিন্ন গবেষকরা যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই কিংবদন্তি মতে যীশু খ্রীষ্ট তার হারিয়ে যাওয়া সময় অন্তরালে ভারতে এসেছিলেন। এমনকি হিন্দু ধর্মের বিশেষ গ্রন্থ "ভবিষ্য পুরাণ' এতেও রয়েছে এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ যাকে অনেক শাস্ত্রবিদেরা যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে মনে করেন।

এমন কি লেখা রয়েছে এই পুরাণে, যার জন্যে এত বিতর্ক? সে বিতর্কে না হয় পরে আসছি। আগে জানা প্রয়োজন "পুরাণ' কি? 

ভবিষ্য পুরাণ

 "পুরাণ' তার অর্থ পুরানো, যা অতীতের সাথে সম্পর্কিত। এযাবৎ হিন্দু ধর্মে আঠারোটি মহাপুরাণ এবং আঠারোটি উপ পুরাণ রয়েছে, যেগুলি হল-

 ব্রহ্ম পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ,বায়ু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, নারদ পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, ভরহা পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, ভামনা পুরাণ, কূর্মা পুরাণ, মৎস্যা পুরাণ, গরুড় পুরাণ, ব্রহ্মান্ডা পুরাণ। এছাড়া উপ পুরাণগুলির নামগুলি হল: সনাত-কুমার, নরসিংহ, বৃহন্নারদীয়, শিব-রহস্য, দুর্বাসা, কপিল, ভামনা, ভর্গব, বরুণ, কালিকা, শম্ভা, নন্দী, সূর্য, পারাশর, বসিষ্ঠ, গণেশ, মুদ্গলা এবং হংস।

সকল পুরাণ গুলির মধ্যে ভবিষ্য পুরাণ কিছুটা ব্যতিক্রম। সকল পুরাণ গুলি বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মীয় দেবতার কাহিনী, চিকিৎসা, ব্যাকরণ, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু ভবিষ্য পুরাণ উপরোক্ত অল্প কিছু বিষয় খানিকটা আলোচনার পাশাপাশি আনুমানিক আন্দাজে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে বা ভবিষ্যতের রুপরেখা নিয়ে আলোচনা করে। এই ভবিষ্য পুরাণ ব্যাসদেব দ্বারা প্রথম শতকের শেষ দিকে রচিত বলেই অনেকে মনে করেন। তবে হিন্দু ধর্মের বৃহৎ অংশের অনুসারী আরো প্রাচীন কালে লিখিত বলেই মনে করেন।

 যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে ভবিষ্য পুরাণ

ভবিষ্যপুরাণের উনিশ অধ্যায়ের চতুরয়ূগা খন্ডে, কিংবদন্তি রাজা শালিবাহন, যিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে প্রতিষ্ঠানে রাজত্ব করতেন এবং যিনি ছিলেন পরমার রাজ রাজা ভোজের পূর্বপুরুষ। এই শালিবাহন রাজার সাথে এক দিব্য পুরুষের পরিচয় এবং কথোপকোথন হয়, অনেকেই মনে করেন এই দিব্য পুরুষই হলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। যে কথোপকথনটি শুরু হয় উনিশ অধ্যায়ের চতুরয়ূগা খন্ডের তেইশ নম্বর শ্লোক থেকে।

বলা হয়েছে - 

কো ভারাম ইতিতাম প্রাহা

 সূ হবাচা মুদানভিতাহা

 ইশা পুত্রাম নাম ভিদ্দী

 কুমারীগর্ভা সম্ভাবাম

যার অর্থ - শালিবাহন রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে মহাশয়? উত্তরে তিনি বললেন আমি ইশাপু্ত্র, ঈশ্বরের সন্তান এবং আমি কুমারী মা থেকে জন্মগ্রহন করেছি।

Jesus Christ in Bhavishya Purana Hindu religion
হিন্দু যোগি রুপে যীশু খ্রীষ্ট (কল্পনায়)

যদি আমরা খ্রীষ্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের দেখি তবে আমরা দেখবো যে, যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে বহু জায়গায় ঈশ্বরের সন্তান বলেই দাবি করেছেন, যার কয়েকটি উদাহরণ হল যোহন লিখিত- 

১০:৩০ - আমি ও পিতা এক।

১৪:৯ - যে কেউ আমাকে দেখে সে আমার পিতাকে দেখে।

এছাড়াও আরো বহু জায়গায় এমন উল্লেখ রয়েছে। আবার একি ভাবে বাইবেলের পুরানো নিয়মের ইশাইয়া লিখিত ৭:১৪ তে কুমারী মায়ের দ্বারা পুত্র সন্তান হবার ভবিষ্যৎ করা হয়েছিল, আর যার প্রমান স্বরুপ বাইবেলের নতুন নিয়মে মথি লিখিত প্রথম অধ্যায়ের ১৮-২৫ এ যীশুর মা মরিয়মকে কুমারী মা হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও লুক লিখিত প্রথম অধ্যায়ে যীশুর কুমারী মা দ্বারা প্রসবের বিবরণ পাওয়া যায়।

 আরো পরুন 👇

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি ভারতে এসেছিলেন??

এছাড়াও ভবিষ্য পুরাণের ৩০ নং শ্লোকে যীশু খ্রীষ্ট তার ধর্ম প্রচার এবং যীশুকে মাশিহা কেনো বলা হয়েছে সে বিষয়ে বলেছেন - "হে পৃথিবী গ্রহের রক্ষক, পরম ভগবানের চিরন্তন পবিত্র ও শুভ রূপ আমার হৃদয়ে স্থাপন করে, আমি ম্লেচ্ছদের নিজস্ব বিশ্বাসের মাধ্যমে এই নীতিগুলি প্রচার করেছি এবং এইভাবে আমার নাম 'ইশা-মাসিহা' হয়েছে।"

 খ্রীষ্টানদের মধ্যে ভবিষ্য পুরাণের গ্রহনযোগ্যতা

এই প্রশ্নের এক কথার উত্তর খ্রীষ্টানদের মধ্যে পুরাণের এই শ্লোকগুলির গ্রহনযোগ্যতা একটুও নেই। যার পিছনে অনেক কারন রয়েছে , ক্যাথলিক, প্রোটেষ্টান সহ অন্য খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের বিশ্বাসীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন পুরাণের উল্লেখিত ব্যাক্তি এবং তাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট একই ব্যাক্তি নন। কেনোনা বাইবেল হিসাবে সকল খ্রীষ্টানরা মনে‌ করেন যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে জীবিত হবার পর স্বর্গে উত্থিত হয়েছেন, এবং পুরাণের এই শ্লোকগুলি তার সমর্থন করে না।

দ্বিতীয়তঃ যে শালিবাহন রাজার সাথে এই কথোপকথন হয়েছে , ঐতিহাসিক মতে তার অস্তিত্ব ছিল আনুমানিক ৪৮-৫৮ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন , এবং এটি যদি সত্যি ধরে নেওয়া হয় তবে এটা ধরে নিতে হবে যে সেই মূহুর্তে রাজা কোনো পুরুষের সাথে নয় বরং তিনি কোনো এক বৃদ্ধের সাথে কথোপকথন করেছিলেন, কিন্তু শ্লোকে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে ২২ নং শ্লোকে - "হুনা দেশের মাঝখানে (হুনাদেশ - মনসা সরোবরের নিকটবর্তী এলাকা বা পশ্চিম তিব্বতের কৈলাস পর্বত) শক্তিশালী রাজা একজন শুভ পুরুষকে দেখতে পেলেন যিনি একটি পাহাড়ে বাস করছেন। লোকটির গায়ের রং ছিল সোনালী এবং তার পোশাক ছিল সাদা।‌‌" যা পরস্পর বিরোধী মতবাদ তৈরি করে। 

তৃতীয়তঃ যতগুলো পুরাণ রয়েছে, সেগুলো প্রায়শই একে অপরকে সমর্থন করে, এবং প্রতিটি পুরাণেই প্রতিফলিত হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে যীশুর বিষয়ে শুধুমাত্র একটি পুরাণেই বলা হয়েছে অন্যগুলিতে নয়।

চতুর্থতঃ এছাড়াও বর্তমানে আমরা যে পুরাণটি লক্ষ্যে করি তা কিছুটা বিকৃত অবস্থায় রয়েছে, এটি জানা যায় যে এই পাঠ্যের প্রায় ২০০ টি পৃষ্ঠা হারিয়ে গেছে বা ভুল স্থান পেয়েছে।

পঞ্চমতঃ ইসা নামটি তৎকালীন সময়ে বহুল প্রচলিত নাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো বলে অনেকে মনে করেন। সুতরাং খ্রীষ্ট ধর্মের ইসা এবং পুরাণে বর্ণিত ইসা মে একই ব্যাক্তি তা সম্পূর্ণরূপে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।

ভারত ব্রিটিশ অধীনে থাকাকালীন যখন ভারতে ছাপাখানার ব্যবহার শুরু হয়, তখন ব্রিটিশ সাহায্য প্রাপ্ত খ্রীষ্টান মিশনারীরা ভারতে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের নানা ফন্দী আঁটতে থাকে। তাই অষ্টাদশ শতকের দিকে খ্রীষ্টান মিশনারীরা হিন্দুদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আস্থা বাড়াতে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের (ভবিষ্য পুরাণ) অনুবাদ করে ছাপার সময় চতুরতার সাথে এই শ্লোকগুলি যুক্ত করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

সুতরাং পুরাণ বর্ণিত সেই পুরুষ যে যীশু খ্রীষ্টই ছিলেন সেই বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়, যার ফলস্বরূপ খ্রীষ্টানরা পুরাণের এই শ্লোকগুলিকে মান্যতা দেয় না। 

(বিঃদ্রঃ - ভবিষ্য পুরাণের যীশুর সাথে শালিবাহনের কথোপকথনের সম্পূর্ণ শ্লোকগুলির বাংলা মানে পরের লেখায় তুলে ধরবো।)

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন