দক্ষিন দিনাজপুর আমাদের প্রীয় জেলা। আর এই জেলার বিভিন্ন এলাকাই ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন কালের বিভিন্ন ঐতিহাসিক সাক্ষি বহনকারী বিভিন্ন ধংসাবশেষ। কিন্তু দুংখের বিষয় হল যদিও প্রশাসন এগুলি রক্ষার্তে এগিয়ে এসেছে, তবুও তা যথেষ্ট না। আর পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, দক্ষিন দিনাজপুরের ইতিহাস জেলাবাসির কাছে খুব একটা পরিচিত না, আর যার ফলে দক্ষিণ দিনাজপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আর এটা আমার ছোট একটি প্রচেষ্টা যাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ এই জেলার প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারে।
গঙ্গারামপুর আতা শাহের দরগা
গঙ্গারামপুর শহরের ঢলদিঘির উত্তর পারে রয়েছে একটি প্রাচীন কালের ইটের নির্মিত ঐতিহাসিক কাঠামো। যেটি সম্ভবত 14 তম শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যর সময় অথবা 8 র্থ থেকে 1২ শতকের মধ্যে তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় । আর এটিকে সুফি সন্ত মোল্লা আতী-উদ্দিন শাহ বা আতা শাহের কবরস্থান হিসাবে মনে করা হয় । যেটি গঙ্গারামপুর বাসির কাছে ঢলদিঘি দরগা নামে পরিচিত।
ইটের নির্মিত দরগাহটি ছাদবিহিন বর্গাকার হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। এই দরগাহটির মেঝের অংশটি পাথর দ্বারা নির্মিত করা হয়েছে। এই দরগার দেয়ালের উপর চারটি আরবি শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়।
তবে প্রথম থেকেই এটি দরগা ছিল কি ছিল না সেটা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টাই 1938-41 এর মধ্যে এখানে খনন করা হলে এখানে চতুর্থ শতকের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়, এছাড়া এই দরগার দেয়ালে পদ্মফুলের ভাস্কর্য থেকে এটা মনে করা হয় যদিও এটি বর্তমানে আতা শাহের দরগা তবে পুর্বে হয়ত এটি কোন বৌদ্ধ মঠ ছিল।
আতা উদ্দিন শাহ
এখন প্রশ্ন হল এই আতা উদ্দিন শাহ কে ছিলেন আর ইতিহাসের দিক দিয়ে ইনার গুরুত্ব কি। আতা উদ্দিন শাহ ছিলেন একজন উচ্চ পদস্থ সুফিসন্ত। যিনি বাংলার বুকে সুফি বাদের আদর্শ প্রচার করেন। বখতিয়ার খলজি বাংলা দখল করলে বাংলাই মুসলিম শাষনের শুরু হয়, আর বাংলাই মুসলিম শাষনের শুরু হলে মুসলিম সুফিসন্তগন তাদের এই মতাদর্শ বাংলাই ছরিয়ে দিতে শুরু করে আর বাংলার বুকে এই মতবাদ যিনি প্রচার করেছিলেন তিনি হলেন আতা উদ্দিন শাহ। আতা শাহ ভারতের বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু জাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সুফিবাদ প্রচার করে তাদের মধ্যে উৎশাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করেন এবং ঐশ্বরিক আধ্যাত্মিকতা, মহাজাগতিক সাদৃশ্য, প্রেম, এবং মানবতার সূফী শিক্ষাগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছরিয়ে দেন।
সুফিবাদ
সুফি শব্দটি আরবী শব্দ সাফা থেকে এসেছে ,যার দুটি স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে- এক যারা উলের তৈরি তাঁর পরেন এবং দ্বিতীয়টি হল বিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতা। সূফীবাদ মতাদর্শ অনুযায়ী আল্লাহ, বা ঈশ্বর এবং খালক সেই এক।
সুফিবাদ মতবাদ মতে হিন্দু বা মুসলমানদের ঈশ্বরের সাথে একত্রিত হতে গেলে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা, নামাজ বা প্রার্থনার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। এই মতবাদ জোর দিয়েছিল যে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এর পরিবর্তে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ ধারণার উপর ভিত্তি করা উচিত।
যাবার রাস্তা
গঙ্গারামপুর এসে আপনি যেখান থেকে খুশি আপনারা এখানে যাবার জন্য টোটো পেয়ে যাবেন। এছাড়া আপনি কালদিঘী বা গঙ্গারামপুর বাসস্টান্ড থেকে যেকোন টোটো ধরে ঢলদিঘি দরগা বল্লেই আপনাকে সঠিক জায়গাই পৌঁছে দেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন