আমাদের আদিবাসী সমাজ ভাষা ,ধর্ম , ও সমাজ নিয়ে বোধহয় একটু বেশিই আবেগপ্রহণ । কিন্তু বর্তমান আদিবাসী সমাজের সাঁওতাল জনগোষ্ঠির মধ্যে, ধর্ম ও ভাষাকে নিয়ে বিগত কয়েক দশক থেকে দোটানায় রয়েছে। সাঁওতাল জনগোষ্ঠির মধ্যে অনেকেই এখন খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন , যার ফলে সাঁওতাল জনগোষ্ঠির সারি ধর্মের অনুসারিদের সাথে খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারিদের একটা বিরোধিতার পরিবেশ দেখা দিয়েছে । আর ভাষা গত দিক দিয়ে অলচিকি বর্ণমালা না লাতিন লিপি ( রোমান হরফ) কোনটি ব্যবহার করা উচিত, সেটা নিয়ে সাঁওতাল সমাজে দেখা দিয়েছে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি, যার তর্কের কোন শেষ নেই। তবে আমার মতে অলচিকি আর রোমান হরফ যেটাই হোক না কেন , আমাদের সেই লিপিই ব্যবহার করা উচিত যেই লিপির ব্যবহারে সাঁওতাল জনজাতির ভবিষ্যৎ উজ্জল হবে। এই প্রসঙ্গে আমার অভিমত কোন লিপিটি সঠিক কোন লিপিটি বেঠিক সেটা নির্ধারণ করার আগে, ওই সমস্ত লিপির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত , আর সেই নিরিখেই বিচার করা উচিত সাঁওতাল জনগোষ্ঠির জন্য কোন লিপিটি অধিক গ্রহনিয়।
মুলত এই রোমান লিপিটি প্রাচীন রোমে প্রায় যিশুখ্রীষ্টের জন্মের ৭০০ বছর আগে প্রচলিত হয়, বর্তমানে এই লিপির দ্বারা বিশ্বের প্রায় অনেক দেশ যেমন - জার্মান, আইসল্যান্ড, আফ্রিকা, ইতালী, নরওয়ে, ফ্রান্স আরো প্রচুর দেশ আছে যেখানে এই লিপির প্রচলন আছে। এছাড়া কিছু কিছু রাষ্ট্র আছে যারা তাদের ভাষার লেখনশৈলির জন্য রোমান হরফ বা লাতিন লিপিকে ব্যবহার করবেন বলে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, যেমন - হাঙ্গেরী, ইন্দোনেশীয়, মালয়, তুর্কি, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান প্রমুখ রাষ্ট্র । রোমান হরফ অন্যান্য লিপির মতোই বাম থেকে ডান দিকে লিখতে হয়।
ধর্ম ভিত্তিতে আগেও কোন লিপি সৃষ্টি হয়নি, না আগামিতেও এমন কখন হবে। সাঁওতাল জনজাতির লোকেরা যাতে তাদের ভাষাতেই বাইবেল পরতে পারে তার জন্য সাঁওতালী বাইবেল রোমান হরফে ছাপা হয়, কেননা সাঁওতাল ভাষার কোন নিজস্ব লিপি আগে ছিল না। তাছাড়াও যিশুখ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে থেকেই এই লিপিটি ব্যবহার হয়ে আসছে। তাছাড়াও যে সমস্ত রাষ্ট্র রোমান হরফ গ্রহণ করেছে তাদের সবগুলোই খ্রিষ্টান প্রদেশ , এমনটি নয়, এমন অনেক রাষ্ট্র আছে যাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা আনেক বেশী তবুও রোমান হরফ ব্যবহার করেন,মধ্য এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে খ্রিস্টান জনসংখ্যা নামমাত্র আছে। তারা রোমান হরফ ব্যবহার করেন, কারণ রোমান লিপির উপযোগিতা আছে বলেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে রোমান লিপি কোন ধর্মিও লিপি নয় ।
১ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ রোমান লিপি গ্রহণ করেছেন, যাদের প্রতিটি দেশ স্বাধীন, ও শিক্ষার হার যাদের প্রায় 90% অধিক তবুও এই দেশগুলো তাদের স্বকীয়তা হারানি , সুতরাং রোমান লিপি ব্যবহারে সাঁওতাল তার নিজিস্বতা হারাবে না বরং সেই সমস্ত রাষ্ট্রের সাথে আগামিতে ভাষাগত ও ধর্মগত আদান প্রদান সুন্দর হবে।
২ বর্তমানে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াম গুলো ভাষা বিনিময়ের জন্য রোমান ও দেবনাগরীকে সকলেই পছন্দ করেন, উদাহরণ স্বরূপ - সামাজিক মাধ্যম ( ফেসবুক, হোয়াটসএপ ইত্যাদি ইত্যাদি) কেউ তার ভাষা প্রকাশের জন্য - তুমি কেমন আছো ,এমনটা না লেখে বরং TMI KEMON ACHHO এমনটি লিখতে বেশী পছন্দ করেন , যেটি রোমান হরফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ৩ গোটা বিশ্ব এখন এই রোমান হরফ লেখনশৈলির দিকে ঝুকছে, এমনকি কলকাতা বই মেলায় গত বছর রোমান হরফে বাংলা অনুবাদ বই বের হয়েছিল । তাই সময়ের সাথে ভাষাগত দিক দিয়ে রোমান হরফি হল প্রধান সোপান।
৪ সাঁওতাল ভাষার মধ্যে যদি অলচিকি বর্ণমালার প্রয়োগ হয় তবে এই লিপিটি শুধুমাত্র সাঁওতাল জনজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সুযোগটি অনেক বেশী হয়ে দাঁড়াবে কারণ ভারতের জনগোষ্ঠির ১৬ শতাংশ আদিবাসী সমাজ রয়েছে, যার আবার মাত্র ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বা কমে রয়েছে সাঁওতাল সম্প্রদায় জনসংখ্যা । কিন্তু রোমান হরফ ব্যাবহারে এমন বিকেন্দ্রীকরণ ঘটার কোন সুযোগ থাকবে না।
WhatsApp
UNIQUE KNOWLEDGE
সাঁওতালী অলচিকি বর্ণমালা |
। অলচিকি হরফ বা বর্ণমালা।
১৯২৫ সালে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মূ সাঁওতালি ভাষাকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য সাঁওতাল জনজাতির নিজস্ব বর্ণমালা বা অলচিকি লিপি তৈরি করেন। এই প্রসঙ্গে একটি জিনিস জেনে রাখা ভালো আর সেটি হল সাঁওতালি ভাষা ভারতের অন্যান্য ভাষা গুলো থেকে আলাদা বা সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভব নয় এছাড়াও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য ভাষার সাথে সাঁওতাল ভাষার কিছুটা মিল রয়েছে।তাই সাঁওতালী ভাষা ভারতীয় অন্যান্য লিপিগুলো দ্বারা শুদ্ধভাবে লেখা খুবই মুশকিল ছিল ও তার পাশাপাশি সাঁওতালি ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা ছিল না, যদিও বা সেটা থেকে থাকে তবে সেটা ধংস্ব হয়ে গেছে। সেই দিক দিয়ে বিচার করলে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর এই নিজিস্বতা প্রশংসনিয়, ও তার একান্ত প্রচেষ্টাই ২০০৩ সালের ৯২ তম ভারতীয় সংবিধান সংশোধনে, রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে সাঁওতাল ভাষা সংবিধানে যুক্ত হয়েছে। যাই হোক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু যে সাঁওতালী স্বকীয় অলচিকি বর্ণমালা তৈরি করেছেন সেটিতে প্রায় ৩০টি অক্ষর আছে , যার দ্বারা সহজেই সাঁওতাল ভাষার উচ্চারণ সঠিক ভাবে লেখা যায় । এছাড়াও এই অলচিকি বর্ণমালা ভারতীয় অন্যান্য বর্ণমালার মত বাম থেকে ডান দিকেলেখা বা পড়া হয়।।রোমান লিপি বা লাতিন লিপি।
অলচিকি বর্ণমালা আসার আগে রোমান হরফ সাঁওতালী ভাষার ভাব সম্প্রসারণের জন্য বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হত। এই রোমান লিপিকেই অন্য নামে বা ওরফে লাতিন লিপি বলা হয়ে থাকে। বিশ্বে বলা সবথেকে বেশী বলা ভাষা চিনা মান্দারিণ ভাষার পর দ্বিতীয় ভাষা ইংরাজী ভাষার বর্ণমালা এই লাটিন বা রোমান হরফ থেকে উঠে এসেছে। রোমান লিপিই হল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণমালা বা লিপি।রোমান হরফ বা লাতিন লিপি |
রোমান লিপি কী খ্রিষ্টানদের লিপি?
আমার দ্বারা সম্ভব যে সমস্ত তথ্য আপনাদের জানা উচিত, সেটি আমি আপনাদের জানিয়েছি, এবার আপনাদেরি বিচারাধীন সাঁওতালী ভাষার উন্নতির জন্য কোন লিপিটি বিশেষ গুরত্বপুর্ণ। তবে আপনাদের কিছু ভুল ধারণা দুর করাও আমার কর্তব্য, যেহেতু সাঁওতাল সমাজে ধর্ম বিষয়ক খ্রীষ্ট ধর্ম ও সারনা ধর্মের একটা টানাপোরন রয়েছে তাই এই ধারণাটিও পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত।ধর্ম ভিত্তিতে আগেও কোন লিপি সৃষ্টি হয়নি, না আগামিতেও এমন কখন হবে। সাঁওতাল জনজাতির লোকেরা যাতে তাদের ভাষাতেই বাইবেল পরতে পারে তার জন্য সাঁওতালী বাইবেল রোমান হরফে ছাপা হয়, কেননা সাঁওতাল ভাষার কোন নিজস্ব লিপি আগে ছিল না। তাছাড়াও যিশুখ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে থেকেই এই লিপিটি ব্যবহার হয়ে আসছে। তাছাড়াও যে সমস্ত রাষ্ট্র রোমান হরফ গ্রহণ করেছে তাদের সবগুলোই খ্রিষ্টান প্রদেশ , এমনটি নয়, এমন অনেক রাষ্ট্র আছে যাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা আনেক বেশী তবুও রোমান হরফ ব্যবহার করেন,মধ্য এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে খ্রিস্টান জনসংখ্যা নামমাত্র আছে। তারা রোমান হরফ ব্যবহার করেন, কারণ রোমান লিপির উপযোগিতা আছে বলেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে রোমান লিপি কোন ধর্মিও লিপি নয় ।
।আমার বক্তব্য ।
রোমান বা লাতিন লিপি ও অলচিকি বর্ণমালা কোনটি ব্যবহার করা উচিত সেটা আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন, আমি অকারনে কারো কাছে দোষী হতে চাই না । যদি একান্তে গোপনে আপনারা আমাকে জিঙ্গেস করেন, কোন হরফটি সাঁওতালী ভাষার জন্য উপযুক্ত , যেটি এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তবে আমার বিচারে সেটি রোমান হরফ, তার কারণ হিসাবে ।১ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ রোমান লিপি গ্রহণ করেছেন, যাদের প্রতিটি দেশ স্বাধীন, ও শিক্ষার হার যাদের প্রায় 90% অধিক তবুও এই দেশগুলো তাদের স্বকীয়তা হারানি , সুতরাং রোমান লিপি ব্যবহারে সাঁওতাল তার নিজিস্বতা হারাবে না বরং সেই সমস্ত রাষ্ট্রের সাথে আগামিতে ভাষাগত ও ধর্মগত আদান প্রদান সুন্দর হবে।
২ বর্তমানে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াম গুলো ভাষা বিনিময়ের জন্য রোমান ও দেবনাগরীকে সকলেই পছন্দ করেন, উদাহরণ স্বরূপ - সামাজিক মাধ্যম ( ফেসবুক, হোয়াটসএপ ইত্যাদি ইত্যাদি) কেউ তার ভাষা প্রকাশের জন্য - তুমি কেমন আছো ,এমনটা না লেখে বরং TMI KEMON ACHHO এমনটি লিখতে বেশী পছন্দ করেন , যেটি রোমান হরফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ৩ গোটা বিশ্ব এখন এই রোমান হরফ লেখনশৈলির দিকে ঝুকছে, এমনকি কলকাতা বই মেলায় গত বছর রোমান হরফে বাংলা অনুবাদ বই বের হয়েছিল । তাই সময়ের সাথে ভাষাগত দিক দিয়ে রোমান হরফি হল প্রধান সোপান।
৪ সাঁওতাল ভাষার মধ্যে যদি অলচিকি বর্ণমালার প্রয়োগ হয় তবে এই লিপিটি শুধুমাত্র সাঁওতাল জনজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সুযোগটি অনেক বেশী হয়ে দাঁড়াবে কারণ ভারতের জনগোষ্ঠির ১৬ শতাংশ আদিবাসী সমাজ রয়েছে, যার আবার মাত্র ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বা কমে রয়েছে সাঁওতাল সম্প্রদায় জনসংখ্যা । কিন্তু রোমান হরফ ব্যাবহারে এমন বিকেন্দ্রীকরণ ঘটার কোন সুযোগ থাকবে না।
আমিও চাই অলচিকি আরও উন্নতি করুক
উত্তরমুছুনDhonnobad
মুছুনআমিও চাই অলচিকি আরও উন্নতি করুক
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন