আজকে আমরা যে দক্ষিণ দিনাজপুরের যে তপন এলাকাটি চিনি, সেই তপন এলাকাটি, পূর্বেও এমন ছিল সেটা বলা কঠিন, বিষ্ণুপুরাণ ও মহাভারতের একটি খণ্ডে এই এলাকা বিষয়ে অনেক কিছুই বলা হয়েছে,সেই বিষয় গুলো কি সেটা বলার আগে আপনাদের তর্পন ও তপোবন এই দুটি শব্দের অর্থ কী সেটা জানতে হবে।।
তর্পন শব্দের অর্থ
এই তর্পন শব্দটির অর্থ পৃথক পৃথক শব্দ, সংস্কৃত শব্দ তৃপ ও অনহ থেকে তৈরী হয়েছে।। এই তৃপ শব্দের অর্থ হল - তৃপ্তি প্রদান করা বা তৃপ্তি সম্পন্ন করা, আমি যদি সম্পুর্নভাবে বলি তবে "তর্পন " শব্দের অর্থ হল মৃত ব্যক্তিদের বা তাদের জলদান করে তৃপ্ত প্রদান করানোকে বোঝায় যারা বা যাদের আত্মা পৃথিবীতে নেই।।
তপোবন শব্দের অর্থ
এবার আসছি "তপোবন " শব্দ নিয়ে এটিও ঠিক দুটো শব্দ নিয়ে গঠিত "তপহ" বা "তপ" আরেকটি হল বন। এই তপ শব্দের অর্থ হল তপস্যা করা। অর্থাৎ "তপোবন" শব্দের অর্থ হল যে বনে তপস্যা করা হয়।।
পৌরাণিক যোগসূত্র
তপন এলাকার সাথে যে পৌরাণিক যোগসূত্র পাওয়া যায় সেটি বর্নিত আছে -বিষ্ণুপুরাণ ও শিবপুরানের রুদ্র সাংহিতায় পাওয়া যায়,যেটি সরাসরি যুক্ত গঙ্গারামপুরে অবস্থিত
বানগরের পৌরাণিক কাহিনী ও এখানকার পৌরাণিক অসুর রাজা বানরাজার সাথে, তবে বানরাজার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা হল। তিনি হলেন অসুর রাজ দানবীর বলির সন্তান। বিষ্ণুপুরাণ ও শিবপুরান মতে তিনি ছিলেন শিবের উপাসক, -একবার ভগবান শিব বানরাজার তপস্যাই খুশি হয়ে: সহস্র হাতের বরদান দেন, সেই জন্য বানরাজাকে শিবপুরান ও বিষ্ণুপুরানে "সহস্রহস্ত " বলা হয়েছে।। এছাড়াও বানরাজা একটি বিশেষ মন্দির বানিয়েছিলেন যেটি বর্তমানে গঙ্গারামপুরের শিববাড়িতে অবস্থিত
বিরূপাক্ষ মন্দির।
|
তপন দিঘি |
তপন দিঘী
তপনে পুরানের সাথে জরিত ঐতিহাসিক উপাদান টি রয়েছে সেটি কোন শিব মন্দির কিংবা কোন প্রাচীন ইমারতের কোন ধ্বংসাবশেষ না, তপনে যে ঐতিহাসিক উপাদানটি রয়েছে সেটি হল একটি বিশাল দীঘি যেটি আমাদের পজলায় পরিচিত আছে তপন দীঘি নামে।বর্তমানে এই দীঘিটি বহুদিন যাবত অবহেলায় থাকায় এই দীঘিটির জল এখন নেই বললেই চলে তবে যতটুকু স্থানে জল রয়েছে ততটুকু স্থানে চলছে মাছ চাষ।।
তপন নামকরণ
পুরাণ মতে অসুর রাজ বান, ভগবান শিবের তর্পনের জন্য এই বিশাল দীঘিটি খনন করেন। অনেকের মতে বানরাজার খনন করা তর্পনের জন্য তৈরী এই দীঘিটির থেকে এই স্থানের নাম হয়েছে তপন অর্থাৎ "তর্পন " শব্দ থেকে এই স্থানের নাম হয়েছে তপন।
অসুরাজ বান ছিলেন শৈব ও শিবের চরম উপাসক।। তিনি প্রায় এই দিঘীতে আসতেন ও শিবের উদ্দেশ্য তর্পন করতেন, কথিত আছে একবার ভগবান শিব তার তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে বানরাজাকে বর প্রদান করেন, সুতরাং রাজাবান নিজেও তপস্যা করতেন, ঠিক একই ভাবে তার রাজ্যের মুনি ঋষিরা যাতে তপস্যা করতে পারেন তার জন্য এই তপন দীঘির পশ্চিম পারে তপস্যার জন্য একটি বিশাল বনের বা "তপোবন" নির্মান করেন।। যেখানে বর্তমানে একটি আশ্রম রয়েছে।। "তর্পন" শব্দের পাশাপাশি অনেকের মতে এই তপস্যার জন্য নির্মিত এই "তপোবন" শব্দ থেকে এই স্থানের নাম হয়েছে তপন।।
অন্যান্য স্থান রাধা গোবিন্দ মন্দির
সুতারং এটা বলা যায় যে, তপনে যদি আপনি ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক কোন স্থান দেখতে চান তবে এখানে দীঘি ছারা আর কিছু নেই, যেহেতু আমি আপনাদের হোষ্ট প্লাস দোস্ত তাই আপনাদের আন্তরিক চাহিদা পুরানের জন্য -একটি মন্দিরের বিষয়ে জানাচ্ছি যেটি কোন ঐতিহাসিক মন্দির তো নয় তবে এটি দক্ষিণ দিনাজপুরে তৈরি সবথেকে বড় ও সুন্দর মন্দির যেটি এখনো সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়নি বটে কিন্তু আপনাদের আন্তরিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।। তাই আপনারা যদি তপনে যান তবে এই মন্দিরটি অবশ্যই ঘুরে আসুন, তবে আমি আপনাদের রথ যাত্রার সময় এই মন্দিরে যাবার পরামর্শ দেব , কারণ এখানকার রথ যাত্রাটি বেশ বড় মাপের আয়োজিত হয় ।
|
তপন রাধা গোবিন্দ মন্দির |
কারবালার মাঠ ও করদহ
আর এই মন্দিরের প্রবেশের আগেই একটি ছোট মাঠ দেখতে পাওয়া যায় সেটি কারবালার মাঠ নামে পরিচিত। এই মাঠটির মধ্যে একটি প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।। এই কারবালার মাঠের একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে, যেটি আমি অনেক দিন আগে পরেছিলাম,তবে এখন মনে নেই। আমি চেষ্টা করব আগামীতে সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানানোর আর আপনাদের যদি সে বিষয়ে জানার থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন। এছাড়া তপন থানার অন্তর্গত "করদহ" প্রদেশটি পৌরাণিক দিক দিয়ে একটি বিশেষ ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। আর সেটি হল এক সময় বানগড়ের বানরাজা ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রপৌত্র অনিরুদ্ধকে বন্দি করেছিলেন, তাই দ্বারকার রাজা শ্রী কৃষ্ণ তার প্রপৌত্র অনিরুদ্ধকে উদ্ধার করতে এলে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাথে বানরাজার যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে শ্রী কৃষ্ণ বানরাজার দুটি হাত রেখে বাকি সব হাত কেটে ফেলেন, পরে সেই কাটা হাতগুলো একটি বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়ে পুরিয়ে ফেলা হয় , যেই জায়গাটি বর্তমানে করদহ নামে পরিচিত। তাই "কর" অর্থাৎ হাত আর "দহ" শব্দের অর্থ হল পুরিয়ে ফেলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন