কয়েকজন বন্ধু মিলে রাতারাতি আয়োজন, গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় বোল্লামেলা, পতিরামের বিদ্বেশ্বরি মন্দির থেকে প্রায় ৮ কিমি পশ্চিমে রয়েছে বোল্লা স্টপিজ। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুকে যদি কোন বড় মেলার কথা বলা হয়ে থাকে, তবে সেটি বোল্লা মেলা , আর দক্ষিণ দিনাজপুরের ছেলে হিসাবে মেলাতে ভিড় জমাবো না, এমনটা হওয়ার সুযোগ খুবি অল্প, আমাদের যেমন পরিকল্পনা তেমনি কাজ, তবে বোল্লা মেলাতে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল পুজায় ভোগ দেওয়া আর একটা পাঁঠা বলি।১০ টাই রওনা দিলাম, গাড়ি রিজার্ভ করে, বড়জোর ৩০ মিনিটের রাস্তা, কিন্তু রওনা হওয়ার পরপরই বুঝলাম সঠিক সময়ে পৌঁছানো মুশকিল কারণ মেলাটি চলবে আগামী সোমবার বিকেল পর্যন্ত, তাছাড়াও কলকাতা, শিলিগুড়ি আর না জানি পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জায়গা থেকে এসেছে অনেক ভক্তবৃন্দ , যার জন্য ফুলবাড়ী পর থেকেই দেখা দিল ট্রাফিক জ্যাম, ব্যাস ৩০ মিনিটের রাস্তা পার করতে সময় নিল ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, রাত তখন ১.৩০। ভক্তদের সমাগম তখনো বেড়েই চলেছে।
বোল্লা কালি, বোল্লা মন্দির, বোল্লা মেলা, বোল্লা ঠাকুর, বোল্লা মা, বোল্লা,
WhatsApp
FINDING HISTORY BY ME
,
UNIQUE KNOWLEDGE
বোল্লা কালি মন্দির |
বোল্লা মেলার সাতকাহন
বোল্লার মোড় থেকেই দোকানের পসরা শুরু হয়েছে, গাড়ি থেকে নেমে বোল্লা মন্দিরে যেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি, পিছনের ভিড় আপনাকে ঠেলে আপনাকে সঠিক জায়গাই পৌঁছে দেবে, এই ভিড়ের ঠেলায় একবার মনে হল এই বোল্লায় না এসে বরং আমাদের লোকাল বোল্লা মেলায় গেলে হয়ত ভালো হত, দক্ষিণ দিনাজপুরে শুধু এখানে নয়, আরো কয়েক জায়গাই বোল্লা মায়ের পূজা হয়ে থাকে, যেমন - কাটাবাড়ি, গঙ্গারামপুর আরো কয়েকটি জায়গাই, যাই হোক আমার সাথে থাকা যে সমস্ত বন্ধুরা ভোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, তারা মেলার একটি দোকান থেকে কিনে নিল ভোগের বাতাসা, কদমা, সন্দেশ ইত্যাদি ইত্যাদি। বছরের বারো মাসই শুক্রবারের দিন বোল্লার পুজা হয়ে থাকে, তবে মুল পুজাটি হয় রাস পুর্নিমার পরের শুক্রবার। ভোগ কেনার পরে চলিল আরেকটি খণ্ডযুদ্ধ, মন্দিরের সামনে গিয়ে কে আগে তার ভোগ উপসর্গ করতে পারে , শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় অন্য রাজ্য থেকেও ভক্তরা আসে ভোগ আর বলি দিতে, তাই সেই সমস্ত ভক্তদের কথা চিন্তা করে বোল্লীপুজোর কয়েকদিন বোল্লাতে অস্থায়ীভাবে ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে স্টপিজ ছাড়াই, তাও ধানক্ষেতের মাঝে। কোন মতে ঠেলেঠুলে পৌছালাম মন্দিরের সামনে, যারা ভোগ হিসাবে বাতাসা এনেছিল, তারা বাতাসা ছুড়ে মারছে বোল্লা কালির দিকে, উপরে তাকাতেই দেখি চারদিক থেকে ছুটে আসছে বাতাসার ঝাঁক, তবুও শত কষ্টের পরেও এই প্রথমবার বোল্লা কালির হাতে থাকা ২ কিলো ওজনের সোনার রামদা আর প্রায় ২০ কেজি ওজনের সোনা দিয়ে সাজানো বোল্লা মায়ের গয়না দেখলাম । মন্দিরের সামনে থেকে ফিরে আসতেই নাকে ভেসে এল রক্তের তাজা গন্ধ, প্রতি বছরি বোল্লা পুজায় আয়োজিত হয় পাঁঠা বলি, আর সেই পাঁঠা বলির সংখ্যা প্রতিবছরি ৫০০০ এর বেশিও ছাপিয়ে যায়। আর এত বেশী সংখ্যা হওয়ার পিছনে কারণ হল, বোল্লা মা অত্যন্ত জাগ্রত তাই বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা মানসিত কারিরা পাঁঠা বলির মানসিত করে থাকেন। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখে পরলো একটি ছোট মাপের পাকা করা মুসলিম কবর, আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমরা এখন মুসলিমদের কবরস্থানে রয়েছি ,যেই কবরস্থানের নাম "সম্প্রীতি" ,যে কবরস্থানটি ঠিক মন্দিরের সামনেই অবস্থিত , মেলার বেশ কিছু এলাকাও এই কবরস্থানের উপর রয়েছে, এমন হিন্দু মিলনমেলায় মুসলিমদের এমন দৃষ্টান্ত বাস্তবেই একটি সম্প্রীতির চিহ্ন তৈরি করেছে, তাই এই কবরস্থানের নাম "সম্প্রীতি"।।বোল্লা মেলার সাতকাহন।।বোল্লা মেলার ইতিহাস ।
আমাদের আয়োজন এবার শেষ, এখন বাড়ি ফিরার পালা, এর মধৌই আমাদের মধ্যে থাকা একজন জানালো, তার মানসিতের পাঁঠার এখনো বলি হয়নি, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে বিদায় জানাতে হল, মোড়ে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম, এই বোল্লা পুজার প্রাচীনত্ব প্রায় ৪০০ বছর। তবে এই পুজার আয়োজন ও নামকরণ দুটো আলাদা আলাদা সময়ে দুটো ভিন্ন ব্যাক্তিদের নাম শোনা যায়,।বোল্লা নামকরন ও পুজা
অনেকের মতে তৎকালিন হিন্দু রাজা বল্লভ মুখোপাধ্যায় এই স্থানে কালি পুজার প্রচলন ও স্থাপন করেন । আর এই রাজার নাম অনুসারেই এই স্থানের নামপরে যাই বোল্লা । পরবর্তী কালে স্থানের নামের উপরেই ভিত্তি করে এই কালি ঠাকুরের নাম হয় বোল্লা কালি। যাইহোক রাজা বল্লভ মুখার্জির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই কালি পুজাটি বড় আকার ধারন করে যখন জমিদার মুরারীমোহন চৌধুরী কোনও একটি মামলায় জড়িয়ে পড়লে তিনি রাজা বল্লভ মুখার্জি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কালি ঠাকুরের কাছে মানত করেন, এবং তার ফল স্বরূপ তিনি সেই মামলায় জিতে যান। তারপর থেকে বোল্লার জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই পুজা প্রতি বছর রাসপুর্নিমার পরের শুক্রবার আড়ম্বরের সাথে আয়োজিত হতে শুরু করে। আর সেই পুজোটিই সময়ের ব্যবধানে আজকের পশ্চিমবঙ্গ প্রসিদ্ধ বোল্লা পুজায় পরিণত হয়েছে।বোল্লা কালি, বোল্লা মন্দির, বোল্লা মেলা, বোল্লা ঠাকুর, বোল্লা মা, বোল্লা,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন