সংরক্ষন ( resurvation ) বিরোধি দানা বাঁধছে চারেদিকে । আর এই সুযোগে ছোট ছোট কদমে সরকার এগিয়ে চলছে সংরক্ষন সরিয়ে দেবার পথে , এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে একের পর এক সুপ্রিম কোর্টে পাশ হচ্ছে তপশিলি জাতি , তপশিলি উপজাতি এবং OBC দের সংরক্ষন বিরোধি আইন । উদাহরণ স্বরুপ - ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সুপ্রিমকোর্টের ব্রাহ্মন বিচারপতি অরুন মিশ্রের আদিবাসী বিরোধি রায় , আর সেই রায়টি হল -" যে সকল আদিবাসীদের জমির পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে সেই সকল আদিবাসির পরিবার গুলিকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে উচ্ছেদ করতে হবে । "
WhatsApp
UNIQUE KNOWLEDGE
কিন্তু এই রায় যে সংবিধান ও আদিবাসী মানব বিরোধী রায় কারন এই রায় না জানি কত জঙ্গলনিবাসী আদিবাসীদের ভিটে মাটি ছাড়া করবে তার হিসাব করা বাস্তবেই মুশকিল ।
এছাড়াও আরো কয়েকটি রায় রয়েছে যেগুলো SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULED CASTE , OTHER BACKWARD CLASSES ( OBC ) দের দেওয়া সংরক্ষন ( resurvation ) ও মানবিক অধিকার নষ্ট করতে চলেছে ।
ডঃ আম্বেদকর এই বিষয়টি আগেই অনুধাবন করেছিলেন তাই তিনি আদিবাসীদের জঙ্গলমহলের অধিকার রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফশিলের ২ এর " A " নং ও "B " নং ধারায় আদিবাসীদের বিশেষ প্রাবধান দিয়েছিলেন , কারন আদিবাসীদের কাছে জঙ্গল মা স্বরুপ । যেই সংবিধানে বলা হয়েছে দেশের সরকার তাদের এই অধিকার রক্ষা করবে , সেখানে সরকার নিজে থেকেই এমন আইন আনছে যাতে আদিবাসীদের সেই অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হতে পারে ।
অন্যদিকে আমাদের দেশ ভীষন দুরবস্তার মধ্যে রয়েছে । একদিকে যেমন বেকারত্বের হার বাড়ছে , তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অসন্তোষের মাত্রা । এমনাবস্থায় সংরক্ষনের বিরোধিতা যে বাড়বেই সেটা আগাম কল্পনা করাই যায় । সঠিক অর্থেই এই জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্ণর রঘুরাম রাজন বলেছিলেন - "সংরক্ষন উঠিয়ে দেওয়া উচিত , কারন এতে কিছু শিক্ষিত যুবক সম্প্রদায় নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে । " কথাটি বাস্তবেই সত্যি মোটেও ফেলে দেবার নয় । কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতে কি সেই সময়টি চলে এসেছে যার জন্য সংরক্ষন ( resurvation ) ব্যবস্থা তুলে দেওয়া দরকার ।
# ভারতে সংরক্ষন কেন প্রয়োজন
ভারতে সংরক্ষন বিরোধি শ্লোগান যত্রতত্র , কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারতে " সংরক্ষন " ( resurvation ) ব্যবস্থা লুপ্ত করতে চাইছে চির তরে । এমন ভয়ংকর পরিস্থিতীতে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলে , ** তাই ভারতে এখনো "সংরক্ষন " প্রয়োজন আছে ,কি প্রয়োজন নেই , সেটি বিশ্লেষন করতে হবে । আর এটি তখনি বিশ্লেষন করা সম্ভব হবে , যখন সংবিধানে উল্লেখ্য " সংরক্ষন" দেওয়ার যে প্রাথমিক ধারনা ও উদ্দেশ্য সেটি পুর্ণ হয়েছি কি না সেটা জানা যাবে ।**
# সংরক্ষন দেবার কারন
ভারতে যে সংরক্ষন প্রদান করা হয়েছে সেটি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে নই বরং বিভিন্ন জাতির সামাজিক , অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে । ১৯৪৬ সালের ৯ ই ডিসেম্বর সংবিধান সভার প্রথম বৈঠক বসে । সেই বৈঠকে একজন বিচক্ষন প্রতিনিধি স্বর্গীয় শ্রী জয়পাল শিং মুন্ডা বলেছিলেন - ** আদিবাসীদের জিবনের প্রত্যেক স্তরের উপর ভেদাভেদ , লুঠ , অত্যাচার ,শোষন চলে আসছে দির্ঘদিন ধরে । তাই সেগুলো থেকে মুক্ত করা স্বতন্ত্র ভারতের প্রথম প্রাথমিকতা হওয়া উচিত ।"**
আশা করি এই কথা থেকে কেউ অসম্মতি করবে না যে ,স্বাধিনতার পুর্বে ভারতে জাতিভেদ প্রথা প্রকট রুপ নিয়েছিল । ব্রাহ্মন্যবাদে জড়িয়ে ছিল ভারতীয় সমাজ ব্যাবস্থা , ভারতের এমন জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা , অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখে বিখ্যাত ইংরেজ লেখক থমাস হার্ডি বলেছিলেন - " পরাধিন ভারতে এমন সংকটময় মহুর্তে ভারতীয়দের উচিত জাতি, ধর্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে শক্তি সঞ্চয় করা । "
আর্যদের ভারতে প্রবেশের পর থেকেই মুষ্টিমেয় কিছু ব্রাহ্মন গোটা ভারতে অস্পৃশ্যতা , জাতিভেদ , অর্থনৈতিক বৈষম্যে ও লাঞ্চনাই ঢেকে দিল গোটা দেশ , যার সরাসরি ভাবে প্রভাব ফেলেছিল তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে , যার উদাহরণ রয়েছে প্রচুর । তাই এই সমস্ত নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরাও অস্পৃশ্যতা , জাতিভেদ , অর্থনৈতিক বৈষম্যে ও লাঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারতে দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারে তার জন্য সংবিধানে "সংরক্ষন " ( resurvation ) ব্যবস্থা চালু করা হয় ।
এবার তাহলে প্রতিবেদনের মূল আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যাক । সংবিধানে সংরক্ষন দেবার মূল উদ্দেশ্য কতটা পূৰ্ণ হয়েছে সেটা বিচার করা যাক , বাস্তবেই কি সংরক্ষন তুলে দেবার সময় চলে এসেছে । চলুন বিষয়টির DNA রিপোর্ট তৈরি করা যাক । তার আগে একটা কথা অবগত থাকা দরকার সেটি হল - ** জাতিভেদ বাড়ানোর জন্যে সংরক্ষন দেওয়া হয়নি ,বরং জাতিভেদ আটকানোর জন্য সংরক্ষন আনা হয়েছে । ** তাহলে দেখা যাক সংরক্ষনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য স্বাধীন ভারতে কতটা পুরোন হয়েছে ।
# অস্পৃশ্যতা
স্বাধীন ভারতে সাম্যবাদ বা আইনের চোখে সবাই সমান এই কথাটি বড় বড় করে বলা হয় । আধুনিক ভারতের কি এই সাম্যবাদের ধারনাটা কতটা বাস্তব একটু দেখে নেওয়া যাক ।
সংবিধানের ১৫, ১৬ ও ১৯ নম্বর ধারা সাম্যবাদকে মজবুত করার লক্ষ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল , যার জন্য একি স্কুলে একি বেঞ্চে ছোটজাতের দলিত সন্তান আর উচ্চ বংশিয় ব্রাহ্মন সন্তান একসাথে বসার সুযোগ পেল । যেটি নিন্দনীয় নই বরং প্রশংসার যোগ্য । যেটি সামাজিক আদানপ্রদান, মেলামেশা আর পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সাম্য আনতে চেয়েছিল, এবং ১৭ নম্বর ধারা অস্পৃশ্যতাকে আইনত অপরাধ বলেও ঘোষণা করেছিল । যেটি ভারতে এখনো চলে আসছে ।
কিন্তু মানষিক ভাবে যে গোঁড়ামি সেটি এখনো রয়ে গেছে । যার কয়েকটি উদাহরণ স্বরুপ - বিগত কয়েক দশকে উঠে আসা কিছু মারাত্মক তথ্য আর ঘটনা । যে সমস্ত তথ্য আর ঘটনাগুলো বলতে শুরু করলে হয়তো প্রতিবেদন সম্পুর্ণ করা যাবে না । ভারতে এখনো এমন বহু মন্দির রয়েছে যেখানে এখনো দলিতদের ঢোকা নিষিদ্ধ । বিগত বছরেই আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ দলিত সম্প্রদায় হবার জন্য ১৪ মে সমস্ত পরিবার সহ পুরির পুস্করে ব্রহ্মা মন্দিরে পুজো দিতে গেলে তাদের মন্দিরে প্রবেশ না করিয়ে শিঁড়িতেই পুজা দিতে বাধ্যে করা হয় , যেই দেশে দেশের প্রথম নাগরিক রাষ্ট্রপতির সাথে এমন ব্যবহার করা হয় ,একবার ভাবুনতো সাধারন আদিবাসী দলিতদের কি অবস্থা হতে পারে । আরো কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি জব্বলপুরের I.A.S বলবন্ত শিং মুচি সম্প্রদায়ের হওয়ার ফলে তার অফিসেরি ব্রাহ্মন কেরানী দস্তাভেজ তার হাতে না দিয়ে বরং নিচে রেখে চলে যেত । এমনি ভাবে বহু প্রতিষ্ঠিত দলিত আদিবাসী যেমন ডঃ কৌশিক পাওয়ার ( দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষীকা ) তাকেও এই অস্পৃশ্যতার শিকার হতে হয়েছে বহুবার । আরো প্রচুর উদাহরণ রয়েছে ।
আপনাদের সুবিধার্তে বর্তমান কালিন কিছু উদাহরণ দিচ্ছি - ১৬ অগস্ট ১৯৯২ সালে লোধাশবর জনজাতির প্রথম স্নাতক চুনি কোটাল দলিত সম্প্রদায়ের হওয়াই তার উপরে চলেছিল জাতভিত্তিক নিপীড়ন । আর সেই নিপীড়ন এতটাই কষ্টদায়ক ছিল যে সেটা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননের পথ বেছে নেই । মজার বিষয় কি জানেন তফসিলি জাতি ও জনজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) (নির্যাতন নিরোধ), ১৯৮৯ আইন অনুযায়ী অপরাধীর এখনো কোন শাস্তি মেলেনি। ১৯৯১ সালের মে মাসে উড়িষ্যার রানপাড়া গ্রামে প্রাচীন কালি মন্দিরে তিন দলিত সম্প্রদায়ের অল্প বয়স্ক মেয়ে পুজা করতে গেলে তাদের ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেই এবং মন্দিরের বাইরে একটি বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেই, যেখানে পরিষ্কার ভাবে লেখা ছিল এই মন্দিরে দলিত আদিবাসীদের প্রবেশ নিষেধ , যে ঘটনা পরবর্তীকালে খবরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে । তপশিলী জাতি ও উপজাতির জাতীয় কমিশনের চেয়ারমেন পুনিয়া দলিতদের নিয়ে সেই মন্দিরে প্রবেশ করতে যান ,কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেরা তার খবর পাওয়ার আগেই মন্দির তালা দেয় যাতে দলিতের প্রবেশে মন্দির না অশুদ্ধ হয় । এমনি ভাবেই তামিলনাড়ু মাদুরাইয়ে এছাড়া আরো বহু জায়গাই এমন প্রথা রয়েছে যেখানে উচ্চ জাতির এলাকাই কোন দলিত আদিবাসি গেলে তাদের পায়ের চপ্পল খুলে নিতে হয় । অন্ধ্রপ্রদেশের মেহবুবনগর ও আরো বহু জায়গাই দলিত আদিবাসীদের উচ্চ জাতির বাড়ীর আশেপাশের জায়গাই যাওয়া নিষিদ্ধ , এতে নাকি বাড়ী অসুদ্ধ হয় । গুজরাটে এমন প্রচুর জায়গা রয়েছে যেখানে কোন দলিত বা আদিবাসিরা দোকানে গেলে তাদের দোকানে ঢুকতে দেওয়া হয় না , এমনকি টেম্পো গাড়ীতেও উঠতে দেওয়া হয়না ।
আমি চাইলেই ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে থেকেই এমন উদাহরণ দিতে পারি । গোটা ভারতেই অস্পৃশ্যতা এখনো রয়েছে । ** অস্পৃশ্যতার আধুনিক অর্থ কি জানেন STETUS MAINTAIN । **
# অর্থনৈতিক
সংবিধানে সংরক্ষন প্রদানের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) , OTHER BACKWARD CLASSES ( OBC ) দের অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি করা । এখন প্রসঙ্গ হল তপশিলী জাতি ও উপজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) কি অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্ট সাবলম্বি হয়েছে । এই বিষয়ে আমি "মন্ডল কমিশন" এর রিপোর্ট থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই । ১৯৯০ সালের সরকারের দ্বারা প্রকাশিত "মন্ডল কমিশন" রিপোর্টের ১ম খন্ডের ৫৬ নং পৃষ্টাই পরিষ্কার ভাবে দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫% উচ্চ বংশিয় ব্রাহ্মন সম্প্রদায় ভারতীয় অর্থনিতীর ৯৪% দখল করে রেখেছে । কিছুদিন আগেই নবেল জয়ি অমর্ত সেন বলেছেন -" ভারতে আদিবাসীদের উন্নয়ন থেকে বিরত করা হয়েছে সব দিক থেকেই ।"
আর এই অর্থনৈতিক বৈষম্য গোটা ভারতেই একি রকম রয়েছে । এখনো বেশির ভাগ আদিবাসী দলিতদের দু বেলা খাবার ঠিক মত জুটেনা । তাই কর্মের জন্য বেশির ভাগ আদিবাসী দলিতদের বিদেশে কাজে যেতে হয় । মালদা রেল স্টেশনের ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে কিভাবে বিদেশ ফেরত আদিবাসী যুবক ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার না তুলে দিতে পারাই আত্মহননের পথ বেছে নিল । বেসরকারি একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরকারি স্কিমগুলোর বেশির ভাগ চালানোই হয় না এবং তার পাশাপাশি সবথেকে বেশি গড়মিল করা হয় আদিবাসী উন্নয়ন খাতে ।
# শোষন
**আদিবাসীরা বনবাসি নয় ,ভারতের মূল নিবাসী আর ভারত মায়ের প্রথম সন্তান ।** আর্য ভারতে প্রবেশের পর থেকেই শোষন আর শাষন চালিয়ে আসছে । যার ইতিহাস কল্পনা করলে অন্ধের চোখ থেকেও জল বেরিয়ে আসবে । যদিও শোষনের বিরুদ্ধে সংবিধানের তৃতীয় খন্ডের মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে শোষনের বিরুদ্ধে অধিকার ( ২৩ ও ২৪ নং ধারা ) দেওয়া হয়েছে কিন্তু দলিত ও আদিবাসিদের জন্য যেগুলো একটি কালির আঁকিবুকি ছাড়া কিছু নই । আর এটি এখনো চলে আসছে সমান ভাবে যার কয়েকটি জলন্ত উদাহরণ দিয়ে যাচ্ছি ।
হাসনাবাদ ও মরিচঝাঁপিতে দলিত ও আদিবাসিদের গণহত্যা , যেটি ঘটেছিল ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে । গোটা দলিত ও আদিবাসী গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হল ,বাধ্যহয়ে সরকার ৪ দিনে ৩০টি লঞ্চে করে অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে রেখে দিল । যার বিচার এখনো হয়নি । শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই আমাদের রাজ্যের নানা জেলায় ২৩ জন আদিবাসী কিশোরী-তরুণীকে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে (ভারতের অন্য রাজ্যের হিসাব করলে সেই সংখ্যা প্রচুর হত ) ।
এমনকি ২০১৭ সালে তফসিলি জাতি ও উপজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, দলিত ও আদিবাসীদের উপর অপরাধের নিরিখে এই রাজ্য দ্বিতীয় । বিষয়টি কতটা মারাত্মক কল্পনা করে দেখুন ।
শুধু কি পশ্চিমবঙ্গেই আদিবাসী দলিতরা শোষিত এমন নই , ২০২০ সালের কিছু ঘটনা উল্লেখ্য করছি । আহমেদাবাদে সঞ্জয় মাকওয়ানাকে শুধুমাত্র এই জন্য পেটানো হল কারন সে দলিত হয়ে শর্টস আর গোঁফ রেখে ছিল বলে । রাজস্থানের জয়পুর চোর সন্দেহ করে দুই দলিত জাতির ভাইদের স্কু-ড্রাইবার দিয়ে খুঁচিয়ে পৃষ্টদেশ রক্তে লাল করে দেই , যার ভিডিও দেখে গোটা ভারত শিয়রে উঠেছিল । রাজস্থানের বানস্কাটা গ্রামে এক দলিত যিনি ভারতীয় সেনাই চাকরি করেন , তিনি তার বিয়েতে ঘোড়ার পিঠে উঠে বানস্কাটা গ্রামে গেলে উচ্চ ব্রাহ্মন জাতির লোকেরা তাকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে দিয়ে মারতে শুরু করে , দোষ কি জানেন ছোট জাতের লোক হয়ে কি করে ঘোড়াই উঠার সাহস পেলো । তামিলনাড়ুর ভিল্লাপুরম জেলায় একজন দলিত তার অজান্তেই উচ্চ ব্রাহ্মনদের জমিতে শৌচকর্ম করতে গেলে শক্তিভেল নামের এক দলিত যুবককে বেধরক পেটানো হল আর সেই ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়াই ছেড়ে দেওয়া হল । আসল কথাটি কি জানেন ভারতে আদিবাসী দলিতদের উপর অত্যাচার আর শোষনের কোন শেষ নেই । তার পরেও কোন কিছু না জেনে সংরক্ষনের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছে অনেকেই ।
# শিক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রেও যে উন্নতি হয়েছে তাও নই । ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকেরা সংখ্যায় ছিলেন ৪৯,২১৭। তার মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ৩,০৩৭ (৬.১৬%) আর তফসিল উপজাতি ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫১ (.৯১%) । মেধার নামে সামাজিক বহিষ্করণ তো হামেশা ঘটে। ।
# শেষ বক্তব্য
ভারতীয় সংবিধানে যে সংরক্ষন দেওয়া হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য জাতিভেদ বাড়ানো নই বরং জাতিভেদ ধংস্ব করা । একদিকে অরন্য আইনের নতুন রায় , সংরক্ষনে E.W.S দের ১০% সংরক্ষন প্রদান , উত্তরপ্রদেশে ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ারদের সংরক্ষন বাতিল , সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংরক্ষন বিরোধি কথা বলা , প্রত্যেকটি জিনিস বিচার করলে কেন্দ্রীয় সরকারের SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULED CASTE , OTHER BACKWARD CLASSES ( O.B.C) তপশিলী জাতি ও উপজাতির বিষয়ে অসৎ ইচ্ছা প্রকাশ পাই ।** আমি যেহেতু একজন আদিবাসীর সন্তান এমন অবস্থায় আমার প্রয়োজন ছিল সকলকে আগাম জানান দেওয়া যে সময় হয়েছে ঘড়ে ঘড়ে নেতৃত্ব তৈরি করার ।**
ব্রাহ্মন্যবাদের প্রচার চলছে চারেদিকে , সংবিধান ভেঙ্গে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে " মনু সংহিতা" কে সংবিধানের দরজা দেওয়ার চেষ্টা চলছে জোরকদমে । RSS এর প্রানপুরুষের একজন এম.এস গোলওয়ালকর বলেছিলেন - "জাতিভেদ আসলে দেশের দুর্বলতা নই বরং শক্তি । জাতিভেদ প্রথাই বন্ধনের সংযোজক । জাতিভেদ প্রথা না থাকলে আমাদের দেশ কবেই বহিঃ শত্রুর কাছে নতি স্বিকার করতো । " সুতরাং বোঝা মুসকিল নই মনুবাদের জাতিভেদ (ব্রাহ্মন , ক্ষত্রিয় ,বৈশ্য ও শুদ্র) প্রতিষ্ঠিত করে তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) সমাজের নিচু স্তরে ফেলে দেবে ।
এখন থেকেই সরকারের তপশিলী জাতি ও উপজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) বিরোধি আইনের মোকাবিলা করতে হবে । আদিবাসীদের প্রথম বৈশিষ্টই হল সরলতা , এই সরলতা যেন প্রতিবন্ধকতা না হয়ে দ্বারাই । কেন্দ্রিয় সরকারের আনা N.P.R হিসাবে আদিবাসীদেরকেও প্রমান করতে হবে তার জাতীয়তা , আর সেটা সম্ভব না হলে ডিটেনসন ক্যাম্প না পাঠিয়ে আপনার নাগরিকতা ,ভোটাধিকার , সংরক্ষনের যাবতীয় সুবিধা কেড়ে নেওয়া হবে । **চিন্তা করলেই অবাক লাগে যে আর্যরা একসময় ভারতে এসে ভারতীয় আদিবাসীদের জঙ্গলবাসী বানালো , সেই আর্যদের কাছেই নিজ ভুমিতে থাকার জন্য তাদের জাতিয়তাবাদের প্রমান করতে হবে । আদিবাসিরা তো প্রথম থেকেই এই দেশের বাসিন্দা তাদের আবার কিসের N.R.C ।**
সংরক্ষন বিরোধি শ্লোগানে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ । এমন অবস্থায় সংঘবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন । যাবতীয় তথ্য প্রমান হিসাবে আমি যা মনে করি " সংরক্ষন" তুলে দেবার প্রয়োজন এখনো আসেনি । তাই আদিবাসী ছেলে হিসাবে আমি বলবো - **সংরক্ষন কারো বাপের দেওয়া ভিক্ষা নই যে ছেড়ে দিব , এটা আমার জন্মগত সংবিধানিক অধিকার , প্রয়োজনে ছিনিয়ে নেব ।**
সংরক্ষন সংবিধানিক অধিকার |
ডঃ আম্বেদকর এই বিষয়টি আগেই অনুধাবন করেছিলেন তাই তিনি আদিবাসীদের জঙ্গলমহলের অধিকার রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফশিলের ২ এর " A " নং ও "B " নং ধারায় আদিবাসীদের বিশেষ প্রাবধান দিয়েছিলেন , কারন আদিবাসীদের কাছে জঙ্গল মা স্বরুপ । যেই সংবিধানে বলা হয়েছে দেশের সরকার তাদের এই অধিকার রক্ষা করবে , সেখানে সরকার নিজে থেকেই এমন আইন আনছে যাতে আদিবাসীদের সেই অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হতে পারে ।
অন্যদিকে আমাদের দেশ ভীষন দুরবস্তার মধ্যে রয়েছে । একদিকে যেমন বেকারত্বের হার বাড়ছে , তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অসন্তোষের মাত্রা । এমনাবস্থায় সংরক্ষনের বিরোধিতা যে বাড়বেই সেটা আগাম কল্পনা করাই যায় । সঠিক অর্থেই এই জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্ণর রঘুরাম রাজন বলেছিলেন - "সংরক্ষন উঠিয়ে দেওয়া উচিত , কারন এতে কিছু শিক্ষিত যুবক সম্প্রদায় নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে । " কথাটি বাস্তবেই সত্যি মোটেও ফেলে দেবার নয় । কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতে কি সেই সময়টি চলে এসেছে যার জন্য সংরক্ষন ( resurvation ) ব্যবস্থা তুলে দেওয়া দরকার ।
# ভারতে সংরক্ষন কেন প্রয়োজন
ভারতে সংরক্ষন বিরোধি শ্লোগান যত্রতত্র , কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারতে " সংরক্ষন " ( resurvation ) ব্যবস্থা লুপ্ত করতে চাইছে চির তরে । এমন ভয়ংকর পরিস্থিতীতে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলে , ** তাই ভারতে এখনো "সংরক্ষন " প্রয়োজন আছে ,কি প্রয়োজন নেই , সেটি বিশ্লেষন করতে হবে । আর এটি তখনি বিশ্লেষন করা সম্ভব হবে , যখন সংবিধানে উল্লেখ্য " সংরক্ষন" দেওয়ার যে প্রাথমিক ধারনা ও উদ্দেশ্য সেটি পুর্ণ হয়েছি কি না সেটা জানা যাবে ।**
# সংরক্ষন দেবার কারন
ভারতে যে সংরক্ষন প্রদান করা হয়েছে সেটি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে নই বরং বিভিন্ন জাতির সামাজিক , অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে । ১৯৪৬ সালের ৯ ই ডিসেম্বর সংবিধান সভার প্রথম বৈঠক বসে । সেই বৈঠকে একজন বিচক্ষন প্রতিনিধি স্বর্গীয় শ্রী জয়পাল শিং মুন্ডা বলেছিলেন - ** আদিবাসীদের জিবনের প্রত্যেক স্তরের উপর ভেদাভেদ , লুঠ , অত্যাচার ,শোষন চলে আসছে দির্ঘদিন ধরে । তাই সেগুলো থেকে মুক্ত করা স্বতন্ত্র ভারতের প্রথম প্রাথমিকতা হওয়া উচিত ।"**
ভারতীয় আদিবাসি |
আর্যদের ভারতে প্রবেশের পর থেকেই মুষ্টিমেয় কিছু ব্রাহ্মন গোটা ভারতে অস্পৃশ্যতা , জাতিভেদ , অর্থনৈতিক বৈষম্যে ও লাঞ্চনাই ঢেকে দিল গোটা দেশ , যার সরাসরি ভাবে প্রভাব ফেলেছিল তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে , যার উদাহরণ রয়েছে প্রচুর । তাই এই সমস্ত নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরাও অস্পৃশ্যতা , জাতিভেদ , অর্থনৈতিক বৈষম্যে ও লাঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারতে দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারে তার জন্য সংবিধানে "সংরক্ষন " ( resurvation ) ব্যবস্থা চালু করা হয় ।
এবার তাহলে প্রতিবেদনের মূল আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যাক । সংবিধানে সংরক্ষন দেবার মূল উদ্দেশ্য কতটা পূৰ্ণ হয়েছে সেটা বিচার করা যাক , বাস্তবেই কি সংরক্ষন তুলে দেবার সময় চলে এসেছে । চলুন বিষয়টির DNA রিপোর্ট তৈরি করা যাক । তার আগে একটা কথা অবগত থাকা দরকার সেটি হল - ** জাতিভেদ বাড়ানোর জন্যে সংরক্ষন দেওয়া হয়নি ,বরং জাতিভেদ আটকানোর জন্য সংরক্ষন আনা হয়েছে । ** তাহলে দেখা যাক সংরক্ষনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য স্বাধীন ভারতে কতটা পুরোন হয়েছে ।
# অস্পৃশ্যতা
স্বাধীন ভারতে সাম্যবাদ বা আইনের চোখে সবাই সমান এই কথাটি বড় বড় করে বলা হয় । আধুনিক ভারতের কি এই সাম্যবাদের ধারনাটা কতটা বাস্তব একটু দেখে নেওয়া যাক ।
সংবিধানের ১৫, ১৬ ও ১৯ নম্বর ধারা সাম্যবাদকে মজবুত করার লক্ষ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল , যার জন্য একি স্কুলে একি বেঞ্চে ছোটজাতের দলিত সন্তান আর উচ্চ বংশিয় ব্রাহ্মন সন্তান একসাথে বসার সুযোগ পেল । যেটি নিন্দনীয় নই বরং প্রশংসার যোগ্য । যেটি সামাজিক আদানপ্রদান, মেলামেশা আর পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সাম্য আনতে চেয়েছিল, এবং ১৭ নম্বর ধারা অস্পৃশ্যতাকে আইনত অপরাধ বলেও ঘোষণা করেছিল । যেটি ভারতে এখনো চলে আসছে ।
সুপ্রিম কোর্টের সংরক্ষন বিরোধী রায় |
আপনাদের সুবিধার্তে বর্তমান কালিন কিছু উদাহরণ দিচ্ছি - ১৬ অগস্ট ১৯৯২ সালে লোধাশবর জনজাতির প্রথম স্নাতক চুনি কোটাল দলিত সম্প্রদায়ের হওয়াই তার উপরে চলেছিল জাতভিত্তিক নিপীড়ন । আর সেই নিপীড়ন এতটাই কষ্টদায়ক ছিল যে সেটা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননের পথ বেছে নেই । মজার বিষয় কি জানেন তফসিলি জাতি ও জনজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) (নির্যাতন নিরোধ), ১৯৮৯ আইন অনুযায়ী অপরাধীর এখনো কোন শাস্তি মেলেনি। ১৯৯১ সালের মে মাসে উড়িষ্যার রানপাড়া গ্রামে প্রাচীন কালি মন্দিরে তিন দলিত সম্প্রদায়ের অল্প বয়স্ক মেয়ে পুজা করতে গেলে তাদের ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেই এবং মন্দিরের বাইরে একটি বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেই, যেখানে পরিষ্কার ভাবে লেখা ছিল এই মন্দিরে দলিত আদিবাসীদের প্রবেশ নিষেধ , যে ঘটনা পরবর্তীকালে খবরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে । তপশিলী জাতি ও উপজাতির জাতীয় কমিশনের চেয়ারমেন পুনিয়া দলিতদের নিয়ে সেই মন্দিরে প্রবেশ করতে যান ,কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেরা তার খবর পাওয়ার আগেই মন্দির তালা দেয় যাতে দলিতের প্রবেশে মন্দির না অশুদ্ধ হয় । এমনি ভাবেই তামিলনাড়ু মাদুরাইয়ে এছাড়া আরো বহু জায়গাই এমন প্রথা রয়েছে যেখানে উচ্চ জাতির এলাকাই কোন দলিত আদিবাসি গেলে তাদের পায়ের চপ্পল খুলে নিতে হয় । অন্ধ্রপ্রদেশের মেহবুবনগর ও আরো বহু জায়গাই দলিত আদিবাসীদের উচ্চ জাতির বাড়ীর আশেপাশের জায়গাই যাওয়া নিষিদ্ধ , এতে নাকি বাড়ী অসুদ্ধ হয় । গুজরাটে এমন প্রচুর জায়গা রয়েছে যেখানে কোন দলিত বা আদিবাসিরা দোকানে গেলে তাদের দোকানে ঢুকতে দেওয়া হয় না , এমনকি টেম্পো গাড়ীতেও উঠতে দেওয়া হয়না ।
আমি চাইলেই ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে থেকেই এমন উদাহরণ দিতে পারি । গোটা ভারতেই অস্পৃশ্যতা এখনো রয়েছে । ** অস্পৃশ্যতার আধুনিক অর্থ কি জানেন STETUS MAINTAIN । **
দলিতদের অর্থনৈতিক অবক্ষয় |
সংবিধানে সংরক্ষন প্রদানের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) , OTHER BACKWARD CLASSES ( OBC ) দের অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি করা । এখন প্রসঙ্গ হল তপশিলী জাতি ও উপজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) কি অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্ট সাবলম্বি হয়েছে । এই বিষয়ে আমি "মন্ডল কমিশন" এর রিপোর্ট থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই । ১৯৯০ সালের সরকারের দ্বারা প্রকাশিত "মন্ডল কমিশন" রিপোর্টের ১ম খন্ডের ৫৬ নং পৃষ্টাই পরিষ্কার ভাবে দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫% উচ্চ বংশিয় ব্রাহ্মন সম্প্রদায় ভারতীয় অর্থনিতীর ৯৪% দখল করে রেখেছে । কিছুদিন আগেই নবেল জয়ি অমর্ত সেন বলেছেন -" ভারতে আদিবাসীদের উন্নয়ন থেকে বিরত করা হয়েছে সব দিক থেকেই ।"
আর এই অর্থনৈতিক বৈষম্য গোটা ভারতেই একি রকম রয়েছে । এখনো বেশির ভাগ আদিবাসী দলিতদের দু বেলা খাবার ঠিক মত জুটেনা । তাই কর্মের জন্য বেশির ভাগ আদিবাসী দলিতদের বিদেশে কাজে যেতে হয় । মালদা রেল স্টেশনের ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে কিভাবে বিদেশ ফেরত আদিবাসী যুবক ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার না তুলে দিতে পারাই আত্মহননের পথ বেছে নিল । বেসরকারি একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরকারি স্কিমগুলোর বেশির ভাগ চালানোই হয় না এবং তার পাশাপাশি সবথেকে বেশি গড়মিল করা হয় আদিবাসী উন্নয়ন খাতে ।
# শোষন
**আদিবাসীরা বনবাসি নয় ,ভারতের মূল নিবাসী আর ভারত মায়ের প্রথম সন্তান ।** আর্য ভারতে প্রবেশের পর থেকেই শোষন আর শাষন চালিয়ে আসছে । যার ইতিহাস কল্পনা করলে অন্ধের চোখ থেকেও জল বেরিয়ে আসবে । যদিও শোষনের বিরুদ্ধে সংবিধানের তৃতীয় খন্ডের মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে শোষনের বিরুদ্ধে অধিকার ( ২৩ ও ২৪ নং ধারা ) দেওয়া হয়েছে কিন্তু দলিত ও আদিবাসিদের জন্য যেগুলো একটি কালির আঁকিবুকি ছাড়া কিছু নই । আর এটি এখনো চলে আসছে সমান ভাবে যার কয়েকটি জলন্ত উদাহরণ দিয়ে যাচ্ছি ।
হাসনাবাদ ও মরিচঝাঁপিতে দলিত ও আদিবাসিদের গণহত্যা , যেটি ঘটেছিল ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে । গোটা দলিত ও আদিবাসী গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হল ,বাধ্যহয়ে সরকার ৪ দিনে ৩০টি লঞ্চে করে অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে রেখে দিল । যার বিচার এখনো হয়নি । শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই আমাদের রাজ্যের নানা জেলায় ২৩ জন আদিবাসী কিশোরী-তরুণীকে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে (ভারতের অন্য রাজ্যের হিসাব করলে সেই সংখ্যা প্রচুর হত ) ।
আদিবাসী দলিত অত্যাচার |
শুধু কি পশ্চিমবঙ্গেই আদিবাসী দলিতরা শোষিত এমন নই , ২০২০ সালের কিছু ঘটনা উল্লেখ্য করছি । আহমেদাবাদে সঞ্জয় মাকওয়ানাকে শুধুমাত্র এই জন্য পেটানো হল কারন সে দলিত হয়ে শর্টস আর গোঁফ রেখে ছিল বলে । রাজস্থানের জয়পুর চোর সন্দেহ করে দুই দলিত জাতির ভাইদের স্কু-ড্রাইবার দিয়ে খুঁচিয়ে পৃষ্টদেশ রক্তে লাল করে দেই , যার ভিডিও দেখে গোটা ভারত শিয়রে উঠেছিল । রাজস্থানের বানস্কাটা গ্রামে এক দলিত যিনি ভারতীয় সেনাই চাকরি করেন , তিনি তার বিয়েতে ঘোড়ার পিঠে উঠে বানস্কাটা গ্রামে গেলে উচ্চ ব্রাহ্মন জাতির লোকেরা তাকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে দিয়ে মারতে শুরু করে , দোষ কি জানেন ছোট জাতের লোক হয়ে কি করে ঘোড়াই উঠার সাহস পেলো । তামিলনাড়ুর ভিল্লাপুরম জেলায় একজন দলিত তার অজান্তেই উচ্চ ব্রাহ্মনদের জমিতে শৌচকর্ম করতে গেলে শক্তিভেল নামের এক দলিত যুবককে বেধরক পেটানো হল আর সেই ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়াই ছেড়ে দেওয়া হল । আসল কথাটি কি জানেন ভারতে আদিবাসী দলিতদের উপর অত্যাচার আর শোষনের কোন শেষ নেই । তার পরেও কোন কিছু না জেনে সংরক্ষনের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছে অনেকেই ।
# শিক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রেও যে উন্নতি হয়েছে তাও নই । ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকেরা সংখ্যায় ছিলেন ৪৯,২১৭। তার মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ৩,০৩৭ (৬.১৬%) আর তফসিল উপজাতি ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫১ (.৯১%) । মেধার নামে সামাজিক বহিষ্করণ তো হামেশা ঘটে। ।
# শেষ বক্তব্য
ভারতীয় সংবিধানে যে সংরক্ষন দেওয়া হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য জাতিভেদ বাড়ানো নই বরং জাতিভেদ ধংস্ব করা । একদিকে অরন্য আইনের নতুন রায় , সংরক্ষনে E.W.S দের ১০% সংরক্ষন প্রদান , উত্তরপ্রদেশে ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ারদের সংরক্ষন বাতিল , সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংরক্ষন বিরোধি কথা বলা , প্রত্যেকটি জিনিস বিচার করলে কেন্দ্রীয় সরকারের SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULED CASTE , OTHER BACKWARD CLASSES ( O.B.C) তপশিলী জাতি ও উপজাতির বিষয়ে অসৎ ইচ্ছা প্রকাশ পাই ।** আমি যেহেতু একজন আদিবাসীর সন্তান এমন অবস্থায় আমার প্রয়োজন ছিল সকলকে আগাম জানান দেওয়া যে সময় হয়েছে ঘড়ে ঘড়ে নেতৃত্ব তৈরি করার ।**
ভারতের জাতিভেদ প্রথা |
এখন থেকেই সরকারের তপশিলী জাতি ও উপজাতি SCHEDULE CASTE ( S.C ) ,SCEDULE TRIBE ( S.T ) বিরোধি আইনের মোকাবিলা করতে হবে । আদিবাসীদের প্রথম বৈশিষ্টই হল সরলতা , এই সরলতা যেন প্রতিবন্ধকতা না হয়ে দ্বারাই । কেন্দ্রিয় সরকারের আনা N.P.R হিসাবে আদিবাসীদেরকেও প্রমান করতে হবে তার জাতীয়তা , আর সেটা সম্ভব না হলে ডিটেনসন ক্যাম্প না পাঠিয়ে আপনার নাগরিকতা ,ভোটাধিকার , সংরক্ষনের যাবতীয় সুবিধা কেড়ে নেওয়া হবে । **চিন্তা করলেই অবাক লাগে যে আর্যরা একসময় ভারতে এসে ভারতীয় আদিবাসীদের জঙ্গলবাসী বানালো , সেই আর্যদের কাছেই নিজ ভুমিতে থাকার জন্য তাদের জাতিয়তাবাদের প্রমান করতে হবে । আদিবাসিরা তো প্রথম থেকেই এই দেশের বাসিন্দা তাদের আবার কিসের N.R.C ।**
সংরক্ষন বিরোধি শ্লোগানে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ । এমন অবস্থায় সংঘবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন । যাবতীয় তথ্য প্রমান হিসাবে আমি যা মনে করি " সংরক্ষন" তুলে দেবার প্রয়োজন এখনো আসেনি । তাই আদিবাসী ছেলে হিসাবে আমি বলবো - **সংরক্ষন কারো বাপের দেওয়া ভিক্ষা নই যে ছেড়ে দিব , এটা আমার জন্মগত সংবিধানিক অধিকার , প্রয়োজনে ছিনিয়ে নেব ।**
**সুমন্ত মাহালী হেমরম**
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন