"শশুর বাড়ি জিন্দাবাদ " বিশেষ করে জামাই আদরের বেলাই, উপলক্ষ্য তো আছেই "জামাই-ষষ্ঠি"। জামাই আদরের বেলাই কোনো প্রকার কৃপণতার জায়গা পাই না , তাই জামাইয়ের পাতে ইলিশ তো অবশ্যই থাকবে, তা সে পূৰ্ব বঙ্গের পদ্মারি হোক , কিংবা হুগলীর হোক । কিন্তু বাধ সাঁধলো কোথাই! জানেন , আপনি ইলিশ মনে করে যে মাছটি জামাই আদরে ক্রয় করলেন, ওটা বাস্তবেই কি ইলিশ নাকি অন্য কিছু? ইলিশ ভেবে চন্দনা, সার্ডিন মাছ কিনে আনেননি তো?
ইলিশ মাছ |
কথাটা আমার নই, মৎস্য আধিকারিকরাই এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল করছে।খাঁটি ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র পদ্মাই এখন মাছের আকাল চোখে পড়ছে ,তাই দেদার ভাবে চোরা কারবারিরা খোঁকা ইলিশের কারবারে মেতে উঠলেও কড়া হাতে প্রশাষন সেটা একপ্রকার কাবু করেই রেখেছে। সুতরাং একধারে ইলিশের প্রকান্ড চাহিদা ওপর দিক দিয়ে ইলিশ মাছের জোগানে ঘাটতি, দুয়ে মিলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং ইলিশ মাছেরি মত প্রায় হুবহু দেখতে সার্ডিন , চন্দনা , চৌক্কা বা চাপিলা মাছ ইলিশের নাম করে বাজার জাত করছে।
সার্ডিন মাছ
বঙ্গ দেশে এই মাছ বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন চন্দনা, যাত্রিক,পানসা, খায়রা,চাপিলা ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রধাণত এই মাছের প্রজাতি সার্ডেনিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী মাছ। তাই বোধহয় এই মাছের সাথে সার্ডিন নামটি যুক্ত হয়েছে।
সার্ডিন মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম টেনিয়ালোসা টোনি, এবং এরা টেনিয়ালসা শ্রেনীর মাছের অন্তর্গত। হালকা লবনাক্ত জলের মাছ হওয়ার দরুন সমুদ্র উপকূলের তিরবর্তী স্থানগুলোতে এই মাছের দেখা মেলে। এই মাছে যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিনস A ,B6,B12, হালকা পরিমানে ভিটামিন D , ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, প্রচুর পরিমানে আয়োডিন,পটাসিয়াম আয়রন রয়েছে। এই সার্ডিন মাছ আকারে 8cm -21cm প্রযন্ত লম্বা হতে পারে।
বাজার-জাত চৌকা মাছ |
এছাড়া আরেকটি মাছ রয়েছে যেটিও ইলিশ নামে বিক্রি হয় বাজারে নাম চৌকা , যার বিজ্ঞানসম্মত নাম পৌলানো ডিটচালা, এটিও মূলত সামুদ্রিক মাছ।
ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হিলসা ইলসা এবং টেনিওয়ালোসা ইলিশা। এই মাছ বাংলাদেশের পদ্মা নদি ভারতের হুগলি নদির মোহনাই নামার আগের নদি ভাগে পাওয়া যাই, তবে করোনা আবহে চলা লকডাউনের ফলে ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা এলাকাই পাওয়া যাবে বলে অনেকেই আশাবাদি।
তবে বাংলাদেশের পদ্মা নদির ইলিশ স্বাদে আর গন্ধে অতুলনিয়। যাই হোক এই মাছ মূলত সামুদ্রিক মাছ কিন্তু প্রজনন গত কারনে এদের নদির মিষ্টি জলে আসতে হয়।
সার্ডিন মাছ কোথাই থেকে আসে
পশ্চিমবঙ্গে সমুদ্রের মাছ বিশেষ করে আসে দীঘা থেকে , কিন্তু সার্ডিন মাছের খুব একটা প্রচূৰ্য নেই দীঘাই, এমন কি বাংলাদেশের সমুদ্র তিরবর্তী স্থানেও এই সার্ডিন মাছ তেমন লক্ষ্য করা যাই না।
সার্ডিন মাছ সমুদ্র পথে আসে শ্রীলংকা কিংবা পারাদ্বীপ লাগোয়া এলাকা গুলো থেকে , এবং অানুমানিক কম দামেই এবং ইলিশের থেকে খুবই সস্তাই এই মাছ বাজার জাত করা হয়। যা পরবর্তী কালে পদ্মার ইলিশ হিসাবে দু বাংলাই রম-রমিয়ে বিক্রী হচ্ছে।
সার্ডিন মাছ কি খাবার পক্ষে ক্ষতিকর?
আপনি ইলিশ মনে করে সার্ডিন মাছ খাচ্ছেন, খান ,খান বেশি করেই খান ক্ষতি নেই। কিন্তু অসুবিধাটা হলো দুই জাইগায় ~
১ বেশি দাম দিয়ে ইলিশ মাছ কিনে আনলেন ,কিন্তু আয়েস করে খেতে পারলেন না। বোকা সেজে গেলেন, কারো বোকামির সুযোগ নেওয়া কখনই ভালো জিনিস না।
২ যে সমস্ত সার্ডিন মাছ আমদানি করা হয়, তার বেশ বড় অংশ ফরমালিন যুক্ত হয়ে থাকে, আর যে ফরমালিন আপনার শরিরের পক্ষে মোটেও ভালো জিনিস নই।
তবে সার্ডিন মাছে অনেক পুষ্টিকর পদার্থ রয়েছে, যেমন ভিটামিনস , ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, প্রচুর পরিমানে আয়োডিন,পটাসিয়াম আয়রন এছাড়া হার্ট সুস্থ রাখার উপাদান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অম্ল যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে।
বাজার-জাত সার্ডিন মাছ |
ইলিশ ও সার্ডিন মাছের পার্থক্যে
আপনি যতই ইলিশ প্রীয় ভোজন রসিক হোন না কেনো স্বাদে হয়তো পার্থক্যেটা বলতে পারবেন কিন্তু দেখে হয়তো পার্থক্য নাও করতে পারেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল তাহলে এ থেকে বাঁচার উপায় কি?
এর উপায় রয়েছে এই ইলিশ আর সার্ডিন এক রকম দেখতে হলেও কিছু কিছু পার্থক্য খালি চোখেও দেখা যায়।
যেমন~
১ ইলিশের তুলনাই সার্ডিন মাছ আকারে একটু ছোট হয় , এমনকি ইলিশের মাথা মাছ হিসাবে যতটা বড় হওয়া উচিত, সে হিসাবে সার্ডিন মাছের মাথা অনেক সরু।
২ ইলিশের মুখের দিকটা যতটা সরু হয়ে এগিয়েছে সেই তুলনাই সার্ডিন মাছের মুখটা চ্যাপ্টা।
৩ সার্ডিন মাছের চোখ ইলিশের তুলনায় বড় মাপের হয়।
৪ ইলিশ মাছের পাখনাগুলো মসৃণ ও চকচকে কিন্তু সার্ডিন মাছের যে পাখনাগুলো রয়েছে তার উপরের দিকে বা কিনারার দিকে ঘোলাটে ভাব রয়েছে।
৫ ইলিশ মাছের রং আর সার্ডিন মাছের রং একি হলেও দুই মাছের মধ্যে পিঠের দিকে হাল্কা রং এর আভা দেখা যাই , যেটি ইলিশের ক্ষেত্রে নিলাভ আর সার্ডিনের ক্ষেত্রে হলুদ আভা ময়।
Ilish-চৌকা-সার্ডিন-মাছ
Ilish,সার্ডিন,চৌকা,মাছ
রুপচাঁদা মাছ খাওয়া থেকে সাবধান!কেন? জানতে ক্লিক করুন।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন