দিন ডিহারি
মাহলে সমাজের লোকেরা খুব সুন্দর ,সুন্দর বাঁশের জিনিস তৈরী করে থাকে। যেমন- ডালা,কুলো,ঝুড়ি, খাঁচি। এগুলো প্রত্যেক মাহলেরাই তৈরী করে থাকেন। বেশির ভাগি পুরুষরা বাঁশ কিনতে যান। মাঝেমধ্যে মহিলা রাও যায়, যারা বাঁশ গাছ চাষ করেন তাদের কাছে। এই বাঁশ কিন্তু গ্ৰামগঞ্জে বেশি পাওয়া যায়। মাহলে সমাজে পুরুষরা ভোরে চা খেয়ে বাঁশ কিনতে চলে যান আর সারা দিন না খাওয়া দাওয়া করেই বাঁশ কিনে নিয়ে আসে তখন বেলা গড়িয়ে যায়। আবার তাও কাঁধে করে আনা। রাস্তায় কিছু কিনে খাবার মত টাকা তো থাকে না যা টাকা নিয়ে যায় সেটা বাঁশ কিনতেই চলে যায়। খুব কষ্ট করে সারাদিন ঘুরে-ঘুরে বাঁশ নিয়ে আসে বাড়িতে। ওই বাঁশ রেখে দিয়ে স্নান সেরে, যাই হোক ডাল,আলু ভাত খয়ে আবার বাঁশ কাজ করতে লেগে যায়। যাতে সকালে ডিহারি যেতে পারে।
ভোরের আলোর সাথে ডিহারি |
ডিহারি
ডিহারি মাহালী আদিবাসী উপজাতির কাছে পরিচিত একটি শব্দ। 'ডিহৌত' থেকে ডিহারির শব্দ টি এসেছে। 'ডিহৌত' মানে অজ পাড়া গাঁ। সেই পাড়া গাঁ এর রাস্তাগুলোতেই ভাজন ( মাহালি শব্দ ,যার অর্থ মাহালীদের দ্বারা তৈরি বাঁশের সামগ্রী) নিয়ে বিক্রির জন্য হাঁক দিতে থাকে মাহালী সমাজের পুরুষেরা, উদ্দেশ্য একটাই বাঁশের সামগ্রী বিক্রি করে সংসারের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো। সোজাকথাই বলতে হলে ডিহারি মাহালীদের জীবনযাত্রা পরিচালনায় অন্যতম চাহিদা এবং পন্থা। 'ডিহারি' যার মানে গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে ঘুরে বাঁশের তৈরি জিনিস পত্র বিক্রয় করা। সাধারণত এই ক্ষেত্রে ডিহারীর দায়িত্ব বাড়ীর পুরুষ গৃহকর্ত্তাই পালন করে থাকে, আবার কখনো কখনো গৃহকর্ত্তার অনুপস্থিতিতে এই ডিহারির কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসেন বাড়ির মহিলা এবং সন্তানেরাও।
মাহালী সমাজে ডাহেরির অবস্থান
বাড়িতে স্বামী, স্ত্রী, এমন কি সন্তান রাও বাঁশের সামগ্রী তৈরির কাজে অংশগ্রহণ করে। সন্তান রা পড়াশোনা করার ফাঁকে-ফাঁকে মাহালীদের চিরাচরিত এই বাঁশের শিল্প কর্ম তৈরির কাজ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সবাই মিলে কাজ চালিয়ে যাই , বিষন্নতার কোনো জায়গা নেই সেখানে, কারন আজকে যদিও বা কোন রকম ডাল, ভাত জুটেছে, কিন্তু আগামি কালের খাবার তো বাড়িতে মজুত করা থাকে না,তাই মাহালীদের কাছে সন্ধ্যা এমনকি রাত হলেও কাজের সমস্ত কিছু সমাপ্ত করে রাখাই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে পরে। আর সকাল হতেনা হতেই স্বামী-স্ত্রী মিলে বেড়িয়ে পড়ে ডিহারি তে।
মাহালী উপজাতির বাঁশের কাজ |
মাথায় সেই কুলো,ঝুড়ি,খাঁচির বোঝা নিয়ে।আর মাঝে, মাঝে সুন্দর করে হাঁক দেয় ওদাদা,ওদিদি দেখুন সুন্দর ,সুন্দর জিনিস নিয়ে এসেছি গো একে বারে নিজের হাতে তৈরী মজবুত জিনিস একবার নিলে দেখবেন এই জিনিস কি জিনিস সহজে ভাঙবে না। এই ভাবে বলতে বলতে এক গ্ৰাম থেকে আর এক গ্ৰাম যায়। সব মাল সারাদিন মাথায় নিয়ে রোদের মাঝে ঘুরে-ঘুরে যা বিক্রি করতে পারে ওই পয়সা দিয়ে চাল, আলু ,ডাল কিনে রান্না করে নিজেদের ক্ষুদা মেটাই। এই ডিহারি টা খুব কষ্ট রোদ,জল, কাদায় মাথায় সব মাল নিয়ে হেটে যাওয়া সত্য খুবই কষ্টের। কিন্তু না গেলেও তো নয় সংসার চলবে কি ভাবে। মাহলে সমাজের বেশির ভাগই এখনো দরিদ্র সিমার নিচে। সামান্য চাষের মত জমিও নেই যে বছরের খাবার টা বরাদ্দ করে রাখতে পারে। এই শ্রেণীর লোকেরা বেশিরভাগই হস্ত শিল্প কাজ করে আর এই দিন ডিহারি করে সংসার চালাই।
দুলোন মাহালী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন