History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম নির্বান || gautam buddha and buddhism nirvana ||

 

গৌতম বুদ্ধ বিশ্বে অন্যতম প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক, যে ধর্ম আজ চিন, মালেশিয়া,জাপান, থাইল্যান্ড এছাড়া আরো বহু দেশের মানুষেরা বহুল সংখ্যক হারে অনুসরণ করে চলেছেন। বৌদ্ধ ধর্মের এই মহান প্রবর্তক ভগবান গৌতম বুদ্ধ আদতে ভারতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ৫৬৬ খ্রীষ্ট পূৰ্বাব্দে (অনেকের মতে ৫৬৩)। যাই হোক গৌতম বুদ্ধ যখন জন্মগ্রহন করেন তখন ভারত মনুবাদী সমাজ ব্যবস্থায় জর্জরিত ছিল। অনেকে আবার ভগবান মহাবীরের সাথে গৌতম বুদ্ধকে গুলিয়ে দেন। অবশ্য এমন হওয়াটা অনেকটাই স্বাভাবিক, কারন এই দুই মহান মহা পুরুষ একই সময় কালে এবং প্রায় একই রকম মতবাদ প্রচার করেন। তাই এই দুই মহাপুরুষের মাঝের অন্তরাই সঠিক ভাবে গোচরে আনা প্রয়োজন।

গৌতম-বুদ্ধ-বৌদ্ধ-ধর্ম-ত্রিপিটক
গৌতম বুদ্ধের তপস্যা


গৌতম বুদ্ধের পূৰ্ব জীবন
গৌতম বুদ্ধের জন্মের সময়কাল হিসাবে অনেকেই ভিন্ন মত পোষন করেছেন। গৌতম বুদ্ধের জন্ম বিষয়ক তথ্য সমূহ মহাবংশ, দ্বীপবংশ, সুত্ত্বনিপাত, ললিত বিস্তার, এছাড়াও অশ্বঘোষ রচিত "বুদ্ধচরিত" গ্রন্থ থেকে পাওয়া যাই। গৌতম বুদ্ধ বর্তমান নেপালের তৎকালিন কপিলাবস্তুর লুম্বিনী নামের একটি স্থানে জন্মগ্রহন করেন। গৌতম বুদ্ধের পিতা ছিলেন লুম্বিনির রাজা, যার নাম ছিল শুদ্বোধন এবং তার মা ছিলেন দেবদাহ রাজ্যের রাজকন্যা মায়া।
জন্ম হবার পর প্রথম দিকে গৌতম বুদ্ধের নাম ছিল সিদ্ধার্থ, কিন্তু কথিত আছে যে অসিত নামের একজন সন্যাসি নবজাত শিশুকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এই শিশু পরবর্তীকালে একজন রাজচক্রবর্তী অথবা একজন সিদ্ধ সাধক হবেন, এছাড়াও এক ব্রাহ্মণ যার নাম ছিল কৌণ্ডিন্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, এই শিশু পরবর্তীকালে বুদ্ধত্ব লাভ করবেন। কিন্তু হঠাৎ তার মা মায়াদেবি মারা গেলে শিশু সিদ্ধার্থের মানুষ করার দায়িত্ব চলে আসে সিদ্ধার্থের সৎ মা প্রজাপতি গৌতমীর উপর, যার মাতৃছায়াই সিদ্ধার্থ বড় হন, যেহেতু তাকে লালন পালন তার বিমাতা গৌতমী করেছিল, তাই সিদ্ধার্থের পরবর্তিকালে নাম পরে যাই গৌতম।
বৌদ্ধত্ব লাভ
গৌতম বৌদ্ধ সন্যাস জীবন গ্রহন করার আগে আলার কলাম নামে একজনের কাছে দিক্ষা নেন। কিন্তু তার বহু আগে বাল্যকাল থেকেই সিদ্ধার্থের মধ্যে সংসারের প্রতি মায়া একপ্রকার ম্লান হয়ে পরে। এমনাবস্থাই সিদ্ধার্থের পিতা শুদ্বোধন গৌতমের সংসারের প্রতি এই অনিহা দেখে গৌতমকে বাল্যকালেই শাক্য রাজ্যের রাজকুমারি গোপা বা যশোধরার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।
গৌতম বুদ্ধের রাজকুমারি গোপার সাথে বিয়ে হলে তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়, যার নাম তারা রাখেন রাহুল, কিন্তু তবুও গৌতম বুদ্ধের মন পার্থিব এই সংসারের মোহ-মায়াই আকৃষ্ট করতে পারে নি, গৌতম বুদ্ধ বরাবরই মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া সুখ ও দুঃখের নিবৃত্তির জন্য মধ্য পন্থা খুঁজতেন। একদিন রাত্রে মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য গৌতম বুদ্ধ ঘর থেকে পালিয়ে যান। যেটি বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বনকারিদের কাছে ও ইতিহাসের পাতায় "মহাভিনিষ্ক্রমণ" নামে পরিচিত।
সংসারের মোহ-মায়া ত্যাগ করার পর গৌতমবুদ্ধ বুদ্ধগয়ার কাছে ফল্গু নদির পাশে থাকা অশ্বথ গাছের নিচে তপস্যায় লিন হন, এবং দীর্ঘদিন তপস্যাই লিন থাকার পরেও তিনি প্রথম তপস্যার পর্যায়ে সফল হতে পারেন নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি সুজাতা নামের একজন মহিলার পায়েস খাবার পর এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে যতক্ষন না তিনি বোধি বা পূৰ্নজ্ঞান অর্জন করছেন না ততক্ষন তিনি তপস্যা থেকে উঠবেন না। সিদ্ধার্থের দ্বিতীয় প্রচেষ্টাই তিনি সফল হলেন এবং বোধি বা দিব্যজ্ঞান লাভ করলেন, যে থেকে তার নামের সাথে "বুদ্ধ" বা পরমজ্ঞানী, এবং "তথাগত" নামে পরিচিত হলেন।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার
বোধি লাভের পর সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হলেন, এবং যে গাছের নিচে তিনি এই বোধি লাভ করেছিলেন সেই উদ্ভিদ বোধিবৃক্ষ নামে পরিচিত। গৌতম বুদ্ধ অসিম জ্ঞান অর্জনের পর তার মতবাদ প্রচার করতে তিনি বারানসির ঋষিপত্তন নামের স্থানে যান (বর্তমান নাম সারনাথ)। সেখানে গিয়ে মৃগশিখা বনে তার প্রথম ধর্মপ্রচার করেন এবং সেই বনেই তার কাছ থেকে প্রথম দিক্ষা নেন বপ্য, ভদ্রিয়, অশ্বজিত প্রমূখেরা। যেই ঘটনাটিকে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিরা "ধর্মচক্রপ্রবর্তন" হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন।
ধর্মচক্রপ্রবর্তন


ভগবান গৌতম বুদ্ধ দুঃখ থেকে নিবৃত্তি পাওয়ার জন্য চারটি আর্যসত্য এর কথা বলেছেন, যেগুলো হল- দুঃখের অস্তিত্ব আছে, দুঃখের কারন আছে, দুঃখের নিবৃত্তি করা সম্ভব এবং নিবৃত্তি করার উপাই রয়েছে, আর এই নিবৃত্তি পাওয়ার অন্তরাই কে নির্বান বলা হয়।
এছাড়াও গৌতম বুদ্ধ নির্বান লাভের জন্য আটটি প্রধান পন্থার কথা বলেন, যেগুলো অষ্টাঙ্গিক মার্গ নামে পরিচিত। গৌতম বুদেধের দ্বারা প্রচারিত ধর্মমতে সেই সময়ে রাজা মহারাজারাও আকৃষ্ট হয়ে গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। যারা হলেন সম্রাট অশোক, কনিষ্ক, বিম্বিসার,প্রসেনজিৎ ইত্যাদি।
গৌতম বুদ্ধের মৃত্য ও পরবর্তি ধর্ম প্রচার
গৌতম বুদ্ধ মাত্র ৮০ বছর বয়সে তৎকালিন মল্ল রাজ্যের রাজধানি কুশিনগরে প্রান ত্যাগ করেন, যেই ঘটনাটিকে বুদ্ধিষ্টরা "মহাপরিনির্বান" নামে ডেকে থাকেন। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যর পর তার প্রচারিত ধর্মমত খুব দ্রত হারে গোটা ভারতে ছড়াতে থাকে, এবং পরবর্তি কালে হীনযান ও মহাযান নামে দুটি শ্রেনির উদ্ভব হয়। ভগবান গৌতম বুদ্ধের মৃত্যর পর তার প্রচারিত ধর্মমতকে আরো কার্যকরি করার উদ্দেশ্যে সেই সময়ে কিছু রাজার গৃষ্ঠপোষকতাই চারটি বৌদ্ধ সংগতিও হয়েছিল, যার মধ্যে প্রথম অজাতশত্রুর পৃষ্ঠোপোষকতাই ও মহাকশ্যপের সভাপতিত্বে রাজগৃহের সপ্তপর্ণী গুহায় সংগঠিত হয়েছিল, যেই সংগতিতে পালি ভাষায় ত্রিপিটক রচনা করা হয়,যা  আজ বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সম্মেলন হয় রাজা কালাশোকের আমলে বৈশালিতে, তৃতীয় হয় অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় পাটলিপুত্রে এবং সর্বশেষ কনিষ্কের আমলে কাশ্মিরের কুন্দনে। সেই সময়ের রাজাদের দ্বারা গ্রহন করা ধর্ম আজ গোটা বিশ্বে মানবতাবাদি মতবাদ প্রচার করেই চলেছে।

আরো পড়ুন:- ভগবান মহাবীর জয়ন্তি ও জৈন ধর্ম।


WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন