বর্তমানে গোটা বিশ্বে সর্বাধিক পালিত ধর্মের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রধান, যার প্রবর্তক ছিলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মোও কোনেো অলৌকিক থেকে কম নই। প্রভু যীশুর জন্মকে মান্যতা দিয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়ে আসছে আজো। প্রভু যীশু যে জন্মগ্রহন করবেন, তার ভবিষ্যত বাণি তার আগেই অনেক ভাব-বাদী করে গিয়েছেন, যেগুলো বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও প্রভু যীশুর জন্মের ভবিষ্যৎবানি দেখতে পাওয়া যাই। যাই হোক প্রভু যীশুর জন্মের দিনটিকে গোটা বিশ্ব "বড়দিন" হিসাবে পালন করে থাকে। কথিত আছে যে তার জন্মের মহূৰ্তে আকাশে একটি বড় আকারের তারা উদিত হয়েছিল, যা কোনো অলৌকিক বা চমৎকারের থেকে কম নই, কিন্তু সেই চমৎকার গুলো তার জন্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল তেমনটিও নই। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার জীবনে বহু অলৌকিক কাজ বা চমৎকার করে গেছিলেন।
প্রভু যীশুর অলৌকিক কাজ |
অগভির সমুদ্রে মাছ
ঈশ্বরের বানি প্রচারের জন্যে শীঘ্রই প্রভু যীশুর জীবনে শিষ্যর প্রয়োজন পরে। গালিল প্রদেশে ভ্রমনরত যীশু খ্রীষ্ট শিষ্য নির্বাচন করতে শুরু করেন। সেই সময় দুই ভাই শিমোন ও আন্দ্রিয় সমুদ্রে মাছ ধরছিল, তারা সারাদিন চেষ্টা করেও কোনো মাছ ধরতে পারে নি। যীশু তাদের গভির জলে গিয়ে জাল ফেলতে বললেন, প্রভু যীশুর কথা শুনে তারা তাই করলেন এবং গভির জলে গিয়ে জাল ফেললেন, যীশুর কথা মত এবার তাদের জালে প্রচন্ড পরিমানে মাছ ধরা পরলো।
যীশু সেই দুই ভাইকে তার শিষ্য হবার আহ্বান জানালে তারা যীশুর শিষ্যত্ব গ্রহন করে।
জলকে দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন
বাইবেলে উল্লেখিত প্রভু যীশুর দ্বারা প্রথম অলৌকিক কাজ যেটি ছিল সেটি হল জলকে দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন করা। দ্রাক্ষারস আঙ্গুর থেকে নির্যাস করা রস, যেটি আমোদ-প্রমোদের সময় নেশা জাতীয় পানিয় হিসাবে ব্যবহার করে।
একদিন একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিথীদের সেবাই রাখা দ্রাক্ষারস শেষ হয়ে পরে। অতিথীদের দ্রাক্ষরসের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রভু যীশুর মা, মারিয়াম প্রভু যীশুকে দ্রাক্ষরস শেষ হয়ে যাবার বিষয়ে জানাই এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে দ্রাক্ষরসের ব্যবস্থা করতে বলেন। প্রভু যীশু মায়ের কথা রাখলেন এবং প্রভু যীশুর দ্বারা ঘটিত তার জীবনের প্রথম অলৌকিক কাজ করলেন।
আরো পড়ুন: প্রভু যীশুকে "মেষ শাবক" বলা হয় কেনো।
প্রভু যীশু শেষ হয়ে যাওয়া দ্রাক্ষারসের পিপেঁ গুলিকে জল দ্বারা পরিপূৰ্ন করতে বললেন, এবং সেই জল আমন্ত্রিত অতিথিদের দ্রাক্ষারস হিসাবে পরিবেশন করতে বললেন। যীশুর মায়ের আদেশে সকলে তাই করলেন, কিন্তু চমৎকারি ভাবে পিপেঁতে ভরা জল নিজে থেকেই দ্রাক্ষারসে পরিবর্তন হয়ে গেলো। যা পরবর্তিতে অতিথিদের পরিবেশন করা হয়, যা পান করে অতিথিরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল।
ভূতে ধরা লোক উদ্ধার
একবার প্রভু যীশু কফরনাহুম শহরে তার মতবাদ প্রচার করতে গেলেন, সেখানকার লোকেরা যীশুর মুখে ঈশ্বরের বানি শুনে তার প্রতি আকর্ষিত হতে শুরু করে। প্রভু যীশু তার বানি প্রচার করছিলেন ,এমন সময় একজন ভূতে ধরা লোক তার সামনে এসে চিৎকার করতে শুরু করে - " হে নাসরতের যীশু, আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে? আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।"
যীশু লোকটির মধ্যে থাকা ভূতগুলিকে ধমক দিলেন এবং সেই লোকটির শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সেই মহূৰ্তেই একটি বিকট শব্দ করে সকল লোকের সামনে দিয়ে ভূতগুলি সেই লোকটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে গেল।
বিভিন্ন রোগিদের অলৌকিক ভাবে সুস্থতা প্রদান
প্রভু যীশু যেখানেই যাতেন সেখানেই তার পিছনে অনেক লোকে জমা হতেন তাদের অসুস্থ পরিজনদের নিয়ে। প্রভু যীশু তাদেরকে ঐশ্বরিক আশির্বাদে সুস্থ করে দিতেন যার মধ্যে রয়েছে, কুষ্ঠ রোগি, অন্ধ ব্যাক্তি, খোঁড়া ,অন্ধ লোকেরা। একবার প্রভু যীশু প্যালেস্টাইনে কফরনাহুম নামের এক ধর্মপ্রান ব্যাক্তির বাড়ীতে ছিলেন, ঠিক সেই সময় পক্ষাঘাত যুক্ত রোগিকে তার সামনে আনার জন্য বাড়ীর চাল সরিয়ে সেখান থেকে খাটুলি দিয়ে ঝুলিয়ে প্রভু যীশুর সামনে আনা হল। সেই পক্ষাঘাত রোগি এতটাই অসহায় ছিল যে, তার দ্বারা উঠে দ্বারানোর ক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলে ছিলেন। যীশু সেই পক্ষাঘাত রোগিকেও সুস্থ করলেন। এমনি বহু রোগিদের তিনি সুস্থ করেছেন, যেগুলি বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রভু যীশু অন্ধকে দৃষ্টি দিলেন। |
যীশুর ঝড় থামানো
একদিন প্রভু যীশু তার শিষ্যদের নিয়ে নৌকা করে সমুদ্রে ক্ষানিকক্ষন যাত্রা করবেন ভাবলেন। তিনি তার শিষ্যদের নিয়ে সমুদ্রে পারি দিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সমুদ্রে প্রবল বেগে ঝড় বইতে শুরু করে দিল, যা দেখে প্রভু যীশুর শিষ্যরা প্রবল ভয় পেয়ে গেছিলেন। তাদের অনেকেই মনে করেছিলেন এটা বোধ হয় তাদের শেষ যাত্রা, আর সেই মহূৰ্তে যীশু গভির ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন।
শিষ্যরা বাঁচার কোনো উপায় না দেখে প্রভু যীশুকে ঘুম থেকে উঠালেন আর বললেন-" প্রভু, আপনি দেখছেন না কেন? আমরা যে মরতে বসেছি।" প্রভু যীশু তাদের খানিকটা তিরষ্কার করে, বললেন -"তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস নেই কেনো?" তারপর যীশু উঠে দাড়াঁলেন এবং হাত বাড়িয়ে ধমকের সুরে ঝড়ের উদ্দেশ্যে বললেন "শান্ত হও, স্থির হও", প্রভু যীশুর এই কথা বলার পরেই সমুদ্রের ঝড় ও জলের ঢেউ শান্ত হয়ে গেল।
মৃত বালিকার জীবন দান
প্রভু যীশু গালিল প্রদেশে থাকা কালিন একজন পিতা যীশুর সামনে এসে তাকে তার সাথে, তার বাড়ীতে যাওয়ার অনুরোধ করলেন, কেননা তার ছোট কন্যা ছিল অসুস্থ। যীশু সেই লোকটির কথা মত সেই ব্যাক্তির সাথে তার বাড়ীর দিকে চলতে শুরু করলেন, কিন্তু মাঝপথে খবর আসে যে অসুস্থ ছোট মেয়েটি মারা গেছে সুতরাং প্রভু যীশুকে তার বাড়ী নিয়ে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু প্রভু যীশু তবুও সেই ব্যাক্তির সাথে তার বাড়ীতে গেলেন, এবং মৃত মেয়েটির হাত ধরে বললেন-"খুকি উঠো"। প্রভু যীশুর এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি উঠে পরলো। যা দেখে তার শিষ্যরা প্রচন্ড অবাক হয়ে গেছিল।
পাঁচটি রুটি ও দুটো মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার লোকেদের পরিবেশন
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নাম তার চমৎকারি কাজ ও ঈশ্বরের বাক্যের জন্য গোটা ইজরাইলে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে, তার বাক্য শোনার জন্য তিনি যেখানে যেখানে যেতেন তার পিছনে পিছনে বহুলোক অনুসরণ করতেন। একদিন গালীল প্রদেশের এক প্রান্তরে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বানি শোনার জন্য পাঁচ হাজার লোকের কাছাকাছি জমায়েত দেখা যাই। যার মধ্যে অনেকেই বহু দূর-দুরান্ত থেকে এসেছিল।
প্রভু যীশু তাদের সেদিন ফিরে যাবার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন তাই তাদের সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন। কিন্তু শিঘ্রই এত লোকের খাবারের প্রয়োজন দেখা দেই। প্রভু যীশুর এক শিষ্য আন্দ্রীয় জমায়েতের মাঝ থেকে একজন বালক কে আনলেন জার কাছে তাদের খাবার জন্য পাঁচটি রুটি আর দুটো ভাঁজা মাছ ছিল।
প্রভু যীশু তার শিষ্যদের আদেশ দিলেন পাঁচ হাজার লোকেদের খাবারের জন্য বসাতে। শিষ্যরা তাই করলো। প্রভু যীশু সেই রুটি ও মাছ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করে সেই রুটি ও মাছগুলো পরিবেশন করতে বললেন, কিন্তু অলৌকিক ভাবে সেই রুটি আর মাছ সংখ্যায় বাড়তে থাকলো এবং সেই রুটি ও মাছ দিয়ে পাঁচ হাজারের মত লোকেদের সেদিন খাদ্য পরিবেশন করেছিলেন।
জলের উপর দিয়ে হাটা
ঈশ্বরের বানি প্রচারের পর প্রভু যীশু ও তার শিষ্যরা কফরনাহুমে ফিরে যাবার পথ ধরলেন। সেই মহূৰ্তে প্রভু যীশু প্রার্থনাই লীন ছিলেন। প্রভু যীশুর আগমনে দেরি দেখে শিষ্যরা সমুদ্রে নৌকাই কিছুটা সময় কাটাবে বলে ঠিক করলো। সেই সময় চারেদিকে ছিল ঘন অন্ধকার, শিষ্যরা নৌকা নিয়ে সমুদ্রে কিছুটা দূর যাবার পরে, কিছু সময় বাদেই প্রচন্ড বেগে ঝড় আসতে শুরু করে। এমন সময় তারা প্রভু যীশুকে জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখলেন , যীশু তাদের বললেন "ভয় পেও না" ।
যীশু খ্রীষ্টের জলের উপর দিয়ে হাঁটা |
যীশু তাদের, তাকে ছেড়ে আসার কারন জানতে চাইলেন, তখন তার এক শিষ্য পিতর বললেন তারা যীশুকে ছেড়ে আসেনি। প্রভু যীশু পিতরকে তার কাছে আসতে বললেন, পিতর বিশ্বাসের সাথে নৌকা থেকে নেমে জলের উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন কিন্তু হঠাৎ বিদ্যূতের চমকানিতে পিতরের বিশ্বাস নেমে গেলো এবং পিতর জলে ডুবতে শুরু করলেন। সেই সময় বাকি শিষ্যরা দেখতে পাই প্রভু যীশু ঝড়ের মাঝে সমুদ্রের জলের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে এসে, জলে পরে যাওয়া শিষ্যকে জল থেকে টেনে তুললেন। এবং তারপরে তারা কফরনাহুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
প্রভু যীশু বেঁচে থাকা কালিন জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত বহু অলৌকিক কাজ করে গেছেন, মৃত্যর পরে তার পুনরাই জীবিত হয়ে উঠা বড় চমৎকারের থেকে কম নই, পাশাপাশি সকলের সামনে আকাশ পথে হারিয়ে যাওয়াও অলৌকিক কাজের একটি অংশ মাত্র। প্রভু যীশুর অলৌকিক কাজ গুলো তার শিষ্যরা পবিত্র বাইবেলে লিপিবদ্ধ করে গেছেন, যে অলৌকিক কাজ গুলো একটি পর্বে সম্পূৰ্ন করা সম্ভব নই। সেই সুবাদেই হইতো খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করেন - প্রভু যীশু ছিলেন, আছেন এবং পুনরাই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
আরো পড়ুন: প্রভু যীশুকে "মেষ পালক" বলার কারন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন