ভারতের বিজ্ঞান চর্চা বহু প্রাচীন, যার বেশীর ভাগ আজ বিদেশী আবিষ্কারকের নামে নামাঙ্কিত। সিন্ধু সভ্যতাই ধরা যাক না কেন, বর্তমান সরকার ব্যবস্থা এখনো তেমন কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি সিন্ধু সভ্যতার মতন পৌর ব্যবস্থা প্রদান করার। ভারতীয় প্রাচীন বিজ্ঞানের আভাষ পাওয়া যাই ভারতীয় প্রাচিন শিল্পকলা ও বিভিন্ন গ্রন্থে।
বস্তুত ইউরেশিয়ানদের ভারতে আগমনের পর থেকেই ভারতে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়ে পরে। যার ফলস্বরুপ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন পন্ডিতের নাম আমরা জানতে পারি, যেমন- পালযুগে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পন্ডিত চক্রপানি দত্ত, উদ্ভিদবিদ্যায় শুরপাল, শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাই পন্ডিত বঙ্গসেন প্রমূখ। আর এই ধারাবাহিকতা একটা যুগের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিল না, পরবর্তী কালে কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ, প্রায় সমগ্র ভারতীয় ইতিহাসের মাঝে সিমাবদ্ধ রয়েছে, এবং যাদের আবিষ্কার বা কর্মকান্ড আজ ইতিহাসের পাতার মাঝে ছোট করে দেখা হয়।
ভারতীয় আবিষ্কার |
প্লাস্টিক সার্জারী
কুষাণ রাজত্বের সময় ভারতে শক্তিশালি রাজা হয়ে উঠে কণিষ্ক, যে সময় ভারতে স্বর্ণ-মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় ব্যাপক হারে (খ্রীঃপূঃ ১৫-২৭৫ খ্রীঃ)। এই কুষাণ আমলে জন্ম নিয়েছিল মহান দুজন চিকিৎসা বিজ্ঞানি, যাদের নাম ছিল চরক ও সুশ্রত। যার মধ্যে সুশ্রত ছিলেন বাস্তবিক ভাবে আধুনিক প্লাষ্টিক সার্জারীর জনক। সুশ্রত ছিলেন প্রথম যিনি বিশ্বে প্রথম সফলতার সাথে অস্ত্রপ্রচার,সেই সাথে প্লাস্টিক সার্জারীর দ্বারা শরিরের এক অংশের মাংস পিন্ড অন্যস্থানের ক্ষত স্থানে প্রতিস্থাপন, এছাড়া ছানির অস্ত্রোপচার করেছিলেন।
আধুনিক কালে ভারতীয় এই বিজ্ঞানিদের অবদান খুব একটা স্বীকার করা হয় না, চরক এবং সুশ্রতের চিকিৎসা পদ্ধতি তারা তাদের লেখা গ্রন্থ চরকসংহিতা এবং সুশ্রতসংহিতা তে বর্ণনা করেন। যেগুলো ৭৫০ খ্রীস্টাব্দে আরবে পৌছলে সেটি আরবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরাধীন ভারতের সময় ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি ইংরাজদের হাত ধরে পশ্চিমা দেশে প্রবেশ করলে তারা সুশ্রত ও চরকের বর্ণিত চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকরণ ঘটান এবং ইতিহাসের পাতা থেকে এই দুই মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানির কার্যকলাপ একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে নিজেদের বিজ্ঞান প্রযুক্তির জনক হিসাবে প্রচার করতে থাকে।
উড়ো জাহাজ
গোটা বিশ্ব আজ রাইট ভাইয়েদের উড়ো জাহাজ আবিষ্কারের শ্রেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু তার ভিত্তি প্রস্তর বহু আগেই ভারতে প্রথিত করা হয়েছিল। বাস্তবিক ভাবে ভারতীয় এই আবিষ্কার চাতুরতার সাথে নিজেদের নাম জরিয়ে নেই বিদেশি এই দুই ভাই।
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয় যখন গোটা বিশ্ব উড়ো জাহাজের কল্পনাকেও অলিক কল্পনা মনে করত, তার বহু হাজার বছর আগে ভারতে তার সূচনা হয়েছিল, যার দরুন আমরা প্রাচীন গ্রন্থ গুলোতে পুষ্পক বিমান, সূৰ্য রথ ইত্যাদির বর্ণনা পেয়ে থাকি। সুতরাং ভারতীয় বিজ্ঞানে উড়ো জাহাজের ধারনা বহু প্রাচীন। ঋষি ভরদ্বাজ প্রাচীন কালেই উড়ো জাহাজ বানানোর পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ধরনের উড়ো জাহাজের নক্সা ও কার্য প্রণালী কয়েক হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করে গেছেন তার লিক্ষিত বিমানা শাস্ত্র গ্রন্থে।
আর এই শাস্ত্রের উপরেই ভিত্তি করে রাইট ভাইদের বহু আগেই মহারাষ্ট্রের সংষ্কৃত অধ্যাপক শিবঙ্কর বাপুজি তালপাড়ে একটি উড়োজাহাজ বানিয়ে ফেলেন ১৮৫৯ সালে। তিনি জেজে স্কুল অফ আর্টের অধ্যাপক থাকা কালিন তাঁর শিক্ষক চিরঞ্জিলাল ভার্মার কাছ থেকে ঋষি ভরদ্বাজের বিমানাশাস্ত্র গ্রন্থটির বিষয়ে জানতে পারেন। যে গ্রন্থে ছিল ৩০০০ হাজারের মত শ্লোক।
রাইট ব্রাদার |
অধ্যাপক তালপাড়ে তার উড়ো জাহাজ বানানোর পর তার নাম রাখেন "মারুৎ-সখা", এবং এই উড়ো জাহাজটি সফলতার সাথে ৫০০ মিটার উপরে উড়তে সক্ষম হয়েছিল যেটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিল বহু লোক।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তার এই কর্মকান্ডের কৃতিত্ব পরাধীন ভারতে থাকা ব্রিটিশদের ছল-চাতুরিতে সেই উড়োজাহাজের তথ্য বিদেশে পাড়ি দেই, আর তার সমস্ত কৃতিত্ব রাইট ভাইয়েরা নিয়ে নেই। পরবর্তি কালে তোলপাড়ের কাহিনিটি হিন্দি চলচ্চিত্র আকারে প্রকাশ পাই।
বিদ্যুৎ আবিষ্কার
আধুনিক কালে যা কিছুই অত্যাধুনিক আবিষ্কার হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে, এক সময় এই বিদূতকে ঘিরেই টমাস আলফা এডিসন আর নিকোলা টেসলার সাথে চলেছিল স্বল্প খন্ডযুদ্ধ। যাই হোক গোটা বিশ্বে বিদ্যুৎ আবিষ্কারক হিসাবে টমাস আলফা এডিসনের কার্যকলাপকে মনে করা হয়। বস্তুতঃ টমাস আলফা এডিসন তার লেখা কিতাবে তার শ্রেয় হিসাবে মহান ঋষি অগস্ত্য কে উল্লেখ করেন। এডিসন তার কিতাবে বলেন তিনি বিদ্যুৎ তৈরির প্রারম্ভিক ধারনা মহান ঋষি অগস্ত্যুর লেখা অগস্ত্য সংহিতা থেকে পেয়েছিলেন।
মহান ঋষি অগস্ত্য হলেন ভারতীয় বৈদিক শ্রেষ্ঠ ঋষি সমূহের মধ্যে একজন, যার বিষয়ে রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য গ্রন্থ গুলোতেও পাওয়া যাই, যার নাম অনুসারে সপ্তঋষি তারকাগুলোর মধ্যে একটির নাম রাখা হয়েছে। প্রাচীন কালে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে একটি হল অগস্ত্য সংহিতা। আশ্চর্যজনক ভাবে মহান ঋষি অগস্ত্যুর এই গ্রন্থে বিদ্যুৎ তৈরির বিভিন্ন উপায় আলোচনা করা হয়েছে, এবং ব্যাটারি তৈরির বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে ব্যাটারির প্রলেপ হিসাবে জিংক,তামা, লোহা ও সোনার ব্যবহারিক পদ্ধতিও আলোচনা করা হয়েছিল। যাই হোক যদিও ব্যাটারি এডিসন আবিষ্কার করেন নি। কিন্তু ভারতীয় মহান ঋষি অগস্ত্যর উপরে নির্ভর করে এডিসন আজ বিদ্যুৎ জনক হিসাবে বিশ্ব দরবারে প্রসিদ্ধ।
রেডিও বা বেতার
ভারতে যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেডিও আবিষ্কারের শ্রেয় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোসকে দেওয়া হলেও, প্রায় সমগ্র বিশ্বে রেডিও আবিষ্কারের জনক হিসাবে মার্কনিকে মনে করা হয়। জগদীশ চন্দ্র বোস রেডিও আবিষ্কার করেন নি, তার সাথে গাছে প্রানের অস্তিত্ব, কেসকোগ্রাফ যন্ত্র,রেজোন্যান্ট ইত্যাদিও আবিষ্কার করেন, কিন্তু এক্ষেত্রে এর সমস্ত শ্রেয় জগদীশ চন্দ্রকেই দেওয়া হয়।
কিন্তু রেডিও আবিষ্কার বা যে আবিষ্কারের উপর নির্ভর করে অত্যাধুনিক মোবাইল, টিভি ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে তার সম্পুর্ণ শ্রেয় জগদীশ চন্দ্র বোসকে দেওয়া হয় না, বরং বেতার তরঙ্গের দ্বারা সংকেত প্রেরণের শ্রেয় দেওয়া হয়।
মূলত বেতার তরঙ্গের উপর জগদীশ চন্দ্র বোস তার যাবতীয় তথ্য ডাইরিতে লিপি বদ্ধ করে রাখতেন, পরবর্তি কালে সেই ডাইরির সংকলিত তথ্যের উপর নির্ভর করে মার্কুনি রেডিও বা বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।
ফাইবার অপটিকাল
বিশ্ব খুব শিঘ্রই মহান আবিষ্কারের সম্মুখিন হতে পারে, যার কল্পনা করা বাস্তবেও খুবি অবাস্তব বলে মনে হয়, কিন্তু আশার আলো দেখা গিয়েছে তাও এক ভারতীয় বিজ্ঞানির প্রচেষ্টাই, কিন্তু ইতিহাসের পাতাই তার নাম হয়তো বা নাও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে,যিনি হলেন ডঃ নারেন্দ্র সিং কাপানি। বিজ্ঞানের বিচারে কোন বস্তু যদি আলোর বেগের থেকেও বেশি বেগে ভ্রমন করতে পারে তবে সেক্ষেত্রে "টাইম মেসিন" বা সময় যন্ত্র তৈরি করা যেতে পারে। বিজ্ঞান স্বিকার করে নিয়েছে সময় সব ক্ষেত্রেই সমান হয় না এছাড়াও আলোকে বাঁকানো যাই না, কিন্ত ফাইবার অপটিকালে তা সহজ হয়েছে। কিন্তু গোটা বিশ্বে সেই আবিষ্কারের শ্রেই চার্লস কুয়েন কাউ কে দেওয়া হয়েছে এবং তাকেই এর জনক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও বা এই প্রযুক্তির প্রথম সুত্রধার ডঃ নরেন্দ্র সিং কাপানি। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ঘর সাজানোর উপকরন, আলোকসজ্জা এবং দ্রত তথ্য সরবরাহের জন্য করা হচ্ছে।
ফাইবার অপটিকাল |
ভারত শুধু এই কয়েকটি আবিষ্কারের মধ্যে সিমাবদ্ধ তেমনটিও নই, বিজ্ঞানের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অবদান অপরিসীম যুগ যুগ ধরে, কিন্তু শুধুমাত্র ভারতীয় হবার সুবাদে তার কৃতিত্ব হাতছাড়া হয়েছে। অনু পরমানুর বিষয়ে প্রথম ধারনা একজন ভারতীয় দিয়েছিলেন যিনি হলেন ঋষি কণাদ। ভারতের প্রাচীন মহাকাশবীদরাই বলেছিলেন পৃথিবী স্থিরতা এবং গণিতশাস্ত্রে '০' (শূন্য) এর মাহাত্ম্য। আরো প্রচুর আবিষ্কার রয়েছে যেগুলো প্রচীন গ্রন্থ গুলিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এখন সময়ের অপেক্ষা যাতে সেই সমস্ত বিষয়বস্তু সকল, পাশ্চাত্য দেশগুলো না করায়ত্ত্ব করে ফেলে। প্রয়োজন ভারতীয় গবেষনার, সেই গ্রন্থগুলোর সত্যতা যাচাই করার। "মোহিনী-বিদ্যা" ভারতীয় মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি,যেটি পাশ্চাত্যে প্রবেশের সাথে সাথে বিজ্ঞানের রুপ নিয়েছে। তেমনি রয়েছে মন্ত্র বিদ্যা, যদিও এটার সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিন্তু তার মধ্যে যদি কিঞ্চিত পরিমান সত্যতার ভিত্তি থাকে তবে তা যেন পাশ্চাত্য কলার অংশিদারী না হয়।
আরো পড়ুন - এই রোগগুলো আপনাকে সুপার হিরো বানাতে পারে।
WhatsApp FINDING HISTORY BY ME , UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন