History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

ভারতীয় আদিবাসী ও উপজাতিদের বিভিন্ন শিল্পকলা ও চিত্রশিল্প ওরলি মধুবনি সাঁওতালি থাঙ্গকা ফাদ ও ডোকরা শিল্প ১ম পর্ব || art and handycraft of indian tribe madhubani santhali dokra thangka fad and orli ||

 "সোনেকা চিড়িয়া" নামে একসময় পরিচিত আমাদের এই মাতৃভূমির উত্তরের “মৈথিলী” চিত্রকলা থেকে দক্ষিণের “ তান্জোর” চিত্রকলা, পূর্বের “পটচিত্র” থেকে পশ্চিমের “ওরলি” চিত্রকলার ক্ষেত্রে আদিবাসী জাতি ও উপজাতি তাদের আদিম শিল্পকলার মোহিনী বিদ্যা জাগ্রত করে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

চিত্রশিল্প-ভারতীয়-আদিবাসী-উপজাতি-ডোকরা-থাঙ্গকা-সাঁওতাল-ফাদ-মধুবনি-ওরলি
ভিমভেটকার প্রাচীন চিত্রকলা
ভারতীয় চিত্রকলার প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় ভিমভেটকা গুহায়, যা ভারতীয় আদিবাসীদের চিত্রশিল্পের প্রতি আকর্ষনের বৈশিষ্ট তুলে ধরে, একি ভাবে দুঃখের সাথে এটাও স্বীকার্য যে ভারতে এখনো এমন আদিবাসী উপজাতিরা রয়েছে যারা তাদের প্রাচীন শিল্প বৈশিষ্ট হারিয়েছেন কিংবা হারানোর পথে।যাদের মধ্যে রয়েছে সাঁওতাল ,মাহালী আরো অনেকে, আবার এমনো লক্ষ্য করা গেছে যে আদিবাসী উপজাতি দ্বারা সৃষ্ট শিল্পকলা জাতি বৈষম্য দুর করে মিশে গেছে বিভিন্ন গোষ্টিতে, যার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ "ডোকরা শিল্প"
পূৰ্বে  বেশির ভাগ আদিবাসী জাতি ও উপজাতির শিল্পের উদ্দেশ্য ছিল গৃহসজ্জা, অঙ্গ সজ্জা, ব্যবহারিক সরঞ্জাম তৈরি অথবা পূজ্য দেবতার মহিমা কির্তন, তবে আধুনিকতার হাতধরে সেই শিল্প আজ বিদেশ সুনাম ধন্য এবং যার ছাপ প্রাই সবকিছুতেই। আদিবাসী শিল্পকলা বিশেষ করে চিত্রশিল্প বা কলার ক্ষেত্রে তাদের জীবনশৈলী, দেব-দেবীর অবয়ব, ও তাদের পরিবেশের সাথে মিথোস্ক্রীয়ার ছবি ফুটে উঠে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে  ধর্মীয় মহাকাব্যও বটে। অতীতে বিভিন্ন গাছের রঙ্গিন নির্যাস, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এমনকি রক্ত থেকে প্রাকৃতিক রং তৈরি করে তা ব্যবহার করা হত, কিন্তু আধুনিককালে এসে সেই প্রাকৃতিক রং পরিবর্তন হয়েছে  জলরং, তেলরং, মোমরং প্রভৃতিতে, তবে সেটি করা হয় ক্যানভাসের প্রাচীনসত্ত্বাকে জিঁইয়ে রেখেই।
এই বিশেষ ধরনের চিত্রকলায় মাটি, কাপড় বা অনেক সময় পাথর ক্যানভাসরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ফলে এই চিত্রকলায় এক প্রাচীন,দেশীয়, ঐতিহ্যর মেলবন্ধন হামেশাই দেখতে পাওয়া যাই।
ওরলি চিত্রকলা
আমার স্বচোখে দেখা,যার মধ্যে এখনো প্রাচীনত্বের ভাব রয়েছে চিরন্তর, দেখলেই এর মধ্যে আদিবাসীদের সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধন কতটা নিবিড় তা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে, মহারাষ্ট্র-গুজরাট সীমানা ও তার আশেপাশের এলাকার পাহাড়ে বিশেষ করে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সিমান্তের ওরলিরা হলেন ভারতের আদিবাসী দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত জনগোষ্ঠী, যাদের এই শিল্পকলার চিত্ররীতিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতেও পারেন। একসময় অবহেলিত এই কলা স্বর্গীয় জীভ‍্যা সোমার প্রচেষ্টাই চড়ম সিমায় পৌছাই।
ভারতীয় বিভিন্ন গুহাচিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এই শিল্পে কিছু জ্যামিতিক আকার ব্যবহার করা হয় অবয়ব হিসাবে, যা ক্যানভাসের রুপ নেই মাটি-লাল পোড়া মাটির সংমিশ্রণে, আর সাদা রঙের চিত্রায়িত করতে চালগুঁড়ি ও জল। এই চিত্র একসময় ওরলি আদিবাসীরা আঁকতো তাদের গ্রামের  কুঁড়ে ঘরেগুলোকে ফুটেতুলতে, কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পের সৌন্দর্য ছাপ রেখেছে বিভিন্ন সামগ্রীতে।
চিত্রশিল্প-ভারতীয়-আদিবাসী-উপজাতি-ডোকরা-থাঙ্গকা-সাঁওতাল-ফাদ-মধুবনি-ওরলি
ওরলি চিত্রকলাই দেওয়াল অঙ্কন
মধুবনী চিত্রকলা
মধুবনী চিত্রকলার উৎপত্তি বিষয়ে একটি বিশেষ কাহিনী শোনা যাই, এই চিত্রশিল্পের জন্ম নাকি শ্রী রামচন্দ্রের স্ত্রী সিতার পিতা জনকের নির্দেশে হয়েছিল, সেই মতবাদকেই মান্যতা দিয়ে মিথিলার মধুবন জেলাকে এই শিল্পের উৎপত্তি স্থল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কথিত আছে যে রামচন্দ্র আর সিতার বিবাহ উপলক্ষ্যে রাজা জনক গোটা রাজ্যে সুন্দরভাবে এঁকে সাজিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, এখান থেকেই নাকি এই শিল্পের জন্ম। সেই জন্যই হয়তো এই চিত্রকলাই পৌরাণিক কাহিনি ও লোকগাথা, যেমন- রাম-সীতার বিবাহ, সীতার বনবাস, তপোবন,  রামায়ণের অন্যান্য কাহিনি মধুবনী ক্যানভাসে বেশি দেখতে পাওয়া যাই।
প্রায় ২৫০০ বছর আগে সৃষ্ট এই প্রাচীন চিত্রকলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়াল সজ্জার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই চিত্রকলায় রংয়ের ব্যবহার ক্যানভাসকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে যা বাস্তবেই দৃষ্টিনন্দন। এই চিত্রকলাই রং তৈরি করতে প্রাকৃতিক জিনিসগুলিকে বেছে নেওয়া হয় ,যেমন-নীল গাছ থেকে নীল রং,চালের গুঁড়ো থেকে সাদা রং, ভুষোকালি থেকে কালো রং, ইত্যাদি। ভারতীয় ঘরানার এই চিত্রকলা পৃথক পরিচিতি পাই ১৯৩৪ সালে, যখন ব্রিটিশ কোলোনিয়াল অফিসার উইলিয়াম আর্চার এটি পৃথক সত্ত্বা প্রথম আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এই শিল্প সব কিছুতেই ব্যবহার করা হয়।
ফাড বা ফাদ চিত্রকলা
ফাদ বা ফাড চিত্রকলা রাজস্থানের এক বিশেষ আদিবাসী চিত্রকলা, যার জন্ম রাজস্থানের রাজ ভূমি থেকে এক আদিবাসীদের মাঝে। যেখানে তারা তাদের উপাস্য দেবতা ‘পাবুজি’ বা "দেবনারায়ন" এর বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হয়। প্রাচীনতম চিত্রকলাই কাপড়ের টুকরোকে ক্যানভাস হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার আকার মোটামুটি ভাবে ১৫-৩০ ফুট দীর্ঘ। ভারতীয় আদিবাসী অন্যান্য চিত্রকলার মত এখানেও প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার করা হয়।
সাঁওতালি চিত্রকলা
ভারতের অন্যতম আদিবাসী সম্প্রদায় সাঁওতাল বা সান্থাল মূলত বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যাই। আদিবাসী সাঁওতাল গ্রামে গেলে সারিবদ্ধ মাটির বাড়ীর সমগ্র দেওয়াল তাদের স্বকীয় চিত্রে ভরে উঠে। যেখানে অন্যান্য উপজাতীয় চিত্রকলাই ধর্মিও ভাবাবেগ ও আস্থা ফুঁটে উঠে সেখানে সাঁওতালী চিত্রকলাই প্রকৃতিই হয়ে উঠে চিত্রকলার প্রধান বৈশিষ্ট। তবে কিছু কিছু এই প্রচলিত রিতির পরিবর্তন দেখা যাই, এবং তাদের প্রধান উপাস্য দেবতা "সিং বোঙ্গা" বা সূৰ্য দেবের প্রতিকৃতিও কোথাও তুলে ধরা হয়।
থাঙ্গকা চিত্রকলা
থাঙ্গকা কাপড়ের উপর চিত্রিত তিব্বতীয় আদিবাসী উপজাতিদের দ্বারা খনিজ রং ও সাথে সোনার গুড়ো দিয়ে  চিত্রিত গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায় ও কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন দেখা যায়, যার মধ্যে ঠাঁই পাই বুদ্ধের বাণী ও উপদেশ সমূহ। তিব্বতে সৃষ্ট এই চিত্রকলাই ভগবান বুদ্ধের জীবনি তুলে ধরার দরুন বর্তমানে এই চিত্র ধর্মিও দৃষ্টিকোন থেকে অতি মূল্যবান চিত্রকলা ও সুপ্রসিদ্ধ চিত্রকলার ঠাঁই পেয়েছে, এমনকি বৌদ্ধ মঠগুলোতে ও বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীদের বাড়ীতেও পূজার বেদি হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার চাহিদা বিদেশেও।
ডোকরা শিল্প
বাংলার আদিম ডোকরা শিল্প ডোকরা-ডামার উপজাতির দ্বারা সৃষ্ট। প্রধানত অলংকারের চাহিদা মেটাতে এই শিল্পের উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এই শিল্পের উপকরন আদি গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন ব্যবহারিক সামগ্রি বানানোর জন্যও এই শিল্পের চাহিদা লক্ষ্যনীয়।
ডোকরা শিল্পের নমুনা
এই ডোকরা শিল্প তৈরি করতে প্রধানত মোম মাটি ও গলিত তরল ধাতুর ব্যবহার করা হয়। যার পদ্ধতি অনুসারে দুই রকম ভাবে এই শিল্পটির অবয়ব তৈরি করা হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের তৈরি এই শিল্প বাস্তবিক ভাবেই আমাদের বাংলার মান বিশ্বে উজাগর করেছে।

আরো পড়ুন- ডোকরা শিল্প বাঁকুড়া আর পশ্চিমবঙ্গের গর্ব।

ভারতের আদিবাসী উপজাতিদের সৃষ্টিকলাই কোন উপজাতিই পিছিয়ে নেই, আরো রয়েছে ভিল চিত্রকলা, মাহালী শিল্প, সাউরি চিত্রকলা আরো বিবিধ যা সময় সংকির্ণতার কারনে এক প্রতিবেদনে জায়গা করে উঠতে পারছি না। এটি প্রথম পর্ব হিসাবে এখানেই সমাপ্ত করতে বাধ্য হচ্ছি। বাকি চিত্রকলা ও শিল্পকলার যাবতীয় তথ্য নিয়ে পুনরাই আসা যাবে।

আরো পড়ুন-আদিবাসীদের সুখ দুঃখের কথা

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন