দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। সময় আসবে যখন আদিবাসীদের সকল সমাজ একত্রিত হয়ে সামাজিক এই যুদ্ধের রঙ্গমঞ্চে নির্ভীক যোদ্ধার ন্যায় প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রথম থেকেই বলে আসছি আদিবাসীদের উচিত এখন ঘরে ঘরে নেতৃত্ব তৈরি করার। করবেই বা কি করে, সহজ-সরল জীবন ধারার স্রোতে গা ভাসিয়ে শান্তিপূৰ্ণ জীবনের পথে পা বাড়িয়ে সেই স্রোতের জোয়ারে গাঁ ভাসিয়ে দেওয়ার ব্যাতিক্রম কিছু নেই, কিন্তু এমনটিও নই অন্যায়ের বিপক্ষে পা বাড়ানোই আদিবাসীদের ধাতে নেই, কিন্তু সহনশীলতার সহ্যের গন্ডি অতিক্রম করলে ক্রমশঃ হাতিয়ার উঠিয়ে নেবার দিকে ঠেলে দিতে চাইলে আদিবাসীরা সংগ্রামের পথ বেছে নেই , যার উদাহরণ রয়েছে ইতিহাসের বিভিন্ন আদিবাসী বিদ্রোহ। আপনি যদি বিচক্ষনতার সাথে পর্যবেক্ষন করেন তবে পাবেন ইতিহাসের পাতায় আদিবাসীরা যতবারি অস্ত্র ধারন করেছে তা সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধি সংগ্রাম ছিল না বরং ছিল অর্থলিপ্সা কারি বাবুদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন ," গাঁও ছোঁড়াব নাহী, জাঙ্গাল ছোঁড়াব নাহী, মাই-মাটি ছোঁড়াব নাহী ,লাড়াই ছোঁড়াব নাহী"।
আদিবাসী নৃত্যদল |
"আদিবাসী" শব্দ পৃথক এক অর্থ বহন করে- ভূ খন্ডের আদি বাসিন্দা। আদি বাসিন্দা নিরুপণে আদিবাসী আজ ভিটে-মাটি হীন। ভারতীয় মহাদেশের প্রথম সন্তান হওয়ার পরেও রাজকার্যের একাংশো ও আদিবাসিদের কাছে নেই। যার দরুন আদিবাসি সম্প্রদায় আজ অবহেলিত। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ে আসা NRC গোটা ভারতে চালু করার লক্ষ্য CAA বা CITIZENSHIP AMENDMENT ACT বিল আইনে পরিনত হয়েছে। ভারত মাতার প্রথম সন্তান স্বরুপ আদিবাসীদের আবারো প্রমান করতে হবে তার পরিচীতি, নইলে আদিবাসী হয়েও আদিবাসীদের সকল প্রকার সুবিধা বঞ্চিত হবে আদিবাসী সমাজ। বিগত দশকের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিল মিশ্রের রায় নিশ্চয় সকলের মনে আছে, সংবিধানের বিপরীতে গীয়ে সন্তানস্বরুপ আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শিল্পপতিদের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করিয়ে দিয়েছে বলাবাহুল্য। অলচিকী সংরক্ষনের নামে শিল্পপতীদের এগিয়ে আসা ,এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে আদিবাসী এলাকা শিল্পপতিদের কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ার নজির দেখা গেল কিছু সময় আগেই। তাই আমি বলি এই অর্থলিপ্সাকারি সমাজকে দুরে সরাতে দরকার সর্বভারতীয় আদিবাসী সংগঠন, এবং আদিবাসী ভাইদের বলবো সময় হয়েছে পরিবর্তনের কারন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে জটিল পর্যায়ে ফেলে কুক্ষিগত করতে চাইছে কিছু অর্থলিপ্সা সংস্থা।
অর্থহীনতার প্রকোপ আদিবাসীদের জরিয়ে ধরে একপ্রকার মরা কান্নাই করছে। ক্ষুদার্ত পেটে আদিবাসী রমনিদের নতুন সামাজিক সংযোজন চোলাই মদ ব্যবসা ,একযোগে কোন সুবিধা বঞ্চিত আদিবাসী পারাই খুজলে হামেশাই দু থেকে তিনটে বাড়ী পাবেন যাদের গৃহস্থ চোলাই মদের উপরেই চলে। ফলস্বরুপ আদিবাসী যুব সমাজ পথ ভূলে নোংরামির দিকেই ধাবিত হচ্ছে। বলতে চাইনা চাকরীধারির স্ত্রীকেও চোলাই মদ বিক্রি করতে দেখেছি, ভাবলে অবাক লাগে তাদের আবার কিসের অভাব,তবে চোলাই মদ ছাড়াও বহু কাজ রয়েছে সমাজে। আদিবাসী সমাজের এই অংশটাও চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়াঁই।
অর্থহীনতার প্রকোপ আদিবাসীদের জরিয়ে ধরে একপ্রকার মরা কান্নাই করছে। ক্ষুদার্ত পেটে আদিবাসী রমনিদের নতুন সামাজিক সংযোজন চোলাই মদ ব্যবসা ,একযোগে কোন সুবিধা বঞ্চিত আদিবাসী পারাই খুজলে হামেশাই দু থেকে তিনটে বাড়ী পাবেন যাদের গৃহস্থ চোলাই মদের উপরেই চলে। ফলস্বরুপ আদিবাসী যুব সমাজ পথ ভূলে নোংরামির দিকেই ধাবিত হচ্ছে। বলতে চাইনা চাকরীধারির স্ত্রীকেও চোলাই মদ বিক্রি করতে দেখেছি, ভাবলে অবাক লাগে তাদের আবার কিসের অভাব,তবে চোলাই মদ ছাড়াও বহু কাজ রয়েছে সমাজে। আদিবাসী সমাজের এই অংশটাও চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়াঁই।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি |
আদিবাসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা আজ নিপীড়িত , শোষিত ও অবহেলিত যার পেছনে প্রধান কারন হল আদিবাসিদের শক্তিশালী সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের অভাব, যেটি আদিবাসিদের মূল ধারাই ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবে। একযোগে যে কোন কলেজের ছাত্র ছাত্রিদের মেধা ভিত্তিক আদিবাসী তালিকাই আদিবাসী ব্যাতিত অন্য সম্প্রদায়ের অসংখ্য নাম প্রমান করে যে ভূয়ো আদিবাসী শংষাপত্রে ছেয়ে গেছে ভারত। যার ফলস্বরুপ আদিবাসীদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে ক্রমাগত। সমস্যা এটা নয় যে আদিবাসী শংষাপত্র চোরাপথে গ্রহণকরে আদিবাসীদের প্রতারিত করছে কিছু স্বার্থান্বেষী দল, সমস্যা হল সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আদিবাসী সংগঠন গুলোর প্রতিনিধিত্ব ,তারা এই সমস্যা সমাধানে কতটুকু তৎপর। প্রকৃত অসুবিধাটি কোথায় লুকায়িত জানেন? আদিবাসিদের মানষিকতায়। ভারত ভূ-খন্ডে তিনশোর অধিক আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে ,ভারতে গোঁদ আদিবাসী জনজাতীর সংখ্যা সর্বোচ্চ।শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে মাহালী, সাঁওতাল, কোল, মুন্ডা, হো, মালপাহাড়ী, মালো আরো কত আদিবাসী সম্প্রদায়, কিন্তু একতার অভাব, সাংগঠনিক শক্তির অভাব, আমি সান্থাল, আমি মুন্ডা,আমি সারনা, আমি হিন্দু যার দরুন এই আদিবাসীদের এই বিচ্ছিন্নতাবাদি চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে অর্থলিপ্সু পিশাচের দল চুষে নিচ্ছে আদিবাসী সমাজকে।
কিছু কিছু আঞ্চলিক আদিবাসী সংগঠন মাঝে মাঝে উঠে আসছে খবরের পাতাই ,যারা কখনো গরিব আদিবাসীদের বিয়ে আটকে এটা তুলে ধরতে চাই আদিবাসীদের ধর্ম হিন্দু নই ,আদিবাসীদের প্রকৃত ধর্ম সারনা, বিগত কয়েকদিন আগে মাঝি পরগনা মহলের কোন এক সদস্য করোনা আপাতকালিন আদিবাসী সমাবেশে হুংকার ছাড়ে মন্দির ,গীর্জা ভাঙ্গুক ক্ষতি নেই কিন্তু জায়ের থান যেন টিকে থাকে। আমার মতে এই সমস্ত আঞ্চলিক সংগঠন বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত করছে ঠিকই কিন্তু দাবি-দাওয়ার বিষয় গুলো নিয়ে আপত্তি আছে কেননা সারনা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সবার আগে সারনা কোডের সংবিধানিক স্বিকৃতির প্রয়োজন। যেমনটা আমরা আদিবাসী ভাষাগুলোর ক্ষেত্রে দেখেছিলাম, ৯২ তম সংবিধান সংশোধনে একযোগে কিছু আদিবাসী ভাষার (বোরো,ডোগরি,সান্থালি) সংযোজন। আমার বিচারে এই সমস্ত গরিব আদিবাসীদের বিয়ে আটকে কি লাভ যেখানে কোন আদিবাসী জন্মগত হিন্দু ধর্মে প্রতিপালিত হয়ে স্বেচ্ছায় সেই মতে বিয়ে করছে, নিশ্চয় তাদের বিয়ের খরচা এই সংগঠন গুলো বহন করবে না। সংবিধান আদিবাসীদের সংরক্ষন আর আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য তৎপর এমনাবস্থায় সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা ও তার উপরে ভরসা রাখা আদিবাসী প্রাথমিক কর্তব্য হওয়া উচিত , বাস্তবেই যদি তাই হয়ে থাকে তবে বিয়ে আটকানো নিয়ে নই লড়াইটা হওয়া উচিত 'সারনা ধর্ম' কোড নিয়ে। দ্বিতীয়ত আমি যেটা মনে করি গীর্জা, মন্দির, জাহের থান যা খুশি ভেঙ্গে পড়ুক ক্ষতি নেই, কিন্তু আদিবাসী একতা যেন ঠিক থাকে।
আদিবাসী নব প্রজন্ম আজ সমাজ বিষয়ে কতটুকু সচেতন, শিক্ষা যখন বাজারজাত পণ্য,সেখানে সেই শিক্ষাকে হাতিয়ার বানিয়ে আদিবাসিদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া বেমানান। আদিবাসী শিক্ষিত সমাজের একমাত্র লক্ষ্যে সরকারি চাকুরি গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত প্রতিপন্ন করা, ৭০ বছরের সংরক্ষনে এটাই চলছে, সমাজকে তুলে ধরার যে প্রবণতা তা সুপ্ত বোধ হয়। তবে লুকায়িত অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আরেকটি রয়েছে আদিবাসী শিক্ষিতদের প্রাচুর্য মোটামটি ভাবে এখন দেখা যায়, তাই সেই সংরক্ষনের সুপ্রভাবের বেশির ভাগটাই জলাঞ্জলি গেছে, আর বর্তমান পরিস্থিতীতে সেই অধিকারের বেশীর ভাগ মেরে খাচ্ছে ভূয়ো শংষ্যাপত্র ধারিরা। আদিবাসী সমাজের দুঃখ নিবারনের জায়গা নেই তথাপি একত্রতা আদিবাসীদের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
,আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনআপনা ফোন নাম্বার টা দেবেন। আমিও জাতিতে মাহালী কিছুকথা ছিল।