" সব শিক্ষাই ভিক্ষার শিক্ষা, নাচে ঘ্যামটা ঘুমটা খোলে ......................... হবি তো কেরানী নাকে চশমা খুঁজে।" নচিকেতার গানের এই কয়েকটি লাইনের যথার্থ কতখানি, বলা মুশকিল, কিন্তু ২০২৩ এ যে নতুন শিক্ষানিতী এসেছে তাতে নচিকেতার এই গানটি যথার্থ হারাতে চলেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অঢেল পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের নাম বদলে, হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রক। তার সাথে থাকছে প্রচুর পদক্ষেপ। সুতরাং বলাই যেতে পারে শুধু কেরানি তৈরি করা নয়, প্রকৃত শিক্ষায় গুরুত্বের পাশাপাশি গুরুত্ব ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞানমনস্ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে। অন্যদিকে নতুন শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশ হবার সাথে সাথে বিরোধী দলগুলো নতুন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে উগরে দিচ্ছেন তাদের ক্ষোভ। তাদের মতে এই নতুন শিক্ষানীতির পরিনতিতে ক্ষতি হবে ছাত্রছাত্রীদের।
নতুন শিক্ষানীতি ভারতকে কোন পথে নিয়ে যাবে? সেটাই দেখার |
ব্যক্তিগত মতামতের আঙ্গিকে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো না খারাপ বলা কঠিন।
ক্লাস ৬ থেকেই ভোকেশনাল ট্রেনিং।
সব কিছু চুরি যেতে পারে, শুধু হাতের কাজ না। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা এর আগে প্রতিষ্ঠিত ছিল না, এমনটা বলা বোধহয় বোকামি হতে পারে। তবে তা ছিল ঐচ্ছিক এবং একটি নির্দিষ্ট সময় এবং বিভিন্ন যোজনার দ্বারাই এই বিষয়টির দেখাশোনা করা হতো। কিন্তু এখন থেকে আর তেমনটি থাকছে না ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। ফলে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা চাকরির বাইরে অন্য কিছু করতে চাই, অথবা যে সব ছাত্র ছাত্রী প্রথাগত লেখাপড়ায় তেমন পারদর্শী নয় তাদের সুযোগ থাকবে এই ভোকেশনাল ট্রেনিং দ্বারা নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার, এবং সব ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেই তা গ্রহণযোগ্য। ধরা যাক, কেউ ইলেক্ট্রিকের কাজ অথবা মোটর ভিহিকেলের কাজ শিখতে চাই তবে সে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শিখতে পারে।
থাকছে না বিজ্ঞান ও কলা পার্থক্য
হয়তো আর কোনো গৃহ শিক্ষক শিক্ষিকাকে শুনতে হবেনা -" আমি অংক ভালো বুঝি, কিন্তু রসায়ন আমার মাথায় একটুও ঢুকে না।" অথবা অন্য কিছু, এখন সেই বেড়াজাল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে
বিজ্ঞান পড়লেই কলা বিভাগের সাবজেক্ট নিতে পারবেনা, সে ব্যাপারটা আর থাকছে না। ছাত্রছাত্রীরা তার পছন্দমতো বিষয়সমূহ , অন্য ভাবে বলতে গেলে তাদের যে সমস্ত বিষয়গুলো জানতে পড়তে ভালো লাগে ( তা বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বা যেকোনো বিভাগের হোক না কেনো।) তবে সে তা নিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ একজন ছাত্র রসায়ন নিয়ে পড়ার সাথে সাথে ইতিহাস নিয়েও পড়তে পারে। সুতরাং এখন আলাদা করে বিজ্ঞান, কলা, বানিজ্য থাকছে না।
ভাংতে চলেছে পুরোনো প্রথা
এমনিতেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক গুরুত্ব কমে গিয়েছিল, কিন্তু এবার তার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে, কেননা ১০+২ উঠে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় রয়েছে নজরকাড়া বহুল পরিবর্তন। প্রাথমিক স্তরে চার বছরের মডেল রুপান্তরিত ৫ বছরে, আর এই স্তরেই জোর দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষা শিক্ষার উপর। এরপর তিন বছর অষ্টম প্রযন্ত মাতৃভাষার শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সাবজেক্টিভ বিষয়গুলোকে অহেতুক সম্প্রসারিত সিলেবাস থেকে সরিয়ে পাঠের পয়েন্ট টু পয়েন্ট আলোচনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই ছাত্রছাত্রীরা চাইলে কম্পিউটার কোডিং শিখতে পারবে। এরপর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই চার বছর উচ্চ বুনিয়াদি শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পুর্বের ১০+২ ব্যাবস্থা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয়টি হল পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা (Graduation) মডেল, কেন তা পরে আলোচনা করছি। এখানেও পূর্বের তিন বছরের মডেল সরিয়ে চার বছরের গ্রাজুয়েশন করা হয়েছে। আগে তিন বছরের শিক্ষা শেষে উচ্চ শিক্ষার (Graduation) মর্যাদা পেত, তবে তা পরিবর্তন করে প্রথম বছর শেষে সার্টিফিকেট, দ্বিতীয় বছর শেষে ডিপ্লোমা, তৃতীয় বছরে ব্যাচেলার, এভাবে চতুর্থ বছরের ব্যাচেলর উইথ রিসার্চ শেষে সরাসরি পিএইচডি করার সুযোগ থাকছে।এর আগে স্নাতকোত্তরে ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর না হলে পিএইচডি করা যেত না, এখন তা সম্ভব হবে। পাশাপাশি স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি এর মধ্যবর্তী এম ফিল উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুরোনো শিক্ষা থেকে মুক্তি |
সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন নামেও পরিবর্তন এনে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের নাম বদলে, হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রক। শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সরকারের জিডিপি তে হস্তক্ষেপ করতো তা আন্দাজ করা কঠিন ছিল না। বর্তমানে জিডিপির ১.৭% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হলেও, জিডিপির ৬% শিক্ষাখাতে এখন থেকে খরচ করা হবে। ল এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সরকারি হোক বা বেসরকারি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে। সকলেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারে বিশেষ করে মেয়েদের ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করবে। ভারতের দূর্গম এলাকায় যাতে শিক্ষা পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে অনলাইন লার্নিংয়ে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার, আপাতত ৮টি ভাষায় আপাতত অনলাইনে পড়াশোনা চলবে।
শুধু তাই নয় বিশ্বের প্রথম সারির ১০০ টা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস খোলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে পদক্ষেপ সরকারের ১০০% স্বাক্ষর পূরণের দিকেই রয়েছে বলা যেতে পারে, তবে সিলেবাসের কিছু পরিবর্তন সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রেখে যাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন