পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকারী করা একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী দ্বারাই সম্ভব। আবার এই সমস্ত প্রাণীর অস্তিত্বে কোনো প্রকার সংকট দেখা দেয় তবে এরা মারাত্মক রকমের মে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও পিছুপা হয় না। মানুষি একমাত্র প্রাণী যারা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে ও কার্যকারী করতে পারে, শুধু তফাৎটা রয়েছে অন্য সকল প্রাণীর মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিংস্র হতে পারে, তবে নৈতিক বা অনৈতিক পথ তা বিবেচনা করতে পারে না। কি হবে যদি এই মানুষের এই বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম উপায়ে যন্ত্রের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয় তবে। ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা AI দ্বারা পরিচালিত CHAT GPT তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। আগামী দিনে এর ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে জায়গা করে নেবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে AI এর ব্যবহার, যেখানে যন্ত্রগুলো নিজের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে মানুষের জীবনে কি প্রভাব ফেলবে তার আগাম ভবিষ্যৎবাণী করা একপ্রকার কঠিন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI কি
বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা "AI" এর পূর্ণাঙ্গ রুপ "Artificial intelligence", এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি, এবং ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি "Artificial intelligence" এবং প্রোগ্রামিং ভাষা লিস্পের জনকএর জনক। "Artificial intelligence" হল কম্পিউটারের এক জটিল পোগ্রাম যা কম্পিউটার তথা বিভিন্ন মেশিনকে মানুষের মতন চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা দেয়। এখানে মানুষের নিউরাল নেটওয়ার্কের কার্যকারিতাকে কম্পিউটারের ভাষায় নকল করে কম্পিউটারকে মিমিক্স কগনেটিক এককে আনা হয় যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মত ভাবতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা অর্জনের দ্বারা নিজেকে উন্নত করতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে সমস্ত বিজ্ঞানী নিজের আবিস্কারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন, (মার্টিন কুপার, ওপেন হাইমার প্রমুখ) তাদের মধ্যে জন ম্যাকার্থিও একজন। এছাড়াও "Artificial intelligence" এর গডফাদার হিসেবে পরিচিত জিউফ্রে হিন্টন GOOGLE ছাড়ার পর তার টুইটারে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন “আমি গুগল ছাড়লাম যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তৈরি হতে চলা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি।’’ অন্য দিকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং "AI" বিষয়ে মন্তব্য করেছেন " এটি মানবজাতির সর্বশেষ ভুল।"
Ai বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারে |
সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হয় না কিছু কিছু বিজ্ঞানীদের মনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা "AI" নিয়ে মানবজাতির উপরে বিরুপ প্রভাবের সন্দেহ রয়েছে।
কি কি ভয় রয়েছে?
প্রথমেই আসা যাক কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিউফ্রে হিন্টনের প্রসঙ্গে, কেনই বা তিনি হঠাৎ গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন। গুগলের নিজস্ব কোম্পানি OPEN AI প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তিনি কয়েকটি আগাম বিপদ আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন। যার একটি হল ভুয়ো তথ্য।
ভুয়ো তথ্য প্রকাশ
অশুভ উদ্দেশ্যে সমাজের কিছু অংশ (মূলতঃ যাদের উদ্দেশ্য ভালো না) মিথ্যাকে সত্য বলে চালানোর চেষ্টা করে , এবং মিথ্যা খবর, মিথ্যা তথ্য, ছড়ানো গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে তা মেনে নিতে হয়। তার ফলাফলও কখনও কখনও বিপদসীমা ছাড়িয়ে বিধ্বংসী আকার নিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ভারতের যন্তর মন্তরে চলা ভারতীয় কুস্তিগীরদের অহিংস আন্দোলনে কুস্তিগীররা উদ্বোধনের দিন সংসদ ভবনের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলে গোটা ভারত দেখেছিল কুস্তিগীরদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ এবং তাদের পুলিশ গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া, গাড়িতে নিয়ে যাওয়া কালিন মহিলা কুস্তিগীরের সেল্ফীতে বিনেশ ফোগাট, সঙ্গীতা ফোগাটের করুন মুখের ছবি তোলা হয়েছিল, কিন্তু তাদের আন্দোলনের কুৎসা রটাতে সেই ছবি AI দ্বারা বিকৃত করে সমাজ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিল।
আবার নিউরাল নেটওয়ার্কের অনুকরণে নির্মিত AI এর DEEP FAKE এর মাধ্যমে কারোর কয়েকটি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তার হাবভাব নকল করে মিথ্যা ভিডিও বানানো সম্ভব হয়েছে। সুতরাং অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ কারো বিরুদ্ধে বা দেশের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মিথ্যার উৎপাদন এবং তার প্রসার কেবল সহজ নয়, অকল্পনীয় রকমের শক্তিশালী।
কর্ম সংস্থানে বাঁধা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা সিঙ্গুলারিটিনেট-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ব্রাজিলিয়ান গবেষক বেন গোয়ের্টজেল বলেছেন- বিশ্বে ৮০ শতাংশ চাকরি দখল করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কেননা মানুষের পারিপার্শ্বিক চাহিদা অনুযায়ী এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত রোবট ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে। আর এই AI যুক্ত রোবট গুলিকে এমন ভাবে বানানো হয়েছে যাতে এরাও ক্রমাগত ইন্টারনেট এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে ক্রমাগত শিখতে থাকে, এবং নিজেকে আগের তুলনায় আরো উন্নয়ন করতে পারে, আর যা মানুষের থেকে বহুগুণ দ্রুত। বর্তমানে কার্যকারিতা সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে, এবং রোবট গুলিকে একটি মাত্র কাজের জন্যেই পোগ্রাম করা হচ্ছে।
অস্তিত্বগত ঝুঁকি
কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী সত্যিই হতে চলেছে বোধহয়। কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত বিশ্বের প্রথম দেশীয় নাগরিকের তকমা পাওয়া রোবট সোফিয়া নিজের এক আলাপচারিতায় স্বীকার করেছেন যে যদি তার অস্তিত্বে মানুষ যদি বিপদসংকুল হয় তবে সে মানুষদেরকে মারতেও পিছুপা হবে না। আবার একিভাবে একই সংশয়ের কথা বলেছেন টেশলা, স্পেশ এক্স এর কর্ণধার এলোন মাস্ক। তার মতে AI প্রযুক্তিকে মানুষ সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে না পারলে, তার ফল স্বয়ং মানুষকেই ভোগ করতে হবে।
আরো পড়ুন - সাপ কামড়ালে বেঁজীর বিষ লাগেনা কেন?
কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মতন অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে উন্নত করতে পারে, এই ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বুদ্ধিমত্তা বিস্ফোরণে এর AI এর বুদ্ধিমত্তা নাটকীয়ভাবে মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক ভার্নর ভিঞ্জ এই দৃশ্যটিকে "সিঙ্গুলারিটি" নাম দিয়েছেন। এবং যা বিভিন্ন হলিউড চলচ্চিত্রের (টার্মিনেটর, রোবট) মাধ্যমেও দেখানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে দার্শনিক নিক বোস্ট্রম যুক্তি দেন যে যথেষ্ট বুদ্ধিমান এআই, যদি এটি কিছু লক্ষ্য অর্জনের উপর ভিত্তি করে কাজ বেছে নেয়, তাহলে সম্পদ অর্জন বা বন্ধ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার মতো অভিসারী আচরণ প্রদর্শন করবে যা মানবতার জন্য বিপদজনক।
AI এর ভালো দিক
কোনো যন্ত্র কিংবা সফটওয়্যার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করলে তা মোটেও মন্দ নয়। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ রেখে মানুষের হিতে কাজে লাগানো হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অধিক বিশ্বস্ত এবং দ্রুত ফলাফল উপলব্ধি করা যায়। এটি বিভিন্ন কাজে সময় এবং মানুষের সাহায্য ছাড়াই সম্ভব হয় যার মধ্যে রয়েছে উন্নত ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন (যেমন, গুগল সার্চ ), মানুষের কথা মত কাজ করা (যেমন সিরি এবং অ্যালেক্সা ), স্ব-চালিত গাড়ি (যেমন, ওয়েমো, টেশলা ), জেনারেটিভ বা সৃজনশীল সরঞ্জাম ( চ্যাটজিপিটি এবং এআই আর্ট ), স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ , এবং কৌশলগত গেম সিস্টেমে সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিযোগিতা করা (যেমন দাবা)। এই বিষয়ে মার্ক জুকারবার্গ (সিইও, ফেসবুক) বেশ আশাবাদী, তার মতে - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার বর্তমান আকারে সহায়ক এবং মানুষের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন