ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রসারের ইতিহাস ও সময়কাল বিষয়ে ভারতের জনমানুষের শিংহভাগের মধ্যে ভূল মতামত জায়গা করে নিয়েছে। বস্তুত ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার প্রায় দু হাজার বছর আগেই শুরু হয়েছে। তিব্বতীয় কিছু পান্ডুলিপিকে প্রমাণ ধরে কিছু বৌদ্ধ পন্ডিত এও দাবি করেন যে ভারতে স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট এসেছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের কাছ হতে প্রচুর জ্ঞান প্রাপ্ত করেছিলেন। বস্তুত খ্রীষ্টানদের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলে যীশু খ্রীষ্টের জীবনের কয়েকটি বছরের, বিশেষ করে যুবক কালের কয়েক বছরের ইতিহাস জানা যায়নি, কথিত আছে যে সেই সময়ে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং বেদ জ্ঞানের অধ্যায়ন এবং বৌদ্ধ দর্শনের অধ্যায়ন করেছেন। যদিও বা আজকের আলোচ্য বিষয় ভারতে প্রভু যীশুর আগমন নিয়ে না, ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার নিয়ে।
সেন্ট থমাস ক্যাথেড্রালে রাখা সেন্ট থমাস হত্যার প্রতিকৃতি |
স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয়দের মধ্যে এই ভূল ধারনা রয়েছে যে, ফ্রান্স এবং ব্রিটিশদের দ্বারাই ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচারের ইতিহাস দুই হাজার বছর পুরোনো, এবং ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের পথিকৃৎ সাধু থোমার সেই কর্মকান্ডকে স্মরণে রেখে ১৯৬৪ সালে ভারতের ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগ দ্বারা প্রেরিত থোমার নামে ডাকটিকিট ও স্ট্যাম্প তৈরী করা হয়েছিল।
ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার
বাইবেল মতে যীশু খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের আগে তার বারো জন শিষ্যদের গোটা বিশ্বে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতে বলেন, আর এই খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তার এক শিষ্য পিতর (ইংরাজিতে পিটার)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যীশু খ্রিস্টের আরেক শিষ্য থোমাকে নিয়োজিত করেন। পবিত্র আত্মায় দিক্ষীত থোমা বর্তমানের ইজরায়েলের জেরুশালেম থেকে আকাবার উপসাগর এরপর লোহিত সাগর হয়ে আরব সাগরের পথে দক্ষিণ ভারতে ৫২ খ্রীষ্টাব্দে মালাবার উপকূলে প্রবেশ করেছিলেন।
ভারতে প্রবেশ করার পর থেকেই তিনি এখানকার বেশ কিছু পরিবারকে পবিত্র আত্মার নামে তাদের খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকেন। এই বিষয়ে কথিত আছে যে তিনি প্রভু যীশুর নামে বিভিন্ন রোগিদের সুস্থতা প্রদান করতে এবং যীশুর নামে বদ আত্মাদের মানুষের মধ্যে থেকে বিতাড়িত করতে পারতেন, যার ফলশ্রুতিতে তার দ্বারা প্রচারিত খ্রীষ্ট ধর্মে মানুষের আস্থা বাড়তে থাকে। এইভাবে থোমা পাকালোমাত্তোম, সংকরপুরি, থইয়িল, পাইপ্যাপিলি, কল্লী, কালিয়ানঙ্কাল এবং পাতামুক্কু নামক কয়েকটি পরিবারকে বাপ্তিস্ম প্রদানের দ্বারা খ্রীষ্ট ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়ে কিছু রাজা যেমন গন্ডোনিফার্স খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতে কিছু রাজা খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে, থোমার দ্বারা সেই স্থানের কোডুঙ্গল্লুর, পলয়ূর, কোট্টাক্কাভু (পরাভুর), কোকামঙ্গালাম, নীরনাম, নীলকল (ছায়াল), কোল্লাম এবং তিরুভিথামকোডে খ্রীষ্ট ধর্মের উপাসনা স্থল বা গীর্জা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
সেন্ট থমাস ক্যাথেড্রাল চেন্নাই |
সাধু থোমার মৃত্যু
দক্ষিণ ভারতের মাটিতে থোমা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার করলে খ্রীষ্ট ধর্ম বিস্তার লাভ শুরু করে, তার প্রচারিত খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষন বৃদ্ধি পেতে থাকলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ভিতীর কারন হয়ে পড়ে। এমনাবস্থায় তামিলনাডুর ময়লাপুরে ধর্ম প্রচারের পর সাধু থোমা আত্মগোপনে প্রার্থনা করা কালিন বর্শা দ্বারা তাকে হত্যা করা হয়, এবং এখনো তার মৃতদেহ রাখা হয়েছে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের সেইন্ট থমাস ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা বা স্যান্ট থোমাস চার্চে।
আরো পড়ুন - ভারতে খ্রীষ্টানদের উপর অত্যাচার কতটা সত্য এবং কারা দায়ী?
WhatsApp CHRISTIANITY
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন