দিনাজপুর আমাদের প্রীয় জেলা। আর এই জেলার বিভিন্ন এলাকাই ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন কালের ঐতিহাসিক সাক্ষি বহনকারী বিভিন্ন ধংসাবশেষ এছাড়াও রয়েছে এখানকার বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষ বিশেষ পরিচয় ও সংস্কৃতি । কিন্তু দুংখের বিষয় হল যদিও প্রশাসন এগুলি রক্ষার্তে এগিয়ে এসেছে, তবুও তা যথেষ্ট না। আর পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, দক্ষিণ দিনাজপুর ইতিহাস জেলাবাসির কাছে খুব একটা পরিচিত না, উদাহরণ স্বরূপ
দক্ষিণ দিনাজপুরের এমন অনেক স্থান আছে যেগুলোর উল্লেখ্য বিভিন্ন পুরাণের মধ্যে রয়েছে
, আর সেগুলো জানতে আপনারা আমার পেজ দেখতে পারেন, এছাড়া রয়েছে দুটো বিশেষ হিন্দু ধাম,
১ বিরূপাক্ষ মন্দির , ২ বিদ্বেশ্বরী মন্দির । তবে আজকের বিষয়টি দক্ষিণ দিনাজপুরের কোন ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি না , আজকের বিষয়টি একটু আলাদা, তবে সেই বিষয়ে আলোচনা করার আগে কিছু বিষয়ে অবগত হওয়া দরকার। আর সেগুলো নিম্নরুপ।
জি. আই ট্যাগ
জি. আই GI শব্দের পুর্নরুপ হল Geographical indication এটিকে সংক্ষেপে বলা হয় GI জি আই ।জি. আই ট্যাগ বা Geographical indication হচ্ছে স্থান ভেদে বা কোন স্থানের কোনো বিশেষ সামগ্ৰীর ব্যবহার করা বা বিশেষ নাম বা চিহ্নকে বোঝায়। আর এই বিশেষ সামগ্ৰীর নাম বা চিহ্নের উপর নির্ভর করে ভৌগোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল এলাকা বা শহর) অনুসারে নিৰ্ধারণ করাকে বোঝায় । আর স্থান ভেদে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন সামগ্ৰী দ্বারা সেই স্থানটিকে নিৰ্দিষ্ট করা হয় এবং সেই অঞ্চলের সামগ্রীর বিশেষভাবে উন্নতি ,বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার ও বৃদ্ধি করার লক্ষ্য বিভিন্ন সাহায্য করা হল এছাড়াও আইনি সুরক্ষা প্ৰদান করে সেই অঞ্চলটিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয় ।উদাহরণস্বরুপ, দার্জিলিং চা, উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপান্জি চাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঠিক একইভাবে আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও কিছু কিছু স্থানের বিশেষ পরিচয় ও ঐতিহ্য রয়েছে, তাহলে চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
মুখাশিল্প কুশমন্ডি
মুখা শিল্পের উপর নির্ভর করেই আমাদের জেলায় চলে ঐতিহ্যবাহি মুখোশ নাচ। মহিশবাথান হল কুশনন্ডি তথা দক্ষিণ দিনাজপুরের গর্বের অন্যতম কারণ ,এখানে একটি ছোট সমবায় তৈরি করা হয়েছে যা কাঠের মুখোশ তৈরি করে, এখানকার এই সমবায়টি এ,আই,এ,এ,সি,এ-এর মালিকানাধীন শিরোপা অর্জন করেছে, এমনকি ইউনেস্কোও এই জিনিসগুলি এবং সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য তাদের সাহায্যের হাত বারিয়ে দিয়েছে ,এ কারণে মহাবিশ্বে তথা গোটা ভারতে এই জেলার নাম বিশেষ ভাবে পরিচিত।
|
কুশমন্ডি মুখাশিল্প |
গোটা ভারতেএই মহিষবাথান এলাকাটি তার শিল্পকলার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, কিছু শিল্পী শুধুমাত্র তাদের এই শিল্পকলার উপর নির্ভর করে বিদেশে পর্যন্ত পারি দিয়েছে। গোষ্টো নামের 18 বছর বয়সী বালক কাঠের শিল্পকলা তৈরির জন্য জাতীয় স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন।
তাঁত শিল্প
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও তার পার্শবর্তি এলাকায় তৈরি হয় তাতেঁর কাপর । যেটি প্রায় দেশ ভাগের পর থেকেই চলে আসছে। মুলত দেশ ভাগের পরে পুর্ববাংলার অনেক তাতঁ শিল্পী দক্ষিণ দিনাজপুরের এই গঙ্গারামপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় তাতঁ শিল্প গড়ে তোলে। একসময় গঙ্গারামপুরের তাতেঁর সমৃদ্ধি ছরিয়ে পরেছিল গোটা বাংলায়। কিন্তু সেটি বর্তমানে অনেকখানি শিথিল হয়েছে, তবে এখনো গঙ্গারামপুরের কিছু কিছু এলাকায় তাতেঁর কাজ চলে আসছে। সরকারি ভাবে এই শিল্পের জন্য অনেক ঘোষণা করলেও সেটিও রয়ে গেছে তিমিরেই, এখন দেখার পালা তাতঁ শিল্পের হাব কতদিনে তৈরি হবে। আমার এটা দৃঢ় বিশ্বাস যে সরকার বাহাদুর যদি এই তাতঁ শিল্পের যত্ন নেন তবে দক্ষিণ দিনাজপুর গঙ্গারামপুরের তাঁত শিল্প জি.আই ট্যাগ বা Geographical indication Tag খুব সহজেই পেতে পারে।
ঐতিহাসিক পর্যটন
বানগড় দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি অন্যতম পর্যটন এলাকা। এটি আমাদের শহর গঙ্গারামপুরের অন্তর্গত। গঙ্গারামপুরের বানগড়ের ধ্বংসাবশেষ টিকে রাজা বানের প্রাসাদ হিসাবে মনে করা হয়। বানগড়ের খনন কাজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর
|
বানগড় |
সহযোগিতায় ও অধাপক কে জি গোস্বামীর নেতৃত্বে একটি দল দ্বারা পরিচালিত হয়, যেটি 1938-41 সময পর্যন্ত খুব অল্প সময়ের জন্য হয়েছিল। পুনর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত খননকৃত একটি দুর্গের আকারে ঘেরা রয়েছে। এই এলাকাই খননকার্যে মৌর্য, গুপ্ত, কিষান এছাড়া পাল যুগের অস্তিত্বের কথা জানা যায়।
দই শিল্প
দক্ষিণ দিনাজপুরের বিখ্যাত খাওয়ার বলতেই সবার প্রথমে নাম আসে নয়াবাজারের দই। দক্ষিণ দিনাজপুরের অনেকেএ হয়ত জানেন না গঙ্গারামপুর নয়াবাজারের খীর দই শিলিগুড়ি সহ জলপাইগুড়ি , কোচবিহার জেলাই এক নামে পরিচিত তাই রসগোল্লার উপরে জিআই ট্যাগের অধিকার পাওয়ার পরে আশা করাই যায় গঙ্গারামপুর নয়াবাজার এলাকার খীর দইয়ো Geographical indication Tag বা জি.আই ট্যাগ পাবে । আর যদি সেটা সম্ভব হয় তবে এখানকার দইয়ের কদর ও জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। দক্ষিণ দিনাজপুর গঙ্গারামপুরের নয়াবাজার এলাকায় প্রায় ৬০ - ৭০ পরিবার বংশপরম্পরাই এই খীর দই বানিয়ে আসছে । এছাড়াও যাদববাটি, সয়রাপুর, দুখলাইন এলাকারও অনেক ব্যবসায়ী ও পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । মুলত যেখানে অন্যান্য স্থানে দই বানানোর জন্য ভেজাল ও মহিষের দুধ ব্যবহার করা হয়, সেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরের এই এলাকায় খাঁটি গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় ক্ষীর দই। এই ক্ষেত্রেও একি জিনিসই প্রযোজ্য, সেটা হল সরকারি সাহায্য, আর সেটি যদি দেওয়া সম্ভব হয় তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নয়াবাজারের খীর দই Geographical indication Tag পাবে।
আন্তর্জাতিক বর্ডার
হিলি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নাম করা আন্তর্জাতিক ব্যাবসা কেন্দ্র, ও দুটি দেশের সংযোগস্থল ,সেই দেশ গুলো হল ভারত ও বাংলাদেশ। হিলি প্রদেশটি মুলত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে যার বড় অংশটি বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুকে এই স্থানটি বিখ্যাত হয়ে আছে দুটি কারনে প্রথমটি হল দুর্গা পুজো আর দ্বিতীয়টি হল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রপ্তানিকৃত সমস্ত মাল এই হিলি দিয়েই রপ্তানি হয় ।
|
হিলি বাংলাদেশে বর্ডার |
এছাড়া ও বাংলাদেশের সাথে যে কোন স্থল নিমন্ত্রিত কার্যকলাপ যেমন এপার ওপার যাওয়া আসা সব কিছু এই হিলি প্রদেশের উপর দিয়েই নিয়ন্ত্রীত হয় ।
এছাড়া আরো কিছু স্থান রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুকে যেগুলো আলোচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে এতটুকু আলোচনা করছি, চেষ্টা করব এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে শিঘ্রই আসার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন