History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

প্রভু যীশুকে মেষ শাবক অভিহিত করার কারন ।। Jesus chirst lamb of the god .

"এই দেখ ঈশ্বরের মেষশাবক, এই দেখ বিশ্ব পাপ হর ,।" আশা করি এই বাক্যের সঙ্গেই অনেকেই পরিচিত বিশেষ করে ক্যাথলিক খ্রীষ্ট ভক্তগন। ছোটবেলার শিশু মনের প্রশ্ন ছিল - গির্জা চলা কালিন প্রভু যীশুকে ভেড়ার বাচ্চা ( ঈশ্বরের মেষশাবক) বলা হয় কেন? বিষয়টি মজাদার হলেও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য প্রচুর , যার জন্য এটি একটি প্রতিবেদনে আলোচনা করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বাইবেলে প্রভু যীশুকে সরাসরি মাত্র দুবার মেষশাবক হিসাবে ডাকা হয়েছে। তাও তখন যখন বাপ্তিস্ম যোহন প্রভু যীশুকে জল দ্বারা বাপ্তিস্ম প্রদান করান , যেটি রয়েছে যোহন লিখিত ১ অধ্যায়ের ২৯ নং অনুচ্ছেদে -পরের দিন য়োহন যীশুকে তাঁর দিকে আসতে দেখে বললেন, ‘ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপরাশি বহন করে নিয়ে যান!
এবং ৩৬ অনুচ্ছেদে যোহন তার শিষ্যদের প্রভু যীশুকে দেখিয়ে বলেন -  যীশুকে সেখান দিয়ে যেতে দেখে তিনি বললেন, ‘ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক!’ 
কিন্তু হঠাৎ করে যোহন প্রভু যীশুকে মেষশাবকের সাথে তুলনা করলেন কেন? বা মেষ শাবকের এমন কি গুরত্ব রয়েছে যার জন্য যীশুকে মেষ শাবকের সাথে তুলনা করা হল?
ঈশ্বরের মেষ শাবক

 বাইবেলে মেষের গুরত্ব

বাইবেলে যদি আপনি দেখেন তবে মেষ শব্দ টি পুরাতন ওল্ড টেষ্টামেন্ট ও নিউ টেষ্টামেন্ট দুটোতেই প্রচুর পরিমানে পাবেন। যার কয়েকটি আমি এখনি বলে দিচ্ছি - যোহন ১ অধ্যায় ২৯ অনুচ্ছেদ,প্রত্যাদেশ ৫ অধ্যায় থেকে ১৯ অধ্যায়ের মধ্যে বহু জায়গাই, রোমিও বিভিন্ন অধ্যায়ের বিভিন্ন জায়গাই,মথি ২৬ অধ্যায়ের ৩১ অনুচ্ছেদ, লুক ১২ অধ্যায়ের ৩২ অনুচ্ছেদ, শিষ্যচরিত ২০ অধ্যায়ের ২৮ অনুচ্ছেদ,মার্ক ৬ অধ্যায় ৩৪ অনুচ্ছেদ, আরো প্রচুর জায়গাই মেষের বিষয়ে বলা হয়েছে। তাই আলোচনার সাপেক্ষে যেগুলো প্রয়োজন সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করাই শ্রেয়।
প্রকৃত পক্ষে বাইবেলের ওল্ড চেষ্টামেন্টে মেষ তথা মেষ শাবককে পবিত্র একটি প্রানি হিসাবে দেখানো হয়েছে। যার জন্য আমরা বাইবেলের কিছু ঘটনাবলিতে মেষ বা মেষ শাবকের বলি প্রদানের ঘটনা লক্ষ্য করে থাকি। উদাহরণ স্বরুপ আব্রাহামকে ঈশ্বরের দ্বারা পরিক্ষা , যেখানে ঈশ্বর ইসাহাকের বদলে মেষ কে বলি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। যেটা রয়েছে  আদিপুস্তকের ২২ অধ্যায়ের ১৩ অনুচ্ছেদে - তখন অব্রাহাম একটা মেষ দেখতে পেলেন| একটা ঝোপে তার শিং আটকে গেছে| সুতরাং অব্রাহাম সেই মেষটা ধরে এনে বলি দিলেন| ঐ মেষটাই হল ঈশ্বরের জন্যে অব্রাহামের বলি| আর রক্ষা পেল অব্রাহামের পুত্র ইসহাক|
আব্রাহামের পরিক্ষা

এছাড়া যাত্রাপুস্তকে মোশির মিশর দেশ থেকে পালানোর ঘটনাতেও মেষ বলি দেবার ঘটনার উল্লেখ্য পাওয়া যাই। সুতরাং এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা সম্ভব মেষ বা মেষ শাবক বাইবেলের মতে একাধারে যেমন পবিত্র প্রানি তেমনি বলি যোগ্য প্রানিও বটে।

পাপের জন্য মেষ শাবক বলি

বাইবেলে বলিপ্রদত্ত প্রানি হিসাবে শুধু মেষ নই, তার সাথে আরো বহু প্রানিকে উল্লেখ্য করা হয়েছে যেমন, পায়রা, ষাঁড়, ছাগল ইত্যাদি।
বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বহু জায়গাই মেষ শাবকের বলি দেবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে , তার মধ্যে একটি হল - লেবীয় ৫ অধ্যায়ের ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদে , ১৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “যদি কোন ব্যক্তি পাপ করে এবং প্রভুর আজ্ঞাগুলির কোন একটি লঙঘন করে, এমনকি যদি সে তা না জেনে করে থাকে, সে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং তার পাপের জন্য দাযী হবে|
ও ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- এইভাবে পাপমোচনের নৈবেদ্যর মেষটি উত্সর্গ করে যাজক সেই লোকটিকে শুচি করবে এবং ঈশ্বর ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন|
এছাড়া আরো বহু জায়গা যেমন লেবীয় ১৯ অধ্যায়ের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে -“যাজক লোকটিকে শুচি করার জন্য পুরুষ মেষশাবকটিকে দোষার্থক নৈবেদ্য হিসেবে প্রভুর সামনে উত্সর্গ করে তার পাপের প্রাযশ্চিত্ত করবে| তারপর লোকটিকে তার কৃত পাপ সমুহের জন্য ক্ষমা করা হবে|
যেখানে পাপের প্রায়চিত্ত স্বরুপ মেষ বলি দেবার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বাইবেলের অল্ড টেষ্টামেন্ট মতে প্রভু যীশু আগমনের আগে পাপ মোচনের উপায় হিসাবে ঈশ্বর মানুষকে মেষশাবক বলি দিবার আদেশ দিয়েছিলেন তবে সেই শাবকটি হওয়া চাই কলঙ্ক হিন।
 মেষ শাবক হিসাবে যীশু
খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মতে ঠিক একই ভাবে ঈশ্বর তার প্রীয় পুত্র যীশুকে সকল মানবজাতির পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে বলিদানের জন্য পৃথিবীতে পাঠান। যেমনটি আমরা দেখতে পাই যোহন লিখিত ১ অধ্যায়ের ২৯ নং অনুচ্ছেদে - ‘ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপরাশি বহন করে নিয়ে যান!
তাছাড়াও অবাক করার মত অনেক কিছুই রয়েছে বাইবেলে। প্ৰভু যীশু যে জন্ম গ্রহন করবেন এবং তাকে যে মানবজাতির পাপের ক্ষমার জন্য মরতে হবে সেটা প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৭০০ বছর আগেই বলা হয়েছে বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে। বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে প্রায় ৩০০ এর উপরে প্রভু যীশুর উপর ভবিষ্যতবানি করা হয়েছিল। যার মধ্যে প্রভু যীশুকে বলির মেষের সাথে তুলনা করে মানুষের পাপের জন্য বলি প্রদত্ত মেষ হিসাবে বর্ননাও করা হয়েছে অনেক জায়গাই। তার মধ্যে একটি হল ভাববাদী ইশাইয়া লিখিত ৫৩ অধ্যায়ের ৫ অনুচ্ছেদে
-কিন্ত আমাদেরই ভুল কাজের জন্য তাকে আহত হতে হয়েছিল| আমাদের পাপের জন্য সে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল| আমাদের কাঙ্খিত শাস্তি সে পেয়েছিল| তার আঘাতের জন্য আমাদের আঘাত সেরে উঠেছিল| 
এছাড়াও ভাববাদী ইশাইয়া লিখিত পুস্তকের ৫৩ অধ্যায়ের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - তার সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সে আত্মসমর্পণ করেছিল| সে কখনও প্রতিবাদ করেনি| মেষকে যেমন হত্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে সে নালিশ করে না তেমনি সেও চুপচাপ ছিল| মেষ যেমন তার পশম কাটার সময় কোন শব্দ করে না, সেও তেমনি তার মুখ খোলে নি|
এছাড়াও বলা হয়েছে আমরা সবাই আমাদের নিজেদের পথে গিয়েছিলাম যখন প্রভু আমাদের সব শাস্তি তাকে দিয়ে ভোগ করাচ্ছিলেন|
ক্রুশ বিদ্ধ প্রভু যীশু

এছাড়াও উদ্ঘাটন অধ্যায় ৫ অনুচ্ছেদ ৯ এ বলা হয়েছে - তাঁরা মেষশাবকের জন্য এক নতুন গীত গাইছিলেন:‘তুমি ঐ পুস্তকটি নেবার ও তার সীলমোহর ভাঙ্গার য়োগ্য, কারণ তুমি বলি হয়েছিলে; আর তোমার রক্ত দিয়ে সমস্ত উপজাতি, ভাষা, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্য থেকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে লোকদের কিনেছ৷ 
পূৰ্বে যেমন মানুষের পাপের জন্য একটি নিরিহ মেষ শাবককে বলি দেওয়া হত ,তেমনি প্রভু যীশুকেও আক্ষরিক অর্থে ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে মরতে হয়েছিল।আশা করি উপরিউক্ত বাইবেলের আলোচনাই এইটা পরিষ্কার করতে পেরেছি প্রভু যীশুকে কেন মেষ শাবকের সাথে তুলনা করা হয়।
 মেষ বলি কি এখনো হয়?
এখন প্রশ্ন উঠে আসছে খ্রীষ্টানরা কি পশু বলি করে। বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্ট তো সেটাই বলছে।
সেই বিষয়ে পরিপক্ক তথ্যাদি রয়েছে বাইবেলের মধ্যে। বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে প্রভু যীশুর জন্মের আগের ঘটনাবলি ও যীশুর আগমনের ভবিষ্যতবানি গুলো রয়েছে , প্রভু যীশু জন্মের আগে মেষশাবক বলির মাধ্যমে শুধুমাত্র একজনের পাপ ক্ষমা করা সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রভু যীশু জন্মের পর জগতের সমস্ত পাপের শাস্তি স্বরুপ প্রভু যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ হতে হয়। তাই পশুবলির যে প্রথাটি ছিল তা সেখানেই সমাপ্ত হয়ে পরে। আর এই বিষয়ে বলা হয়েছে মথি লিখিত ৯ অধ্যায়ের ১৩ অনুচ্ছেদে-
বলিদান নয়, আমি চাইতোমরা দয়া করতে শেখ,’শাস্ত্রের এইকথার অর্থ কি তা বুঝে দেখ৷ কারণ সত্ ও ধার্মিক লোকদের নয়, পাপীদেরই আমি ডাকতে এসেছি৷’ 
এছাড়াও রয়েছে মার্ক লিখিত ১২ অধ্যায়ের ৩৩ অনুচ্ছেদে -
আর সমস্ত হৃদয়, সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসো এবং প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসা হচ্ছে সমস্ত রকম বলিদান ও উত্‌সর্গের থেকে অনেক ভাল৷’ 
এছাড়াও বলা হয়েছে হিব্রু প্রথম পত্রের ৭ অধ্যায়ের ২৭ অনুচ্ছেদে-
তিনি অন্যান্য যাজকদের মতো নন৷ অন্যান্য যাজকদের মতো প্রতিদিন আগে নিজের পাপের জন্য ও পরে লোকদের পাপের জন্য বলি উত্‌সর্গ করার তাঁর কোন প্রযোজন নেই, কারণ তিনি যখন নিজেকে বলিরূপে একবার উত্‌সর্গ করেন তখনই তিনি সেই কাজ চিরকালের জন্য সম্পন্ন করেছেন৷
মেষ শাবক

সবশেষে বলবো ঈশ্বরের প্রতি মন ফেরান কারন ঈশ্বর দয়াবান ও ক্ষমাশীল। যার প্রমান স্বরুপ ঈশ্বর তার একমাত্র পুত্রকে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য বলিদান করেছিল। তাই সবশেষে প্রভু যীশুর প্রশংষা একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই যেটি রয়েছে ৫ অধ্যায়ের ১২ অনুচ্ছেদে -
তারা উদাত্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন:‘সেই মেষশাবক, যিনি হত হয়েছিলেন, তিনিই পরাক্রম, সম্পদ, বিজ্ঞতা, ক্ষমতা, সম্মান, মহিমা ও প্রশংসা পাবার পরম য়োগ্য৷’ 

লেখক সুমন্ত মাহালী হেমরম

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন