"মাৎকম দারে" "মাৎকম হান্ডী" আদিবাসী সমাজগুলোতে অঙ্গাগী ভাবে জরিয়ে রয়েছে। আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থা ও মাৎকম দারে সাংষ্কৃতিক দিক দিয়ে ওতোপ্রতো ভাবে জরিয়ে রয়েছে একে উপরের সাথে। আদিবাসী সাঁওতালী শব্দ মাৎকম দারে মহুোয়া গাছকে বোঝায়। বলা যেতে পারে মহুয়া গাছ ভারতের আদিবাসী জাতি ও উপজাতির সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রকৃতিক পুরষ্কার, বিশেষ করে যে সমস্ত আদিবাসীরা এখনো জঙ্গলে বসবাস করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। মহুয়া গাছ একযোগে অষ্ট্রিক এবং দ্রাবীড়িয়ান উভয় ক্ষেত্রেই তার প্রয়োজনীয়তা মুষ্ঠিগত করে রেখেছে।
মহুয়া গাছ আর আদিবাসী
মাৎকম দারি আর মাৎকম বাহা অথবা মহুয়া নিয়ে আদিবাসী সমাজ ও বিভিন্ন গানে অস্তিত্বের ছাপ রেখেছে আগাগড়াই। দ্রাবীড়িয়ান ওড়াঁও, মাহালী, অথবা অষ্ট্রিক সাঁওতাল, হোদের বিয়ের অনুষ্ঠানি হোক, মহুয়া গাছ ছাড়া বিয়ে কার্যত অসম্ভব। মহুয়া গাছ যার বিজ্ঞান সম্মত নাম: "Madhuca longifolia" বা "Madhuka indica" , যেই গাছটির প্রতি আদিবাসী সমাজের এই মেলবন্ধন প্রাকৃতির সাথে আদিবাসী সমাজের নিবিড় সম্পর্কটিকে উজাগর করে।
মহুয়া ফল |
পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী উৎসব "বাহা পরব" ,আদিবাসী সাঁওতালী শব্দ "বাহা" যার অর্থ ফুল। পলাশফুলে সজ্জিত পলাশ গাছ সেই উৎসবের বার্তাবাহক। আবার সেই সময়েই দেখা দেয় মহুয়া ফুলের আগমন। উৎসবটি চলে কয়েকদিন ধরে, তবে মূল উৎসবের দিন আদিবাসী পুরোহিত আসে গ্রামে এবং আদিবাসী উপাস্য স্থান জায়ের থান সুন্দর ভাবে লেপে রাখা হয়, মেয়েরা ডালিতে বিভিন্ন ফুলের সাথে রাখে মহুয়া ফুলটিকেও। শাল ও মহুয়া ফুল বা নতুন ফল দেবদেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
বাংলা, বিহার ,উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের জঙ্গলের আদিবাসী অধ্যূষিত গ্রামগুলো মহুয়া ফুলের মরশুমে গেলে তার গন্ধে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। মহুয়া গাছের তলাই ছড়িয়ে পরা ফুলগুলো চাদরের আকার ধারন করে ঢেকে রাখে গোটা প্রাঙ্গন, সেই চাদরের আদিবাসী কচি-কাঁচাদের খেলাধূলা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। যাইহোক মহুয়া গাছের ফুল হয়ে উঠে আদিবাসীতের আমোদ-প্রমোদের অংশ, শুকনো ফুল রসদ জোগাই তার, এই শুকনো ফুল এবং ফলকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় বিশেষ মদ, যা আদিবাসী সমাজকে আনন্দ উৎসবে আনন্দের খোরাক জোগান দেয়।
আরো পড়ুন - রামরাজত্ব ও আদিবাসী দলিত সমাজ।
মহুয়া গাছকে ঘিরেই অনেক আদিবাসী পরিবার তাদের আর্থিক চাহিদার বড় অংশটাই পুরোন করে। অরন্যের আদিবাসীদের জীবনশৈলী নিজে কয়েকদিনের উপভোগে মহুয়ার সাথে আদিবাসীদের নিবীড় মেলবন্ধন লক্ষ্য করেছি যা বাস্তবেই চিত্তাকর্ষক। অরন্যের শিত যেন শরিরকে একপ্রকার তীব্র শিতে দুমড়ে মুচরে দিতে চাই, শিতকালিন ভোরে পরিবারের বয়ষ্করা সাজিয়ে রাখে শুকনো মহুয়া পাতা ও ডালপালা, যেগুলো জ্বালিয়ে শিতের সেই হাঁড় কাপুনি ঠান্ডা থেকে নিজেদের খানিকটা স্বস্তি দেবার চেষ্টা করা হয়, একি সাথে চলে সেই আগুনকে ঘিরে রেখে গোল করে বসে বিভিন্ন আলোচনা পর্ব।
এখনো অনেক আদিবাসী গ্রামে গেলে,বিশেষ করে সাঁওতাল এলাকাই মহুয়া ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত তৈল মশা তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে আসছে, তার সাথে মহুয়ার কচি ডাল দাঁত মাজার উপকরন হিসাবে ব্যবহার করে আসছে প্রতিনিয়ত। প্রায় সমগ্র ভারতে পাওয়া বিভিন্ন ঔষুধিগুনে ভরপুর এই গাছ আদিবাসীদের জিবনশৈলী থেকে আস্থা সব কিছুতেই একটি অংশ হয়ে রয়েছে আজো।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন