এ যেন এক অদ্ভুত বাংলা, বাংলার বাঙ্গালি এত দিন ইংরাজি জানতো এবং প্রয়োজন বোধেই তার ব্যবহার করতো, কিন্তু বর্তমানের বাঙ্গালি যেন ইংরাজি জানছে না, বরং গ্রহন করছে। তাই, বাংলা ভাষা যেন আর বাংলার গর্ব আর তেমন মনে হয় না। বাংলা আর ইংরাজির মিশ্রিত রুপ যেন বেঙ্গলিশ, উদাহরণ রয়েছে প্রচুর, যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানের আশির্বাদে বেশির ভাগ নবাগত বস্তুর বাংলা অর্থ হয় না, কিন্তু যে জিনিসগুলোর বাংলা রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা দেওয়া অবশ্যক। বাংলার বাঙ্গালিদের কাছে "নদি" নাকি "নদী" , "কাহিনি" নাকি "কাহিনী", "প্রতিযোগিতা" নাকি "প্রতিযোগীতা" কোনটা সঠিক বানান সেটা নিয়েই ধন্দে পরে যাই, আর এমনটাই স্বাভাবিক, বর্ণমালাই "৯" তার অস্তিত্ব হারিয়েছে বহুআগেই ,কিন্তু পাঠ্য পুস্তকে জায়গা করে রেখেছে এখনো। তাহলে কি বাংলা বানানের মান্যী রুপ আসবে না কখনো?
বাংলা বানানের বিবিধ সমস্যা |
বানান সংস্কারে রবীন্দ্রনাথ
মান্যী রুপ আসবে, এমন নই যে আসবে না। পরিবর্তন বাংলা ভাষাতে যেমন রয়েছে তেমনি পরিবর্তিত বাংলা উচ্চারণকে সামনে রেখেই বাংলা বানানের সংস্কার প্রদানের চেষ্টা চলে আসছে আগে থেকেই, উদ্দেশ্য একটাই বাংলা ভাষার সরলিকরণ। বাংলা ভাষাকে যিনি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন যিনি, সেই বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা বানানের শুদ্ধ রুপ প্রদানে এগিয়ে আসেন প্রথম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব জয়ের পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে তাকে আংশিক অধ্যাপকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলা বিভাগের জন্য ১৯৩২ সালে।
আরো পড়ুন = নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।
তখন তিনি বাংলা বানানের সংস্কার প্রয়োজন মনে করেন এবং বানান সংস্কারকে চুড়ান্ত রুপ দিতে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুপারিশ প্রদান করেন, এবং সেই সময় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (তখনো উপাচার্য হন নি) সেই প্রস্তাবে সারা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই তার দায়িত্ব ভার তুলে দেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র দুই বছরের জন্য।
বাংলা বানান সংস্কার সমিতি
১৯৩২-৩৪ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক রুপে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যাবার পরেই ১৯৩৫ সালে বাংলা বানানের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজশেখর বসুর সভাপতিত্বে "কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানান সংস্কার সমিতি" গঠন করা হয়, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বংলা বানানের শুদ্ধতা প্রদান আর বাংলা ভাষার সরলিকরণ।
বাংলা লেখা বাস্তবেই জটিল |
পরিবর্তীকালে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে তেমন বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি, কিন্তু ১৯৮১ সালে অধ্যাপক বিজন কুমার বন্দোপাধ্যায় সভাপতি হয়ে এলে বানান সংস্কারের কিছু বেগ পাই।
বাংলা আকাদেমি
এই সময়ের কিছু পর থেকেই নব কবিরা, তাদের লেখনশৈলির সঠিক বানানের প্রয়োজনিয়তা মনে করে, ফলে বাংলা আকাদেমি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের জন্য রুচিবোধ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষার সমতা বিধান, লেখনশৈলী ও বাংলা বানানের সরলিকরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি ১৯৯৫ সালে তাদের সুপারিশ পত্র প্রকাশ করে এবং সেই বছরি শেষের দিকে সেই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জ্ঞানি গুনি ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এবং সেই আলোচনার সাপেক্ষে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও বাংলা বানানের নিয়ম হিসাবে একটি পুস্তিকা পরের বছর বের করা হয়, যার নিয়ম অনুসারে বর্তমান বাংলা বানান নির্ধারিত হয়েছে, যেমন "নদী" শব্দটি পরিনত হয়ে সঠিক শব্দ হিসাবে বিবেচীত হয়েছে "নদি" তে, তেমনি ইরানী হয়েছে ইরানি ,কোষ হয়েছে কোশ, জাপানী বানান পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে জাপানি।
তবে গৃহিত সিদ্ধান্তে আরো বলা হয়েছে যে সময়ের সাথে মানুষের উচ্চারণ পরিবর্তনের সাথে সাথে বানানের রিতিও পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও কিছু বাংলা বানানের কিছু নিয়ম রয়েছে যা বিস্তর আলোচনা ও ব্যাকরণ যুক্ত, যেমন- মন্ত্রী শব্দটি সঠিক কিন্তু মন্ত্রীপরিষদ শব্দটি সঠিক নই, সঠিক বানান মন্ত্রিপরিষদ, ঠিক একি ভাবে প্রাণিবিদ্যা, গুনিজন ইত্যাদি ইত্যাদি।
WhatsApp CHRISTIANITY , FINDING HISTORY BY ME , UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন