"জাতে মাতাল, তালে ঠিক" কথাটি কানে এলেই জ্যাকস-স্পেরো নামক সমুদ্রজাহাজ লুন্ঠনকারীর চরিত্রটি ভেসে ওঠে। টাল-মাটাল অবস্থা কিন্তু মারাত্মক চালাক, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই তার এই চরিত্রের প্রসংশক, এমনকি আমিও। কথার আঁকিবুকিঁতে নতুন মোড়ের দিকে পদার্পণ, আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় মদ্যপানের প্রবণতা বিষীয়ে দিচ্ছে নাতো গোটা সমাজকে?
মদ বানানোর ব্যস্ততা |
স্বল্প আলাপ-চারিতাই তর্কালঙ্কার মূৰ্তি ধারন করে মহূৰ্তে দুটো দলের উদয়, একপক্ষ আরেক পক্ষকে বিধঁছে তর্কবাণে। আমি কোন পক্ষের যোদ্ধা হিসেবে পদার্পণ করবো, আমি তো সেই সমাজেরই এক প্রতিনিধি, যারা আতিথ্যে মদ্যপানের রেওয়াজ রেখেছে আজো। সময়ের ধারাবাহিকতাই যদিও এই প্রবণতা শেষের দিকে তবুও, পিছু ছাড়েনি। পাশ্চাত্যের কিছু কিছু দেশে সম্মান প্রদর্শনের অঙ্গ শ্যাম্পেন বা ওয়াইন পরিবেশন, কিন্তু যত দোষ আদিবাসীদের। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের তর্কে করোনা অতিমারীতে চলতে থাকা লক-ডাউনের মাঝে, হঠাৎ মাতালদের একদিনের স্বস্তি, কোলকাতার মদের দোকানে দীর্ঘ লাইন, সেই চিত্র দেখেছে বঙ্গবাসী। কোই?সেই ভিড়ে তো আদিবাসীদের সংখ্যা নেই! আমি বাবু, হিসাব করি লম্বা লাইন দেখে নই, শতাংশের হার দেখে। বলুনতো কোনো এক পাড়ার চোলাই মদের দোকানে মোট ২০ জন মাতাল মদ্যপান করছে, যার মাঝে ১২ জন দিকু (অআদিবাসী) এবং ৮ আদিবাসী, চলুন না হয় সংখ্যাটা আরেকটু পরিবর্তন করি দিকু (অ-আদিবাসী) ১৫ জন আর আদিবাসী ৫ জন, তাহলে কারা বেশি মাতাল? চাক্ষুষ বিচারে দিকু অবশ্যই, কিন্তু শতাংশের বিচারে? আরে বাবা! প্রত্যেক সমাজের অভ্যন্তরে নেশাক্ষোর লোকেরা শতাংশের পরিপ্রেক্ষীতে খানিকটা রয়েছে, কোনোটাতে কম আবার কোনোটাতে বেশী, কিন্তু শতাংশের পরিমানটা বেড়ে গেলেই সেই সমাজ জতুগৃহে পরিণত হয়, পাশাপাশি তা অত্যাধিক হলেই তার ফল গোটা সমাজটাকেই ভোগ করতে হয়, কিন্তু এর পরিসংখ্যান আজো হাতছাড়া।
আরে পড়ুন- রাম রাজত্ব আর শুদ্র দলিত সমাজ।
এবার না হয় বিষয়বস্তুর একটু গভীরে প্রবেশ করা যাক। কে মাতাল? কে রাখাল? সেটা সরিয়ে আদিবাসী সমাজের গভিরে একটু অধ্যায়ণ করা যাক। পূৰ্ব থেকেই আদিবাসীরা তাদের সমাজ ব্যবস্থার পুরানো রিতি নিতিকে আগলে রেখেছে নিজ সন্তানের মত। সংস্কার, রিতি-রেওয়াজ, পরম্পরা, ভাষা, খাদ্যাভাষ প্রভৃতি কোন জাতি বিশেষকে অন্য সকল জাতিদের থেকে আলাদা করে। আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পরব ও অনুষ্ঠানে হাঁড়িয়া বা মেথা রাখার পরম্পরা রয়েছে, যা আগত সকল পরিজনদের বরন এবং আনন্দ উৎসবে আনন্দের খোরাক হিসাবে পরিবেশিত হয়।
রান্নার তাগিদে আদিবাসী মহিলা |
যেন এক অসহিষ্ণু দৃশ্য, শিশু কার্তিকেরা কাঁদছে ক্ষিদের জ্বালাই, আর পালক পিতা ভোলেনাথ নেশায় বুঁদ নিজ আষনে। নেশার প্রতি আকর্ষণ হঠাৎ যেন সম্পর্কের আকর্ষণকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাস্তবের খন্ডচিত্র, অভিঙ্গতার পটভূমি, কিন্তু নিন্দনীয় নই, নিন্দা করলেই তুমি "দিকু"।
WhatsApp UNIQUE KNOWLEDGE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন