History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

আদিবাসীরা হিন্দু নয় || দাবী সারনা ধর্ম কোডের || Tribes are not Hindu || Demand Sharna religious code ||

 কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ বলছেন তাদের ধর্মাচরণের রীতিতে কিছু কিছু হিন্দু রিতির মিল থাকলেও মূলত তারা প্রকৃতি পূজারী। নিরপেক্ষতার বিচারে সর্বাঙ্গীন এক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কার্যত সিমাহীন। সেইসূত্ৰে ধর্ম আর ধর্মাচারকে গুলিয়ে ফেলা বোধ হয় ঠিক হবে না। বাস্তব পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে, তাই যেকোন শ্রেণিবিন্যাসের আগে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাস্তবে 'আদিবাসী' সম্বন্ধে যথার্থ ধারণার ক্ষেত্রে ভারতিয় জনগনের শিংহভাগের মধ্যে বেশ কিছুটা দূৰ্বলতা আছে। তবে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিবাসী সমাজের একটি বড় অংশ একটি পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে বিধানসভায় সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, যেখানে তাদের ধর্মটির পরিচয় দেওয়া হয়েছে 'সার্না" ধর্ম হিসাবে। এতেই আঁতে ঘাঁ পরেছে কিছু কিছু হিন্দু সংগঠনে, যেমন হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের, তাদের মতে আদিবাসী সমাজ আসলে সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অনুসারী। কিন্তু বিপরীতে বিশাল অঙ্কের আদিবাসীরা নিজেদের হিন্দু তকমা দিতে নারাজ। এই বিষয়ে খোদ ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আদিবাসীদের পূৰ্বের জনগননার ন্যায় আলাদা ধর্মকোডের দাবি জানিয়ে মত প্রকাশ করে বলেন আদিবাসীরা হিন্দু নন, এবং এই বিষয়ে একটি বিলও পেশ করেন।

আদিবাসী সমাজ
বর্তমানে গোটা ভারতে আদিবাসীদের সংখ্যা এগারো কোটির বেশি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আদিবাসীদের ভাবাবেগ নিয়ে দোটানা, চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক, এমনাবস্থায় মালদা গাজোলের গুরু মা নামে পরিচীত কমলী সরেনের পদ্মশ্রী পুরষ্কারে নামাঙ্কন , আদিবাসীদের হিন্দুত্বকরণের চক্রান্তের  নামান্তর হিসাবেই মনে করছে আদিবাসী সংগঠনগুলি, আদিবাসী সংগঠনের মধ্যে একটি ‘আদিবাসী সেঙ্গল অভিযান’ দাবী জানাই - পূৰ্বে জনগণনার সময়ে  আদিবাসীরা পৃথক ধর্মের উল্লেখ করার অধিকার পেতেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে  তাদের এই পৃথক কলাম সরিয়ে শুধুই হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি প্রধান ধর্মগুলির কলামগুলোকে রাখা হয়। স্বাধিনতার পূৰ্বে আদিবাসীদের পৃথক কলাম হিসাবে ১৮৭১ - ৯১ পর্যন্ত ABORGENES বা আদিম ধার্মিক আধিবাসী হিসাবে ধরা হয়েছিল। অতঃপর ১৯০১ - ২১ পর্যন্ত ANIMIST, ১৯৩১ সালের জনগননাই TRIBAL RELIGIOUS বা আদিবাসী ধর্ম হিসাবে ধরা হয়েছিল , আর ১৯৪১ সালে TRIBES বা আদিবাসী হিসাবে জনগননা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে আদিবাসীরা।
সারনা ধর্ম কোডের দাবীতে বিক্ষোপ প্রদর্শন

ঝাড়খন্ডের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পৃথক ধর্মকোডের প্রস্তাবটি যদি কেন্দ্রীয় সরকার সম্মতি প্রদান করে, তবে ভাবী আদিবাসীরা তাদের প্রকৃত ধর্মের মর্যাদা ফিরে পাবে, এবং হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি কলামের সাথে "সার্না" ধর্মের নামও উল্লেখ করা থাকবে।
শেষবার ২০১১ সালে জনগননা হয়েছিল। যেই জন-গননাই আদিবাসীদের ৯ % হিন্দু , ০.৫ % মুসলিম , ৩৬ % খ্রীষ্টান , ৭.৪ % বৌদ্ধ ধর্মে ,০.৯ শিখ ,২.৬ জৈন ,১৫.৯ জরাথুষ্ট্রিয়ান , ৮২.৫ % বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিসাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে। আদিবাসী সংগঠনগুলোর দাবী এই বছরের জনগননাই (২০২১) আদিবাসী ধর্মের পৃথক পরিচয় দেওয়া হোক। আর তাদের এই দাবীকে জোরালো আকারে তুলে ধরতে গোটা ভারত-ব্যাপি রেল অবরোধের কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিল "আদিবাসা সেঙ্গেল অভিযান"। ফলস্বরুপ মালদহেও শুরু হয়েছিল রেল অবরোধ। এই অবরোধে সমস্যায় পরতে হয়েছিল যাত্রীদের, তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছিল প্রায় দেড় হাজার পিএসসি পরীক্ষার্থীদের, কারন সেইদিনই ছিল পরিক্ষা, যাইহোক  সেইদিনের অবরোধের জন্য পরবর্তীকালে শিলিগুড়িতে বিভিন্ন সেন্টারে পুনরাই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন - মহুয়া গাছ ও আদিবাসী সমাজ।

তবে এখনো সমস্যার শিকড় অনেক গভিরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আদিবাসীদের হিন্দুত্বে ফিরিয়ে আনার পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে, এবং অনবরত হিন্দুত্ববাদী সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলী বনবাসী কল্যাণ আশ্রম বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কাজ করে চলেছে। কিন্তু এক কদম পিছিয়ে প্রকৃত পরিচয়ের সাপেক্ষে পুনরাই আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। প্রথমত. যেটা ভাবা দরকার তা হল, 'আদিবাসী' বলতে স্বাধীন ভারতে আমরা কাদের চিহ্নিত করি - ভারতের সংবিধানের ৩৪২ ধারা মতে রাষ্ট্রপতি একটি তালিকা প্রকাশ করেন, সেখানে যে জনগোষ্ঠীগুলির নাম থাকে তারা এসটি বা তপশিলী উপজাতি। ভারতীয় ইতিহাসের অনবরত ধারাই আদিবাসীদের মাঝেও জাতি, রিতি, ধর্মীও মতাদর্শের আদান-প্রদান ঘটেছে। যার দরুন ভারতীয় আদিবাসীদের মাঝেও দেখা গিয়েছে অদৃশ্য রুপান্তরকারী শক্তির অনুপ্রবেশ। সেই দরুন ধর্মীয় পরিচয়ের দিক দিয়ে হিন্দু আদিবাসী ছাড়াও রয়েছে ক্রিশ্চান ধর্মাবলম্বী আদিবাসী,রয়েছে বৌদ্ধ আদিবাসী- লেপচা, ভুটিয়া প্রভৃতি, এমনকি লাক্ষাদ্বীপের আদিবাসীদের শ্রেষ্ঠাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী একাধারে আদিবাসী। আর এই সত্যটিকে বাস্তবিক দর্পনের রুপ দেওয়া যাই তবে বর্তমানে আদিবাসীরা হিন্দুর পাশাপাশি বৌদ্ধ, মুসলমান এবং ক্রিশ্চানও বটে।

ভারতীয় আদিবাসী গোষ্ঠির একটি
তবে প্রশ্ন থেকে গেল "সার্না" বা "সারি" ধর্মের যৌক্তিকতা তবে কি? "সার্না" প্রকৃতিকে ভগবানের আসনে প্রতিস্থাপন করে প্রকৃতিকে ভগবান রুপে গ্রহণ করা, আর এটিই হল "সার্না" বা "সারি" ধর্মের পরিচয়। যেখানে 'সিংবোঙ্গা (সূৰ্য ভগবান), চান্দুবোঙ্গা (চন্দ্র ভগবান), মারাংবুরুর উপাসনা করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাই, যা উপাদানগত একপ্রকার বলেই অনুমেয়। এক্ষেত্রে যদি বলা হয়, আদিবাসীর ধর্মাচারের মূল উপাদানগুলি হিন্দু ধর্মের। সে হিসেবে আদিবাসীরা আদিতে হিন্দু ছিল। কিন্তু অপরদিকে নির্মল কুমার বসু তার 'হিন্দু মেথড অব ট্রাইবাল অ্যাবর্জপসান' মতে, হিন্দু সমাজে আদিবাসীদের আত্তীকরণ একটি প্রচলিত ধারণা, উনার মতে এই একইভাবে আদিবাসী বেশ কিছু গোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মে প্রবেশ ঘটেছে। এর ফলে তাদের আদি ধর্মাচারও পাল্টে গেছে, কিংবা পূর্বের উপাদানগুলি সঙ্গে নতুন উপাদান সংযোজিত হয়েছে। সমাজশাস্ত্রবিদ গোবিন্দ সদাশিব ঘুরে আদিবাসীদের ‘পশ্চাদপদ হিন্দু’ বলে দেন। উনার মতে পূর্বে সবাই একই রকম সামাজিক অবস্থায় ছিল। সেই সূত্রে হিন্দু ধর্মের উপাসক হয়েও , সেই ধর্মের গোঁড়ামীতে নিজেদের শুদ্র বা নীম্ন বর্ণের (নিচু জাত) ছাপ্পা লাগাতে চাইবেনা আদিবাসী সমাজ।
সার্না ধর্মের মত হিন্দু ধর্মের মধ্যেও সর্বাত্মাবাদ রয়েছে। ১৯১১ সালে  ভারতীয় আদিবাসী সমাজের উপর তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে হার্বাট হোপ রিজলে বলেছিলেন- "আদিবাসী সর্বাত্মাবাদীরা আদিবাসীদের স্বকীয় ধর্ম পালন করে।" সুতরাং আদিবাসীদের স্ব মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পুনরাই তাদের পৃথক ধর্মের দাবী অগ্রাধিকার দেওয়াই বাঞ্চনীয়।

আরো পড়ুন - ডাইনি হত্যা ও আদিবাসী সমাজ।

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন