History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

যীশু খ্রীষ্টের ভারতে আগমন কতটা সত্য? Did Jesus Christ visit India?

 পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিচক্ষণ পন্ডিতেরা প্রভু যীশুর জীবনি এবং তার জীবনে‌ ঘটে যাওয়া জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। গবেষণা এবং পর্যালোচনা যেখানে রয়েছে সেখানে সমালোচনা তো থাকবেই। যীশুর বিয়ে, যীশুর পলায়ন, যীশুর ক্রুশে বলিদান সব কিছুতেই রয়েছে লাগামহীন তর্ক বিতর্ক। ঠিক একই ভাবে তর্কের সূত্রপাত দেখা দিয়েছে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের (নতুন নিয়ম) সাইলেন্ট ইয়ার্স নিয়ে, সাইলেন্ট ইয়ার্স কি সেটিও হালকা করে জেনে রাখা ভালো - প্রভু যীশুর কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার সময় প্রযন্ত বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে তেমন কিছু বলা হয়নি, মাঝখানের এই আঠারো বছর তিনি কোথায় ছিলেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অনেক বিজ্ঞ সমাজ রয়েছে যারা মনে করেন এই সময়কালে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং প্রাচীন হিন্দু এবং বৌদ্ধ দর্শনের সংস্পর্শে এসে ধর্মিয় জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

থ্য এবং মতবাদ সমূহ

প্রভু যীশু নাকি ভারতের মাটিতে দু বার তার পদধূলি রেখেছেন, ক্রুশবিদ্ধ হবার আগে এবং ক্রুশবিদ্ধ হবার পরে। প্রথম বার মিশরের পথ ধরে ভারতে এসেছিলেন বৈদিক, বৌদ্ধ ও আয়ুর্বেদ শিক্ষার জন্য। তক্ষশীলাতে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা সহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ ক‍রেন। কথিত আছে যে এই সময় তিনি গৌতম বুদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ভারতে প্রাপ্ত এই সমস্ত ধর্মীয় জ্ঞান প্রভু যীশু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর প্রচারিত করেন। যার জন্যে প্রভু যীশুর প্রচারিত ধর্মে বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসবাদী নিতী প্রকটভাবে রয়েছে।

দ্বিতীয় বার তবে কখন‌ আসেন? বলেছি তো ক্রুশবিদ্ধের পর, মুসলিমদের মতে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ক্রুশবিদ্ধের সময় হয় নি অথবা‌ তিনি পুনরুজ্জীবিত হন নি, বরং তিনি কবর থেকে পালিয়েছেন। কবর থেকে বেরিয়ে কয়েকদিন তিনি লুকিয়ে বেরিয়েছেন এবং সুযোগ বুঝে তার শিষ্যদের সাথেও দেখা করেছেন। শরীরের ক্ষত সেরে উঠলে তিনি বিখ্যাত রেশম পথ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন, এবং মৃত্যু পর্যন্ত ভারতেই থেকে যান।

আচ্ছা বকবকানি না, আমার কাছে প্রমাণ পেশ করতে হবে, বললেই মেনে নিতে হবে নাকি? প্রমাণ স্বরুপ কি কি তথ্য রয়েছে! 

আছে আছে, তথ্য আছে, একটি নয় কয়েকটি তথ্য, তবে তথ্যগুলো প্রমাণিত সত্য না।

Did Jesus Christ visit India kasmir tibbet
যীশু খ্রীষ্টকে নিয়ে নানা মতবাদ 

নিকোলাস নটোভিচের তথ্য 

নিকোলাস নটোভিচ নামে এক ব্যক্তি ১৮৯৪ সালে প্রভু যীশুর ১২ থেকে ৩০ বছরের যে সাইলেন্ট ইয়ার্স ছিল তার উপর ভিত্তি করে ফরাসি ভাষায় একটি বই লেখেন 'লা ভি ইনকনিউ দ্য জেসাস ক্রাইস্ট'। যদিও পরে এটি "আননোন লাইফ অফ যেসাস ক্রাইষ্ট" নামে বেশি পরিচয় লাভ করে। যেখানে তিনি লিখেছেন প্রভু যীশুর ভারতে পালিয়ে আসার কথা, এবং ভারতে প্রভু যীশুর দেহ ত্যাগের কথা।

নটোভিচ বিতর্কিত বই লিখেছেন, ভালো কথা কিন্তু কোন তথ্যর উপরে ভরসা করে লিখেছেন?

নটোভিচ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ দর্শনের উপরে গবেষণার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যে ভারতের লাদাখের হেমিস মঠের লাইব্রেরি থেকে সেখানকার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সহায়তায় কিছু প্রাচীন তিব্বতিয় পান্ডুলিপির পাঠ উদ্ধার করেন, যেখানে ইসা (মুসলিমরা প্রভু যীশুকে ইসা নবী হিসাবে চেনেন) নামে এক পশ্চিমদেশীয় জ্ঞানী ধর্মীয় পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়। তিব্বতিয় সেই পান্ডুলিপির অনুবাদ করে তিনি পুনরায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং বিতর্কিত বইটি লেখেন।

স্বামী অভেদানন্দ

একটি বই দ্বারা এটি কি করে প্রমানিত হল যে প্রভু যীশু ভারতে এসেছিলেন? 

না না একটি বই নয়, আরো রয়েছে স্বামী অভেদানন্দ, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা, নিজ চোঁখে সেই পান্ডুলিপি গুলো দেখেছিলেন এবং প্রভু যীশুর সেই রমস্যময় সময়ের বৃত্তান্ত স্বরুপ ‘কাশ্মীর ও তিব্বতে’ নামক একটি বই লেখেন। শুধু তাই নয় তিব্বতীয় সেই পান্ডুলিপির ২২৪ টি লাইন তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন। প্রভু যীশু নাকি ভারতের তিব্বতে ছিলেন তাই নয়, তিনি এখানে মৃত্যুবরণ প্রযন্ত করেছেন। যার কবর এখনো বর্তমান।

এতবড় একটি যুগান্তকারী তথ্য, সেটি নিয়ে মাত্র দু জনেই গবেষণা করেছে? 

ধূর' তেমনটি নয়, এর আগেও অনেক গবেষক গবেষণা করেছেন সেই পান্ডুলিপি নিয়ে। যেমন- হেনরিয়েটা মেররিক ১৯২১ সালে পান্ডুলিপিটি দেখেন এবং "ইন দা ওয়ার্ল্ডেটিক" নামে বই লেখেন। আবার ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মীর ইজ্জুৎউল্লাহ নামে একজন পারস্যবাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্দেশে মধ্য এশিয়া ও লাদাখ সফর করেন এবং তিনিও ওই পান্ডুলিপি গুলো দেখে "ট্রাভেলস ইন সেন্ট্রাল এশিয়া" নামের বই লিখেন।

আমার একটু আপত্তি আছে, এতক্ষণ যাদের কথা বললেন তারা সকলেই দেখছি শুধুমাত্র তিব্বতীয় পান্ডুলিপির উপর নির্ভর করে একি কথা বলে চলেছে, একটি পান্ডুলিপিকে তো আর প্রমান ধরা চলে না।

রাজতরঙ্গিনী

কলহন রচিত রাজতরঙ্গিনী, মনে করা হয় এটা ছাড়া নাকি কাশ্মিরের ইতিহাস জানা খুব মুশকিল। সেই গ্রন্থে ইসানা নামের এক দিব্য পুরুষের নাম পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে বলা হয়েছে “ইসানা নামক একজন মহৎ সন্ত ডাল হ্রদের তীরে ইসাবারে বসবাস করিতেন। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ছিল।” অনেকেই মনে করেন এই ইসানাই হলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। রাজতরঙ্গিনীতে বলা হয়েছে সন্ধিমতী নামক একজন জনতার দ্বারা রাজা নির্বাচিত হন, যিনি স্বয়ং ইসানার শিষ্য পাশাপাশি ইসানার ইচ্ছেতেই তিনি শিংহাষনে বসেন।

যীশু খ্রীষ্ট 

ও বাবা যীশুর উপরে এতগুলো লোকের প্রায় একই অভিমত, এবার একটু অবাক লাগছে।

এতটুকু জেনে যদি অবাক হয়ে গেলে? তাহলে আরো শোনো।

বৈশ্যমহাপুরাণ

"পুরাণ" হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মধ্যে একটি।

হিন্দু ধর্মে মোট আঠারোটি পুরাণ রয়েছে, শিবপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ, ইত্যাদি। যাদের মধ্যে অন্যতম আরেকটি নাম “বৈশ্যমহাপুরাণ”। বৈশ্যমহাপুরাণে ইসা নামের এক জনের সাথে কাশ্মীরের রাজার কথোপকথন বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে, তার থেকেও অবাক করার মত বিষয়টি হল বাইবেলে‌ যেমন প্রভু যীশুকে কুমারী মায়ের সন্তান বলা হয়েছে, তেমনি বৈশ্যমহাপুরাণে ইসাকে "কুমারীগর্ভস্বংবরণ" বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন - ভারতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার কিভাবে শুরু হয় আর কে করেন প্রথম প্রচার?

আরো কিছু তথ্য

সবকিছু শুনলাম, জানলাম প্রভু যীশুর ভারতে আসার বিষয়ে এত কিছু তথ্য থাকা সত্ত্বেও খ্রীষ্টানরা কেন মেনে নেননি এই বিষয়টি?

মানা আর না মানা দুটোরই আলাদা আলাদা মুক্তি থেকে থাকে। কোন যুক্তি সঠিক, কোন যুক্তি বেঠিক সেটা কি বলা সম্ভব। প্রভু যীশুর ভারতে আসা নিয়ে আরো অনেক কথা রয়েছে।

অনেকেই মনে করেন, যীশু কাশ্মীরে, আবার কেউ বলেন তিনি গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণের শহর, কুশিনগরে মারা গিয়েছিলেন। আবার বাইবেল মতে তিনি রোমেই মারা গিয়েছেন। কাশ্মীরের যীশুর মৃত্যুর পর শ্রীনগরের কাছে প্রভু যীশুকে কবরস্থ করা হয়। কাশ্মীরের অধিবাসীরা একজন প্রাচীন হিব্রুভাষী ইহুদি পুণ্যবান পুরুষের কথা বলে আসছে, যার নাম উজ আসাফ। প্রভু যীশু নিজেও হিব্রু ভাষাতেই কথা বলতেন। তাই অনেকের ধারণা তিনিই যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন।

খ্রীষ্টানদের এই মতবাদ না মানার কারন

এবার বিচার করো, কোনটিকে সঠিক মনে করবে?

সত্যিই তো? এক জনের বিষয়ে এত বিভিন্ন রকমের মতবাদ।

শুধু তাই নয়, আরো অনেকে আছেন যারা আরো ভিন্ন মত দিয়েছেন। যেমন মধ্যযুগীয় শেষের দিকের আর্থারিয়ান কিংবদন্তি অনুযায়ী যুবক যীশু ব্রিটেনে গিয়েছিলেন।

তাহলে প্রশ্নটা আবার একি জায়গাই গিয়ে ঠেকছে, যীশু ভারতে এসেছিলেন নাকি ব্রিটেনে?

আসলে বিষয়টি হল বিখ্যাত লোকেদের জীবনি নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠতেই থাকে, তার উপরে যীশু খ্রীষ্ট এমন একজন ছিলেন যার প্রচারিত মতবাদ বিশ্বের সবথেকে বেশি মানুষ মেনে চলে, তার বিষয়ে গুঞ্জন ওঠাটাই স্বাভাবিক, তাই কি না।

 আরো পড়ুন - হিন্দু পুরাণে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে কি বলা হয়েছে।

যেই তথ্যগুলো নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম সেগুলোতে একটি কথা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, প্রভু যীশু কিশোর অবস্থায় মাত্র বারো বছর বয়সে ভারতে এসেছিলেন, অবাক করার মত বিষয়টি হল ভারত থেকে ইজরায়েল কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তাছাড়াও সেই সময় আধুনিক সময়ের মত যানবাহন চলাচলের জন্য ছিল না, এক কিশোরের পক্ষে কি এতটা দূরত্ব পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব ছিল কি? যেখানে ভাষা ছিল প্রকৃত প্রতিবন্ধকতা।

হুম, যুক্তিটা বেশ জোরদার।

আবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে যাচাই করি, তবে ঐতিহাসিকরা এখনো প্রমান করতে পারিনি যে সেই সময়ে কাশ্মিরে এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ দুটোই চর্চা করা হতো। পরবর্তী সময়ে তক্ষশীলাতে বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা শুরু হলেও, দুটো সময়ের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

তাছাড়াও ইজরায়েলের সমাজ মতে পিতার কাছ থেকে পুত্ররা তার কাজ শিখত। প্রভু যীশুর পিতা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, সুতরাং প্রভু যীশু নিজেও সেই কাজ শিখেছিলেন, যার জন্যে সমাজে তার পরিচয় ছিল কাঠমিস্ত্রি হিসেবেই, যদি প্রভু যীশু কিশোর কালেই ভারতে আসতেন তবে তার দ্বারা কাঠমিস্ত্রির কাজ শেখা সম্ভব ছিল না, এই বিষয়ে বাইবেলের মার্ক লিখিত ৬ অধ্যায়ের ৩ নং পংক্তিতে বলা হয়েছে - এ তো সেই ছুতোর মিস্ত্রি এবং মরিয়মের ছেলে;।

এছাড়াও বহু বিষয় রয়েছে, যা পরস্পর বিরোধী অর্থডক্স তৈরি করে। সর্বোপরি পান্ডুলিপি এবং অন্যান্য গ্রন্থে ইসা নামের প্রাচুর্য পাওয়া যায়, তারপরেও এটা জানা সম্ভব হয়নি যীশু আর ইশা আসলে একই মানুষ।

WhatsApp

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন