বৌদ্ধ ধর্ম ও দক্ষিণ দিনাজপুর
আমাদের জেলা প্রথম থেকেই এমন ছিল, আসলে তেমন টা না, পূর্বে আমাদের জেলা পুন্ড্রবর্ধন নামের জনপদের অংশ ছিল, যার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছিল কোটিবর্ষ , এই পুন্ড্রবর্ধন শিক্ষা ঐতিহ্য ও ধর্মের দিক দিয়ে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছিল। যার মধ্যে অন্যতম হল বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম । যার প্রমান অনেক গুলো বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। যেমন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ "বধি স্থাবদান কল্পলতা " এ বলা হয়েছে যে একসময় বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ তার বানি প্রচারের জন্য পুন্ড্রবর্ধনে এসেছিলেন । এছাড়াও চিনা পর্যটক হিয়েন সাং তার গ্রন্থ " সে ইউ কি, তে আমাদের জেলার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, তার মতে দেবিকোট বা কোটিবর্ষ ( বর্তমান গঙ্গারামপুর বানগড় ) বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম চর্চার এক বিশেষ কেন্দ্র বিন্দু ছিল। এছাড়া ও মনে করা হয় এক সময়ের বিশ্ব প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় তথা বৌদ্ধ ধর্ম তথা জৈন ধর্ম চর্চাস্থল জগদ্দল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুরে অবস্থিত ছিল।
তৎকালিন পুন্ড্রবর্ধনের নগর দেবিকোট |
জৈনধর্ম ও দক্ষিণ দিনাজপুর
এটাতো গেল বৌদ্ধ ধর্ম ও দক্ষিণ দিনাজপুরের মেলবন্ধনের স্বল্পবিস্তর আলোচনা, এবার আসি জৈন ধর্ম ও দক্ষিণ দিনাজপুরের যোগসূত্র নিয়ে আলোকপাতে। গুপ্তযুগে জম্বুস্বামি নামের একজনের কথা জানতে পারা যায়, জৈনধর্ম মতে জম্বুস্বামি ছিলেন সময়ের অর্ধেক চক্রের শেষ কৈবল্ল (সর্বজ্ঞ) ছিলেন। তার কাছেই চন্দ্রগুপ্ত জৈন ধর্মের দীক্ষা নিয়েছিলেন। মনে করা হয় জাম্বুস্বামী তার জীবনের অন্তিমকালে গঙ্গারামপুরের এই এলাকা আসেন আর এখানে জৈন ধর্মের প্রচার করেন ও দেহ ত্যাগ করেন, আর সেই সময় গঙ্গারামপুর পুন্ডবর্ধন নামে পরিচিত ছিল।অনান্য বিষয়
1942 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খননকার্যে উঠে এসেছে এমন তথ্য যেগুলো পর্যালোচনার পর জানা যায় যে পূর্বে আমাদের জেলাই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রসার ঘটে, উদাহরণ স্বরূপ গঙ্গারামপুরের আতাশাহের দরগা থেকে পদ্মফুলের ভাস্কর্য উঠে আসায় মনে করা হয় যে এটি পূর্বে কোন এক বৌদ্ধ মঠ ছিল, এছাড়াও জগদ্দল বিশ্ববিদ্যালয়ে (দেবীকোট) ভিক্ষুনী মেখলা, অদ্বয়বস্ত, উধিলিপা প্রমুখ তপস্বী ও পণ্ডিতবৃন্দ থাকতেন এছাড়া ও কৌটিল্যের অর্থশান্তেও পুণ্ডুবর্ধনের উল্লেখ একটি জৈন ধর্মের কেন্দ্র হিসাবে উল্লেখ পাওয়া যায় আবার অন্যদিকে জম্বুস্বামি ছিলেন যার কবর এখন গঙ্গারামপুরের নিতপুরে রয়েছে তিনি ছিলেন ধর্মগ্রন্থ দ্বাদশ অঙ্গের রচয়িতা।নিতপুর, গঙ্গারামপুর |
ঐতিহ্যের অবসান
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে,তাহলে আমাদের জেলার সেই ঐতিহ্য নেই কেন, তার কারণ হন ১২০২ খ্রীষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর আক্রমণ ও তার পৈশাচিক ও নারকীয় হত্যা লিলা , এবং তার আদেশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের বিশ্ব প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় জগদ্দল , পুন্ড্রবর্ধনের বেশির ভাগ বৌদ্ধ মঠ ও জৈন স্থাপত্য গুলি তিনি ধংস্ব করে দেন। যার জন্য বেশিরভাগ বৌদ্ধ পণ্ডিত তাদের প্রান বাচিয়ে তিব্বতে চলে যান। যার জন্য আমাদের জেলার যে গর্ব সেটি ধিরে ঘিরে হারিয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন