সবে ভোর হয়েছে , পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তৈরি হবার পালা। গৌন্তব্য দক্ষিন দিনাজপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গঙ্গারামপুর। শোনা কথার কীংব্যদন্তি আজ স্বচোখে দেখার পালা। দক্ষিন দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর নাকি ইতিহাসের দিক দিয়ে খুবই রত্নাকর। পৌরানিক বানরাজ থেকে বখতিয়ার খিলজী ভারতীয় ইতিহাসের সব অধ্যায়ের প্রমান রয়েছে নাকি এখানে। ইতিহাসের পাতাই গঙ্গারামপুরের নাম ছিল দেবীকুট পুন্ডবর্ধন, কোটিপুর ,শোণিতপুর , কোটিবর্ষ, কোটিপুর, দেবীকোটা , দমদমা ইত্যাদি ইত্যাদি। বৃহৎকথা কোষ অনুযায়ী গঙ্গারামপুর একসময় ব্রাহ্মনদের দ্বারা সু সজ্জিত মন্দিরের নগর ছিল। তাহলে চলুন আপনাদের গঙ্গারামপুরের সেই সমস্ত স্থান ঘুরিয়ে নিয়ে আসা যাক ।
WhatsApp
FINDING HISTORY BY ME
পঞ্চরথ মন্দির
গঙ্গারামপুর শিববাড়ী রাস্তা ধরে সেখান থেকে বড়জোড় তিন কিমি দুরে হবে হামজাপুর স্টপেজ , সেই স্টপেজ থেকে মাহুর কিসমত গ্রামের দিকে ধাবিত হলে পথের ডানদিকে পেয়ে যাবেন এই অতিব প্রাচিন পঞ্চরথ মন্দিরটি। দেখলে অনুমান করা যায় প্রাচিনতার দিক দিয়ে হয়তো দ্বাদশ শতকের হতে পারে। মন্দিরে আপাতত কোন বিগ্রহের পূজা হয় না তবে এই মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে একটি বিষ্ণু মেলার আয়োজন হয়ে থাকে প্রতি বছর ।
মন্দিরের প্রবেশ দ্বারেই রয়েছে অপূৰ্ব টেরাকোটা সম্মেলিত রামায়ন ও মহাভারতের কিছু দৃশ্য। যেটি সময়ের অন্তরালে ক্ষয়ে গেছে। রথের ন্যায় এই মন্দিরের ছিল পাঁচটি চূড়া , কিন্তু তার দুটি এখন নেই বললেই চলে।
বীরুপাক্ষ বানেশ্বর মন্দির
পঞ্চরথ মন্দির দেখা হলে সেখান থেকে ফিরে আসার পথে শিববাড়ী প্রবেশের সাথেই ডান হাতে পরবে আরেকটি প্রচিন মন্দির যার নাম বীরুপাক্ষ মন্দির । মন্দিরের প্রাচিনতা নিয়ে জানার চেষ্টা করলে জানা যাই এটি বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখিত দ্বাপড় যুগে বানরাজার দ্বারা তৈরী।
মন্দিরের বাইরে রয়েছে প্রাচীন কালের নঙ্গীর একটি পাথরের মূর্তি এবং মন্দিরের ভেতরে রয়েছে স্বয়ং শিবের লিঙ্গে রুপান্তরিত হওয়া লিঙ্গটি ও সদ্য উদ্ধার করা দশাবতারের পস্তর খন্ড।
মিউজিয়াম
শিববাড়ীর শিব দর্শনের পর শিববাড়ীর মাঝেই রয়েছে একটি ছোট স্থানীয় মিউজিয়াম। যেখানে রয়েছে গঙ্গারামপুরে বিভিন্ন সময় আবিষ্কৃত হওয়া কিছু প্রাচিন মূৰ্তি। যা জনসাধারনদের দেখার জন্য সর্বদা খোলা থাকে।
গঙ্গারামপুর শিববাড়ী রাস্তা ধরে সেখান থেকে বড়জোড় তিন কিমি দুরে হবে হামজাপুর স্টপেজ , সেই স্টপেজ থেকে মাহুর কিসমত গ্রামের দিকে ধাবিত হলে পথের ডানদিকে পেয়ে যাবেন এই অতিব প্রাচিন পঞ্চরথ মন্দিরটি। দেখলে অনুমান করা যায় প্রাচিনতার দিক দিয়ে হয়তো দ্বাদশ শতকের হতে পারে। মন্দিরে আপাতত কোন বিগ্রহের পূজা হয় না তবে এই মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে একটি বিষ্ণু মেলার আয়োজন হয়ে থাকে প্রতি বছর ।
পঞ্চরথ মন্দির গঙ্গারামপুর |
বীরুপাক্ষ বানেশ্বর মন্দির
পঞ্চরথ মন্দির দেখা হলে সেখান থেকে ফিরে আসার পথে শিববাড়ী প্রবেশের সাথেই ডান হাতে পরবে আরেকটি প্রচিন মন্দির যার নাম বীরুপাক্ষ মন্দির । মন্দিরের প্রাচিনতা নিয়ে জানার চেষ্টা করলে জানা যাই এটি বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখিত দ্বাপড় যুগে বানরাজার দ্বারা তৈরী।
মন্দিরের বাইরে রয়েছে প্রাচীন কালের নঙ্গীর একটি পাথরের মূর্তি এবং মন্দিরের ভেতরে রয়েছে স্বয়ং শিবের লিঙ্গে রুপান্তরিত হওয়া লিঙ্গটি ও সদ্য উদ্ধার করা দশাবতারের পস্তর খন্ড।
মন্দিরের রাখা পঞ্চপান্ডবের মূর্তি |
শিববাড়ীর শিব দর্শনের পর শিববাড়ীর মাঝেই রয়েছে একটি ছোট স্থানীয় মিউজিয়াম। যেখানে রয়েছে গঙ্গারামপুরে বিভিন্ন সময় আবিষ্কৃত হওয়া কিছু প্রাচিন মূৰ্তি। যা জনসাধারনদের দেখার জন্য সর্বদা খোলা থাকে।
ঊষাতিটী
এবার শিববাডী হাট দিয়ে পুনর্ভবা নদি পার করলে পরবে দেবীপুর নামের একটি গ্রাম ,যে নামটি এসেছে প্রচীন নাম দেবীকোট থেকে। যেই গ্রামে রয়েছে একটি বড় আকারের মাটির ঢিঁবি যেটির স্থানিয় নাম ঊষাতিটী।
এখানে দেখার মত কিছু না থাকলেও ,জানানোর কর্তব্য রয়েছে। কথিত আছে যে এখানে বানরাজার ভয়ে শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধ ও তার পত্নি ঊষা গান্ধর্ব বিবাহের পর এই স্থানেই অত্মগোপন করেছিল।
ঊষারানির স্তম্ভ
শিববাড়ীর শিব লিঙ্গ থেকে শুরু করে যাবতীয় দর্শনের পর খুব কাছেই রয়েছে মিশনপাড়া যেখানে রয়েছে বিশেষ পাথরের চারটি স্তম্ভ। এই চারটি পাথরের স্তম্ভকে মহাভারতের একটি ঘটনার সাথে যুক্ত করে দেখা হয়। কথিত আছে যে এটি হল কৃষ্ণ ঠাকুরের নাতি অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনা তলা , আর এই চারটি পাথরের স্তম্ভ সেই ছাদনা তলার কলাগাছ যা পরবর্তি কালে পাথরে পরিনত হয়েছে।
ঊষারানির কলাগাছ গুলোকে নিয়ে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে স্থানিয়দের কাছে । তাদের মতে যে বা যারা এই পাথরের স্তম্ভের চারটি জরিয়ে ধরতে পারে তার মনবাঞ্চা পূৰ্ন হয়।
জীবন ও মরনদায়ী পুকুর
স্তম্ভ গুলিকে জরিয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছা পূৰ্ণ হলে বেরিয়ে বামদিকের রাস্তাই ঢালাই রাস্তা দিয়ে ৫০ মিটার পথ গেলেই বাঁ দিকে একটি ছোট অথচ গভির পুকুর দেখতে পাওয়া যায় যেটি পরিচীত জীবনদায়ী পুকুর বা জীয়নকুন্ড বলে। প্রচলিত ধারনা মতে বানরাজার আমলে এই পুকুরের মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার বিশেষ ক্ষমতা ছিল।
আবার একি ভাবে পশ্চিমের ঢালাই রাস্তাই গেলে হাতের বাঁ দিকে আরেকটি গভির পুকুর দেখা যাবে যেটি আবার পরিচীত মরনদায়ি পুকুর বা মরনকুন্ড বলে। জীয়নকুন্ডর মতনি এই পুকুরেরো ছিল মৃত্যদান করার বিশেষ ক্ষমতা। রাজা বান অপরাধিদের মৃত্যদন্ড দেবার জন্যই এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন বলে কথিত রয়েছে।
বানগড়
পুকুর দেখা সমাপ্ত হলেই পায়ে হেটেই চলে যেতে পারেন দক্ষিন দিনাজপুরের সবথেকে পরিচিত ঐতিহাসিক প্রাঙ্গনে। প্রাঙ্গন ঠিক বলা না গেলেও বিশাল এলাকা জুড়েই রয়েছে জলদ্বারা বেষ্টিত বানগড়। জলদ্বারা বেষ্টিত এই জলাভূমি একসময় পরিখা হিসাবে রাজার দূৰ্গকে বাইরের চটজলদি আক্রমন থেকে রক্ষা করতো।
বানগডের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বড় একটা এলাকা জুড়ে প্রাচীন কালের ধ্বংসাবশেষ। যেটিকে স্থানীয় মানুষ বানরাজার প্রাসাদের অবশেষ হিসাবে মনে করে থাকেন। বানগড়ের মধ্যভাগে রয়েছে বানগডের উঁচু অংশটি , যেখানে বিগত দশকে খনন কার্যে উঠে আসা ধ্বংস্বাবশেষ রয়েছে। বানগড়ের দক্ষিন প্রান্তের সীমানা ঘেঁষে রয়ে প্রচিন কালের ইটের তৈরি বড় বড় দেওয়ালের ভগ্নাংশ এবং গোলাকার সজ্জিত দেওয়াল। সকলে এটিকে সেই সময়ের ব্যবহিত প্রতিরক্ষা চূড়ার ধ্বংস্বাবশেষ মনে করে থাকেন।
কালদিঘী ও ধলদিঘী
বানগড় দেখা হলে রওয়ানা দিন কালদিঘী ও ধলদিঘীর দিকে যেটি গঙ্গারামপুরের অন্য আকর্ষন গুলোর মধ্য একটি। কথিত আছে যে বানরাজার দুই কন্যা ঊষা যে অপূৰ্ব সুন্দরি ও গৌর বর্ণের অধিকারিনী ছিলেন তিনি ধলদিঘীতে স্নানের জন্য আসতেন এবং তার সাথে বানরাজের দ্বিতীয় কন্যা যে অপেক্ষাকৃত কালো বর্ণের ছিলেন তিনি কালদিঘীতে স্নানের জন্য আসতেন।
ধলদিঘীর পারেই রয়েছে একটি গুহামুখ কথিত আছে এই পথেই নাকি আসতেন ঊষারানি স্নান করতে , অন্যদিকে কালদিঘীতে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরযায়ী পাখির দল।
আতাশাহের সমাধি
ধলদিঘীর যে প্রান্তে ঊষারানির স্নানের ঘাটটি রয়েছে সেই ঘাটের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন দরগা । এই দরগাটিতে বিখ্যাত সুফি সন্ত মৌলানা আতাউদ্দিন শাহের মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়েছে। যার কবরগাত্রে মোট চারটি প্রস্তরফলক দেখা যায়। মধ্যযুগে মুসলিম শাষন প্রতিষ্ঠা হলে সুফি সন্ত মৌলানা আতা উদ্দিন শাহ সুধিবাদ প্রচারে দিনাজপুরে পা রাখেন।
এই সুফি সন্ত আতাশাহ ছিলেন সেই সময়ের সুফি বাদের প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম।
হাইস্কুল পাড়ার শিব মন্দির
আতাশাহের দরগা দেখার পর সেই রাস্তা ধরে পশ্চিমরাস্তা ধরে এক কিমি দুরে রয়েছে গঙ্গারামপুর উচ্চ বিদ্যালয় , সেই বিদ্যালয়ের সামনে ঘুপছি একটি গলিতে রয়েছে প্রাচীন আরেকটি ছোট শিব মন্দির। যেটি সংরক্ষন করা হয়েছে নতুন করে তাই এই মন্দিরের প্রাচীনতার যে ছাপ সেটি আর দেখা যায় না।
বখতিয়ার খিলজীর সমাধি
গঙ্গারামপুরের অভ্যন্তরে সবকিছু দেখা হয়ে গেলে , পুনর্ভবা নদির ওপারে কালিতলা হয়ে যেতে পারেন পীরপাল নামের গ্রামের উদ্দেশ্যে । এই পিরপাল গ্রামে রয়েছে ভারতের ইতিহাস বিখ্যাত তুর্কি বীর ইখতাইর উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজির সমাধি। যেটি স্থানীয়দের কাছে বুড়া পীড়ের দরগা নামে পরিচীত।
এই বিখ্যাত যোদ্ধা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ,বহু বৌদ্ধমঠ ও মন্দির ধংস্ব করেন। তার কারনেই বাংলার বুকে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, এবং গঙ্গারামপুরে রাজধানি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। (এই পীরপাল গ্রামের অনেকেই বিছানাই ঘুমোন না ,কারন বখতিয়ার খলজির দেহ মাটিতে পোঁতা রয়েছে । তাই বখতিয়ার খলজির প্রতি সম্মান জানিয়ে গ্রামের অনেকেই বিছানাই নিদ্রা নেন না।)
সম্রাট অশোকের বৌদ্ধমঠ
বখতিয়ার খলজির কবর দেখে বেরিয়ে এসে রাস্তার বাঁ পাশে ঘন আগাছার আচ্ছাদনে ঢাকা প্রাচীন কালের ইটের ইমারতের ধ্বংস্বাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। যেটি পরিচীত বারোদুয়ারি ধ্বংস্বেবশেষ হিসাবে। বারোদুয়ারি নামে পরিচীত হলেও এটির প্রচিনত্ব নাকি বহু প্রচীন। অনেকের মতে এই ইমারতটি সম্রাট অশোকের আমলে তৈরি হওয়া একটি বৌদ্ধ মঠ। যেটি বখতিয়ার খিলজীর আমলে ধ্বংস্ব করে দেওয়া হয়।
এবার শিববাডী হাট দিয়ে পুনর্ভবা নদি পার করলে পরবে দেবীপুর নামের একটি গ্রাম ,যে নামটি এসেছে প্রচীন নাম দেবীকোট থেকে। যেই গ্রামে রয়েছে একটি বড় আকারের মাটির ঢিঁবি যেটির স্থানিয় নাম ঊষাতিটী।
এখানে দেখার মত কিছু না থাকলেও ,জানানোর কর্তব্য রয়েছে। কথিত আছে যে এখানে বানরাজার ভয়ে শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধ ও তার পত্নি ঊষা গান্ধর্ব বিবাহের পর এই স্থানেই অত্মগোপন করেছিল।
ঊষারানির স্তম্ভ
শিববাড়ীর শিব লিঙ্গ থেকে শুরু করে যাবতীয় দর্শনের পর খুব কাছেই রয়েছে মিশনপাড়া যেখানে রয়েছে বিশেষ পাথরের চারটি স্তম্ভ। এই চারটি পাথরের স্তম্ভকে মহাভারতের একটি ঘটনার সাথে যুক্ত করে দেখা হয়। কথিত আছে যে এটি হল কৃষ্ণ ঠাকুরের নাতি অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনা তলা , আর এই চারটি পাথরের স্তম্ভ সেই ছাদনা তলার কলাগাছ যা পরবর্তি কালে পাথরে পরিনত হয়েছে।
ঊষারানির কলাগাছ গুলোকে নিয়ে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে স্থানিয়দের কাছে । তাদের মতে যে বা যারা এই পাথরের স্তম্ভের চারটি জরিয়ে ধরতে পারে তার মনবাঞ্চা পূৰ্ন হয়।
জীবন ও মরনদায়ী পুকুর
স্তম্ভ গুলিকে জরিয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছা পূৰ্ণ হলে বেরিয়ে বামদিকের রাস্তাই ঢালাই রাস্তা দিয়ে ৫০ মিটার পথ গেলেই বাঁ দিকে একটি ছোট অথচ গভির পুকুর দেখতে পাওয়া যায় যেটি পরিচীত জীবনদায়ী পুকুর বা জীয়নকুন্ড বলে। প্রচলিত ধারনা মতে বানরাজার আমলে এই পুকুরের মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার বিশেষ ক্ষমতা ছিল।
আবার একি ভাবে পশ্চিমের ঢালাই রাস্তাই গেলে হাতের বাঁ দিকে আরেকটি গভির পুকুর দেখা যাবে যেটি আবার পরিচীত মরনদায়ি পুকুর বা মরনকুন্ড বলে। জীয়নকুন্ডর মতনি এই পুকুরেরো ছিল মৃত্যদান করার বিশেষ ক্ষমতা। রাজা বান অপরাধিদের মৃত্যদন্ড দেবার জন্যই এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন বলে কথিত রয়েছে।
বানগড়
পুকুর দেখা সমাপ্ত হলেই পায়ে হেটেই চলে যেতে পারেন দক্ষিন দিনাজপুরের সবথেকে পরিচিত ঐতিহাসিক প্রাঙ্গনে। প্রাঙ্গন ঠিক বলা না গেলেও বিশাল এলাকা জুড়েই রয়েছে জলদ্বারা বেষ্টিত বানগড়। জলদ্বারা বেষ্টিত এই জলাভূমি একসময় পরিখা হিসাবে রাজার দূৰ্গকে বাইরের চটজলদি আক্রমন থেকে রক্ষা করতো।
বানগড় গঙ্গারামপুর |
বানগডের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বড় একটা এলাকা জুড়ে প্রাচীন কালের ধ্বংসাবশেষ। যেটিকে স্থানীয় মানুষ বানরাজার প্রাসাদের অবশেষ হিসাবে মনে করে থাকেন। বানগড়ের মধ্যভাগে রয়েছে বানগডের উঁচু অংশটি , যেখানে বিগত দশকে খনন কার্যে উঠে আসা ধ্বংস্বাবশেষ রয়েছে। বানগড়ের দক্ষিন প্রান্তের সীমানা ঘেঁষে রয়ে প্রচিন কালের ইটের তৈরি বড় বড় দেওয়ালের ভগ্নাংশ এবং গোলাকার সজ্জিত দেওয়াল। সকলে এটিকে সেই সময়ের ব্যবহিত প্রতিরক্ষা চূড়ার ধ্বংস্বাবশেষ মনে করে থাকেন।
কালদিঘী ও ধলদিঘী
বানগড় দেখা হলে রওয়ানা দিন কালদিঘী ও ধলদিঘীর দিকে যেটি গঙ্গারামপুরের অন্য আকর্ষন গুলোর মধ্য একটি। কথিত আছে যে বানরাজার দুই কন্যা ঊষা যে অপূৰ্ব সুন্দরি ও গৌর বর্ণের অধিকারিনী ছিলেন তিনি ধলদিঘীতে স্নানের জন্য আসতেন এবং তার সাথে বানরাজের দ্বিতীয় কন্যা যে অপেক্ষাকৃত কালো বর্ণের ছিলেন তিনি কালদিঘীতে স্নানের জন্য আসতেন।
ধলদিঘীর পারেই রয়েছে একটি গুহামুখ কথিত আছে এই পথেই নাকি আসতেন ঊষারানি স্নান করতে , অন্যদিকে কালদিঘীতে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরযায়ী পাখির দল।
আতাশাহের সমাধি
ধলদিঘীর যে প্রান্তে ঊষারানির স্নানের ঘাটটি রয়েছে সেই ঘাটের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন দরগা । এই দরগাটিতে বিখ্যাত সুফি সন্ত মৌলানা আতাউদ্দিন শাহের মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়েছে। যার কবরগাত্রে মোট চারটি প্রস্তরফলক দেখা যায়। মধ্যযুগে মুসলিম শাষন প্রতিষ্ঠা হলে সুফি সন্ত মৌলানা আতা উদ্দিন শাহ সুধিবাদ প্রচারে দিনাজপুরে পা রাখেন।
আতাশাহের দরগা গঙ্গারামপুর |
এই সুফি সন্ত আতাশাহ ছিলেন সেই সময়ের সুফি বাদের প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম।
হাইস্কুল পাড়ার শিব মন্দির
আতাশাহের দরগা দেখার পর সেই রাস্তা ধরে পশ্চিমরাস্তা ধরে এক কিমি দুরে রয়েছে গঙ্গারামপুর উচ্চ বিদ্যালয় , সেই বিদ্যালয়ের সামনে ঘুপছি একটি গলিতে রয়েছে প্রাচীন আরেকটি ছোট শিব মন্দির। যেটি সংরক্ষন করা হয়েছে নতুন করে তাই এই মন্দিরের প্রাচীনতার যে ছাপ সেটি আর দেখা যায় না।
গঙ্গারামপুর হাইস্কুল পাড়ার শিব মন্দির |
গঙ্গারামপুরের অভ্যন্তরে সবকিছু দেখা হয়ে গেলে , পুনর্ভবা নদির ওপারে কালিতলা হয়ে যেতে পারেন পীরপাল নামের গ্রামের উদ্দেশ্যে । এই পিরপাল গ্রামে রয়েছে ভারতের ইতিহাস বিখ্যাত তুর্কি বীর ইখতাইর উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজির সমাধি। যেটি স্থানীয়দের কাছে বুড়া পীড়ের দরগা নামে পরিচীত।
এই বিখ্যাত যোদ্ধা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ,বহু বৌদ্ধমঠ ও মন্দির ধংস্ব করেন। তার কারনেই বাংলার বুকে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, এবং গঙ্গারামপুরে রাজধানি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। (এই পীরপাল গ্রামের অনেকেই বিছানাই ঘুমোন না ,কারন বখতিয়ার খলজির দেহ মাটিতে পোঁতা রয়েছে । তাই বখতিয়ার খলজির প্রতি সম্মান জানিয়ে গ্রামের অনেকেই বিছানাই নিদ্রা নেন না।)
সম্রাট অশোকের বৌদ্ধমঠ
বখতিয়ার খলজির কবর দেখে বেরিয়ে এসে রাস্তার বাঁ পাশে ঘন আগাছার আচ্ছাদনে ঢাকা প্রাচীন কালের ইটের ইমারতের ধ্বংস্বাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। যেটি পরিচীত বারোদুয়ারি ধ্বংস্বেবশেষ হিসাবে। বারোদুয়ারি নামে পরিচীত হলেও এটির প্রচিনত্ব নাকি বহু প্রচীন। অনেকের মতে এই ইমারতটি সম্রাট অশোকের আমলে তৈরি হওয়া একটি বৌদ্ধ মঠ। যেটি বখতিয়ার খিলজীর আমলে ধ্বংস্ব করে দেওয়া হয়।
**সুমন্ত মাহালী হেমরম**
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন