Unique knowledge bangla

History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

আদিবাসীরা হিন্দু নয় || দাবী সারনা ধর্ম কোডের || Tribes are not Hindu || Demand Sharna religious code ||

মে ২১, ২০২১

 কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ বলছেন তাদের ধর্মাচরণের রীতিতে কিছু কিছু হিন্দু রিতির মিল থাকলেও মূলত তারা প্রকৃতি পূজারী। নিরপেক্ষতার বিচারে সর্বাঙ্গীন এক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কার্যত সিমাহীন। সেইসূত্ৰে ধর্ম আর ধর্মাচারকে গুলিয়ে ফেলা বোধ হয় ঠিক হবে না। বাস্তব পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে, তাই যেকোন শ্রেণিবিন্যাসের আগে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাস্তবে 'আদিবাসী' সম্বন্ধে যথার্থ ধারণার ক্ষেত্রে ভারতিয় জনগনের শিংহভাগের মধ্যে বেশ কিছুটা দূৰ্বলতা আছে। তবে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিবাসী সমাজের একটি বড় অংশ একটি পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে বিধানসভায় সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, যেখানে তাদের ধর্মটির পরিচয় দেওয়া হয়েছে 'সার্না" ধর্ম হিসাবে। এতেই আঁতে ঘাঁ পরেছে কিছু কিছু হিন্দু সংগঠনে, যেমন হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের, তাদের মতে আদিবাসী সমাজ আসলে সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অনুসারী। কিন্তু বিপরীতে বিশাল অঙ্কের আদিবাসীরা নিজেদের হিন্দু তকমা দিতে নারাজ। এই বিষয়ে খোদ ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আদিবাসীদের পূৰ্বের জনগননার ন্যায় আলাদা ধর্মকোডের দাবি জানিয়ে মত প্রকাশ করে বলেন আদিবাসীরা হিন্দু নন, এবং এই বিষয়ে একটি বিলও পেশ করেন।

আদিবাসী সমাজ
বর্তমানে গোটা ভারতে আদিবাসীদের সংখ্যা এগারো কোটির বেশি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আদিবাসীদের ভাবাবেগ নিয়ে দোটানা, চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক, এমনাবস্থায় মালদা গাজোলের গুরু মা নামে পরিচীত কমলী সরেনের পদ্মশ্রী পুরষ্কারে নামাঙ্কন , আদিবাসীদের হিন্দুত্বকরণের চক্রান্তের  নামান্তর হিসাবেই মনে করছে আদিবাসী সংগঠনগুলি, আদিবাসী সংগঠনের মধ্যে একটি ‘আদিবাসী সেঙ্গল অভিযান’ দাবী জানাই - পূৰ্বে জনগণনার সময়ে  আদিবাসীরা পৃথক ধর্মের উল্লেখ করার অধিকার পেতেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে  তাদের এই পৃথক কলাম সরিয়ে শুধুই হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি প্রধান ধর্মগুলির কলামগুলোকে রাখা হয়। স্বাধিনতার পূৰ্বে আদিবাসীদের পৃথক কলাম হিসাবে ১৮৭১ - ৯১ পর্যন্ত ABORGENES বা আদিম ধার্মিক আধিবাসী হিসাবে ধরা হয়েছিল। অতঃপর ১৯০১ - ২১ পর্যন্ত ANIMIST, ১৯৩১ সালের জনগননাই TRIBAL RELIGIOUS বা আদিবাসী ধর্ম হিসাবে ধরা হয়েছিল , আর ১৯৪১ সালে TRIBES বা আদিবাসী হিসাবে জনগননা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে আদিবাসীরা।
সারনা ধর্ম কোডের দাবীতে বিক্ষোপ প্রদর্শন

ঝাড়খন্ডের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পৃথক ধর্মকোডের প্রস্তাবটি যদি কেন্দ্রীয় সরকার সম্মতি প্রদান করে, তবে ভাবী আদিবাসীরা তাদের প্রকৃত ধর্মের মর্যাদা ফিরে পাবে, এবং হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি কলামের সাথে "সার্না" ধর্মের নামও উল্লেখ করা থাকবে।
শেষবার ২০১১ সালে জনগননা হয়েছিল। যেই জন-গননাই আদিবাসীদের ৯ % হিন্দু , ০.৫ % মুসলিম , ৩৬ % খ্রীষ্টান , ৭.৪ % বৌদ্ধ ধর্মে ,০.৯ শিখ ,২.৬ জৈন ,১৫.৯ জরাথুষ্ট্রিয়ান , ৮২.৫ % বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিসাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে। আদিবাসী সংগঠনগুলোর দাবী এই বছরের জনগননাই (২০২১) আদিবাসী ধর্মের পৃথক পরিচয় দেওয়া হোক। আর তাদের এই দাবীকে জোরালো আকারে তুলে ধরতে গোটা ভারত-ব্যাপি রেল অবরোধের কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিল "আদিবাসা সেঙ্গেল অভিযান"। ফলস্বরুপ মালদহেও শুরু হয়েছিল রেল অবরোধ। এই অবরোধে সমস্যায় পরতে হয়েছিল যাত্রীদের, তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছিল প্রায় দেড় হাজার পিএসসি পরীক্ষার্থীদের, কারন সেইদিনই ছিল পরিক্ষা, যাইহোক  সেইদিনের অবরোধের জন্য পরবর্তীকালে শিলিগুড়িতে বিভিন্ন সেন্টারে পুনরাই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন - মহুয়া গাছ ও আদিবাসী সমাজ।

তবে এখনো সমস্যার শিকড় অনেক গভিরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আদিবাসীদের হিন্দুত্বে ফিরিয়ে আনার পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে, এবং অনবরত হিন্দুত্ববাদী সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলী বনবাসী কল্যাণ আশ্রম বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কাজ করে চলেছে। কিন্তু এক কদম পিছিয়ে প্রকৃত পরিচয়ের সাপেক্ষে পুনরাই আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। প্রথমত. যেটা ভাবা দরকার তা হল, 'আদিবাসী' বলতে স্বাধীন ভারতে আমরা কাদের চিহ্নিত করি - ভারতের সংবিধানের ৩৪২ ধারা মতে রাষ্ট্রপতি একটি তালিকা প্রকাশ করেন, সেখানে যে জনগোষ্ঠীগুলির নাম থাকে তারা এসটি বা তপশিলী উপজাতি। ভারতীয় ইতিহাসের অনবরত ধারাই আদিবাসীদের মাঝেও জাতি, রিতি, ধর্মীও মতাদর্শের আদান-প্রদান ঘটেছে। যার দরুন ভারতীয় আদিবাসীদের মাঝেও দেখা গিয়েছে অদৃশ্য রুপান্তরকারী শক্তির অনুপ্রবেশ। সেই দরুন ধর্মীয় পরিচয়ের দিক দিয়ে হিন্দু আদিবাসী ছাড়াও রয়েছে ক্রিশ্চান ধর্মাবলম্বী আদিবাসী,রয়েছে বৌদ্ধ আদিবাসী- লেপচা, ভুটিয়া প্রভৃতি, এমনকি লাক্ষাদ্বীপের আদিবাসীদের শ্রেষ্ঠাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী একাধারে আদিবাসী। আর এই সত্যটিকে বাস্তবিক দর্পনের রুপ দেওয়া যাই তবে বর্তমানে আদিবাসীরা হিন্দুর পাশাপাশি বৌদ্ধ, মুসলমান এবং ক্রিশ্চানও বটে।

ভারতীয় আদিবাসী গোষ্ঠির একটি
তবে প্রশ্ন থেকে গেল "সার্না" বা "সারি" ধর্মের যৌক্তিকতা তবে কি? "সার্না" প্রকৃতিকে ভগবানের আসনে প্রতিস্থাপন করে প্রকৃতিকে ভগবান রুপে গ্রহণ করা, আর এটিই হল "সার্না" বা "সারি" ধর্মের পরিচয়। যেখানে 'সিংবোঙ্গা (সূৰ্য ভগবান), চান্দুবোঙ্গা (চন্দ্র ভগবান), মারাংবুরুর উপাসনা করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাই, যা উপাদানগত একপ্রকার বলেই অনুমেয়। এক্ষেত্রে যদি বলা হয়, আদিবাসীর ধর্মাচারের মূল উপাদানগুলি হিন্দু ধর্মের। সে হিসেবে আদিবাসীরা আদিতে হিন্দু ছিল। কিন্তু অপরদিকে নির্মল কুমার বসু তার 'হিন্দু মেথড অব ট্রাইবাল অ্যাবর্জপসান' মতে, হিন্দু সমাজে আদিবাসীদের আত্তীকরণ একটি প্রচলিত ধারণা, উনার মতে এই একইভাবে আদিবাসী বেশ কিছু গোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মে প্রবেশ ঘটেছে। এর ফলে তাদের আদি ধর্মাচারও পাল্টে গেছে, কিংবা পূর্বের উপাদানগুলি সঙ্গে নতুন উপাদান সংযোজিত হয়েছে। সমাজশাস্ত্রবিদ গোবিন্দ সদাশিব ঘুরে আদিবাসীদের ‘পশ্চাদপদ হিন্দু’ বলে দেন। উনার মতে পূর্বে সবাই একই রকম সামাজিক অবস্থায় ছিল। সেই সূত্রে হিন্দু ধর্মের উপাসক হয়েও , সেই ধর্মের গোঁড়ামীতে নিজেদের শুদ্র বা নীম্ন বর্ণের (নিচু জাত) ছাপ্পা লাগাতে চাইবেনা আদিবাসী সমাজ।
সার্না ধর্মের মত হিন্দু ধর্মের মধ্যেও সর্বাত্মাবাদ রয়েছে। ১৯১১ সালে  ভারতীয় আদিবাসী সমাজের উপর তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে হার্বাট হোপ রিজলে বলেছিলেন- "আদিবাসী সর্বাত্মাবাদীরা আদিবাসীদের স্বকীয় ধর্ম পালন করে।" সুতরাং আদিবাসীদের স্ব মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পুনরাই তাদের পৃথক ধর্মের দাবী অগ্রাধিকার দেওয়াই বাঞ্চনীয়।

আরো পড়ুন - ডাইনি হত্যা ও আদিবাসী সমাজ।

রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

বনসাই গাছ যেন জীবন্ত শিল্প || BONSAI TREE BEAUTY BECAME SMALL ||

মার্চ ১৪, ২০২১

 

"বনসাই" প্রদর্শনী গেছেন কি কখনো? সুযোগ পেলেই যাবেন এক সময়। এ যেন এক অন্য জগৎ "গুলিভার ট্রেভেল্স" গল্পটির কথা মনে পরে যাই, ঠিক যেন লিলিপুটের দেশে। বিশাল বিশাল গাছ হঠাৎ করে যেন কোনো এক যাদুকরের যাদুতে ছোট হয়ে গেছে, আর এতটাই ছোট হয়ে পরেছে যে হাত দিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, এটা কি বাস্তব! নাকি স্বপ্নের ঘোর কাটেনি চোখ থেকে। হাত বোলালেই বোঝা যাই, না এটা কোনো অবাস্তব নই, সবকটি গাছই জীবন্ত। আসলে বনসাই এর জগৎটিই বড্ড আলাদা।
বনসাই কি?
এক বাক্যে বলতে চাইলে বিশাল গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ হল "বনসাই" বা "বনজাই"। যার জন্ম চীনে, যদি এই শব্দের অর্থ খুঁজতে চান, তবে এর অর্থ দ্বারাই "বেঁটে গাছ"। অর্থাৎ বৃক্ষজাতীয় কোনো উদ্ভিদকে ছোট আকারে টবের মধ্যে প্রতিস্থাপন করাই হল বনসাই। প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানী ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। নিশ্চয় ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের কথা শুনেছেন, যদি শুনে থাকেন তবে বনসাইয়ের বিষয়েও শুনে থাকবেন।
বর্তমানে বনসাই গোটা বিশ্বে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে, তার ফলে বর্তমানে গোটাবিশ্বেই একটি  শিল্পের রুপ নিয়েছে। যে কারনে বনসাই টেকনিককে "জীবন্ত শিল্প" বলা হয়ে থাকে।

বনসাই গাছ
চীনের এই শিল্প একে একে ক্রমশঃ তার সিমানা ছাড়িয়ে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা প্রায় প্রত্যেক মহাদেশেই এর প্রসার ঘটেছে। এমনকি টকিয়োর রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরানো জীবিত একটি বনসাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বর্তমানে ভারত তথা বাংলাদেশেও এর চাহিদা তুঙ্গে।
বনসাই এর গাছ
চিরহরিৎ থেকে শুরু করে পর্ণমোচি, প্রায় সব রকম গাছেরই বনসাই করা সম্ভব, তবে তা হতে হবে বৃক্ষ জাতীয়। অর্থাৎ যে গাছ বৃদ্ধি হবার সাথে সাথে, যার কান্ড বড় হতে শুরু করে। আমাদের ভারত তথা বাংলাদেশের আবহাওয়া বনসাই করা যাবে এমন বৃক্ষের জোগান দিয়েছে প্রচুর ভাবে, ফুল থেকে ফল, এমনকি ঝুড়ি বেরোই এমন গাছের প্রাচুর্য রয়েছে, যেমন - বট, অশত্থ। এছাড়াও ফল গাছের মধ্যে তেতুঁল, বেদানা, কুল, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে যে সমস্ত গাছের বনসাই করা যেতে পারে তাদের তালিকা বিশাল,যেমন - বট, বকুল, শিমুল, পাকুড়, তেঁতুল, শিরিষ, বাবলা, পলাশ, বিলিতি বেল, ছাতিম, হিজল, নীলজবা, লালজবা, নিম, সুন্দরী, লাল গোলাপ, বাবলা, কনকচাঁপা,কামরাঙা, আমলকি, ডুমুর, আলমন্ডা, এলাচি, গোলাপজামুন, জাম, নিম, বেলি, গাব, শেফালী, পেয়ারা, হেওরা, ডালিম, তমাল, জাম্বুরা, কমলা, বহেরা, মেহেদী, অর্জুন, জামরুল, করমচা, লুকলুকি, কৃষ্ণচূড়া, কদবেল, দেবদারু, হরিতকি, আরো প্রচুর। যদি মন চাই তবে আপনি এর মধ্যে থেকে যে কোনো গাছ বেছে নিতে পারেন।
বনসাই জাবন্ত শিল্প

বনসাই এর ব্যবহার
বনসাইকে জীবন্ত শিল্প কলা বলা হয় এর সৌন্দর্যের উপর ভিত্তী করে। বাড়ীর ছাদ সাজানো কিংবা বাড়ীর আঙ্গিনা, সব জায়গাতেই এর উপস্থিতী অপূৰ্ব। বনসাই গাছ তৈরীর জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে আরেকটি কারন, আর সেটি হল এর বাজার চাহিদা, ফলে বনসাই বানিয়ে তা বাজারজাত করাও অনেকে তার পেশা বানিয়ে ফেলেছে। একটি বনসাই গাছের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে তবে সেটা নির্ভর করে বনসাই গাছের বয়স, তার আকৃতির উপর। সেই জন্য ভারত সরকার "স্কিল ইন্ডিয়া" প্রজেক্টে বনসাই তৈরি করাটাও অন্তর্ভূক্ত করেছে। যা প্রচুর ভারতীয়কেও সাবলম্বী হবার পথ দেখিয়েছে।

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১

জাল আদিবাসী শংসাপত্র বা কাষ্ট সার্টিফিকেট ও আদিবাসীদের অধিকার || problems of fake caste certificate ||

জানুয়ারী ১৩, ২০২১

 নোবেল জয়ী এক ভারতীয় লরিয়েটের  বাস্তববাদী প্রবাদ দূৰ্ভিক্ষ ক্ষরার কারনে নই, অর্থ এবং খাদ্যের অসম বন্টনের ফল, অর্থ হোক বা খাদ্যবস্তু , কিন্তু আদিবাসী সমাজকে যে কোন অর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সরিয়ে রাখাই, আদিবাসী তার হৃতগৌরব ভুলে গিয়েছিল, সেই হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় সংবিধানে মহান আত্মা ডঃ আম্বেদকর তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষন প্রদানের সুব্যবস্থা করেছিলেন, এবং সেই উদ্দৈশ্যকে বাস্তবায়নে বিশেষ গুরত্ব রাখে তপশিলী জাতি ও উপজাতি শংসাপত্র। নিরবীচ্ছিন্ন শোষন, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অবমাননা, অর্থনৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিশারীর কান্ডারি হয়ে উঠেছিল জাতীগত শংসাপত্র, কিন্তু নির্লজ্জ কিছু অসাধু ধান্দাবাজের দল তাদের কালো থাবা বসিয়ে দিচ্ছে সেই অংশেও। মহাবিদ্যালয় হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়, পি.এস.সি হোক বা যে কোনো উন্নয়ন মূলক সরকারি সহযোগিতা, সর্বস্থানে নির্বাচিত তপশিলী উপজাতির তালিকার শিংহভাগ অ-আদিবাসীদের উপস্থিতী।

ছাত্রী দল

গলদ কোথাই, মিথ্যাবাদী অসৎ উপায়ে সুযোগ সন্ধানী কিছু সামাজিক হার্মাদ বাহিনী রাজনৈতিক ও কিছু অযোগ্য সরকারি কর্মচারির সহযোগে লুটে নিচ্ছে না তো পবিত্র হৃদয়ের আদিবাসীদের? ২০১৪ সালে খবরের পাতায় উঠে এসেছিল একটি বিশেষ শিরেনাম, ঘটনাটি উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া নক্সালবাড়ি এলাকার, বিরোধী পক্ষের মতে নির্বাচিত বিধায়ক যে তপশিলী আসনে লড়াই করে জিতেছেন, সেই জাতিগত শংসাপত্রই নাকি জাল। বিরোধী পক্ষের সমর্থকেরা এই বিষয়ে তথ্য প্রমান সহ অভিযোগও জানিয়েছিল। আবার এমন ঘটনাও বর্তমান অহরহ চোখে পড়ছে যেখানে পঞ্চায়েত প্রধান অ-আদিবাসীদের পরিচয়পত্রে অসৎ উপায়ে যে কাউকে আদিবাসী তকমা দিয়ে তাদের তপশিলী শংসাপত্র বের করতে সহযোগীতা প্রদান করছে।
ঠিক একি উপায়ে ২০১৪ সালে  জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে দিব্যি সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার এক ব্যাক্তি। কিন্তু বাঁধ সাধলো হঠাৎ করে সেই শংসাপত্র পরীক্ষা, দেখা যাই যে সেই ক্রমিক নম্বরে ওই শংসাপত্রের কোনো অস্তিত্বই নেই। দক্ষিনবঙ্গের জাল আদিবাসী শংসাপত্রের পরিমান উত্তরবঙ্গের থেকে অনেক বেশী, তবে কয়েকটি ক্রমাগত উঠে আসা ঘটনা সন্দেহজনক বাতাবরনের ইঙ্গিত দিয়ে চলেছে। বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়মাইলের বাসিন্দা এক অ-আদিবাসী মহিলা আদিবাসী পরিচয়ে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে বালুরঘাটের পতিরাম বাহিচা এলকে উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেই, কিন্তু সেই বিষয়টি স্থানিয় আদিবাসী সংগঠনের চোখে পরে যাই, শেষে তাদের মধ্যস্থতাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আরো পড়ুন- বোকা আদিবাসী এবার চালাক হও।

যতদিন এই সমস্যা খুচরো হিসেবে উঠে আসছিল ততদিন এই বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ ছিল না কারো। কিন্তু একস্মাৎ ভুয়ো তপশিলী জাতি ও উপজাতির বৃদ্ধিদর ভাঁজ ফেলেছে আদিবাসী শিক্ষীত সমাজের কপালে। শুধু তাই নই ফেক সার্টিফিকেট বিষয়টি নিয়ে লোকসভাতেও আলোচনা হয়েছে বহুবার, সেই আলোচনার তথ্য অনুযায়ী মোট ১৮৩২ জন সরকারি কর্মচারীদের অস্তিত্ব জানতে পারা যাই যারা জাল শংসাপত্র ধারন করে দীর্ঘকাল ধরে সরকারি চাকরি করে আসছেন। যার মাঝে মজার কথাটি হল প্রকাশিত তথ্যের বেশীরভাগ অংশীদারিত্ব ব্যাঙ্কিং সেক্টরে, প্রায় ১২৯৬ জন। তাহলে সহজেই অনুমেয় সরকারি চাকুরির বাকি সেক্টরের ফেক তপশিলী জাতি বা উপজাতীর সংখ্যা কতটা হতে পারে।

আদিবাসী পরিচয়ে অ-আদিবাসী

আদিবাসী মহলের কাছে বিষয়টি জোরালো হতে শুরু করে মন্থর গতিতে, যখন সংরোক্ষনের বিরোধীতাই বহুল পরিমানে স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজিবীরা সংরক্ষনের বিরোধে যুক্তি দেখাতে শুরু করে তখন নব শিক্ষায় শিক্ষিত তপশিলী জাতি ও আদিবাসী শিক্ষিত সমাজ ইতিহাসের প্রত্যেক অংশের ঘটনাচক্র তুলে ধরে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, ঠিক এই সময়েই পি.এস.সি দ্বারা প্রকাশিত ফলে আদিবাসী চাকরি প্রাথীর চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসীদের পরিবর্তে বেশীরভাগ অ-আদিবাসীদের নাম, দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আদিবাসীদের একাংশ। যদিও এমন ঘটনার প্রতিবাদ এই প্রথমবার হয়েছে এমনটিও নই, এর আগেও বহুবার বিভিন্ন কলেজে উঠে আসা সমস্ত ভুয়ো শংসাপত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন প্রতিবাদ করেছেন, এছাড়াও অবৈধ ভাবে আদিবাসী শংসাপত্র প্রদানের বিরুদ্ধেও অনেক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাষের শেষের দিকে অবৈধভাবে জাল আদিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে বাঁকুড়ার আশা সংগঠন, বাঁকুড়ায় জেলা আধিকারীকের কাছে ডেপুটেশন প্রদান করেছিল। শুধু তাই নই গত বছরের পি.এস.সি মিসলেনিয়াস পরিক্ষার চুড়ান্ত তালিকাই সন্দেহভাজন অ-আদিবাসীদের নাম থাকাই বাংলার উদ্যম সন্তান জাতীয় বাংলা সংসদের সদস্যরা করোনা অতিমারীর মহূৰ্তে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস মহাশয়ের নেতৃত্বে ধর্নায় বসেছিল, অবশেষে পি.এস.সি তাদের ডেপুটেশন নিতে বাধ্য হোন।
আরো পড়ুন - আদিবাসী ও সরকারের বেসরকরিকরণ নিতি।
বাংলার বঙ্গসন্তানের পাশাপাশি আদিবাসীদের স্বকীয় সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন "ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল " এর পনত পারগানার ( রাজ্য সভাপতি) পক্ষ থেকেও উক্ত দুর্নীতি ও সঠিক ভাবে নিয়োগ পদ্ধতি যাচাইয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, সহকারি চেয়ারম্যান, এছাড়াও কেন্দ্রীয় তপশিলী উপজাতি উন্নয়ন পরিষদেও পত্র প্রেরণের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবুও কিছু কিছু অনুসন্ধিৎসা থেকেই যাই, জাল শংসাপত্রের এত সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারন কী? এর থেকে কি বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী, সরকার প্রদত্ত সকল যোজনা জনগনের কাছে পৌছে দিতে "দুয়ারে সরকার" নামক মহিম শুরু করেছেন। সহজে সরকারি পরিষেবা জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়াই তার লক্ষ্য। ফলে সরলীকরণ হয়েছে জাতিগত শংসাপত্র (Cast Certificate) প্রদানেও। মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবেই প্রশংসা জনক, কিন্তু একটা বিরুপ সন্দেহ থেকেই যাই? বর্তমানে প্রকৃত আদিবাসীদের থেকে অ-আদিবাসীদের ফেক তপশিলী উপজাতী শংসাপত্রের প্রাধান্য বেশী রয়েছে, তা বর্তমানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের, কিংবা যে কোনো চুড়ান্ত তালিকাই আদিবাসী সকলের নাম দেখলেই বোঝা যাই, এমনাবস্থায় কাষ্ট সার্টিফিকেট প্রদানে উদারিকরণ কালক্রমে আদিবাসীদের অধিকার হননের পথ হয়ে দাঁড়াবে না সেটা বলা মুশকিল। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতাদর্শ, এই ভাবে কাষ্ট সার্টিফিকেট বিলিয়ে না দেওয়াই উচিত। কে জানে? আদিবাসী অধিকারে দখল নেওয়ার উদ্ধত সুযোগ সন্ধানিদের কাছে এটা না হয়ে পরে সুবর্ণ সুযোগ। (চলবে)

মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২১

নোবেল পুরষ্কার, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান || ভারতীয় নোবেল প্রাপক || nobel prize indian winner ||

জানুয়ারী ০৫, ২০২১

বছরের শেষের দিকে ঠিক ১০ ই ডিসেম্বর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবার মত কিছু ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন এবং মানব কল্যান রহিত অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী বেছে নেওয়া হয় হাতে গোনা কিছু ব্যাক্তিদের, যাদের তার কৃতকর্মের জন্য প্রদান করা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান "নোবেল পুরষ্কার"। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পথ চলা এই সম্মান প্রদর্শনের ধারাবাহিকতাই বাদ পরেনি ভারতীয়রা, বিশ্বের দরবারে অনেক ভারতীয় আছেন বা ছিলেন যারা বিশ্বের এই শ্রেষ্ঠ সম্মানের অংশিদার হয়েছেন। 

স্যার আলফ্রেড নোবেল
স্বর্গীয় স্যার আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এই সম্মান, সুইডিশ থেকে প্রদান করা হয় (সুয়েডীয়: Nobelpriset নোবেল্‌প্রীসেৎ)। কিন্তু এই নোবেলের পথ চলার পেছনে রয়েছে আলফ্রেড নোবেলের আত্মজীবনির সেই অংশ যেখানে তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য আত্ম অনুশোচনায় ভুগে ছিলেন, যেই ঘটনার সাথে চলচ্চিত্রের "আয়রন ম্যান" এর কাহিনীর সাদৃশ্য পাওয়া যাই। কিভাবে তার আবিষ্কার মানব কল্যানের বিপরীতে নিয়ে গিয়ে মানব নিধনের জন্য ব্যবহার গল্পের নায়ক টনি স্টার্ককে আয়রন ম্যানে পরিবর্তন করেছিল, ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সাথেও।

নোবেল প্রাইজ পদক


নোবেল পুরষ্কারের উদ্ভাবনা
স্যার আলফ্রেড নোবেল ছিলেন একজন সুইস বিজ্ঞানী, রসায়নে সিদ্ধহস্ত, পাশাপাশি মারাণাস্ত্র আবিষ্কারক, তিনি তার জীবদ্দশায় ৩৫৫ টি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন, যার ফলে তিনি  প্রচুর ধন-সম্পদের মালিকও হন, তিনি যে যে জিনিস আবিষ্কার করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট, ব্যালাস্টিক (ক্ষেপনাস্ত্র)। যা সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রে অভূতপূৰ্ব পরিবর্তন এনেছিল, কিন্তু তার এই আবিষ্কারে তিনি শোকাস্তব্ধ হয়েছিলেন যখন তিনি জানলেন যে, তার এই আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষের বলির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি তার এই আবিষ্কারের দ্বারাই আলফ্রেড নোবেলের ভাই  লুডভিগ মারা গিয়েছিল।
আরো পড়ুন - ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস। 
নোবেল পুরষ্কার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান

তিনি তার এই ভয়ানক আবিষ্কারে দুঃখিত হলেও , কিছু আর করার নেই। তিনি আবিষ্কারক হিসাবে নাম কামিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সুনাম তার কাছে দুর্নাম স্বরুপই ছিল। শেষে গোটা বিশ্ব যাতে তাকে মানবতা হত্যাকারি হিসাবে না চেনে তাই তিনি তার অনেকগুলো উইল ছেড়ে যান, যা তার মৃত্যুর পর (১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সাল) তার শেষ উইল বা ইচ্ছা হিসাবে তার নামেই তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন, এই জন্য স্যার আলফ্রেড নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। তার এই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তার রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যাদের কাজ ছিল স্যার আলফ্রেড নোবেলের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এই ভাবেই বিশ্বের সেরা ব্যাক্তিদের, যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাবেন ,তাদের নোবেল পুরষ্কার দ্বারা সম্মান জানানো শুরু হয় ১৯০১ সালে।
প্রথম নোবেল জয়ী ব্যাক্তিরা
স্যার আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসার তার মৃত্যদিবসে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। প্রথম প্রথম পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে এই পাঁচটি বিষয়ের উপরেই নোবেল দেওয়া শুরু হয়, পরবর্তীকালে অর্থনিতী ক্ষেত্রেও নোবেল পুরষ্কার শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সাল থেকে। গোটা বিশ্বে সুইডেনের সুইডিশ একাডেমি নোবেল পুরষ্কার প্রদান করে, যার মধ্যে শান্তি ক্ষেত্রে নোবেল প্রদান করা হয় নরওয়ে থেকে, যাই হোক প্ৰথম পদার্থবিজ্ঞানে ভিলহেল্ম র‌ন্টগেন,শান্তির ক্ষেত্রে অঁরি দ্যুনঁ ও ফ্রেদেরিক পাসি, রসায়নে পান ফান্ট হফ , চিকিৎসাই এমিল ফন বেরিং, এবং সাহিত্যে পেয়েছিলেন স্যুলি প্র্যুদম। আবার অন্যদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনিতিতেও নোবেল দেওয়া শুরু হলে জান টিনবার্গেন ও রাঙ্গার ফ্রিস হল অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।
 ভারতীয় নোবেল জয়ী
ভারত আবার জগৎ মাঝে, শ্রেষ্ঠ আসন লবে। ঠিক তাই ভারত বিশ্বের দরবারে তার মহিমা প্রকাশ করেছে বহুবার, সাহিত্য, শান্তি, অর্থনিতী,পদার্থ প্রায় সব গুলোতেই নোবেলের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বহু ভারতীয়। যদিও নোবেল পুরষ্কার প্রদানের শুরুতে অর্থনিতী যুক্ত হয়নি।স্যার আলফ্রেড নোবেলের প্রতিকৃতি সহ খাঁটি সোনার দ্বারা তৈরি মেডেলের আকৃতির এই পুরষ্কার ভারতেও রয়েছে অনেকগুলি। যার ধারাবাহিকতা পরাধীন ভারত থেকেই শুরু, ব্রিটিশ ভারতীয় থেকে যার সূচনা। যার মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহনকারি ছিলেন দুইজন ব্রিটিশ নাগরিক রোনাল্ড রস ও রুডইয়ার্ড কিপলিং। রোনাল্ড রস ১৯০২ সালে চিকিৎসাই এবং ১৯০৭ সালে কিপলিং সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, আর যারা নোবেল পুরষ্কার পেয়ে থাকেন তাদের ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়। এমনি সমস্ত ভারতীয় নোবেল লরিয়েটদের নাম নিচে উল্লেখ করে দিলাম।

  • ১৯১৩ সালে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "গিতাঞ্জলী" সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
  • ১৯৩০ সালে চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন পদার্থবিদ্যাই "রমন এফেক্ট" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক।
  • ১৯৬৮ সালে ডঃ হর গোবিন্দ খোরানা চিকিৎসাক্ষেত্রে "ডি এন এ মডেল" এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশের মার্কিন নাগরিক।
  • ১৯৭৯ সালে মাদার টেরিজা শান্তির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি আলবেনিয়ায় জন্ম নেন এবং ভারতে এসে ভারতীয় নাগরিকতা গ্রহন করেন।
    ভারতীয় নোবেল জয়ীদের তালিকা

  • ১৯৮৩ সালে সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর পদার্থবিদ্যাই নোবেল পান, তিনি ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক ছিলেন।
  • ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে তার লেখা পুস্তক এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
  • ২০০১ সালে বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান, তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভত ক্যারিবিয় নাগরিক।
  • ২০০৯  ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ রসায়ন ভারতে জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক।
  • ২০১৪ কৈলাশ সত্যার্থী শান্তি ভারতের নাগরিক।
  • ২০১৯ অভিজিৎ ব্যানার্জি অর্থনীতি ভারতের নাগরিক।


রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

মাল পাহাড়ি বা মাল পাহাড়ীয়া বিচ্ছিন্ন এক আদিবাসী জন সমাজ || MAL PAHARI OR MAL PAHARIYA TRIBE OF INDIA ||

জানুয়ারী ০৩, ২০২১

  মালপাহাড়ি বা মাল পাহাড়ীয়া

নানা জাতী উপজাতীতে পরিপূৰ্ণ আমাদের এই ভারতবর্ষ, তাদের মধ্যে
মাল পাহাড়ীয়া বা মাল পাহাড়ি একটি  বিশেষ ভারতীয় উপজাতীয় লোক, প্রধানত পাহাড়িকা উপগোত্রিয়দের একটি। প্রায় বিচ্ছিন্ন, ভবঘুরে জিবনী এদের, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে লড়ে চলেছে এই জাতি।  "মালপাহাড়ী" নামেই তাদের প্রাচীন জীবনযাত্রার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ঝাড়খন্ড রাজমহল পাহাড় এদের আদি বাসস্থান, তবে বাংলাদেশ , বিহার, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে এবং ঝাড়খন্ড রাজমহল পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাই এবং বর্তমানে এই এলাকাটি ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা বিভাগ নামে পরিচিত।
মাল পাহাড়ি জাতির লোকেরা বড্ড  অরন্যপটু, সমতল কিংবা আধুনিক সমাজ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা অগ্রগতির পথে বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল, পাহাড় থেকে সমতলে এনে তাদের চাষ বাস করে জীবন অতিবাহিত করার সুযোগ ব্রিটিশ আমলেও প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু স্বভূমি পাহাড় ছাড়তে নাড়াজ, কালক্রমে সাঁওতালদের সাথে বিরোধ বেঁধেছিল স্বভূমির অধিকার নিয়ে। কিন্তু অবশেষে তাদের বিচরণ সমতলেও নেমে আসে।
জাতী পরিচয়
দ্রাবীড়কূল এই আদিবাসী সম্প্রদায় একদা পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল ছিল, পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নামা নদি, মধু ও জঙ্গলের কাঠ হয়ে উঠেছিল জীবন নির্ধারণের জীবিকা, তবে কালক্রমে এখন চাষবাস, দৈনিক মজুরি, বিভিন্ন পেশাই অংশগ্রহন করতে দেখা যায়। বিগত ২০১১ সালের আদমশুমারি জনগণনাই গোটা ভারত ব্যাপি প্রায় ১,৮২,৫৬০ জন মাল পাহাড়ীদের বাস, যার মধ্যে ১,৩৫,৭৯৭ জন রয়েছে ঝাড়খন্ডে, পশ্চিমবঙ্গে ৪৪,৫৩৮ জন, এবং বিহারে রয়েছে খুবি অল্প মাত্রাই প্রায় ২,২২৫।

মাল পাহাড়ীয়া জাতি
পাহাড়ীয়া জনজাতীর দুটি উপগোত্রীয় শাখা সৌরিয়া পাহাড়ীয়া এবং মাল পাহাড়ীয়া, যাদের মধ্য মালপাহাড়ীয়া খানিক উন্নত, অন্যদিকে সৌরিয়া মালপাহাড়ীদের মাঝে সাঁওতালি রিতীনিতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, যার দরুন সৌরিয়া পাহাড়িয়া জনজাতির মাঝে জাতিগত বৈষম্যের বিরুপ দৃষ্টিভঙ্গি দেখা দিয়েছে, যদিও একসময় সাঁওতালদের অনুপ্রবেশ নিয়ে মাল পাহাড়ি ও সাঁওতালদের মাঝে বিরোধ বেঁধেছিল।
আরো পড়ুন - আদিবাসী কাদের বলে ,কেন বলে?

যাইহোক, মালপাহাড়ীরা দ্রাবীড়কূল হওয়াই দ্রাবীড় ভাষার মিশ্ররুপ "মাল্টো" ভাষাই কথা বলে, পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে বাংলা, হিন্দি, এককথাই বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে তৈরি দ্রাবীড়, ইন্দো-আর্য ভাষা হওয়াই এই ভাষাটি খুব দুর্বল ভাষাই পরিণত হয়েছে। যেমনটা সৌরিয়া মালপাহাড়ি ভাষাই দেখা যাই, সাঁওতাল শব্দের বহুল প্রচলন।
 সাহসী জাতি হিসাবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বর্তমানে পাহাড়ীয়ারা দূৰ্বল, এবং বিলুপ্ত প্রধান জাতির জন্য অনবরত নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই জাতি, বাস্তবিকভাবেই লড়াকু, যার দরুন ইংরাজরাও হার মেনেছিল এদের কাছে, সাঁওতাল অনুপ্রবেশে সামনা সামনি বিরোধিতাই দাঁড়িয়েছিল শক্তভাবে।
পূৰ্বে পাহাড়ে বসবাসকারি এই মাল পাহাড়ি সমাজ দ্বারা নির্বাচিত "সর্দার" দ্বারা পরিচালিত হতো। বাংলায় মুসলিম শাসনকালে মাল পাহাড়ীয়ারা সমভূমির জমিদার দ্বারা স্বাধিনতা হরণে উঠে এলে, জমিদারদের পৃষ্ঠপোষক ইংরাজদের সাথে পাহাড়িয়া সর্দারদের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৭০ সালে, কিন্তু পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে মাল পাহাড়ীয়াদের শায়েস্তা করতে গিয়ে ইংরাজদের শক্তিই ক্ষুন্ন হয়ে পরেছিল।
যার পরিণতি হিসাবে ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশরা মাল পাহাড়িদের সাথে আপোষ করাই যুক্তিযুক্ত মনে করে, যার দরুন "প্যাসিফিকেশন" প্রকল্পের আওতাই প্রস্তাব দেয় অর্থ এবং দক্ষলকরা পাহাড়ের  জমিগুলি মাল পাহাড়ী সর্দারদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি মাল পাহাড়ীয়াদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা নিজ সেনা বাহিনীতে মাল পাহাড়ীয়াদের একটি রেজিমেন্ট পর্যন্ত তৈরি করেছিল।
সাঁওতালদের সাথে বিরোধ
১৮০০ সালের দিকে ব্রিটিশ শক্তি মাল পাহাড়ীয়াদের কায়িক দক্ষতাকে কাজে লাগাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছিল, যেখানে মাল পাহাড়ীয়াদের কৃষিকর্মে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সমভূমিতেও তাদের বসতি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তাতে সাফল্য না এলে সাঁওতালদের সেই কাজে বেছে নেওয়া হয় এবং পাহাড়ের ঢালে সাঁওতালদের অবাধ বসতি স্থাপনে ইংরাজরা সহযোগি হয়ে উঠে, যার দরুন সাঁওতালদের সাথে মাল পাহাড়ীয়াদের বিরোধ বাঁধে, যা সংঘর্ষের রুপ নিতে শুরু করেছিল, অবশেষে ব্রিটিশদের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের বিরোধের সমাপ্তি ঘটে এবং অবশেষে, তাদের এই অঞ্চলটি সাঁওতাল পরগনা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই এই অঞ্চলটিই সাঁওতাল পরগনা নামে ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্য সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিটের বিভাগে পরিণত হয়।
মাল পাহাড়ি মহিলা

 বিচ্ছিন্ন জাতী

সহজ সরল জীবন যাপনে ব্যাস্ত এই আদিবাসী সমাজ, আজ ভারতের বুকে একেবারে কোন ঠাঁসা হয়ে পরেছে, তা সরকারের জন-গণনাতেই বোঝা ষায়, তাদের খাদ্যভাস পরিবর্তন, রিতিনিতি পরিবর্তন, এমনকি ভাষার বিকৃতিকরণ ঘটেছে, পাশাপাশি শিক্ষাগত দিক দিয়েও অনেকটাই পিছিয়ে পরেছে এই সমাজ, মাত্র ১% শিক্ষিত সমাজ নিয়ে বাস মাল পাহাড়ীয়াদের। কেন জানি ! আজ পাহাড়ীরা তাদের নিজস্ব জমিতে তুচ্ছ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পরিচয় বিহীন, প্রায় একপ্রকার সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এই জাতির যতজনের সাথে পরিচয় ঘটেছে ,তারা জন্মসুত্রে সকলে আদিবাসী পরিচয় বহন করলেও সরকারি মান্যতাপ্রাপ্ত আদিবাসী শংসাপত্র তাদের নেই, যদিও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সরকার তফসিলি উপজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। বিতর্ক রয়েছে, তবে সেই বিতর্ক নিজেদেরই সৃষ্টি বলেই মনে হয়। মাল পাহাড়ীদের স্বকীয় পদবী পুঝোড়, মালপাহাড়ী, ব্যাতীত নিজের আত্মপরিচয়ের অবলম্বন হারিয়ে রাই, মন্ডল, পদবি ধারিদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছি আমার পার্শ্ববর্তী এলাকাই। এমনাবস্থাই আদিবাসী আত্মপরিচয় হীন এই জাতীসকল সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে এটা অনুমিত। আবার পাশাপাশি আমি যা লক্ষ্য করেছি, মাল পাহাড়ীয়াদের বেশীর ভাগ লোকেদেরই আদিবাসী শংষ্যাপত্র নেই, শুধু পরিচয়েই আদিবাসী প্রমানে নেই।
পাহাড়ীয়াদের সেই অংশ যারা দামিন-ই-কোহ নামক স্থানের দক্ষিণে এবং সাঁওতাল পরগনার দক্ষিণ এবং পূর্বে বাস করে তাদের হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলা মিশ্রীত ভাষায় কথা বলে, তবে অন্যদের সাথে তারা বাংলা ও হিন্দিও বলে। তবে মাল পাহাড়ীদের বেশির ভাগ অংশ হিন্দু ধর্মই গ্রহণ করেছে।


বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

বাংলা বানানের জটিলতা তার সংস্কার ।। BANGLA SPELLING HISTORY ||

নভেম্বর ২৬, ২০২০

 এ যেন এক অদ্ভুত বাংলা, বাংলার বাঙ্গালি এত দিন ইংরাজি জানতো এবং প্রয়োজন বোধেই তার ব্যবহার করতো, কিন্তু বর্তমানের বাঙ্গালি যেন ইংরাজি জানছে না, বরং গ্রহন করছে। তাই, বাংলা ভাষা যেন আর বাংলার গর্ব আর তেমন মনে হয় না। বাংলা আর ইংরাজির মিশ্রিত রুপ যেন বেঙ্গলিশ, উদাহরণ রয়েছে প্রচুর, যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানের আশির্বাদে বেশির ভাগ নবাগত বস্তুর বাংলা অর্থ হয় না, কিন্তু যে জিনিসগুলোর বাংলা রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা দেওয়া অবশ্যক। বাংলার বাঙ্গালিদের কাছে "নদি" নাকি "নদী" , "কাহিনি" নাকি "কাহিনী", "প্রতিযোগিতা" নাকি "প্রতিযোগীতা" কোনটা সঠিক বানান সেটা নিয়েই ধন্দে পরে যাই, আর এমনটাই স্বাভাবিক, বর্ণমালাই "৯" তার অস্তিত্ব হারিয়েছে বহুআগেই ,কিন্তু পাঠ্য পুস্তকে জায়গা করে রেখেছে এখনো। তাহলে কি বাংলা বানানের মান্যী রুপ আসবে না কখনো?

বাংলা-বানান-শব্দ
বাংলা বানানের বিবিধ সমস্যা

বানান সংস্কারে রবীন্দ্রনাথ
মান্যী রুপ আসবে, এমন নই যে আসবে না। পরিবর্তন বাংলা ভাষাতে যেমন রয়েছে তেমনি পরিবর্তিত বাংলা উচ্চারণকে সামনে রেখেই বাংলা বানানের সংস্কার প্রদানের চেষ্টা চলে আসছে আগে থেকেই, উদ্দেশ্য একটাই বাংলা ভাষার সরলিকরণ। বাংলা ভাষাকে যিনি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন যিনি, সেই বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা বানানের শুদ্ধ রুপ প্রদানে এগিয়ে আসেন প্রথম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব জয়ের পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে তাকে আংশিক অধ্যাপকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলা বিভাগের জন্য ১৯৩২ সালে।
আরো পড়ুন = নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।
তখন তিনি বাংলা বানানের সংস্কার প্রয়োজন মনে করেন এবং বানান সংস্কারকে চুড়ান্ত রুপ দিতে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুপারিশ প্রদান করেন, এবং সেই সময় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (তখনো উপাচার্য হন নি) সেই প্রস্তাবে সারা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই তার দায়িত্ব ভার তুলে দেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র দুই বছরের জন্য।
 বাংলা বানান সংস্কার সমিতি
১৯৩২-৩৪ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক রুপে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যাবার পরেই ১৯৩৫ সালে বাংলা বানানের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজশেখর বসুর সভাপতিত্বে "কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানান সংস্কার সমিতি" গঠন করা হয়, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বংলা বানানের শুদ্ধতা প্রদান আর বাংলা ভাষার সরলিকরণ।

াখেলবাংলা-বানান-শব্দ-
বাংলা লেখা বাস্তবেই জটিল
পরিবর্তী কালে এই সমিতি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে গুরত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং "বাংলা বানানের নিয়ম" রচনা করে তা পুস্তক আকারে প্রকাশিত করে, যার প্রথম সংস্করণ ১৯৩৬ সালে ছাপানো হয়, আবার সেই বছরি এর দ্বিতীয় সংস্করণটিকেও ছাপানো হয় বছরের শেষের দিকে। তবে এর তৃতীয় সংস্করণটি বিশেষ গুরত্বপূৰ্ণ, কারণ এর অভিধানের অর্থগুলো দীর্ঘকালিন প্রচলিত।
পরিবর্তীকালে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে তেমন বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি, কিন্তু ১৯৮১ সালে অধ্যাপক বিজন কুমার বন্দোপাধ্যায় সভাপতি হয়ে এলে বানান সংস্কারের কিছু বেগ পাই।
বাংলা আকাদেমি
এই সময়ের কিছু পর থেকেই নব কবিরা, তাদের লেখনশৈলির সঠিক বানানের প্রয়োজনিয়তা মনে করে, ফলে বাংলা আকাদেমি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের জন্য রুচিবোধ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষার সমতা বিধান, লেখনশৈলী ও বাংলা বানানের সরলিকরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি ১৯৯৫ সালে তাদের সুপারিশ পত্র প্রকাশ করে এবং সেই বছরি শেষের দিকে সেই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জ্ঞানি গুনি ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এবং সেই আলোচনার সাপেক্ষে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও বাংলা বানানের নিয়ম হিসাবে একটি পুস্তিকা পরের বছর বের করা হয়, যার নিয়ম অনুসারে বর্তমান বাংলা বানান নির্ধারিত হয়েছে, যেমন "নদী" শব্দটি  পরিনত হয়ে সঠিক শব্দ হিসাবে বিবেচীত হয়েছে "নদি" তে, তেমনি ইরানী হয়েছে ইরানি ,কোষ হয়েছে কোশ, জাপানী বানান পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে জাপানি।
তবে গৃহিত সিদ্ধান্তে আরো বলা হয়েছে যে সময়ের সাথে মানুষের উচ্চারণ পরিবর্তনের সাথে সাথে বানানের রিতিও পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও কিছু বাংলা বানানের কিছু নিয়ম রয়েছে যা বিস্তর আলোচনা ও ব্যাকরণ যুক্ত, যেমন- মন্ত্রী শব্দটি সঠিক কিন্তু মন্ত্রীপরিষদ শব্দটি সঠিক নই, সঠিক বানান মন্ত্রিপরিষদ, ঠিক একি ভাবে প্রাণিবিদ্যা, গুনিজন ইত্যাদি ইত্যাদি।

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

দশরথ মাঝি এক জীবন্ত কিংবদন্তী যেন মাউন্টেন ম্যান || DASRATH MANJHI A MOUNTAIN MAN ||

নভেম্বর ২৪, ২০২০

এ যেন এক অন্য প্রেম কাহিনি, জেদ না পাগলামো বলা মুশকিল, তবে নিঃসন্দেহে অষ্টম অাশ্চর্যের তকমা দেওয়া যেতে পারে। মুঘল বাদশা শাহজাহান তার প্রিয় পত্নির জন্য তাজমহল বানিয়ে ছিলেন, আজ যা সপ্ত আশ্চর্যের একটি। শাহজাহানের যশ ,ক্ষমতা, অর্থ সবকিছুই ছিল তার করায়ত্তে, তার পাশাপাশি ছিল শিল্পের প্রতি গভির আকর্ষন। কিন্তু অন্যদিকে এই দলিতের না ছিল অর্থ, না ছিল যশ, না ছিল ক্ষমতা, যা অসম্ভবকে সম্ভব করতে বাধ্য করেছিল তা ছিল তার পত্নির পতি গভির ভালোবাসা যা পরিনত হয় অদম্য জেদে। "যতক্ষন পারবো না, ততক্ষন ছাড়বো না" তা সে যত বড়ই বাঁধা আসুক, হোক না কেনো তা পাহাড় সমান, লড়ে চলেছি- লড়েই যাবো, আবারো সেই একি জেদ "যতক্ষন পারবো না,ততক্ষন ছাড়বো না"। কিন্তু এখানে বাঁধা পাহাড় সমান নই, বাঁধা যে নিজেই একটি পাহাড়, যার নাম "গেহলৌর" অবস্থান বিহারের গয়াতে।

দশরথ-মাঝি-মাউন্টেন-ম্যান-রোড
দশরথ মাঝি "দা মাউন্টেন ম্যান"

 আশ্চর্যের প্রেম কাহিনি
আবার এই গেহলৌর পাহাড়ের পাশেই আদিবাসী দলিত সমাজের ছোট্ট গ্রাম, পাহাড়ের নামেই এর নাম হয়েছে "গেহলৌর"। এই গ্রামেই জন্মেছিল স্বর্গীয় দশরথ মাঝি (১৯৩৪ খ্রিঃ)। দুরন্ত জেদি, প্রথা অনুযায়ী বাল্যকালেই তার বিয়ে হয়েছিল গ্রামের এক মেয়ে ফাল্গুনির সাথে, কিন্তু জেদি ছেলে বলে কথা বাড়ি ছেড়েও পালিয়েছিলেন একবার, পালিয়ে গিয়ে ধানবাদের একটি কয়লাখনিতে কাজ করেন বহুদিন। নিজের গ্রামে ফিরে এসে গ্রামেরি সেই বাল্যকালের মেয়ে সেই ফাল্গুনী দেবির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জরিয়ে পরেন যুবক দশরথ, শেষে সেই প্রেমের পরিনতি হিসেবে বিয়েও হল তাদের, খুব শীঘ্রই পিতা হলেন দশরথ। স্বর্গীয় দশরথ মাঝির একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ছিল , নাম ভাগীরথ মাঝি এবং বাসন্তী মাঝি।
গেহলৌর পাহাড়
ফাল্গুুনি দেবির প্রতি যুবক দশরথের ভালোবাসা ছিল অগাধ, কিন্তু সেই ভালোবাসাই আঘাত হানল একটি প্রকান্ড পাহাড়। দশরথের গ্রামের উন্নয়নের প্রধান বাধা ছিল এই গেহলৌর পাহাড়, কেননা তাদের গ্রাম থেকে পাশের শহর ওয়াজিগঞ্জের সরলরেখা হিসাবে যে দূরত্ব ১৫ কিমি, কিন্তু মাঝের এই গেহলৌর পাহাড় থাকাই সেই দূরত্ব হয়ে দ্বারাই ৫৫ কিমি। একদিন খাবারের জল আনতে গিয়ে ফাল্গুনি দেবীর এই পাহাড়ের মাঝে পড়ে গিয়ে প্রচন্ড ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন, সেই সময় ফাল্গুনি দেবীকে পাশের শহরের হসপিটালে নিয়ে যাবার প্রয়োজন পরে, কিন্তু মাঝে গেহলৌর পাহাড়, সেই সময় গাড়ীর সঠিক ব্যবস্থা না থাকাই এই পাহাড়ের উপর দিয়েই নিয়ে যেতে হল ফাল্গুনি দেবীকে, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না। গেহলৌর পাহাড় পার করে হসপিটালে আসতে তাদের যা সময় লেগেছিল, তা যথেষ্ট ছিল না ফাল্গুনি দেবীকে বাঁচানোর জন্য।
আরো পড়ুন- বিখ্যাত কিছু আবিষ্কার, যা ভারত থেকে চুরি করা হয়েছে

দশরথ মাঝি রোড
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির পাহাড় জয়

প্রিয়তম পত্নি ফাল্গুনিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন যুবক দশরথ। প্রতিঙ্গা করেন এমন ভয়ঙ্কর হাল হতে দেবেন না কারো, কারো মৃত্যর কারন হতে দেবো না এই পাহাড়কে। বাড়ীর একজোড়া ছাগল বিক্রী করে বাজার থেকে কিনে আনলেন একটা হাতুড়ি আর ছেনি, আর নিজের অদম্য ইচ্ছার উপর ভর করে একাই লেগে পরলেন পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরিতে।
প্রথমে দশরথের এই কাজে গ্রামের সকলে তাকে পাগল বলে আখ্যা দিয়েছিল, মাঝে বহুবার এসেছে নানান বিপদ, কিন্তু দশরথ মাঝি থেমে থাকেন নি একবারো। দীর্ঘদিনের পাহাড়ের সাথে ঐকিক যুদ্ধের কাহিনি এই প্রকান্ড কর্মকান্ড ধিরে ধিরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে চারে দিকে, পরিচিতি বাড়তে থাকে দশরথের, পরিচিত হলেন "মাউন্টেন ম্যান" নামে । শেষে দীর্ঘ বাইশ বছর পর তার এই বিশাল কর্মকান্ডের ফল হিসাবে গেহলৌর পাহাড়ের বুক চিরেই তৈরি হল ১১০ মিটার দীর্ঘ, ৯.১ মিটার প্রস্থ ও ৭.৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন রাস্তা এবং মহূর্তেই ৫৫ কিমি থেকে কমে মাত্র ১৫ কিমিতে পরিণত হল।
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির স্মৃতি
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির অদম্য জেদ ও ভালোবাসার গল্প এখন জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রেও, তার জিবনী যেন হয়ে দাড়াঁই একটি বিশেষ উদাহরণ। বিহার সরকার তাকে যোগ্য সম্মান দেবার চেষ্টা করেনি বললে হইতো ভুল হবে, কারন বিহার সরকার পদ্মশ্রীর জন্য ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বিহার সরকার (২০০৬), এমনকি তার নামে ছাপানো হয় ডাক টিকিট। বিহার সরকার তার বীর ভূমিপুত্র স্বর্গীয় দশরথ মাঝির জন্য জমি দিয়েছিলেন একবার, কিন্তু দশরথ মাঝি গ্রামের উন্নতিকল্পে সেই জমিটুকুও দান করে দিয়েছেন হসপিটাল তৈরির জন্য, এখন সেই জমিতে তার নামে তৈরি হয়েছে হসপিটাল। একি সাথে যে রাস্তা তিনি তৈরি করেছিলেন তার নামও রাখা হয় দশরথ মাঝি রোড।
দেখতে দেখতে স্বর্গীয় দশরথ মাঝির চরিত্রটি জায়গা দখল করে চলচ্চিত্র জগতেও, তার জিবনী নিয়ে "মাঝি দা মাউন্টেন ম্যান" বক্সঅফিসে বেশ ভালোই ফল করেছিল(২০১৫), এমনকি আমির খান তার জিবনীতে প্রভাবিত হয়ে "সত্যমেব জয়তে" নামক দুরদর্শন অনুষ্ঠানে একটি পর্ব তৈরি করেন।
বিহারের দলিত এই বীর ভূমিপুত্র ২০০৭ সালে ৭৩ বছর বয়সে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS) এ কর্কটরোগের চিকিৎসা কালিন মারা যান,বিহার সরকার এই ভূমিপুত্র রাজকীয় ভাবে স্বর্গীয় দশরথ মাঝির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেন।