Unique knowledge bangla

History of dakshin dinajpur, bangla bible, DAKSHIN DINAJPUR, Uttar DINAJPUR, Malda, chiristanity, santhal,indian tribe,mahli tribe, unknown facts, tourist place of Malda, tourist place of Dakshin DINAJPUR ,bible, bible story, bible story in bangla,dakshin dinajpur news,adibashi,sautal,indian tribe culture,

TRANSLATE ARTICLE TO YOUR LANGUEGE

UNIQUE KNOWLEDGE লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
UNIQUE KNOWLEDGE লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

বাংলা বানানের জটিলতা তার সংস্কার ।। BANGLA SPELLING HISTORY ||

নভেম্বর ২৬, ২০২০

 এ যেন এক অদ্ভুত বাংলা, বাংলার বাঙ্গালি এত দিন ইংরাজি জানতো এবং প্রয়োজন বোধেই তার ব্যবহার করতো, কিন্তু বর্তমানের বাঙ্গালি যেন ইংরাজি জানছে না, বরং গ্রহন করছে। তাই, বাংলা ভাষা যেন আর বাংলার গর্ব আর তেমন মনে হয় না। বাংলা আর ইংরাজির মিশ্রিত রুপ যেন বেঙ্গলিশ, উদাহরণ রয়েছে প্রচুর, যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানের আশির্বাদে বেশির ভাগ নবাগত বস্তুর বাংলা অর্থ হয় না, কিন্তু যে জিনিসগুলোর বাংলা রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা দেওয়া অবশ্যক। বাংলার বাঙ্গালিদের কাছে "নদি" নাকি "নদী" , "কাহিনি" নাকি "কাহিনী", "প্রতিযোগিতা" নাকি "প্রতিযোগীতা" কোনটা সঠিক বানান সেটা নিয়েই ধন্দে পরে যাই, আর এমনটাই স্বাভাবিক, বর্ণমালাই "৯" তার অস্তিত্ব হারিয়েছে বহুআগেই ,কিন্তু পাঠ্য পুস্তকে জায়গা করে রেখেছে এখনো। তাহলে কি বাংলা বানানের মান্যী রুপ আসবে না কখনো?

বাংলা-বানান-শব্দ
বাংলা বানানের বিবিধ সমস্যা

বানান সংস্কারে রবীন্দ্রনাথ
মান্যী রুপ আসবে, এমন নই যে আসবে না। পরিবর্তন বাংলা ভাষাতে যেমন রয়েছে তেমনি পরিবর্তিত বাংলা উচ্চারণকে সামনে রেখেই বাংলা বানানের সংস্কার প্রদানের চেষ্টা চলে আসছে আগে থেকেই, উদ্দেশ্য একটাই বাংলা ভাষার সরলিকরণ। বাংলা ভাষাকে যিনি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন যিনি, সেই বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা বানানের শুদ্ধ রুপ প্রদানে এগিয়ে আসেন প্রথম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব জয়ের পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে তাকে আংশিক অধ্যাপকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলা বিভাগের জন্য ১৯৩২ সালে।
আরো পড়ুন = নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।
তখন তিনি বাংলা বানানের সংস্কার প্রয়োজন মনে করেন এবং বানান সংস্কারকে চুড়ান্ত রুপ দিতে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুপারিশ প্রদান করেন, এবং সেই সময় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (তখনো উপাচার্য হন নি) সেই প্রস্তাবে সারা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই তার দায়িত্ব ভার তুলে দেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র দুই বছরের জন্য।
 বাংলা বানান সংস্কার সমিতি
১৯৩২-৩৪ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক রুপে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যাবার পরেই ১৯৩৫ সালে বাংলা বানানের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজশেখর বসুর সভাপতিত্বে "কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানান সংস্কার সমিতি" গঠন করা হয়, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বংলা বানানের শুদ্ধতা প্রদান আর বাংলা ভাষার সরলিকরণ।

াখেলবাংলা-বানান-শব্দ-
বাংলা লেখা বাস্তবেই জটিল
পরিবর্তী কালে এই সমিতি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে গুরত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং "বাংলা বানানের নিয়ম" রচনা করে তা পুস্তক আকারে প্রকাশিত করে, যার প্রথম সংস্করণ ১৯৩৬ সালে ছাপানো হয়, আবার সেই বছরি এর দ্বিতীয় সংস্করণটিকেও ছাপানো হয় বছরের শেষের দিকে। তবে এর তৃতীয় সংস্করণটি বিশেষ গুরত্বপূৰ্ণ, কারণ এর অভিধানের অর্থগুলো দীর্ঘকালিন প্রচলিত।
পরিবর্তীকালে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে তেমন বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি, কিন্তু ১৯৮১ সালে অধ্যাপক বিজন কুমার বন্দোপাধ্যায় সভাপতি হয়ে এলে বানান সংস্কারের কিছু বেগ পাই।
বাংলা আকাদেমি
এই সময়ের কিছু পর থেকেই নব কবিরা, তাদের লেখনশৈলির সঠিক বানানের প্রয়োজনিয়তা মনে করে, ফলে বাংলা আকাদেমি বাংলা বানানের শুদ্ধিকরণের জন্য রুচিবোধ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষার সমতা বিধান, লেখনশৈলী ও বাংলা বানানের সরলিকরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি ১৯৯৫ সালে তাদের সুপারিশ পত্র প্রকাশ করে এবং সেই বছরি শেষের দিকে সেই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জ্ঞানি গুনি ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এবং সেই আলোচনার সাপেক্ষে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও বাংলা বানানের নিয়ম হিসাবে একটি পুস্তিকা পরের বছর বের করা হয়, যার নিয়ম অনুসারে বর্তমান বাংলা বানান নির্ধারিত হয়েছে, যেমন "নদী" শব্দটি  পরিনত হয়ে সঠিক শব্দ হিসাবে বিবেচীত হয়েছে "নদি" তে, তেমনি ইরানী হয়েছে ইরানি ,কোষ হয়েছে কোশ, জাপানী বানান পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে জাপানি।
তবে গৃহিত সিদ্ধান্তে আরো বলা হয়েছে যে সময়ের সাথে মানুষের উচ্চারণ পরিবর্তনের সাথে সাথে বানানের রিতিও পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও কিছু বাংলা বানানের কিছু নিয়ম রয়েছে যা বিস্তর আলোচনা ও ব্যাকরণ যুক্ত, যেমন- মন্ত্রী শব্দটি সঠিক কিন্তু মন্ত্রীপরিষদ শব্দটি সঠিক নই, সঠিক বানান মন্ত্রিপরিষদ, ঠিক একি ভাবে প্রাণিবিদ্যা, গুনিজন ইত্যাদি ইত্যাদি।

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

দশরথ মাঝি এক জীবন্ত কিংবদন্তী যেন মাউন্টেন ম্যান || DASRATH MANJHI A MOUNTAIN MAN ||

নভেম্বর ২৪, ২০২০

এ যেন এক অন্য প্রেম কাহিনি, জেদ না পাগলামো বলা মুশকিল, তবে নিঃসন্দেহে অষ্টম অাশ্চর্যের তকমা দেওয়া যেতে পারে। মুঘল বাদশা শাহজাহান তার প্রিয় পত্নির জন্য তাজমহল বানিয়ে ছিলেন, আজ যা সপ্ত আশ্চর্যের একটি। শাহজাহানের যশ ,ক্ষমতা, অর্থ সবকিছুই ছিল তার করায়ত্তে, তার পাশাপাশি ছিল শিল্পের প্রতি গভির আকর্ষন। কিন্তু অন্যদিকে এই দলিতের না ছিল অর্থ, না ছিল যশ, না ছিল ক্ষমতা, যা অসম্ভবকে সম্ভব করতে বাধ্য করেছিল তা ছিল তার পত্নির পতি গভির ভালোবাসা যা পরিনত হয় অদম্য জেদে। "যতক্ষন পারবো না, ততক্ষন ছাড়বো না" তা সে যত বড়ই বাঁধা আসুক, হোক না কেনো তা পাহাড় সমান, লড়ে চলেছি- লড়েই যাবো, আবারো সেই একি জেদ "যতক্ষন পারবো না,ততক্ষন ছাড়বো না"। কিন্তু এখানে বাঁধা পাহাড় সমান নই, বাঁধা যে নিজেই একটি পাহাড়, যার নাম "গেহলৌর" অবস্থান বিহারের গয়াতে।

দশরথ-মাঝি-মাউন্টেন-ম্যান-রোড
দশরথ মাঝি "দা মাউন্টেন ম্যান"

 আশ্চর্যের প্রেম কাহিনি
আবার এই গেহলৌর পাহাড়ের পাশেই আদিবাসী দলিত সমাজের ছোট্ট গ্রাম, পাহাড়ের নামেই এর নাম হয়েছে "গেহলৌর"। এই গ্রামেই জন্মেছিল স্বর্গীয় দশরথ মাঝি (১৯৩৪ খ্রিঃ)। দুরন্ত জেদি, প্রথা অনুযায়ী বাল্যকালেই তার বিয়ে হয়েছিল গ্রামের এক মেয়ে ফাল্গুনির সাথে, কিন্তু জেদি ছেলে বলে কথা বাড়ি ছেড়েও পালিয়েছিলেন একবার, পালিয়ে গিয়ে ধানবাদের একটি কয়লাখনিতে কাজ করেন বহুদিন। নিজের গ্রামে ফিরে এসে গ্রামেরি সেই বাল্যকালের মেয়ে সেই ফাল্গুনী দেবির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জরিয়ে পরেন যুবক দশরথ, শেষে সেই প্রেমের পরিনতি হিসেবে বিয়েও হল তাদের, খুব শীঘ্রই পিতা হলেন দশরথ। স্বর্গীয় দশরথ মাঝির একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ছিল , নাম ভাগীরথ মাঝি এবং বাসন্তী মাঝি।
গেহলৌর পাহাড়
ফাল্গুুনি দেবির প্রতি যুবক দশরথের ভালোবাসা ছিল অগাধ, কিন্তু সেই ভালোবাসাই আঘাত হানল একটি প্রকান্ড পাহাড়। দশরথের গ্রামের উন্নয়নের প্রধান বাধা ছিল এই গেহলৌর পাহাড়, কেননা তাদের গ্রাম থেকে পাশের শহর ওয়াজিগঞ্জের সরলরেখা হিসাবে যে দূরত্ব ১৫ কিমি, কিন্তু মাঝের এই গেহলৌর পাহাড় থাকাই সেই দূরত্ব হয়ে দ্বারাই ৫৫ কিমি। একদিন খাবারের জল আনতে গিয়ে ফাল্গুনি দেবীর এই পাহাড়ের মাঝে পড়ে গিয়ে প্রচন্ড ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন, সেই সময় ফাল্গুনি দেবীকে পাশের শহরের হসপিটালে নিয়ে যাবার প্রয়োজন পরে, কিন্তু মাঝে গেহলৌর পাহাড়, সেই সময় গাড়ীর সঠিক ব্যবস্থা না থাকাই এই পাহাড়ের উপর দিয়েই নিয়ে যেতে হল ফাল্গুনি দেবীকে, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না। গেহলৌর পাহাড় পার করে হসপিটালে আসতে তাদের যা সময় লেগেছিল, তা যথেষ্ট ছিল না ফাল্গুনি দেবীকে বাঁচানোর জন্য।
আরো পড়ুন- বিখ্যাত কিছু আবিষ্কার, যা ভারত থেকে চুরি করা হয়েছে

দশরথ মাঝি রোড
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির পাহাড় জয়

প্রিয়তম পত্নি ফাল্গুনিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন যুবক দশরথ। প্রতিঙ্গা করেন এমন ভয়ঙ্কর হাল হতে দেবেন না কারো, কারো মৃত্যর কারন হতে দেবো না এই পাহাড়কে। বাড়ীর একজোড়া ছাগল বিক্রী করে বাজার থেকে কিনে আনলেন একটা হাতুড়ি আর ছেনি, আর নিজের অদম্য ইচ্ছার উপর ভর করে একাই লেগে পরলেন পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরিতে।
প্রথমে দশরথের এই কাজে গ্রামের সকলে তাকে পাগল বলে আখ্যা দিয়েছিল, মাঝে বহুবার এসেছে নানান বিপদ, কিন্তু দশরথ মাঝি থেমে থাকেন নি একবারো। দীর্ঘদিনের পাহাড়ের সাথে ঐকিক যুদ্ধের কাহিনি এই প্রকান্ড কর্মকান্ড ধিরে ধিরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে চারে দিকে, পরিচিতি বাড়তে থাকে দশরথের, পরিচিত হলেন "মাউন্টেন ম্যান" নামে । শেষে দীর্ঘ বাইশ বছর পর তার এই বিশাল কর্মকান্ডের ফল হিসাবে গেহলৌর পাহাড়ের বুক চিরেই তৈরি হল ১১০ মিটার দীর্ঘ, ৯.১ মিটার প্রস্থ ও ৭.৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন রাস্তা এবং মহূর্তেই ৫৫ কিমি থেকে কমে মাত্র ১৫ কিমিতে পরিণত হল।
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির স্মৃতি
স্বর্গীয় দশরথ মাঝির অদম্য জেদ ও ভালোবাসার গল্প এখন জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রেও, তার জিবনী যেন হয়ে দাড়াঁই একটি বিশেষ উদাহরণ। বিহার সরকার তাকে যোগ্য সম্মান দেবার চেষ্টা করেনি বললে হইতো ভুল হবে, কারন বিহার সরকার পদ্মশ্রীর জন্য ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বিহার সরকার (২০০৬), এমনকি তার নামে ছাপানো হয় ডাক টিকিট। বিহার সরকার তার বীর ভূমিপুত্র স্বর্গীয় দশরথ মাঝির জন্য জমি দিয়েছিলেন একবার, কিন্তু দশরথ মাঝি গ্রামের উন্নতিকল্পে সেই জমিটুকুও দান করে দিয়েছেন হসপিটাল তৈরির জন্য, এখন সেই জমিতে তার নামে তৈরি হয়েছে হসপিটাল। একি সাথে যে রাস্তা তিনি তৈরি করেছিলেন তার নামও রাখা হয় দশরথ মাঝি রোড।
দেখতে দেখতে স্বর্গীয় দশরথ মাঝির চরিত্রটি জায়গা দখল করে চলচ্চিত্র জগতেও, তার জিবনী নিয়ে "মাঝি দা মাউন্টেন ম্যান" বক্সঅফিসে বেশ ভালোই ফল করেছিল(২০১৫), এমনকি আমির খান তার জিবনীতে প্রভাবিত হয়ে "সত্যমেব জয়তে" নামক দুরদর্শন অনুষ্ঠানে একটি পর্ব তৈরি করেন।
বিহারের দলিত এই বীর ভূমিপুত্র ২০০৭ সালে ৭৩ বছর বয়সে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS) এ কর্কটরোগের চিকিৎসা কালিন মারা যান,বিহার সরকার এই ভূমিপুত্র রাজকীয় ভাবে স্বর্গীয় দশরথ মাঝির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেন।

শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০

নেশা যেখানে সমাজের অঙ্গ || আদিবাসী উৎসবে হাড়িয়া মদ বা মেথা || adibashi drinks hariya metha wine ||

নভেম্বর ২০, ২০২০

 "জাতে মাতাল, তালে ঠিক" কথাটি কানে এলেই  জ্যাকস-স্পেরো নামক সমুদ্রজাহাজ লুন্ঠনকারীর চরিত্রটি ভেসে ওঠে। টাল-মাটাল অবস্থা কিন্তু মারাত্মক চালাক, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই তার এই চরিত্রের প্রসংশক, এমনকি আমিও। কথার আঁকিবুকিঁতে নতুন মোড়ের দিকে পদার্পণ, আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় মদ্যপানের প্রবণতা বিষীয়ে দিচ্ছে নাতো গোটা সমাজকে?

হাড়িয়া-মেথা-হাড়িয়া-মেথা-পচানি-মদ-চুল্লু
মদ বানানোর ব্যস্ততা

স্বল্প আলাপ-চারিতাই তর্কালঙ্কার মূৰ্তি ধারন করে মহূৰ্তে দুটো দলের উদয়, একপক্ষ আরেক পক্ষকে বিধঁছে তর্কবাণে। আমি কোন পক্ষের যোদ্ধা হিসেবে  পদার্পণ করবো, আমি তো সেই সমাজেরই এক প্রতিনিধি, যারা আতিথ্যে মদ্যপানের রেওয়াজ রেখেছে আজো। সময়ের ধারাবাহিকতাই যদিও এই প্রবণতা শেষের দিকে তবুও, পিছু ছাড়েনি। পাশ্চাত্যের কিছু কিছু দেশে সম্মান প্রদর্শনের অঙ্গ শ্যাম্পেন বা ওয়াইন পরিবেশন, কিন্তু যত দোষ আদিবাসীদের। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের তর্কে করোনা অতিমারীতে চলতে থাকা লক-ডাউনের মাঝে, হঠাৎ মাতালদের একদিনের স্বস্তি, কোলকাতার মদের দোকানে দীর্ঘ লাইন, সেই চিত্র দেখেছে বঙ্গবাসী। কোই?সেই ভিড়ে তো আদিবাসীদের সংখ্যা নেই! আমি বাবু, হিসাব করি লম্বা লাইন দেখে নই, শতাংশের হার দেখে। বলুনতো কোনো এক পাড়ার চোলাই মদের দোকানে মোট ২০ জন মাতাল মদ্যপান করছে, যার মাঝে ১২ জন দিকু (অআদিবাসী) এবং ৮ আদিবাসী, চলুন না হয় সংখ্যাটা আরেকটু পরিবর্তন করি দিকু (অ-আদিবাসী) ১৫ জন আর আদিবাসী ৫ জন, তাহলে কারা বেশি মাতাল? চাক্ষুষ বিচারে দিকু অবশ্যই, কিন্তু শতাংশের বিচারে? আরে বাবা! প্রত্যেক সমাজের অভ্যন্তরে নেশাক্ষোর লোকেরা শতাংশের পরিপ্রেক্ষীতে খানিকটা রয়েছে, কোনোটাতে কম আবার কোনোটাতে বেশী, কিন্তু  শতাংশের পরিমানটা বেড়ে গেলেই সেই সমাজ জতুগৃহে পরিণত হয়, পাশাপাশি তা অত্যাধিক হলেই তার ফল গোটা সমাজটাকেই ভোগ করতে হয়, কিন্তু এর পরিসংখ্যান আজো হাতছাড়া।
 আরে পড়ুন- রাম রাজত্ব আর শুদ্র দলিত সমাজ।

এবার না হয় বিষয়বস্তুর একটু গভীরে প্রবেশ করা যাক। কে মাতাল? কে রাখাল? সেটা সরিয়ে আদিবাসী সমাজের গভিরে একটু অধ্যায়ণ করা যাক। পূৰ্ব থেকেই আদিবাসীরা তাদের সমাজ ব্যবস্থার পুরানো রিতি নিতিকে আগলে রেখেছে নিজ সন্তানের মত। সংস্কার, রিতি-রেওয়াজ, পরম্পরা, ভাষা, খাদ্যাভাষ প্রভৃতি কোন জাতি বিশেষকে অন্য সকল জাতিদের থেকে  আলাদা করে। আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পরব ও অনুষ্ঠানে হাঁড়িয়া বা মেথা রাখার পরম্পরা রয়েছে, যা আগত সকল পরিজনদের বরন এবং আনন্দ উৎসবে আনন্দের খোরাক হিসাবে পরিবেশিত হয়।

রান্নার তাগিদে আদিবাসী মহিলা
হাঁড়িয়া নেশা জাতীয় পানিয়, আদিবাসী সমাজ সংস্কৃতির অভিন্ন অঙ্গ। আবার তার পাশাপাশি রয়েছে চাল, মহুয়া ও গুড়ের চোলাই মদ, পরিচীত নাম চুল্লু। এই দুই প্রকার নেশা জাতীয় পানীয় বানানোর প্রক্রিয়া একে অপরের ভিন্ন এবং অন্য নেশাজাতীয় পানীয় তৈরীর থেকে সম্পূৰ্ণ আলাদা। এই দুই প্রকার পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করা হয় রানু নামক একপ্রকার বিভিন্ন ভেষজ মিশ্রিত বড়ি, কিছু কিছু স্থানে এর পরিচিত নাম ইষ্ট, আবার অনেকে বাকল-ফলও বলে থাকে। যাইহোক পানীয়গুলো তৈরীর সম্পূৰ্ণ বর্ণমালা বলতে চাইনা, কেননা বর্তমানের পাঠক-বর্গ বড্ড চালাক চতুর,পাছে তারা বানানোর পদ্ধতি শিখেনিয়ে আদিবাসীদের সর্বনাশ না করে ফেলে, বাস্তব সত্য আদিবাসী সমাজের একটা বিশাল অংশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এই নেশাজাতীয় পানীয় তৈরীর উপর নির্ভরশীল, যা আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থাকে ঠেঁলে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। পরিচিত ভ্রাতা-ভগিনীদের বলেছি, এটাই কি উপার্জন আর জীবনধারনের উত্তম পন্থা, এছাড়াও বহু পন্থা রয়েছে, কথা মত কিছু পরিবর্তন আসলেও, পেশা পরিবর্তনে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলো না, বরং আর্থিক পরিবর্তনে টান পরে, কাজেই এই পানীয় তৈরীর পেশাই হয়ে উঠে অন্যতম।
যেন এক অসহিষ্ণু দৃশ্য, শিশু কার্তিকেরা কাঁদছে ক্ষিদের জ্বালাই, আর পালক পিতা ভোলেনাথ নেশায় বুঁদ নিজ আষনে। নেশার প্রতি আকর্ষণ হঠাৎ যেন সম্পর্কের আকর্ষণকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাস্তবের খন্ডচিত্র, অভিঙ্গতার পটভূমি, কিন্তু নিন্দনীয় নই, নিন্দা করলেই তুমি "দিকু"।

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

বিহার ভোট 2020 কোন পথে? কারা হাসবে শেষ হাসি? সমীক্ষা কি বলছে? || BIHAR VOTE 2020 ||

নভেম্বর ০৮, ২০২০

 ভারতীয় রাজনীতিতে বিহার বিধানসভা ফলাফলের গুরুত্ব

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষা মহাজোটের জয়ী হবার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, যা তাৎপর্যপূর্ণ ও শিক্ষনীয় বটে। যদিও এই ধরনের সমীক্ষার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা হয় না। তবুও প্রতিবার ভোটের পরে নির্বাচনী ফলাফলের একটা আভাস পাওয়ার চেষ্টা এই ধরনের সমীক্ষার মাধ্যমে ফুটে উঠে। অনেক সময় দেখা গেছে এই ধরনের সমীক্ষা গুলি সঠিকও হয়েছে। যাই হোক, কেন এই ফলাফল তাৎপর্যপূর্ণ তা আলোচনা করা যাক।

আরো পড়ুন - কোলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল  
প্রথমতঃ যদি সত্যিই NDA পরাজিত হয়, তাহলে তা হবে পর পর বিভিন্ন রাজ্যে পরাজয়ের ধারাবাহিকতা। এর আগে রাজস্থান ,মধ্যপ্রদেশ ,ঝাড়খন্ড ,মহারাষ্ট্র সহ আরো কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট পরাজিত হয়েছিল।

বিহার ভোট কোন পথে?
দ্বিতীয়তঃ বিহারের রাজনীতিতে তেজস্বী যাদব এর উত্থান হবে যদি মহাজোট জয়ী হয় তাহলে। কারণ লালুপ্রসাদ জামানার কালো অধ্যায়ের যে দাগ মানুষের মনে রয়েছে বা বিরোধীরা যা সব সময় বলেন, তা থেকে তিনি দল কে বের করে নিয়ে এসে ,দল তথা রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
তৃতীয়তঃ করোনা পরবর্তী সময়ে প্রথম নির্বাচন সেই রাজ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছিল । কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পরিযায়ী শ্রমিকদের  যে বঞ্চনার অভিযোগ তার প্রতিফল হিসাবে রাজনৈতিক দল গুলি যে এই ফলাফল তুলে ধরবে সে বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।
চতুর্থতঃ কেন্দ্রীয় শাসকদলের পরাজয় এ ইঙ্গিতও বহন করে  যে বিহারের মানুষ  ধর্ম , জাতপাত, সীমান্ত সমস্যা এই সব এজেন্ডার বাইরে চিন্তা ভাবনা করে ভোট দিয়েছেন। যা পরবর্তীকালের নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রুপে পরিগণিত হবে।
পঞ্চম মহাজোটের তরফ থেকে কর্মসংস্থানের যে দাবি করা হয়েছিল তা যে যুব সমাজ গ্রহণ করেছেন তা সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট। তাই এর পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলির বিশেষ ভাবে বেকার সমস্যার সমাধানে নজর দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়বে। এই সমীক্ষা ফলাফল বিশ্লেষণ করলে বলা যায় অসত্য তথ্য দিয়ে বেশি দিন মানুষ কে বোকা বানাতে তারা পারবেন না।
ষষ্ঠতঃ এই নির্বাচনের সমীক্ষা ফলাফল যদি মিলে যায় তা হলে পশ্চিমবঙ্গে শাসক ও বিরোধী উভয় দলকে তাদের রণকৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
আরো পড়ুন - রাম রাজত্ব ও শুদ্র দলিত সমাজ।
বিভিন্ন চেনেলের দ্বারা সমীক্ষার ফল

সপ্তমতঃ এই সমীক্ষার ফলাফল থেকে সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্ত দাঁড়াবে, তা হল সব রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কে সামনে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই স্থানীয় স্তরে দৃঢ় নেতৃত্বের প্রয়োজন সব সময় দরকার পরবে।
সব শেষে নির্বাচনী ফলাফলের জন্য আমাদের আগামী ১০/১১/২০২০ তারিখ অবধি অপেক্ষা করতে হবে।

কলমে
রাজীব সাহা 



( রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহকারি অধ্যাপক )

বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০

ডাইনী হত্যা আদিবাসী দলিত সমাজের অভিশাপ || dayan witch hunting in indian country

অক্টোবর ০৭, ২০২০

টান-টান উত্তেজনা, চোখের নিমেষে অপূৰ্ব নারি অবয়ব থেকে ভয়ংকর রুপে পরিবর্তন, আবার নিমেষেই শূন্যে ধোঁয়ার মত বিলিন, চলচ্চিত্রের এমন সব অশুভ আত্মার আর ডাইনী শিকারকারি ভেন হেলসিং অথবা অন্যসকল চরিত্র দর্শকদের দূরদর্শনের সামনে বেঁধে রাখে, শিশু মনে এই সকল চরিত্রগুলো নায়ক হিসাবে ঘর করে ফেলে আরো দ্রত। কিন্তু পার্থিব জগৎে "ডাইনী হত্যা" করুণার উদ্বেগ ঘটাই, কেনোনা চলচ্চিত্র আর পার্থিব জগৎ পার্থক্য বিস্তর। 

ডাইনী-হত্যা-আদিবাসী-দলিত-সমাজের-অভিশাপ
ডাইনি হত্যা ও আদিবাসী সমাজ


ডাইনী হত্যার আন্তর্জাতীক প্রেক্ষাপট

হাঙ্গেরীর ডাইনী রানি এলিজাবেথ বেথুনির কাহিনী আজো স্তম্ভিত করে আসছে হাঙ্গেরীর দেশবাসীদের, কিভাবে তার রাজত্বের দিনে নিজের সৌন্দর্যকে অক্ষুন্য রাখার তাগিদে একের পর এক,বহু যুবতীর রক্তে স্নান আর রক্ত পান করতেন এই মহান রানী, হাঙ্গেরীর জনগনের চোখে ঘটনাটি প্রকাশ পেলে, রানির কারাবাস ও মৃত্য হয়, কিন্তু রানীর মৃতদেহের অন্তর্ধান রহস্য এখনো অমীমাংসিত, যা বাস্তবিক ভাবে ডাইনীবিদ্যার অবস্থানকে জোরালো করেছিল। যাকে ঘিরে হলিয়ুডেও বানানো হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। অন্যদিকে ইউরোপীয়ান শাষন ব্যবস্থায় খ্রীষ্টান ধর্মের অভূতপুৰ্ব উত্থান ইউরোপের মসনদে চার্চের অবস্থান শক্তিশালী করে তুলেছিল, তাই পেগান ধর্মের সাথে খ্রীষ্ট ধর্মের বাদানুবাদে অসংখ্য নারীরা চার্চ ব্যবস্থার দ্বারা ডাইনী তকমা পেয়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছে, যে মৃত্যুদন্ডের ধরন ছিল মারাত্মক পৈশাচিক। সেই পর্বে ইউরোপে তিনশ বছরের চার্চ রাজত্বে অন্তত ৩০ লাখ নারী ডাইনী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো, যার মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল ৬০ হাজার নারীদের, এমনকি ১৪৮৭ সালে  জার্মান পাদ্রী ‘মালিয়ুস মালফিকারুম’ ‘ডাইনিদের শায়েস্তা করার হাতুড়ি’ নামের একটি বইয়ো লিখেছিলেন।
ভারতীয় প্রেক্ষাপট
কিন্তু দীর্ঘসময় ও দূরত্বের পরিসীমা ছাড়িয়ে ভারতের অন্দর মহলে এই কুখ্যাত বিশ্বাস কি করে ঘর করেছে তা কল্পনার অতিত। শুধু যে ভারতেই এমন জঘন্য অন্ধবিশ্বাসের বেড়াজাল রয়েছে এমনটিও নই, তাই বিশ্বব্যাপী এই অন্ধবিশ্বাসের গোঁড়াই আঘাত হানতে প্রতিবছর ১০ আগস্ট বিশ্ব ডাইনি হত্যাবিরোধী দিবস হিসাবে পালিত হয়। ইউরোপে যদিও ধর্মিয় গোঁড়ামী ডাইনী অপবাদ জনিত হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী, কিন্তু ভারতে সে ক্ষেত্রে নিরক্ষরতা ও অত্যাধিক অন্ধবিশ্বাস এর পিছনে দায়ী।
আরো পড়ুন-রামরাজত্ব ও আদিবাসী দলিত সমাজ।। রাম রাজত্ব আমার দরকার নেই।

যাইহোক, আমাদের ভারতে ডাইনি আপবাদে নারি হত্যা বিগত দশকে দৈনন্দিন ঘটনা প্রবাহ হয়ে উঠেছিল, যার শিংহভাগ সংগঠিত হত আদিবাসী সমাজ সাঁওতাল, মাহালী, ওড়াঁও, মুন্ডা , বোড়ো এর মাঝে , আবার তার শিংহভাগ মহিলারাই ছিলেন বৃদ্ধা। ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড, আসাম, রাজস্থান, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ এমনকি আমাদের বাংলার উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গ উভয় এলাকাতেই এর অভিশাপ দেখা যায়। বিগত দশকে ভারতের কিছু কিছু রাজ্যের ,যেমন - উড়িষ্যা, ঝারখণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড় রাজ্যে ডাইনী হত্যার কলঙ্ক এতটাই জঘন্য ছিল যে, এই সমস্ত রাজ্যের সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়েই ডাইনী হত্যা বিরোধী আইন পাশ করে। যেই রাজ্যে তালিকাই সর্বশেষ সংযোজন ২০০৫ সালে আসাম রাজ্যে “Assam Witch Hunting (Prohibition, Prevention and Protection) Act, 2015”
ভারতে ডাইনী হত্যা
ভারতে ঘটে যাওয়া ডাইনী হত্যার উপরে অনেক পরিসংখ্যান করা হয়েছে, যা ভারতীয়দের মাঝে বিশেষত আদিবাসীদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ও শিক্ষার অভাবের ভয়াবহতা তুলে ধরেছে বারং বার। ডিস্কভারী চেনেল এই বিষয়ে বিশেষ তথ্যচিত্র তুলে ধরেছিলেন, যেখানে পরিষ্কার হয়ে উঠে আদিবাসী সমাজে ডাইনী মান্যতার কঠোর বিশ্বাস, সেই তথ্যচিত্রে আদিবাসী এক মায়ের কান্না বলে উঠেছিল আমার সন্তানি আমাকে মেরে ফেলতে ছুটে আসে ডাইনী অপবাদ নিয়ে।
ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড, আসাম, রাজস্থান, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ডাইনী জনিত হত্যাকান্ড প্রচুর। ভারতের একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে ১৯৯৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডাইনি সন্দেহে হত্যার ঘটনা ঘটেছে আড়াই হাজার। পশ্চিমবঙ্গ অধ্যূষিত দক্ষিনবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ও দুই পরগনায় আবার উত্তরবঙ্গের মালদাতে বহুল ডাইনি হত্যার নজীর উঠে এসেছে, এই সমস্ত স্থানের বেশীর ভাগ ডাইনী অপবাদ আদিবাসী সাঁওতাল মহিলাদের উপর উঠে এসেছে, আবার উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকার আদিবাসীদের মাঝেও এমন ঘটনা উঠে এসেছে ক্রমাগত।
আরো পড়ুন-ভারতীয় আদিবাসী উপজাতিদের বিভন্ন চিত্রকলা ও শিল্প। ১ম পর্ব।
যার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তুলে ধরা বাঞ্চনীয়, যার মধ্যে অন্যতম হল ঝাড়খণ্ডের রাঁচির মাণ্ডরে গ্রামে একরাতেই পাঁচ মহিলাকে পিটিয়ে খুন করা হয় ডাইনি অপবাদে। গোটা ঘটনার দেশব্যাপি তীব্র নিন্দার ঝড় বয়ে গেলে, সেই এলাকাই সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সংগঠন ঝাঁপিয়ে পরেছিল, কিন্তু সেই সচেতনতা শিবিরের উপরে গ্রামবাসীরা নিজের ক্ষোপ উগরে দেই, যাই হোক এতে পরে হতাহত হয়নি।
একই ভাবে উড়িষ্যা সুন্দরঘর জেলার একটি আদিবাসী গ্রামে ক্রমাগত মরতে থাকা গৃহপালিত পশুর অকাল মৃত্যুর পিছনে জানগুরু মাংরি নামের এক আদিবাসী মহিলাকে  ডাইনি অপবাদ দিলে, গ্রামের লোকেরা গভীর রাতে  ঘুমন্ত অবস্থায়  মাংরি সহ মাংরির দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে পিটিয়ে মেরে ফেলে দেই।

ডাইনি-হত্যা-আদিবাসী-দলিত-জানগুরু
কল্পনার ডাইনী

ডাইনি হত্যার নিষ্ঠুরতা চড়ম রুপ প্রায় গোটা ভারতেই লক্ষ্য করা গেছে, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর’ তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতে আড়াই হাজার নারীকে ডাইনি অপবাদে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। যার মধ্যে একটি জঘন্যতম ঘটনা উঠে আসে ভারতের রাজস্থানের আজমীর জেলা থেকে। আজমীর জেলার দেবী রায়গার নামের এক বিধবা মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে প্রথমে তাকে উলঙ্গ করে গোবর খাওয়ানো হয়, তারপর চোখের ভেতর গরম লোহা ঢুকিয়ে এবং এবং শেষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার কথাটি ভাবলেই কেমল যেন গা শিরশির করে উঠে। কিন্তু এই ঘটনার নগ্ন দিকটি হল যারা এই নরকীয় কান্ড ঘটিয়েছিল তাদের বেশিরভাগ ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, নারি হয়ে নারির প্রতি এই হিংস্রতা বাস্তবেই অত্যন্ত নিন্দনীয়।
ডাইনী হত্যার কারন
ডাইনী অপবাদে হত্যা সামাজিক ব্যাধি ছাড়া কিছু নই, যে ব্যাধি বিগত দশকের আগ পর্যন্ত শিকড় গেড়ে রেখেছিল আদিবাসী সমাজে। যার পিছনে প্রধান দায়ী নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা। একুশ শতকের দোড়গোড়াই অবস্থান করেও আদিবাসীদের মাঝে ডাইনী-বিদ্যা জনিত বিশ্বাস জায়গা করে রয়েছে এখনো। এখনো প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে গেলে শোনা যাবে ডাইনীদের রুপক কাহিনী, ডাইনিরা গৃহপালিত পশুকে চোখের নিমেষে ভক্ষণ করে, রাত্রে করে জীভে লন্ঠন জ্বালিয়ে উড়ে বেড়াই, শিশুদের আত্মা বাইরে থেকেই খেতে পারে, এমনকি ডাইনীরা শরিরের বাইরে থেকেই মানব শরিরের অভ্যন্তরীন পরিকাঠামো লক্ষ্য করতে পারেন, এমন গাঁজাখুড়ি গল্পের সাথে কিছু পরিচিত ডাইনীর নামো পেয়ে যেতে পারেন, যা সেই ব্যাক্তি সকলের মানসিক বিকারতার প্রমান দেই।
কিন্তু অন্তর্নিহিত পরিসংখ্যান ঘটনাচক্রের  অন্য চিত্র তুলে ধরে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে, যারা ডাইনী অপবাদে জর্জরিত হয়েছে, তাদের অনেকেই মানসিক রোগি ছিল, এছাড়াও সব ডাইনী হত্যার অধিকাংশের পেছনে উঠে এসেছে জমি সংক্রান্ত বিবাদ, শত্রুতা অথবা আর্থিক বিবাদ। সুতরাং নিরক্ষরতার পাশাপাশি সামাজিক অনৈতিক পরিকাঠামোও এই সকল জঘন্য অপরাধের পিছনে সমান ভাবে দায়ী।
মুক্তির উপায়
যদিও ডাইনী অপবাদে হত্যালিলার ধারাবাহিকতা চড়ম ভাবে কমেছে, তবে ডাইনী-বিদ্যার উপর মানুষের বিশ্বাস বৃক্ষের মূল যতদিন না উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে ততদিন এটা থেকে নিষ্পত্তি পাওয়া মুশকিল। যার জন্যে চাই প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকাই সমাজ সচেতনতা মূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকা থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব অনেক, ফলে শিক্ষার আলো ঠিক মত আলোকিত হয়ে উঠে না আদিবাসী গ্রাম গুলো, একইভাবে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব গ্রামবাসীদের জানগুরুর শরনাপর্ণ হতে বাধ্য করছে ঘনঘন, এই বিষয়ে এটা স্বীকার্য, বেশী ভাগ প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসীদের মাঝে ডাক্তারি চিকিৎসা থেকে কবিরাজী আর জানগুরুর গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশী।
ডাইনি-হত্যা-আদিবাসী-দলিত-জানগুরু
এরা কি ডাইনী হতে পারে?

আবার এটাও নই যে বিভিন্ন সংগঠন বা সরকারি সংগঠন এই সামাজিক অবক্ষয়ের বিপক্ষে কাজ করেনি, উদাহরণ রয়েছে প্রচুর, মালদার বিখ্যাত গম্ভিরা গান, তার নৃত্যনাট্যে ডাইনী বিদ্যার বিরুদ্ধে প্রচার করে আসছে বহুকাল আগে থেকে, তেমনি বহু ব্যক্তি যেমন বীরুবালা রাভা ও দিব্যজ্যোতি শইকিয়া ডাইনি হত্যা রোধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। আসাম বিধান সভায় পাশ হয়ে যাওয়া “Assam Witch Hunting (Prohibition, Prevention and Protection) Act, 2015” আইনে ডাইনি অপবাদ কারি, হত্যাকারি এবং জানগুরুকেও এই নিয়মের আওতায় আনা হয়। আমার মনে হয় এমন আইন সংবিধান প্রদত্ত হলে এই বিষবৃক্ষের উৎপাটন আরো সহজ হবে।

সুমন্ত মাহালি হেমরম


শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

ভারতীয় আদিবাসী ও উপজাতিদের বিভিন্ন শিল্পকলা ও চিত্রশিল্প ওরলি মধুবনি সাঁওতালি থাঙ্গকা ফাদ ও ডোকরা শিল্প ১ম পর্ব || art and handycraft of indian tribe madhubani santhali dokra thangka fad and orli ||

অক্টোবর ০৩, ২০২০

 "সোনেকা চিড়িয়া" নামে একসময় পরিচিত আমাদের এই মাতৃভূমির উত্তরের “মৈথিলী” চিত্রকলা থেকে দক্ষিণের “ তান্জোর” চিত্রকলা, পূর্বের “পটচিত্র” থেকে পশ্চিমের “ওরলি” চিত্রকলার ক্ষেত্রে আদিবাসী জাতি ও উপজাতি তাদের আদিম শিল্পকলার মোহিনী বিদ্যা জাগ্রত করে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

চিত্রশিল্প-ভারতীয়-আদিবাসী-উপজাতি-ডোকরা-থাঙ্গকা-সাঁওতাল-ফাদ-মধুবনি-ওরলি
ভিমভেটকার প্রাচীন চিত্রকলা
ভারতীয় চিত্রকলার প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় ভিমভেটকা গুহায়, যা ভারতীয় আদিবাসীদের চিত্রশিল্পের প্রতি আকর্ষনের বৈশিষ্ট তুলে ধরে, একি ভাবে দুঃখের সাথে এটাও স্বীকার্য যে ভারতে এখনো এমন আদিবাসী উপজাতিরা রয়েছে যারা তাদের প্রাচীন শিল্প বৈশিষ্ট হারিয়েছেন কিংবা হারানোর পথে।যাদের মধ্যে রয়েছে সাঁওতাল ,মাহালী আরো অনেকে, আবার এমনো লক্ষ্য করা গেছে যে আদিবাসী উপজাতি দ্বারা সৃষ্ট শিল্পকলা জাতি বৈষম্য দুর করে মিশে গেছে বিভিন্ন গোষ্টিতে, যার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ "ডোকরা শিল্প"
পূৰ্বে  বেশির ভাগ আদিবাসী জাতি ও উপজাতির শিল্পের উদ্দেশ্য ছিল গৃহসজ্জা, অঙ্গ সজ্জা, ব্যবহারিক সরঞ্জাম তৈরি অথবা পূজ্য দেবতার মহিমা কির্তন, তবে আধুনিকতার হাতধরে সেই শিল্প আজ বিদেশ সুনাম ধন্য এবং যার ছাপ প্রাই সবকিছুতেই। আদিবাসী শিল্পকলা বিশেষ করে চিত্রশিল্প বা কলার ক্ষেত্রে তাদের জীবনশৈলী, দেব-দেবীর অবয়ব, ও তাদের পরিবেশের সাথে মিথোস্ক্রীয়ার ছবি ফুটে উঠে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে  ধর্মীয় মহাকাব্যও বটে। অতীতে বিভিন্ন গাছের রঙ্গিন নির্যাস, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এমনকি রক্ত থেকে প্রাকৃতিক রং তৈরি করে তা ব্যবহার করা হত, কিন্তু আধুনিককালে এসে সেই প্রাকৃতিক রং পরিবর্তন হয়েছে  জলরং, তেলরং, মোমরং প্রভৃতিতে, তবে সেটি করা হয় ক্যানভাসের প্রাচীনসত্ত্বাকে জিঁইয়ে রেখেই।
এই বিশেষ ধরনের চিত্রকলায় মাটি, কাপড় বা অনেক সময় পাথর ক্যানভাসরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ফলে এই চিত্রকলায় এক প্রাচীন,দেশীয়, ঐতিহ্যর মেলবন্ধন হামেশাই দেখতে পাওয়া যাই।
ওরলি চিত্রকলা
আমার স্বচোখে দেখা,যার মধ্যে এখনো প্রাচীনত্বের ভাব রয়েছে চিরন্তর, দেখলেই এর মধ্যে আদিবাসীদের সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধন কতটা নিবিড় তা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে, মহারাষ্ট্র-গুজরাট সীমানা ও তার আশেপাশের এলাকার পাহাড়ে বিশেষ করে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সিমান্তের ওরলিরা হলেন ভারতের আদিবাসী দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত জনগোষ্ঠী, যাদের এই শিল্পকলার চিত্ররীতিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতেও পারেন। একসময় অবহেলিত এই কলা স্বর্গীয় জীভ‍্যা সোমার প্রচেষ্টাই চড়ম সিমায় পৌছাই।
ভারতীয় বিভিন্ন গুহাচিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এই শিল্পে কিছু জ্যামিতিক আকার ব্যবহার করা হয় অবয়ব হিসাবে, যা ক্যানভাসের রুপ নেই মাটি-লাল পোড়া মাটির সংমিশ্রণে, আর সাদা রঙের চিত্রায়িত করতে চালগুঁড়ি ও জল। এই চিত্র একসময় ওরলি আদিবাসীরা আঁকতো তাদের গ্রামের  কুঁড়ে ঘরেগুলোকে ফুটেতুলতে, কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পের সৌন্দর্য ছাপ রেখেছে বিভিন্ন সামগ্রীতে।
চিত্রশিল্প-ভারতীয়-আদিবাসী-উপজাতি-ডোকরা-থাঙ্গকা-সাঁওতাল-ফাদ-মধুবনি-ওরলি
ওরলি চিত্রকলাই দেওয়াল অঙ্কন
মধুবনী চিত্রকলা
মধুবনী চিত্রকলার উৎপত্তি বিষয়ে একটি বিশেষ কাহিনী শোনা যাই, এই চিত্রশিল্পের জন্ম নাকি শ্রী রামচন্দ্রের স্ত্রী সিতার পিতা জনকের নির্দেশে হয়েছিল, সেই মতবাদকেই মান্যতা দিয়ে মিথিলার মধুবন জেলাকে এই শিল্পের উৎপত্তি স্থল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কথিত আছে যে রামচন্দ্র আর সিতার বিবাহ উপলক্ষ্যে রাজা জনক গোটা রাজ্যে সুন্দরভাবে এঁকে সাজিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, এখান থেকেই নাকি এই শিল্পের জন্ম। সেই জন্যই হয়তো এই চিত্রকলাই পৌরাণিক কাহিনি ও লোকগাথা, যেমন- রাম-সীতার বিবাহ, সীতার বনবাস, তপোবন,  রামায়ণের অন্যান্য কাহিনি মধুবনী ক্যানভাসে বেশি দেখতে পাওয়া যাই।
প্রায় ২৫০০ বছর আগে সৃষ্ট এই প্রাচীন চিত্রকলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়াল সজ্জার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই চিত্রকলায় রংয়ের ব্যবহার ক্যানভাসকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে যা বাস্তবেই দৃষ্টিনন্দন। এই চিত্রকলাই রং তৈরি করতে প্রাকৃতিক জিনিসগুলিকে বেছে নেওয়া হয় ,যেমন-নীল গাছ থেকে নীল রং,চালের গুঁড়ো থেকে সাদা রং, ভুষোকালি থেকে কালো রং, ইত্যাদি। ভারতীয় ঘরানার এই চিত্রকলা পৃথক পরিচিতি পাই ১৯৩৪ সালে, যখন ব্রিটিশ কোলোনিয়াল অফিসার উইলিয়াম আর্চার এটি পৃথক সত্ত্বা প্রথম আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এই শিল্প সব কিছুতেই ব্যবহার করা হয়।
ফাড বা ফাদ চিত্রকলা
ফাদ বা ফাড চিত্রকলা রাজস্থানের এক বিশেষ আদিবাসী চিত্রকলা, যার জন্ম রাজস্থানের রাজ ভূমি থেকে এক আদিবাসীদের মাঝে। যেখানে তারা তাদের উপাস্য দেবতা ‘পাবুজি’ বা "দেবনারায়ন" এর বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হয়। প্রাচীনতম চিত্রকলাই কাপড়ের টুকরোকে ক্যানভাস হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার আকার মোটামুটি ভাবে ১৫-৩০ ফুট দীর্ঘ। ভারতীয় আদিবাসী অন্যান্য চিত্রকলার মত এখানেও প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার করা হয়।
সাঁওতালি চিত্রকলা
ভারতের অন্যতম আদিবাসী সম্প্রদায় সাঁওতাল বা সান্থাল মূলত বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যাই। আদিবাসী সাঁওতাল গ্রামে গেলে সারিবদ্ধ মাটির বাড়ীর সমগ্র দেওয়াল তাদের স্বকীয় চিত্রে ভরে উঠে। যেখানে অন্যান্য উপজাতীয় চিত্রকলাই ধর্মিও ভাবাবেগ ও আস্থা ফুঁটে উঠে সেখানে সাঁওতালী চিত্রকলাই প্রকৃতিই হয়ে উঠে চিত্রকলার প্রধান বৈশিষ্ট। তবে কিছু কিছু এই প্রচলিত রিতির পরিবর্তন দেখা যাই, এবং তাদের প্রধান উপাস্য দেবতা "সিং বোঙ্গা" বা সূৰ্য দেবের প্রতিকৃতিও কোথাও তুলে ধরা হয়।
থাঙ্গকা চিত্রকলা
থাঙ্গকা কাপড়ের উপর চিত্রিত তিব্বতীয় আদিবাসী উপজাতিদের দ্বারা খনিজ রং ও সাথে সোনার গুড়ো দিয়ে  চিত্রিত গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায় ও কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন দেখা যায়, যার মধ্যে ঠাঁই পাই বুদ্ধের বাণী ও উপদেশ সমূহ। তিব্বতে সৃষ্ট এই চিত্রকলাই ভগবান বুদ্ধের জীবনি তুলে ধরার দরুন বর্তমানে এই চিত্র ধর্মিও দৃষ্টিকোন থেকে অতি মূল্যবান চিত্রকলা ও সুপ্রসিদ্ধ চিত্রকলার ঠাঁই পেয়েছে, এমনকি বৌদ্ধ মঠগুলোতে ও বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীদের বাড়ীতেও পূজার বেদি হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার চাহিদা বিদেশেও।
ডোকরা শিল্প
বাংলার আদিম ডোকরা শিল্প ডোকরা-ডামার উপজাতির দ্বারা সৃষ্ট। প্রধানত অলংকারের চাহিদা মেটাতে এই শিল্পের উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এই শিল্পের উপকরন আদি গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন ব্যবহারিক সামগ্রি বানানোর জন্যও এই শিল্পের চাহিদা লক্ষ্যনীয়।
ডোকরা শিল্পের নমুনা
এই ডোকরা শিল্প তৈরি করতে প্রধানত মোম মাটি ও গলিত তরল ধাতুর ব্যবহার করা হয়। যার পদ্ধতি অনুসারে দুই রকম ভাবে এই শিল্পটির অবয়ব তৈরি করা হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের তৈরি এই শিল্প বাস্তবিক ভাবেই আমাদের বাংলার মান বিশ্বে উজাগর করেছে।

আরো পড়ুন- ডোকরা শিল্প বাঁকুড়া আর পশ্চিমবঙ্গের গর্ব।

ভারতের আদিবাসী উপজাতিদের সৃষ্টিকলাই কোন উপজাতিই পিছিয়ে নেই, আরো রয়েছে ভিল চিত্রকলা, মাহালী শিল্প, সাউরি চিত্রকলা আরো বিবিধ যা সময় সংকির্ণতার কারনে এক প্রতিবেদনে জায়গা করে উঠতে পারছি না। এটি প্রথম পর্ব হিসাবে এখানেই সমাপ্ত করতে বাধ্য হচ্ছি। বাকি চিত্রকলা ও শিল্পকলার যাবতীয় তথ্য নিয়ে পুনরাই আসা যাবে।

আরো পড়ুন-আদিবাসীদের সুখ দুঃখের কথা

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ডোকরা শিল্প পশ্চিমবঙ্গ ও বাঁকুড়ার গৌরব || DOKRA SHILPO ART OF BENGAL ||

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০

 ডোকরা শিল্প  || Dokra Shilpo

ডোকরা শিল্প বাংলার দক্ষিনবঙ্গের গর্ব স্বরুপ। যা পশ্চিমবঙ্গের নাম উজ্বল করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই আদিম
ডোকরা শিল্প পুনরাই জীবিত হবার
পথে, গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে, দেশ থেকে দেশান্তরে, সর্বত্রই ডোকরা শিল্পের চাহিদা তুঙ্গে। ভারতে এই শিল্প আদিবাসী ডোকরা-ডামার উপজাতির দ্বারা উৎপত্তি হয়েছে বলেই অনেকেই মনে করেন, কিন্তু মহেঞ্জোদারোর খনন কার্যে উঠে আসা তথ্য, এই ডোকরা শিল্পের সৃষ্টিকাল বহুকাল পিছনে সরিয়ে দিয়েছে।

west-bengal-bankura-dhokra-dokra-shilpo-sculpture
ডোকরা শিল্পকলা

মহেঞ্জোদারো ব্রোঞ্জ নির্মিত নর্তকি এই শিল্পরি উদাহরণ। আনুমানিক প্রায় চারহাজার বছর আগে ডোকরা শিল্পকলার উৎপত্তি। কিন্তু সবথেকে অবাক করার বিষয়টি হল সেই সময় শুধু ভারতেই নয় ,সেই সময় শুধু ভারতেই নই আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, চীন, প্রাচীন মিশর, জাপান এবং সুদূর মধ্য আমেরিকাতেও এই শিল্পের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
পশ্চিমবঙ্গে ডোকরা || Dokra Shilpo
পশ্চিমবঙ্গের ডোকরা এখন জগৎব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেছে, যার শীর্ষে রয়েছে বাঁকুরা ও বর্ধমান, এছাড়াও মেদিনীপুর এবং অল্প বিস্তর দক্ষিনবঙ্গের বাকি কিছু কিছু জেলাই ছড়িয়ে পরেছে, তবে এই শিল্পটি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের গুটি কয়েক স্থানেও দেখা যাই। যাই হোক, মনে করা হয় মধ্যপ্রদেশের বস্তার এলাকাই এই শিল্পের প্রথম বিকাশ ঘটে সেখানকার রাজা রানিদের অলংকারের চাহিদা মেটাতে। কালক্রমে এই শিল্প ভারতের বিভিন্ন প্রান্তরে ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন স্থানের চাহিদা অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গেও এর প্রবেশ ঘটে মধ্যভারতের উচ্চভূমি হয়ে ঝাড়খন্ডের পথ ধরেই এর বাংলাই প্রবেশ।
ভারতের বাংলাই দুই ধরনেরই ডোকরা শিল্পই দেখা যাই, ১- ফাঁকা ডোকরা ২- ভরাট ডোকরা। বাঁকুড়ার বিকনা,লক্ষীসাগর, লাদনা,শববেড়িয়া,ছাতনা এলাকাই, বর্ধমানের দরিয়াপুর, গুসকরায়, পুরুলিয়ার নাডিহায়, যার মধ্যে বাঁকুড়ার বিকনার ডোকরা বেশ প্রসিদ্ধ, যার ফলে বর্তমানে এই গ্রামটির পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে ডোকরা গ্রাম।
আরো পড়ুন- নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।

west-bengal-bankura-dhokra-dokra-shilpo-sculpture
ডোকরা শিল্পের দূৰ্গা মূৰ্তি

ডোকরা শিল্পকাজ || Dokra
প্রাচীন এই শিল্পকলা আধুনিক কালেও তার পুরোনো শিল্পসত্ত্বা বাঁচিয়ে রেখেছে। ডোকরা শিল্পীরা যাযাবরের স্থান ছেড়ে এই শিল্পকে তার দ্বিতীয় প্রজন্মকে স্থানান্তরিত করে চলেছে। ফাঁকা ডোকরা আর ভরাট ডোকরা দুটো শিল্পকর্মের পদ্ধতি প্রায় একই, তফাৎ শুধু অস্তারন দেবার পদ্ধতির মাঝেই - ফাঁকা ডোকরার ছাঁচটি মাটি দিয়ে তৈরি করে তার উপর মোমের অস্তারন লাগানোর পর পুনরাই তার উপর মাটির অস্তারন দেওয়া হয়। অন্যদিকে ভরাট ডোকরা পদ্ধতিতে প্রথমেই ডোকরার পুরো ছাঁচটি বানানো হয় মোম দিয়ে। তার উপর দেওয়া হয় মাটির অস্তারন।
শেষে এটিকে গরম করে একটি ছিদ্রপথে বের করে আনা হয় তরল এবং সেই পথেই তরল ধাতুর মিশ্রন, বিশেষ করে পিতল ও তামা মিশ্রিত বিবিধ ধাতু ঢেলে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পকলার অবয়ব।
ডোকরা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি
চলার মাঝপথে উত্থান পতন চলার সঙ্গী, জীবনের চলার পথে তার অস্তিত্ব মেনে নিতে হয়, কেননা মাঝপথে এই ডোকরা শিল্প ক্রমশঃ ঝুঁকে পরেছিল, সরকারের সহযোগিতা এইক্ষেত্রে সু-ফল প্রদান করে। বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্পীদের হাত ধরে এই শিল্প পারি দিয়েছে বিদেশেও, অর্জন করেছে সুনাম, এই শিল্পের মধ্যস্থতায় অনেকেই পুরষ্কৃত হয়েছেন দেশে বিদেশে।
তবে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও করোনা অতিমারিতে এই শিল্পের বেগ কিছুটা মন্থর হয়ে পরেছে, কিন্তু ডোকরা শিল্পের চাহিদা নেই বললে হবে না। গোটা বিশ্বেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে ক্রমশঃ।
ডোকরা শিল্প হাতির মূর্তি


এছাড়াও বেশ কিছু নামি, দেশী-বিদেশী সংগঠন এগিয়ে এসেছে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিগত বছরেই কাঁথির নান্দনিক ক্লাব এই শিল্পকে জনমানবে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিল্পটিকেই তাদের থিম হিসাবে বেছে নেই। ডোকরা শিল্পের সৌন্দর্যই এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, বলা-বাহুল্য কি নেই এই শিল্পে, অঙ্গ সাজানোর অলংকার থেকে ঘর সাজানোর উপকরণ, প্রানি জগতের সকল পশু, দেবদেবীর মূৰ্তি সব চাহিদাই যেন মেটাতে পারে এই শিল্প। আগামিতে এই শিল্প আরো উৎকর্ষতা পাবে এটাই শ্রেয়।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মহুয়া গাছ ও আদিবাসী ও তাদের নিবিড় বন্ধন || mohuya gach r adibashi somaj ||

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০

 

"মাৎকম দারে" "মাৎকম হান্ডী" আদিবাসী সমাজগুলোতে অঙ্গাগী ভাবে জরিয়ে রয়েছে। আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থা ও মাৎকম দারে সাংষ্কৃতিক দিক দিয়ে ওতোপ্রতো ভাবে জরিয়ে রয়েছে একে উপরের সাথে। আদিবাসী সাঁওতালী শব্দ মাৎকম দারে মহুোয়া গাছকে বোঝায়। বলা যেতে পারে মহুয়া গাছ ভারতের আদিবাসী জাতি ও উপজাতির সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রকৃতিক পুরষ্কার, বিশেষ করে যে সমস্ত আদিবাসীরা এখনো জঙ্গলে বসবাস করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। মহুয়া গাছ একযোগে অষ্ট্রিক এবং দ্রাবীড়িয়ান উভয় ক্ষেত্রেই তার প্রয়োজনীয়তা মুষ্ঠিগত করে রেখেছে।
মহুয়া গাছ আর আদিবাসী
মাৎকম দারি আর মাৎকম বাহা অথবা মহুয়া নিয়ে আদিবাসী সমাজ ও বিভিন্ন গানে অস্তিত্বের ছাপ রেখেছে আগাগড়াই। দ্রাবীড়িয়ান ওড়াঁও, মাহালী, অথবা অষ্ট্রিক সাঁওতাল, হোদের বিয়ের অনুষ্ঠানি হোক, মহুয়া গাছ ছাড়া বিয়ে কার্যত অসম্ভব। মহুয়া গাছ যার বিজ্ঞান সম্মত নাম: "Madhuca longifolia" বা "Madhuka indica" , যেই গাছটির প্রতি আদিবাসী সমাজের এই মেলবন্ধন প্রাকৃতির সাথে আদিবাসী সমাজের নিবিড় সম্পর্কটিকে উজাগর করে।

মহুয়া ফল


পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী উৎসব "বাহা পরব" ,আদিবাসী সাঁওতালী শব্দ "বাহা" যার অর্থ ফুল। পলাশফুলে সজ্জিত পলাশ গাছ সেই উৎসবের বার্তাবাহক। আবার সেই সময়েই দেখা দেয় মহুয়া ফুলের আগমন। উৎসবটি চলে কয়েকদিন ধরে, তবে মূল উৎসবের দিন আদিবাসী পুরোহিত আসে গ্রামে এবং আদিবাসী উপাস্য স্থান জায়ের থান সুন্দর ভাবে লেপে রাখা হয়, মেয়েরা ডালিতে বিভিন্ন ফুলের সাথে রাখে মহুয়া ফুলটিকেও। শাল ও মহুয়া ফুল বা নতুন ফল দেবদেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
বাংলা, বিহার ,উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের জঙ্গলের আদিবাসী অধ্যূষিত গ্রামগুলো মহুয়া ফুলের মরশুমে গেলে তার গন্ধে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। মহুয়া গাছের তলাই ছড়িয়ে পরা ফুলগুলো চাদরের আকার ধারন করে ঢেকে রাখে গোটা প্রাঙ্গন, সেই চাদরের আদিবাসী কচি-কাঁচাদের খেলাধূলা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। যাইহোক মহুয়া গাছের ফুল হয়ে উঠে আদিবাসীতের আমোদ-প্রমোদের অংশ, শুকনো ফুল রসদ জোগাই তার, এই শুকনো ফুল এবং ফলকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় বিশেষ মদ, যা আদিবাসী সমাজকে আনন্দ উৎসবে আনন্দের খোরাক জোগান দেয়।
আরো পড়ুন - রামরাজত্ব ও আদিবাসী দলিত সমাজ।
মহুয়া গাছকে ঘিরেই অনেক আদিবাসী পরিবার তাদের আর্থিক চাহিদার বড় অংশটাই পুরোন করে। অরন্যের আদিবাসীদের জীবনশৈলী নিজে কয়েকদিনের উপভোগে মহুয়ার সাথে আদিবাসীদের নিবীড় মেলবন্ধন লক্ষ্য করেছি যা বাস্তবেই চিত্তাকর্ষক। অরন্যের শিত যেন শরিরকে একপ্রকার তীব্র শিতে দুমড়ে মুচরে দিতে চাই, শিতকালিন ভোরে পরিবারের বয়ষ্করা সাজিয়ে রাখে শুকনো মহুয়া পাতা ও ডালপালা, যেগুলো জ্বালিয়ে শিতের সেই হাঁড় কাপুনি ঠান্ডা থেকে নিজেদের খানিকটা স্বস্তি দেবার চেষ্টা করা হয়, একি সাথে চলে সেই আগুনকে ঘিরে রেখে গোল করে বসে বিভিন্ন আলোচনা পর্ব।

এখনো অনেক আদিবাসী গ্রামে গেলে,বিশেষ করে সাঁওতাল এলাকাই মহুয়া ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত তৈল মশা তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে আসছে, তার সাথে মহুয়ার কচি ডাল দাঁত মাজার উপকরন হিসাবে ব্যবহার করে আসছে প্রতিনিয়ত। প্রায় সমগ্র ভারতে পাওয়া বিভিন্ন ঔষুধিগুনে ভরপুর এই গাছ আদিবাসীদের জিবনশৈলী থেকে আস্থা সব কিছুতেই একটি অংশ হয়ে রয়েছে আজো।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দূৰ্গা যেখানে নিন্দিত অসুর যেখানে পূজিত || অসুর পূজা ও আদিবাসী সমাজ || story of asur or hudur durga puja dasai dance and tribe ||

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০

 

শরৎের আকাশ আর কাশফুল দেবী আগমনের বার্তাবাহক। একদিকে যখন ঢাঁকিরা এই করোনাময় পরিস্থিতীতে যৎসামান্য উপার্জনের আশাই তাদের ঢাঁকে রশি কশছে, অপরদিকে সাঁওতাল পাড়ার দাঁশাই শিল্পীরা তাদের ধাঁমসা মাদলের রশি কশছে শহরতলিতে গিয়ে খানিক উপার্জনের আশাই। শারদীয়ার সমাবেশে ঢাঁকি আর দাঁশাই নৃত্য শিল্পীদের বাস্তবিক মেল বন্ধন, আলাদা আলাদা আক্ষরিক অর্থ বহন করে, একপক্ষ দেবী বন্দনাই তার ঢাঁকের তাল তোলে আর একপক্ষ দেবী নিন্দাই ধাঁমসাই তাল তোলে, সাথে মৌখিক বোল - "হাইরে হাইরে!"
দাঁসাই নৃত্যের এই বোল অসুর নিধনের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করে, আর্য রমনির হাতে বীর শহীদ অসুরের নিধন। আজো পশ্চিমবঙ্গের অনেক আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকাই দেবী দূৰ্গার নই বরং অসুরের পূজা করা হয়। ভারতে অসুর বন্দনা ও দূৰ্গাকে হত্যাকারিনি পতিতা হিসাবে উল্লৈখ্যকরণ সকল মানুষের চোখে প্রথম আসে যখন  জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘অল ইন্ডিয়া ব্যাকওয়ার্ড স্টুডেন্টস ফেডারেশন”  “মহিষাসুর শহীদ উৎসব” পালন করা শুরু করে এবং সেই উৎসবের প্রচারে প্রচারপত্র বের করে, যেখানে দূৰ্গাকে পতিতা (বেশ্যা) এবং অসুরকে মহান অনার্য রাজা হিসাবে অভিহিত করা হয়, যা তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী মাননীয়া স্মৃতি ইরাণী পার্লামেন্টের অধিবেশনে প্রবল ভাবে বিরোধ করে।

সাঁওতাল-অসুর-দাঁসাই-দুর্গা-পুজা-খেরওয়াল-আদিবাসী
দূৰ্গা পূজা দূৰ্গা প্রতিমা
ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিভিন্ন গ্রন্থ বিভিন্ন বিরোধাভাস তৈরি করে, যার দরুন রাম কোথাও নায়কের আসনে, কখনো বা খলনায়কের আসনে। কোথাও রাবণ খলনায়ক আবার কোথাও নায়ক। রামায়নের রাম নায়ক স্বরুপ, অপরদিকে "মেঘনাথবধ" কাব্যগ্রন্থে রাম খলনায়ক স্বরুপ। এই বিরোধাভাস আরো বেগ পাই "হোলিকা দহণ" পর্বে, বিষ্ণুপুরান মতে হোলিকা হলেন অসুর হিরন্যকশিপুর বোন এবং প্রহ্লাদের পিসিমা, যে হরিভক্ত প্রহ্লাদকে আগুনে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিষ্ণুর কৃপাই প্রহ্লাদ বেঁচে যান এবং রাক্ষসি হোলিকার দহন ঘটে, অপর দিকে "ভগবৎ পুরান" ( গীতা প্রেস, দ্বাদশ সংস্করন, পাতা- ১৪৫ থেকে ১৫৮) ও "নারদ সংহিতায়" ( গীতা প্রেস, নবম সংস্করন, পাতা-- ২১৮ থেকে ২৩২) হোলিকা দহন কান্ডটি আর্যদের দ্বারা বুদ্ধিমতি, প্রজাহৈতষি অনার্য নারিকে চক্রান্তের দ্বারা আগুনে হত্যার কাহিনী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঠিক তেমনি আর্য এবং অনার্য লড়াইয়ে মহান বীর আদিবাসী অসুর জনজাতির রাজা হুদূর দূৰ্গার হত্যা লিলা হিসাবে ধরা হয়।
অসুর পূজা কারা করে
আদিবাসী খেড়ওয়াল জনজাতির প্রধানত অসুর, সাঁওতাল, মাহালী,মুন্ডা,কোল, কুর্মি (তপশিলী উপজাতির মর্যাদা এখনো পাইনি) আদিবাসীরা বাংলার বহু স্থানে অসুর পূজা করে থাকেন। তার মধ্যে দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ী, কোচবিহার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম আরো বহু জেলাই। তাদের মতে দূৰ্গা পূজো ব্রাহ্মন্যবাদের তৈরি স্বকীয় অনুষ্ঠান, যার পিছনে রয়েছে অনার্যদের পরাজয়ের অশেষ চাতুরতা ও ব্রাহ্মন্যবাদ প্রচারের কার্যকলাপ এবং আর্য ও অনার্য সংঘাতের স্মৃতি। তাদের মতে দূৰ্গা কোনো নারির নাম নই বরং পুরুষের নাম, আর যে পুরুষ ছিলেন অসুর জাতির রাজা হুদূরদূৰ্গা, আদিবাসী অনার্য রাজা, সেই রাজাকে হত্যা করেই পতিতা নারি দূর্গা নাম অর্জন করে। আশ্চর্যজনকভাবে ভারতে খেড়ওয়াল জাতির মধ্যে এখনো অনেকের অসুর জাতিদের অসুর পদবী দেখা যায়। 
সাঁওতাল-অসুর-দাঁসাই-দুর্গা-পুজা-খেরওয়াল-আদিবাসী
মহিষাষুর বধ নাকি হুদূর দূৰ্গা হত্যা?


অসুর
"অসুর" শব্দটি ভগবান বিরোধি, অপশক্তি, মানব বিরোধি ভীমকায় শরিরের অধিকারি আক্ষরিক অর্থ বহন করে, কিন্তু খোদ হিন্দু শাস্ত্রগুলোই অসুরদের নিন্দাসূচক হিসাবে ব্যক্ত করেনি বরং হিন্দুদের সর্বোচ্চ শাস্ত্র বেদে দেবতাদেরো অসুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে, যেমন- মরুৎকে মারুতাসুর ( ঋগ্বেদ ৬৪/২), রুদ্রকে রুদ্রাসুর(ঋগ্বেদ ৫/৪২/২১), ইন্দ্রকে ইন্দ্রাসুর(ঋগ্বেদ ৫৪/৩), বরুণকে বরুনাসুর(ঋগ্বেদ ২/২৭/১০), অগ্নিকে অগ্নিসুর(ঋগ্বেদ ৫/১২/১)। বেদের একটি শ্লোকে আবার অসুরকে প্রানদান কারি বলা হয়েছে - অসুন্ প্রাণান রাতি দদাতি ইত্যসুরঃ।
সংস্কৃত শব্দ "অস" লোহা, তবে "সুর" শব্দ বিবিধ অর্থ বহন করে -ধ্বনি, নেশা জাতীয় পানিয়, নিশ্বাসের বায়ু প্রভৃতি। সম্ভবতঃ আর্য ও অনার্যদের মাঝে দীর্ঘ-সংঘাত অসুর শব্দটিকে নেতিবাচক করে তুলেছে। আদিবাসী খেড়ওয়াল জাতির অসুরেরা যে প্রাচীন ভারতের প্রজাহৈতষী রাজা ছিলেন তার বিষয়ে বহুল প্রমানাদি পাওয়া গেছে, এবং আর্যদের জয়ে ও অনার্যদের পরাজয়ে আজ আদিবাসীরাই ভূমিহিন। এই প্রসঙ্গে দাড়ি দিয়ে অনেকেই মনে করেন ব্যাবিলনের শাষক অসুরসিরিপাল, অসুরবনিপাল অসুর জাতিরি অংশ যারা আর্যদের কাছে পরাজিত হয়ে ব্যাবিলনে চলে যান এবং সেখানে অসুর বা আসীরিয়া নামক সাম্রাজ্যের স্থাপন করেন, যার রাজধানীর নাম ছিল অস্মুর। কিন্তু অনেকেই এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন। যাই হোক ভারতে পরাজিত অনার্য আদিবাসী অসুর উপজাতিরা বংশ পরম্পরাই দূৰ্গা পূজাকে বয়কট করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে যাদের বাস পশ্চিমবঙ্গ,ঝাড়খন্ড ও বিহারের কিছু কিছু স্থানে।
খেড়ওয়াল হুদূর দূৰ্গা হত্যার কাহিনী।
খেড়ওয়াল আদিবাসী গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে অসভ্য,বর্বর আর্যজাতিদের দ্বারা সরল অথচ শক্তিশালী অনার্যদের পরাজয়ের ও আদিবাসী রাজা হুদূর দূৰ্গার হত্যালিলার কাহিনী এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্ম চলে আসছে। হুদূর দূৰ্গার এই কাহিনীর লিখিত উপাদান নাই, তথাপি লোককাহিনী অনুসারে প্রচলিত, তবে এর সত্যতার প্রতিউত্তর রয়েছে, খেড়ওয়াল বীদ্বজনেরা যুক্তি প্রদানে এগিয়ে এসে বলেন, হিন্দু ধর্মের মহান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ "বেদ" , যেটি একসময় বংশপরম্পরাই শুনে আসা শ্লোকের সত্যতা যাচাই ছাড়া বেদে রুপান্তরিত করে সেটি সর্বসম্মত বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যদিও বা আদিবাসী অনার্য রাজা হুদূর দূৰ্গার লিখিত গ্রন্থ থেকে থাকতো তবে তা ব্রাহ্মন্যবাদের হঠকারিতাই ধ্বংস্ব করা হয়েছে।
আরো পড়ুন- বোকা আদিবাসী এবার একটু চালাক হও, সময় হয়েছে পরিবর্তনের।
তাহলে কেমন সেই কাহিনী- আর্য আগমনের পরবর্তিকালে অনার্য এবং আর্যের চড়ম সংঘাত ঘটে, কিন্তু শারীরিক শক্তিতে শক্তিশালী অনার্যদের পরাজিত করা আর্যদের সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না। হিন্দু বেদের এক জায়গাই অসুর শব্দের অর্থ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপে পটু জাতি হিসাবে বর্ণিত করা হয়েছে, যেটি অনার্য খেড়ওয়াল জনজাতির যুদ্ধ পারদর্শিতারই ইঙ্গিত দেই। অনার্য আদিবাসী অসুর জনজাতির রাজা হুদূর দূৰ্গা নিজ মাতৃভূমি চাইচম্পা রক্ষার্থে বদ্ধ পরিকর। শারীরিক ক্ষমতাই অনার্যদের পরাস্ত করা কোনোমতেই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে না আর্যদের পক্ষে, সুতরাং ছলচাতুরির দ্বারা অসুর আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাজা হুদূর দূৰ্গাকে পরাস্থ করার যোযনা করে।
সাঁওতাল-অসুর-দাঁসাই-দুর্গা-পুজা-খেরওয়াল-আদিবাসী
অসুর পূজা


অসুর আদিবাসী সম্প্রদায়েরা নারি সম্মানে অগ্রসর  ও নারির উপরে হাত তোলাও কাপুরুষের নামান্তর মনে করতো। সুতরাং নারীই হয়ে উঠলো অসুর জনজাতির রাজা হুদূর দূৰ্গাকে পরাস্ত করার কান্ডারি। আর্য এবং অনার্যদের যুদ্ধে আর্যরা পরাজিত হয়ে হুদূর দূৰ্গার সাথে মিথ্যা মিত্রতার হাত বাড়ীয়ে দেই এবং উপহার স্বরুপ অপূৰ্ব সুন্দরী এক পতিতা (বেশ্যা) নারীকে হুদূর দূৰ্গার সেবার্থে প্রদান করে। এই লাস্যময়ী ছলা-কলাই পারদর্শী এই পতিতা নারী শীঘ্রই আদিবাসী অসুর জনজাতির রাজা হুদূর দূৰ্গাকে নিজের প্রেম বন্ধনে আবদ্ধ করে নেই এবং শীঘ্রই রাজা হুদূর দূৰ্গা সেই নারীকেই বিবাহ করেন। একদিন রাত্রীকালিন খেড়ওয়াল অসুর আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাজা হুদূর দূৰ্গাকে হত্যা করার সুযোগ পেয়ে সেই নারী রাজা হুদূর দূৰ্গাকে হত্যা করে, যেই মহূৰ্তে প্রাসাদের বাকি অসুর সম্প্রদায়ের পুরুষেরা নিজের প্রান বাঁচাতে নারীর ছদ্মবেশ ধারন করে পালিয়ে যাই, যেই ঘটনাটিকে সামনে রেখেই দূৰ্গা পূজা চলা কালিন দাঁসাই নৃত্যে পুরুষেরা নারী পরিধান ব্যবহার করে।
দাঁসাই নাচ
সেই পতিতা নারীর চক্রান্তে রাজা হুদূর দূৰ্গা মারা যাই, এবং দূৰ্গা হত্যাকারিনী বির হিসাবে আর্যরা সেই পতিতা নারীকেই দূৰ্গা উপাধিতে অভিষিক্ত করে। যে ঘটনাটি আদিবাসী সাঁওতাল জনজাতির বংশপরম্পরাই চলে আসা বিভিন্ন গানের দ্বারা মানুষদের জানিয়ে থাকে। খেড়ওয়াল আদিবাসী জনজাতীর মধ্যে একটি সাঁওতাল, যারা দূৰ্গা পূজার সেই মহূৰ্তে পাড়াই পাড়াই গিয়ে দাঁসাই নাচ আর গানে তাদের বীর যোদ্ধা হুদূর দূৰ্গার বীরগাঁথা সকলের সামনে প্রস্তুত করে।
"দাঁসাই" প্রথম থেকেই আদিবাসীদের দুঃখ প্রকাশের অনুষ্ঠান ছিল না, বছরের অন্যসময়েও এই নৃত্য নাচা হয়, কিন্তু সেখানে খেড়ওয়াল বীরগাঁথা অংশ পাই না, বরং আনন্দই স্থান পাই। দাঁসাই প্রধানত পুরুষদের দ্বারাই পরিবেশিত হয়, দূৰ্গা পূজাই দাঁসাই নৃত্যে পুরুষেরা ধামসা,মাদল,করতাল সহযোগে এছাড়াও লাঁও এর খোলস এবং ধনুকের ছিলা দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় যা প্রতিকী স্বরুপ, এইসময় সাঁওতাল আদিবাসী পুরুষেরা ময়ূরের পাখনা মাথাই গুঁজে, সিন্দুর, ও কাজল দিয়ে নারীসুলভ রুপ ধারন করে।
নীতিহীন যুদ্ধে আর্যদের পরাস্ত করে আর্যাবর্ত নামে আর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্যপক্ষ যখন সেই পতিতা নারীকে দূৰ্গা উপাধি দিয়ে বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছিল সেই সময় সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোল, কুরমি, মাহালি, কোড়া-সহ খেরওয়াল গোষ্ঠীর আদিবাসীরা তাঁদের বশ্যতা স্বীকার না করে নিজেদের মান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নারীর ছদ্মবেশে দাঁশাই নাচের মাধ্যমে আধ্যাত্তিক বেদনা নিয়ে আনন্দের অভিনয় করতে করতে স্বভূমি চাইচম্পা ছেড়ে ভারতের বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। যেই চিত্রনাট্য দাঁসাই নাচেই ফুঁটে উঠে।
সাঁওতাল-অসুর-দাঁসাই-দুর্গা-পুজা-খেরওয়াল-আদিবাসী
দাঁসাই নাচ (ছবি ইউটিউব গ্রেবশট)


সুতরাং ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে দেবাসুরের সংগ্রামের কথা পাই, সেটা বাস্তবে শক্তির সঙ্গে প্রজ্ঞার লড়াই ছিল, যেখানে ছলচাতুরিতে পারদর্শী আর্যরা জয় লাভ করে ছিল, আর অনার্যরা পরাজিত হয়ে স্বভূমি ত্যাগ করে।
অসুর পূজার অনুষ্ঠান পর্ব
সাঁওতালি দাঁশাইয়ের বিধি অনুযায়ী, দূৰ্গা পূজোর পাঁচদিন দেবী দুর্গার মুখ দর্শন বন্ধ থাকে। তবে অসুর পূজার আয়োজন শুরু হয় মহালয়ার পর্ব থেকেই, যেদিন খেড়ওয়াল আদিবাসীরা শহিদ দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। বেদের বেশীর ভাগ অংশেই অসুরদের শুভশক্তির উৎস হিসাবেই দেখিয়েছে, কিন্তু কালক্রমে অনার্য আর আর্যদের মাঝে বিশৃঙ্খলা অসুরদের জনবিরোধি প্রতিচ্ছবি করে তুলে, অসুরাঃ রাক্ষসাঃ দেবনিন্দকাঃ শ্লোকটি তার সত্যতা তুলে ধরে। যাইহোক, এইসময় অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী শোকপালন করতে গিয়ে ওই দিনগুলিতে বাড়ি থেকে বের হন না, কেন না ভূমিপুত্র আদিবাসী খেড়ওয়ালরা তাদের পূৰ্ব গৌরব আর ক্ষমতা হারায়, যে দুঃখ আজও তারা মেনে নিতে পারেননা। হুদূর দূৰ্গা হত্যার দিন চলে তার বীরত্বের জয়গাঁথা ও স্মরনসভা যেটি দাশানি বলে পরিচীত, ব্রাহ্মন্যবাদের সেই হঠকারিতাই এই দাঁশানিই হয়ে উঠেছে বিজয়া দশমী। পূজার পনেরো দিন পরেই অধিবাসীদের দ্বারা পালিত বাঁদনা পরবে গৃহপালিত পশু হিসেবে মহিষের পুজো করা হয়।
আরো পড়ুন- ভাষা হারানোর ভয়ে মাহালী আদিবাসী সমাজ।
ভূমিপূত্রদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করা আর্যরা দূৰ্গা পূজাই আত্মহারা, অপরদিকে অসুর আদিবাসীরা দুঃখের সাথে দিনকাটাই, অসুর পূজা ইদানিংকালে বেশ বড় মাপের করা হয়। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মাননীয়া স্মৃতি ইরানি আদিবাসী ছাত্রদলের অসুর শহীদ স্বরণ দিবসকে অশুভ শক্তির প্রসারের নাম দিয়ে বলেন যে এতে হিন্দুদের আস্থায় আঘাত হানছে, তিনি সঠিকই বলেছেন কিন্তু এই যুক্তির খন্ডন সহজ, আদিবাসী সমাজের যারা অসুরকে পূৰ্বপুরুষ হিসাবে জেনে আসছে তাদের কাছে তবে দূৰ্গা পূজাও তাদের পূৰ্বপুরুষদের প্রতি অসম্মানের প্রতিক হিসাবে মনে করবে। এই প্রসঙ্গে বামপন্থি নেতা মাননীয় সিতারাম ইয়েচুরি আদিবাসী ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনে যুক্তি দেখান। ভারত বৈচিত্রে ভরপুর সুতরাং একে অপরের প্রতি আস্থা রেখে নিজেদের বিশ্বাস আর সংস্কৃতি জিইয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির ভাষাই - ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।


সুমন্ত মাহালী হেমরম



শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ভারতের আবিষ্কার যেগুলোর কৃতিত্ব অন্য কেউ পেয়েছে || indian science and invention which are neglected ||

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০

 ভারতের বিজ্ঞান চর্চা বহু প্রাচীন, যার বেশীর ভাগ আজ বিদেশী আবিষ্কারকের নামে নামাঙ্কিত। সিন্ধু সভ্যতাই ধরা যাক না কেন, বর্তমান সরকার ব্যবস্থা এখনো তেমন কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি সিন্ধু সভ্যতার মতন পৌর ব্যবস্থা প্রদান করার। ভারতীয় প্রাচীন বিজ্ঞানের আভাষ পাওয়া যাই ভারতীয় প্রাচিন শিল্পকলা ও বিভিন্ন গ্রন্থে।

বস্তুত ইউরেশিয়ানদের ভারতে আগমনের পর থেকেই ভারতে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়ে পরে। যার ফলস্বরুপ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন পন্ডিতের নাম আমরা জানতে পারি, যেমন- পালযুগে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পন্ডিত চক্রপানি দত্ত, উদ্ভিদবিদ্যায় শুরপাল, শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাই পন্ডিত বঙ্গসেন প্রমূখ। আর এই ধারাবাহিকতা একটা যুগের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিল না, পরবর্তী কালে কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ, প্রায় সমগ্র ভারতীয় ইতিহাসের মাঝে সিমাবদ্ধ রয়েছে, এবং যাদের আবিষ্কার বা কর্মকান্ড আজ ইতিহাসের পাতার মাঝে ছোট করে দেখা হয়।

ভারতের-আবিষ্কার-কারেন্ট-লাইট-প্রাচীন-গ্রন্থ
ভারতীয় আবিষ্কার


প্লাস্টিক সার্জারী
কুষাণ রাজত্বের সময় ভারতে শক্তিশালি রাজা হয়ে উঠে  কণিষ্ক, যে সময় ভারতে স্বর্ণ-মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় ব্যাপক হারে (খ্রীঃপূঃ ১৫-২৭৫ খ্রীঃ)। এই কুষাণ আমলে জন্ম নিয়েছিল মহান দুজন চিকিৎসা বিজ্ঞানি, যাদের নাম ছিল চরক ও সুশ্রত। যার মধ্যে সুশ্রত ছিলেন বাস্তবিক ভাবে আধুনিক প্লাষ্টিক সার্জারীর জনক। সুশ্রত ছিলেন প্রথম যিনি বিশ্বে প্রথম সফলতার সাথে অস্ত্রপ্রচার,সেই সাথে প্লাস্টিক সার্জারীর  দ্বারা শরিরের এক অংশের মাংস পিন্ড অন্যস্থানের ক্ষত স্থানে প্রতিস্থাপন, এছাড়া ছানির অস্ত্রোপচার করেছিলেন।
আধুনিক কালে ভারতীয় এই বিজ্ঞানিদের অবদান খুব একটা স্বীকার করা হয় না, চরক এবং সুশ্রতের চিকিৎসা পদ্ধতি তারা তাদের লেখা গ্রন্থ চরকসংহিতা এবং সুশ্রতসংহিতা তে বর্ণনা করেন। যেগুলো ৭৫০ খ্রীস্টাব্দে আরবে পৌছলে সেটি আরবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরাধীন ভারতের সময় ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি ইংরাজদের হাত ধরে পশ্চিমা দেশে প্রবেশ করলে তারা সুশ্রত ও চরকের বর্ণিত চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকরণ ঘটান এবং ইতিহাসের পাতা থেকে এই দুই মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানির কার্যকলাপ একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে নিজেদের বিজ্ঞান প্রযুক্তির জনক হিসাবে প্রচার করতে থাকে।
 উড়ো জাহাজ
গোটা বিশ্ব আজ রাইট ভাইয়েদের উড়ো জাহাজ আবিষ্কারের শ্রেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু তার ভিত্তি প্রস্তর বহু আগেই ভারতে প্রথিত করা হয়েছিল। বাস্তবিক ভাবে ভারতীয় এই আবিষ্কার চাতুরতার সাথে নিজেদের নাম জরিয়ে নেই বিদেশি এই দুই ভাই।
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয় যখন গোটা বিশ্ব উড়ো জাহাজের কল্পনাকেও অলিক কল্পনা মনে করত, তার বহু হাজার বছর আগে ভারতে তার সূচনা হয়েছিল, যার দরুন আমরা প্রাচীন গ্রন্থ গুলোতে পুষ্পক বিমান, সূৰ্য রথ ইত্যাদির বর্ণনা পেয়ে থাকি। সুতরাং ভারতীয় বিজ্ঞানে উড়ো জাহাজের ধারনা বহু প্রাচীন। ঋষি ভরদ্বাজ প্রাচীন কালেই উড়ো জাহাজ বানানোর পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ধরনের উড়ো জাহাজের নক্সা ও কার্য প্রণালী কয়েক হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করে গেছেন তার লিক্ষিত বিমানা শাস্ত্র গ্রন্থে।
আর এই শাস্ত্রের উপরেই ভিত্তি করে রাইট ভাইদের বহু আগেই মহারাষ্ট্রের সংষ্কৃত অধ্যাপক শিবঙ্কর বাপুজি তালপাড়ে একটি উড়োজাহাজ বানিয়ে ফেলেন ১৮৫৯ সালে। তিনি জেজে স্কুল অফ আর্টের অধ্যাপক থাকা কালিন তাঁর শিক্ষক চিরঞ্জিলাল ভার্মার কাছ থেকে ঋষি ভরদ্বাজের বিমানাশাস্ত্র গ্রন্থটির বিষয়ে জানতে পারেন। যে গ্রন্থে ছিল ৩০০০ হাজারের মত শ্লোক।
রাইট-ব্রাদার
রাইট ব্রাদার


অধ্যাপক তালপাড়ে তার উড়ো জাহাজ বানানোর পর তার নাম রাখেন "মারুৎ-সখা", এবং এই উড়ো জাহাজটি সফলতার সাথে ৫০০ মিটার উপরে উড়তে সক্ষম হয়েছিল যেটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিল বহু লোক।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তার এই কর্মকান্ডের কৃতিত্ব পরাধীন ভারতে থাকা ব্রিটিশদের ছল-চাতুরিতে সেই উড়োজাহাজের তথ্য বিদেশে পাড়ি দেই, আর তার সমস্ত কৃতিত্ব রাইট ভাইয়েরা নিয়ে নেই। পরবর্তি কালে তোলপাড়ের কাহিনিটি হিন্দি চলচ্চিত্র আকারে প্রকাশ পাই।
বিদ্যুৎ আবিষ্কার
আধুনিক কালে যা কিছুই অত্যাধুনিক আবিষ্কার হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে, এক সময় এই বিদূতকে ঘিরেই টমাস আলফা এডিসন আর নিকোলা টেসলার সাথে চলেছিল স্বল্প খন্ডযুদ্ধ। যাই হোক গোটা বিশ্বে বিদ্যুৎ আবিষ্কারক হিসাবে টমাস আলফা এডিসনের কার্যকলাপকে মনে করা হয়। বস্তুতঃ টমাস আলফা এডিসন তার লেখা কিতাবে তার শ্রেয় হিসাবে মহান ঋষি অগস্ত্য কে উল্লেখ করেন। এডিসন তার কিতাবে বলেন তিনি বিদ্যুৎ তৈরির প্রারম্ভিক ধারনা মহান ঋষি অগস্ত্যুর লেখা অগস্ত্য সংহিতা থেকে পেয়েছিলেন।
মহান ঋষি অগস্ত্য হলেন ভারতীয় বৈদিক শ্রেষ্ঠ ঋষি সমূহের মধ্যে একজন, যার বিষয়ে রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য গ্রন্থ গুলোতেও পাওয়া যাই, যার নাম অনুসারে সপ্তঋষি তারকাগুলোর মধ্যে একটির নাম রাখা হয়েছে। প্রাচীন কালে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে একটি হল অগস্ত্য সংহিতা। আশ্চর্যজনক ভাবে মহান ঋষি অগস্ত্যুর এই গ্রন্থে বিদ্যুৎ তৈরির বিভিন্ন উপায় আলোচনা করা হয়েছে, এবং ব্যাটারি তৈরির বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে ব্যাটারির প্রলেপ হিসাবে জিংক,তামা, লোহা ও সোনার ব্যবহারিক পদ্ধতিও আলোচনা করা হয়েছিল। যাই হোক যদিও ব্যাটারি এডিসন আবিষ্কার করেন নি। কিন্তু ভারতীয় মহান ঋষি অগস্ত্যর উপরে নির্ভর করে এডিসন আজ বিদ্যুৎ জনক হিসাবে বিশ্ব দরবারে প্রসিদ্ধ।
রেডিও বা বেতার
ভারতে যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেডিও আবিষ্কারের শ্রেয় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোসকে দেওয়া হলেও, প্রায় সমগ্র বিশ্বে রেডিও আবিষ্কারের জনক হিসাবে মার্কনিকে মনে করা হয়। জগদীশ চন্দ্র বোস রেডিও আবিষ্কার করেন নি, তার সাথে গাছে প্রানের অস্তিত্ব, কেসকোগ্রাফ যন্ত্র,রেজোন্যান্ট ইত্যাদিও আবিষ্কার করেন, কিন্তু এক্ষেত্রে এর সমস্ত শ্রেয় জগদীশ চন্দ্রকেই দেওয়া হয়।
কিন্তু রেডিও আবিষ্কার বা যে আবিষ্কারের উপর নির্ভর করে অত্যাধুনিক মোবাইল, টিভি ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে তার সম্পুর্ণ শ্রেয় জগদীশ চন্দ্র বোসকে দেওয়া হয় না, বরং বেতার তরঙ্গের দ্বারা সংকেত প্রেরণের শ্রেয় দেওয়া হয়।
মূলত বেতার তরঙ্গের উপর জগদীশ চন্দ্র বোস তার যাবতীয় তথ্য ডাইরিতে লিপি বদ্ধ করে রাখতেন, পরবর্তি কালে সেই ডাইরির সংকলিত তথ্যের উপর নির্ভর করে মার্কুনি রেডিও বা বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।
ফাইবার অপটিকাল
বিশ্ব খুব শিঘ্রই মহান আবিষ্কারের সম্মুখিন হতে পারে, যার কল্পনা করা বাস্তবেও খুবি অবাস্তব বলে মনে হয়, কিন্তু আশার আলো দেখা গিয়েছে তাও এক ভারতীয় বিজ্ঞানির প্রচেষ্টাই, কিন্তু ইতিহাসের পাতাই তার নাম হয়তো বা নাও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে,যিনি হলেন ডঃ নারেন্দ্র সিং কাপানি। বিজ্ঞানের বিচারে কোন বস্তু যদি আলোর বেগের থেকেও বেশি বেগে ভ্রমন করতে পারে তবে সেক্ষেত্রে "টাইম মেসিন" বা সময় যন্ত্র তৈরি করা যেতে পারে। বিজ্ঞান স্বিকার করে নিয়েছে সময় সব ক্ষেত্রেই সমান হয় না এছাড়াও আলোকে বাঁকানো যাই না, কিন্ত ফাইবার অপটিকালে তা সহজ হয়েছে। কিন্তু গোটা বিশ্বে সেই আবিষ্কারের শ্রেই চার্লস কুয়েন কাউ কে দেওয়া হয়েছে এবং তাকেই এর জনক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও বা এই প্রযুক্তির প্রথম সুত্রধার ডঃ নরেন্দ্র সিং কাপানি। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ঘর সাজানোর উপকরন, আলোকসজ্জা এবং দ্রত তথ্য সরবরাহের জন্য করা হচ্ছে।
রাবইাফ
ফাইবার অপটিকাল


ভারত শুধু এই কয়েকটি আবিষ্কারের মধ্যে সিমাবদ্ধ তেমনটিও নই, বিজ্ঞানের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অবদান অপরিসীম যুগ যুগ ধরে, কিন্তু শুধুমাত্র ভারতীয় হবার সুবাদে তার কৃতিত্ব হাতছাড়া হয়েছে। অনু পরমানুর বিষয়ে প্রথম ধারনা একজন ভারতীয় দিয়েছিলেন যিনি হলেন ঋষি কণাদ। ভারতের প্রাচীন মহাকাশবীদরাই বলেছিলেন পৃথিবী স্থিরতা এবং গণিতশাস্ত্রে '০' (শূন্য) এর মাহাত্ম্য। আরো প্রচুর আবিষ্কার রয়েছে যেগুলো প্রচীন গ্রন্থ গুলিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এখন সময়ের অপেক্ষা যাতে সেই সমস্ত বিষয়বস্তু সকল, পাশ্চাত্য দেশগুলো না করায়ত্ত্ব করে ফেলে। প্রয়োজন ভারতীয় গবেষনার, সেই গ্রন্থগুলোর সত্যতা যাচাই করার। "মোহিনী-বিদ্যা" ভারতীয় মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি,যেটি পাশ্চাত্যে প্রবেশের সাথে সাথে বিজ্ঞানের রুপ নিয়েছে। তেমনি রয়েছে মন্ত্র বিদ্যা, যদিও এটার সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিন্তু তার মধ্যে যদি কিঞ্চিত পরিমান সত্যতার ভিত্তি থাকে তবে তা যেন পাশ্চাত্য কলার অংশিদারী না হয়।

আরো পড়ুন - এই রোগগুলো আপনাকে সুপার হিরো বানাতে পারে।

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ভারতিয় পুলিশ একাল সেকাল || INDIAN POLICE ON DUTY ||

সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০

 ভারতের পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল বৃটিশরা, যার প্রধান ব্যাক্তিত্ব ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ (১৭৮৬-৯৩), তিনি ভারতে পুলিশি ব্যবস্থার পুনর্গঠন করেন। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল  ভারতিয় উপনিবেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ইংরাজদের ক্ষমতা ভারতে ধরে রাখা। সেই আমল থেকেই পুলিশের থার্ড ডিগ্ৰী বা থানার লকআপে অভিযুক্তের ওপর নির্মম অত্যাচারের প্রথা চালু হই, কিন্তু দুঃখের কথা হল যে, স্বাধিনতার পরেও সেই প্রচলিত ধারা ক্রমাগত প্রবাহিত একি পথে। অবশ্য এই ব্যবস্থা যে একেবারে ফেলনা,সেটিও নই, আমাদের পুলিশ যথেষ্ট দায়িত্বশীল আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একবারে নিতি-জ্ঞানহীন বটে।

ভারতিয় পুলিশ লক-ডাউনে

কিন্তু মজার বিষয় হল,বৃটিশদের নিজের দেশে কিন্তু পুলিশের ভূমিকা সম্পূর্ণ উল্টো। সেখানে পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বপূৰ্ণ। বৃটিশরা ভালবেসে দেশিও পুলিশদের ববি বলে ডাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি সম্পূৰ্ণ উল্টো, পরিচিত শব্দ 'মামা'। তাহলে স্বাধীনতার পরেও আমাদের পুলিশ এমন কেনো?
ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে, কিছু স্বার্থান্বেষী নেতার যুগ শুরু, শেষমেষ পুলিশের ভূমিকা হয়ে দাড়ালো নতুন প্রভুদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং সেই সুবাদেই একইরকমভাবে সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যাওয়া। জনসাধারণের বিশাল অংশ আজ পুলিশ অত্যাচারের বিপক্ষে, কেও কেও বলে থাকেন- 'পুলিশদের সম্মান করতে মোটেও ইচ্ছা করেনা, বাধ্য হয়েই তা করতে হয়।' আবার কারো মতে - 'পুলিশ আর গুন্ডাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।'
পুলিশের বিরুদ্ধে জনসাধারণের হঠাৎ এমন বিরোধিতা উঠে এল কি করে,সেটাই চিন্তার বিষয়! তবে এর কারন রয়েছে ,আর সেই কারন গুলো করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আরো পরিষ্কার হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ নতুন নিয়ম মাফিক যান-বাহনের ফাইন বাড়িয়ে দিলে, চড়ম উত্তেজনার পরিবেশ তৈরির মাঝে দেখা গেলো জনসাধারণের পুলিশ বিরোধি সোশ্যাল পুলিশগিরি, জনসাধারণের সহজ সরল লজিক 'আইন কি শুধু জনসাধারণের জন্যে, পুলিশের জন্য না?'। জনসাধারণের এই সোশ্যাল পুলিশগিরিতে ফেসবুক, হোয়াটসএপ, টুইটারে ভরে গেলো পুলিশের ট্রাফিক নিয়ম অমান্যতার বিভিন্ন ভিডিও। বিহারের এক যুবক হেলমেন্ট বিহিন পুলিশ আধিকারিককে তার হেলমেটের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ তার বাহাদুরি দেখিয়ে মিথ্যা অপবাদে ফাসিয়ে থানায় নিয়ে যাই ,কিন্তু বাঁধ সাদলো মোবাইলের একটি ভিডিও ক্লিপ যেখানে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে পুলিশটি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ততক্ষনে সেটি মিডিয়া মারফতে ছড়িয়েও পরে বেশ, শেষে সেই আধিকারিক কর্মচূত করা হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাশালিরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে, এটা নাকি মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। পুলিশরা বা কেনো সেই দিক দিয়ে কম হবে, হিন্দি ফিল্মের 'দাবাং' পুলিশ হবার চাহিদাই কার্যত জনবিরোধি হয়ে উঠেছে কিছু পুলিশ। উদাহরণ ঢের রয়েছে এবং প্রত্যেক রাজ্যে থেকেই রয়েছে, আর 'দাবাং' হিরোর হিরোর মত এন্ট্রি না হলে হয়। মধ্যপ্রদেশের এক পুলিশ আধিকারিক মনোজ ইয়াধাব দাবাং নই বরং সিংঘাম স্টাইলে দুটো চলন্ত গাড়ির মাঝে বেলেন্স করে এন্ট্রি দেখাতে চাইলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হতেও সময় নেই নি, শেষমেশ তাকে তার এই বোকামির জন্য জরিমানাও হতে হয়েছে।

Indian-police
Indian police


পুলিশ বাহাদুর কখনো দাবাং আবার কখনো আবার কাপুরুষ, এই ক্ষেত্রে পালঘরের ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, হিন্দু দুই সাধুর এইভাবে মৃত্য মেনে নিতে পারছিল না গোটা ভারত, আর যার ক্ষতচিহ্ন এখনো দগদগে হয়ে রয়েছে, দুই সাধুই পুলিশের উপস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিতই মনে করেছিল হইতো, কিন্তু ভিরু পুলিশ সেই ভিরের কাছে একদম কাপুরুষ। এই ক্ষেত্রে মাথাই চিন্তা আসতে পারে, পুলিশের ক্ষমতা আর বাহাদুরি কি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপরেই নির্ভরশিল। নাকি নিতি-জ্ঞানহীনতার দিকে ধাবিত কিছু পুলিশ।
নিতিহীনতার প্রমান পাওয়া গেলো বহুল হারে এই লক-ডাউনের মাঝে। বেধেঁ দেওয়া হল নির্দিষ্ট সময়, কিন্তু নির্দিষ্ট হোক বা অনির্দিষ্ট পুলিশের কেলানি কোনে নিয়মের মধ্যেও নেই, বাজারে সব্জি বিক্রেতাদের থেকে শুরু করে, সাধারণ ক্রেতা তাদেরকেও দেওয়া হল উত্তম মধ্যম, এমন কি বাজার করা সব্জির বেগ প্রযন্ত কেড়ে নিয়ে ছুড়েঁ ফেলা হল। যেগুলো বাস্তবেই পুলিশের নিতি  হীনের পরিচয় দিয়ে থাকে।
কিন্তু এই কয়েকটি ঘটনাই পুলিশের উপর নিম্নমুখি চিন্তাধারা না আনাই শ্রেয়, কেননা সমাজ পরিবর্তনের মূল দায়িত্ব তাদের, যাদের জন্যই রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর সাহস টুকু জুটে। এই করোনা আবহে পুলিশের কিছু খারাপ প্রতিচ্ছবি উঠে এলেও, তাদের দিন রাত্রি দায়িত্ব পারবে ভারতকে নিরোগ করে তুলতে। আজ না হয় জনসাধারণ পুলিশকে ঘৃনার চোখে দেখছে, একদিন ঠিকি তাদেরকেউ ব্রিটিশ পুলিশদের মত বিশেষ ভালোবাসার চোখেই দেখবে। আগামিতে পুলিশ তার দায়িত্ব সহযোগি হিসাবে নই, সহভাগি হিসাবে করবে এটাই কাম্য।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০

ভারতিয় সিনেমার ইতিহাস ও বাংলা || HISTORY OF INDIAN CINEMA AND BENGAL ||

আগস্ট ২৭, ২০২০

 ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস। INDIAN CINEMA

সিনেমার জন্ম নিকোলাস লুমিয়ার ও জিন লুমিয়ার নামে ফরাসি দুই ভাই দিয়েছিলেন ১৮৯৫ সালে। সেই সময় সিনেমায় শব্দের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তাই তাদের তৈরি প্রথম বিশ্বের চলচ্চিত্র THE ARRAIVAL OF A TRAIN AT THE STATION টি ছিল নির্বাক। ফরাসি এই দুই ভাইকেই চলচ্চিত্রের জনক মনে করা হয়। এই দুই ভাই নিজেরাও তাদের এই আবিষ্কার যে খুব দ্রুত বিশ্বের ধনি ও অভিজাতদের কাছে আকর্ষনের বিষয় হয়ে দ্বাড়াবে তার কল্পনা হয়তো তারা করেন নি। দেখতে দেখতে সারা বিশ্বে সিনেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মুনাফা অর্জনে লেগে পড়ে এবং স্থানের নাম অনুসারে বিভিন্ন ইন্ডস্ট্রি গড়ে উঠে ~ যেমন হেমিল্টন শহর থেকে হলিয়ুড, বোম্বে থেকে বলিয়ুড, লাহোর থেকে লালিয়ুড, টালিগঞ্জ থেকে টলিয়ুড ইত্যাদি ইত্যাদি।

cinema-indian
ভারতিয় সিনেমা


ভারতে সিনেমার আগমন। INDIAN CINEMA
ফ্রান্সে তৈরি চলচ্চিত্রের ভারতে আসতে দেরী করেনি, ফ্রান্সে তৈরি হওয়া লুমিয়ার ব্রাদারের বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র THE ARRAIVAL OF A TRAIN AT THE STATION ভারতে তার তৈরি হবার পরের বছরি বোম্বাই (বর্তমান নাম মুম্বাই) এর তৎকালিন বিলাসবহুল হোটেল ওয়েষ্টনে প্রদর্শিত হয়। ১৮৯৯ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে সখারাম ভাতওয়াদেকর দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি করেন যার নাম ছিল দ্যা রেষ্টলার এবং মেন এন্ড মাংকি কিন্তু সেটিও সম্পূৰ্ণরুপে ভারতীয় ছিল না, যার মধ্যে কিছুটা অংশ ব্রিটিশদের যোগদান ছিল। ভারতের সম্পূৰ্ণ নিজের ঘরানায় সিনেমা তৈরি করেন ধুন্দিরাম গোবিন্দ ফালকে , যিনি ইতিহাসে দাদাসাহেব ফালকে নামে পরিচীত। যদিও সেই চলচ্চিত্রটি ছিল নির্বাক,কিন্তু সেই ছবিটিকেই ইংরাজি ও হিন্দি সাব টাইটেল রাজা হরিশচন্দ্র দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয় ১৯১৩ সালে।
বাংলাই চলচ্চিত্র বা সিনেমা
প্রথমে চলচ্চিত্রের উপর ব্রিটিশ কোম্পানির নজর থাকলেও তা অভিজাতদের বিনোদনের অংশ হওয়াই কোম্পানি এর উপর তার লাগাম সম্পূৰ্ন রুপে ছেড়ে দেন, সেই সময় ব্রিটিশের একজন জে.জে.স্টিভেনশন নেতৃত্বে কলকাতার স্টার থিয়েটারে ১৮৯৬ সালের ২১ শে ডিসেম্বরে লুমিয়ার ব্রাদারের চলচ্চিত্র প্রথম দেখানো হয়, এরপর থেকেই বাঙ্গালীদের চলচ্চিত্রের উপর তাদের ছাপ ছাড়তে শুরু করে।
সেই সময় সিনেমায় অভিনয় করা নিম্নমানের কাজ মনে করা হত, বিশেষ করে নারিদের ক্ষেত্রে, তাই বাঙ্গালী দুই ভাই হিরালাল সেন ও মতিলাল সেন রয়াল বাইস্কোপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের উৎসাহ দিতে থাকেন, এবং তাদের এই কোম্পানি থিয়েটারে প্রদর্শিত নাটকের দৃশ্যেগুলিকে রেকর্ড করে এবং কিছু ডকুমেন্টারি ভিডিও মিলিয়ে ২১ টি ছবি তৈরি করেন। তাদের পরিচালনায় মুক্তি পাই আলিবাবা এন্ড থার্টি থিবস এবং তাদেরি চেষ্টাই ভ্রমর নামে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস কৃষ্মকান্তের উইল কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে চলচ্চিত্র আকারে প্রদর্শিত হয়। তাদের সিনেমা জগতে অশেষ যোগদানের জন্য তাদের ভারতীয় লুমিয়ার ব্রাদার বলা হয়।
১৯১৭ সালে জে.এম.মেডান তার এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানির আওতাই বাংলাই প্রথম কাহিনিচিত্র সত্যবাদি রাজা হরিশ্চন্দ্র নির্মান করেন, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কোনো প্রকার চলচ্চিত্রে শব্দের অস্তিত্ব ছিল না, সিনেমাতে প্রথম শব্দের অস্তিত্ব আসে ১৯৩১ সালে, এবং সেই বছরি বিদেশি মেডানের জামাইষষ্টি নামের সবাক বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তিলাভ করে। না বললে নই ভারতে প্রথম অস্কার পুরষ্কারটি এসেছিল একজন বাঙ্গালির হাত ধরেই , তিনি হলেন সত্যজিৎ রায়, তার ১৯৫৫ সালে তৈরি সিনেমা পথের পাঁচালি একমাত্র ফিল্ম যেটি অষ্কারে ভূষিত হয়েছে।
pother-pachali-cinema-indian
"পথের পাঁচালি" সিনেমার একটি দৃশ্য


ভারতীয় সিনেমার উদয়। INDIAN CINEMA
ভারতে সিনেমা আসার পরেই তার যাত্রা শুরু করে, সেই যাত্রাই নতুন পালক জুড়ে দেই ইম্পেরিয়াল ফিল্ম কোম্পানির তৈরি আলম আরা সিনেমা। এই সিনেমাটিকেই ভারতের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মনে করা হয়, মজার বিষয় হল সবাক চলচ্চিত্র হিসাবে এই সিনেমাতেই প্রথম গান চিত্রনাট্য করা হয় দে দে ক্ষুদাকে নাম পে প্যার
এর পর একে একে এই বছরেই তেলুগু ভাষাই "ভক্ত প্রহ্লাদ" এবং তামিল ভাষাই "কালিদাস" মুক্তি পাই। বিভিন্ন ভাষাই তৈরি সিনেমা গুলো দ্রত জনপ্রিয় হতে শুরু করে এবং ১৯৩৭ সালে আর্দেশ ইরানি নামের একজন কিষন কন্যা নামের প্রথম রঙ্গিন সিনেমা তৈরি করেন।
ভারতের বলিউড এখন বিশ্বের দরবারে তার প্রসার ঘটিয়েছে, যার ফলে ইংলেন্ডের লেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় বলিউডকে তাদের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। খুব দ্রত ভারতীয় সিনেমা জগৎ বিশ্বের দরবারে তার নাম নথিভুক্ত করলে ১৯৫২ সালে ভারতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হয়। ভারতীয় সিনেমার (INDIAN CINEMA)এই অবদানের পিছনে দাদা সাহেব ফালকে অন্যতম ,যিনি তার একক প্রচেষ্টাই সেই সময় মোট ৯১ টি সিনেমা তৈরি করেছিলেন, এবং নার্গিস দত্ত তার মাদার ইন্ডিয়া সিনেমার জন্য বিশ্বে সুনাম কুরিয়েছেন আর এই সিনেমাই ছিল প্রমথ অস্কারের জন্য প্রেরিত সিনেমা।

Alom-ara-indian-cinema-আলম-আরা
"আলম আরা" চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য


এর পর এক এক করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইতিহাস তৈরি করে আসছে ভারতিও সিনেমা জগৎ। ভারতিয় সমাজে সিনেমার প্রভাব বাড়তে থাকলে এই জগতে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পুরষ্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় যার শুরুতে প্রথম পেয়েছিল শ্যামবাঈ আলি এবং প্রথম ফিল্মফেয়ারে ভূষিত হয় বিমল রায়ের "দো বিঘা জমিন"। ভারতীয় ধারায় প্রথম ত্রিমাত্রিক 3D চলচ্চিত্র তৈরি হয় "ছোটা চেতন" এবং সব থেকে বেশি গান রয়েছে ইন্দ্রসভা সিনেমাই। কিন্তু তার মাঝে ভারতীয় সিনেমাকে ঘিরে বিতর্ক হয়েছেও প্রচুর, যার মধ্যে একটি ভারতীয় সিনেমাই প্রথম মুখ-চুম্বন,যেটি রয়েছে কার্মা নামের সিনেমাই (১৯৩৯)।
আরো পড়ুন = নকল ইলিশ মাছ থেকে সাবধান।